মো দি কা ন্ড : তাচ্ছিল্যের গোড়া কোথায়
আবারো খবরে মোদি। আগের মতই উগ্র ইমেজ নিয়ে। এবার হাতে-কলমে কোনো ঘটনা ঘটে নি। তার মুখের বক্তব্যেই বিষ ও বীভৎসতার উদ্গীরণ হয়েছে। তার বক্তব্যে রাজনীতি-পাড়ায় কিছু হৈ চৈ হলেও ভারতের মতো ‘কাগুজে’ ধর্মনিরপেক্ষ দেশে বিশেষ বেকাদায় তাকে পড়তে হয় নি। ওই জাতপাতের দেশটিতে মোদির মতো সাম্প্রদায়িক নেতার কদর সহজে কমবে বলে মনেও হয় না। তার পরও মুখের একটি বক্তব্য নিয়ে মোদিকে এখানে টেনে আনার অন্য একটি কারণ আছে। আগে দেখা যাক মোদির বক্তব্যটি কী ছিল। তারপর অন্য কারণটির দিকে যাওযা যাবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোদি ভারতীয় মুসলমানদের প্রতি অমানবিক তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কথা বলেছেন। ২০০২ সালে গুজরাটে মুসলিম গণহত্যার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা প্রশ্নে মোদি জানিয়েছেন, সে সময়ের অপরাধের জন্য তিনি অনুতপ্ত তো ননই, উল্টো তাকে বহন করা মোটরগাড়ির চাপায় কোনো কুকুরছানা মারা গেলে সেজন্য তিনি কষ্ট পাবেন। উগ্র হিন্দুবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এই উগ্রবাদী নেতা মোদির এ বক্তব্যটি ঢাকার পত্রপত্রিকায় খবর হয়ে প্রকাশ হয় ১৫ জুলাই। সম্ভবত রয়টার্স থেকে সাক্ষাৎকারটি এর একদিন কি দু’দিন আগে সম্প্রচারিত হয়েছে। মোদির এ বক্তব্যের কঠিন সমালোচনা করেছেন সমাজবাদী পার্টির নেতা কামাল ফারুকী ও জনতা দলের (ইউ) নেতা শিবানন্দ তিহারি। তিহারি বলেছেন, মোদির মানসিক চিকিৎসা হওয়া উচিৎ। কলকাতার মমতা জানিয়েছেন, মোদিকে তিনি সমর্থন দেবেন না। নবেলজয়ী অমর্ত্য সেনও মোদির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। এমনকি হিন্দুবাদী শিবসেনাও মোদির বিরুদ্ধে খেপে আছে। মোদির সমালোচকের সারিতে যথারীতি আরও রয়েছে সিপিএম ও কংগ্রেস।
মোদির মানসিক কিংবা শারীরিক চিকিৎসার কথা যারাই বলুক, তাতে মোদির কিছু যায় আসে না। দেশ-বিদেশের লোকজন তাকে কসাই ডাকে, নরপিশাচ বলে গাল দেয়। কিন্তু বিজেপি তো তাকে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে প্রচার অভিযানের প্রধান দায়িত্বশীল বানিয়েছে। এ কারণে বিজেপির ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে তাকে। সব সময় হিংস্র রক্তপাত অথচ সংবিধানের কালো হরফে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ-এই হচ্ছে ভারতীয় অসাম্প্রদায়িকতার সারকথা। মোদি আর লোদি নেই, হিন্দুত্ববাদী রক্তপিপাসু পিশাচদের কদরই সে দেশে আলাদা।
রাজনীতি, ব্যবসা, ফিল্ম, মিডিয়া সবখানেই উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের বন্দনা শোনা যায়। অলিখিত ও অনুচ্চারিত এক নিঃশব্দ সাম্প্রদায়িক বিকারের নাম হয়ে আছে ভারত। এ হচ্ছে ভারতের সাম্প্রদায়িক চরিত্রের একটি অবধারিত চিত্র। এর ভিন্ন একটি চিত্রও দিন দিন আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। দেখা যাচ্ছে হাজারো সাম্প্রদায়িকতায় দুষ্ট সে ভারতের প্রতিই ‘ধর্মনিরপেক্ষ মুগ্ধতা’ নিয়ে হৃদয় উজাড় করে বক্তব্যের খৈ ফুটাতে ব্যস্ত বাংলাদেশের কোনো কোনো রাজনীতিক। মোদির মতো পিশাচেরাও তাদের কাছে ‘দেবতার’ মতো ‘পূজনীয়’ হয়ে আছে। হীনম্মন্যতাগ্রস্ত ও বৈরী ভাবাপন্ন নামধারী মুসলিম বাংলাদেশী বাম রাজনীতিকদের এই অদ্ভুত চেহারা এখন বড় রকম দ্রষ্টব্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কথায় কথায় তারা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার উদাহরণ টেনে এনে বাংলাদেশের ‘সাম্প্রদায়িকতা’ নিয়ে বিষোদগার করেন। অথচ পর্যবেক্ষকরা প্রশ্ন করেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের ‘সাম্প্রদায়িক’ এ দেশটিতে গুজরাটের মতো মাত্র একটা ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ঘটনা যদি এখানকার সংখ্যালঘুরা ভোগ করত তাহলে বুঝতে পারা যেত, ভারতীয় ধর্ম নিরপেক্ষতার মাকাল ফলটা কতটা সুস্বাদু কিংবা কতটা মিষ্টি?
ঢাকার পত্রিকায় যেদিন মোদির এই বক্তব্যটি ছাপা হয়েছে সম্ভবত ওই দিন দুপুরেই আমাদের জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে এক সদস্য বললেন, আমরা যদি এ দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করে যাই তাহলে ভারতের ১৮ কোটি সংখ্যালঘু মুসলমানদের কী পরিণতি হতে পারে-সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিৎ। তার ভয়াবহ এই উক্তিতে মনে হয়েছে: ক. বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়মিত ঘটনা। খ. ভারতের মুসলমানরা সব সময় খুব স্বস্তিতে বাস করছেন। গ. ভারত-বাংলাদেশের মাঝে সব সময় সাম্প্রদায়িক বিষয়ে প্রতিক্রিয়ামূলক পদক্ষেপ চালু থাকা দরকার। (বাস্তবে এ রকম হলে এবং ভারতীয় মুসলিম গণহত্যার জের বাংলাদেশে প্রকাশ পেলে এর পরিণতি এখানকার সংখ্যালঘুদের জন্য কত মারাত্মক হতে পারে!) ঘ. ভারতীয় মুসলিমদের প্রতি আঘাত করার জন্য সেখানকার হিন্দুত্ববাদী উগ্র মহলটিকে উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে ওই বক্তব্যে।
বাংলাদেশের আইনসভায় ভারতের প্রতি মুগ্ধতা ব্যক্তকারী চরম উসকানিমূলক এই বক্তব্যটি দিয়েছেন বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদী চট্টগ্রামের একজন সংসদ সদস্য। কিছুদিন আগে তিনি মদীনা রাষ্ট্র না মানার কারণে বনু কুরাইযার ৬০০ লোকের কল্লা উড়িয়ে দেয়ার ইতিহাস (!) শুনিয়েছিলেন। ইসলাম, মুসলমান ও মুসলিম ঐতিহ্যের প্রতি চরম উন্নাসিক এই আইনপ্রণেতা তার ওই দিনের বক্তব্যে আল্লামা আহমদ শফী সাহেবের প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা প্রকাশ করে বার বার বলছিলেন-‘শফী মোল্লা’। মনমেজাজে হিন্দুবাদী এবং সবক্ষেত্রে মুসলমানদের সর্বনাশ ও পতন সন্ধানী অদ্ভুৎ উগ্র এক চাপাবাজ বাম নেতৃত্বের হাতে আমদের রাজনীতি কি দ্রুত বন্দি হতে চলেছে?
দেশের ভেতর-বাহিরের এরকম এক পরিস্থিতির মধ্যে মোদির তীব্র তাচ্ছিল্যপূর্ণ বক্তব্য পড়ে বার বার মনে চলে আসে অন্য কথা। একজন কসাইয়ের বক্তেব্যের ভালোমন্দ খুঁজে কী হবে! কী লাভ তার কর্মকান্ড দেখে আমাদের? এরচেয়ে বরং পরাণুকরণবাদী বিভ্রান্ত স্বজাতির রাজনীতিকদের হাবভাবের প্রতি লক্ষ্য রাখা আমাদের জন্য বেশি দরকার। ঘরের মধ্যে বাস করেও ঘর ও ঘরের মানুষদের বিরুদ্ধে লেগে যাওয়ার মতো দুষ্ট লোকের চেয়ে দুষ্ট তো এ সমাজে আর হতে পারে না। ষ