যিলক্বদ ১৪৩৪   ||   সেপ্টেম্বর ২০১৩

১৩/১০/৩৪ হি., ২১/০৮/১৩ ঈ. বুধবার

আজ মারকযুদ দাওয়ার প্রধান প্রাঙ্গণ হযরতপুরে ১৪৩৪-৩৫ হিজরী শিক্ষাবর্ষের ইফতিতাহী (উদ্বোধনী) মজলিশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ মজলিশে আসাতেযায়ে কেরামের পক্ষ থেকে পথ-নির্দেশনামূলক জরুরি আলোচনা পেশ করা হয়। এখানে প্রত্যেকের আলোচনার অংশবিশেষ তুলে ধরা হল :

শুরুতেই মাওলানা সাঈদ আহমদ বিন গিয়াসুদ্দীন আহমাদ তার আলোচনায় বলেন, একজন তালিবুল ইলমের জন্য শুধু সময়ের হেফাজত যথেষ্ট নয়, বরং কাসবুল ওয়াক্ত তথা সময় থেকে সর্বোচ্চ উপকার গ্রহণ করার চেষ্টা করা। টুকরো টুকরো সময়গুলোকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা।

যে বিষয়টির উপর তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করেন তা হল, সময়ের এমন বিভাজন যে, অমুক দিন কাজের অমুক দিন  কাজের নয়, অমুক সময় কাজের অমুক সময় কাজের নয়-এটা ঠিক নয়। সময়ের তানযীম ও তাকসীম তো অবশ্যই হতে হবে কিন্তু এ চিন্তা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না যে, কিছু সময় কাজের কিছু সময় কাজের নয়। যে কোন সময়ই মুতালাআ, তাহকীক ও তাসনীফের কাজের জন্য প্রযোজ্য।

মাওলানা যাকারিয়া আবদুল্লাহ ছাহেব বলেন, আমি যেন আমার মাকছাদকে না ভুলি। দুই তিন বছরে ফন এর ইখতিসাস (শাস্ত্রীয় ব্যুৎপত্তি) হাছিলের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

দ্বিতীয় কথা হল, ব্দ ড্ডপ্স-ত্থড্ডপ্স  তথা আসাতিযাগণের মুতালাআ করা। তাঁদের আদব, আখলাক, ফিকির, ইলমের প্রতি আগ্রহ সবকিছু লক্ষ্য করে তা গ্রহণ করা।

মাওলানা সাঈদ আহমদ (চান্দিনা) বলেন, তালিবুল ইলমের সময়ের আসল ক্ষেত্র তো হল ইলম ও আমল। কিন্তু এই মাকছাদে সফল হওয়ার জন্য কিছু সময় সাফায়ী এবং অন্যান্য ইনতেযামী কাজেও ব্যয় করতে হবে। তাই এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের নেযামের প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরি। এবং তা সওয়াবের নিয়তে ও সময়ের সদ্ব্যবহার হচ্ছে মনে করেই করতে হবে।

মাওলানা ইয়াহইয়া ছাহেব বলেন, ইখতিসাসের জন্য প্রয়োজন পূর্ণ ইসতিদাদ বা যোগ্যতা, ইহতিরাক লিল ইলম তথা ইলমের জন্য নিজেকে কুরবান করা এবং ফানা ফিল উস্তায অর্থাৎ উস্তাযের হাতে নিজেকে পরিপূর্ণ সপে দেয়া।

মাওলানা আবদুল মাজীদ বলেন, তালিবুল ইলমের অল্প সময়ে অনেক কাজ করার চেষ্টা করতে হবে। বেশি গুরুত্বপূর্ণটা আগে করা উচিত। এটাও কাসবুল ওয়াকত বা সময় সঞ্চয়ের অন্তর্ভুক্ত।

মাওলানা মতিউর রহমান ছাহেব হযরত মাওলানা সাঈদ আহমদ পালনপুরী দামাত বারাকাতুহুম-এর উদ্ধৃতিতে বলেন, তিনি বাংলাদেশ সফরে এক মজলিশে তালিবুল ইলমদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘‘একজন মেধাবী তালিবুল ইলম যদি দাওরায়ে হাদীসের পর কিতাবের পোকা হয়ে ১০ বছর মেহনত করে তাহলে আশা করা যায় যে, সে তাফাক্কুহ ফিদ্দীন অর্জন করতে সক্ষম হবে। মাঝারী মেধার হলে ১৫ বছর এর নিচের স্তরের হলে ২০ বছর।’’

তাঁর এই কথা থেকে এটা স্পষ্ট যে, আমাদের এই কয়েক বছরের পড়াশোনা তাফাক্কুহ ফিদ্দীন ও ইখতিসাসের পথে যাত্রা মাত্র।

মাওলানা নূর মুহাম্মাদ ছাহেব বলেন,

উস্তাযদের অন্তরে তোমার জন্য একটা জায়গা করে নেওয়ার চেষ্টা কর। তোমার উস্তায যাতে মনে করেন এই ছেলেটা আমার।

মারকাযুদ দাওয়াহর আমীনুত তালীম ও আততাখাসসুস ফি উলূমিল হাদীসিশ শরীফ বিভাগের মুশরিফ মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক বলেন, আমাদের মাকছাদ হল,

১. আল্লাহর নেক বান্দা হওয়া। ২. ইনসান হওয়া। ৩. ইখতিসাস হাছিলের পথে অগ্রসর হওয়া। ৪. তাফাক্কুহ ফিদ্দীন অর্জন করা। ৫. রুসূখ ফিল ইলম অর্জন করা। ৬. সবক্ষেত্রে ইতিদাল (ভারসাম্য ও মধ্যপন্থা) শেখা (এটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ মাকছাদ)।

এগুলোর জন্য কয়েকটি কাজ করতে হবে। ক. মানহাজ ও নেযামের এহতেমাম করা

খ. شم الرجال   করা; رجال كو سونكهى

তাকী ছাহেব হুজুর দামাত বারাকাতুহুম এই তরজমা করেছেন।

মারকাযের রঈস ও আততাখাসসুস ফিল ফিকহি ওয়াল ইফতা বিভাগের মুশরিফ মুফতী আবুল হাসান মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ বলেন, ১. সহীহ নাহজে চলার জন্য সহীহ ফিকির প্রয়োজন। ২. কওমী মাদরাসার ঐতিহ্যগত আদাব আশঙ্কাজনকহারে কমে যাচ্ছে। এটা ফিরিয়ে আনা দরকার। ৩. আমাদেরকে ফেতনা সম্পর্কে দুরদর্শী হতে হবে। ৪. আমাকে আমলীভাবে প্রমাণ করতে হবে যে, আমি উস্তাজদের থেকে নিতে চাচ্ছি।

সকাল দশটা থেকে শুরু হয়ে যোহর পর্যন্ত মজলিশ চলে। 

 

 

advertisement