রজব ১৪৩৪   ||   মে ২০১৩

কাজের মানুষও মানুষ

মাসুমা সাদীয়া

আজকাল কোনো কোনো দ্বীনদার পরিবারেও দেখা যায় কাজের লোকদের সাথে দুর্ব্যবহার করা হয়। একটু ভুল হলেই তাদের উপর কড়াকড়ি করা হয়, অন্যায়ভাবে অত্যাচার শুরু  হয়ে যায়। নতুন এসেছে, হয়তো সে সব দায়িত্ব বুঝে উঠতে পারে নাই, কিংবা বয়স কম হওয়াতে সব কাজ গুছিয়ে করতে পারে না। তাকে শেখানোর আগেই ভুলত্রুটি হলে রাগারাগি-গালিগালাজ শুরু হয়ে যায়। সারাদিন কাজ করার পরও সে ভাল ব্যববহার পায় না। বলা হয়ে থাকে, এখনো পর্যন্ত কিছুই শিখলি না, গাধা নাকি তুই। খাওয়ার বেলায় তো ঠিকই খেতে জানিস। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে ভেবে দেখা দরকার। আজ যদি আমি কিংবা আমার মেয়ে এ পরিস্থিতিতে পড়ত তাহলে কিরূপ দুঃখ হত! সে তো আমাদের মতই মানুষ, ভুলত্রুটি  হবেই। এক্ষেত্রে তাকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলা দরকার। সে তো পরিবারের অন্যদের থেকে আদর পাওয়ার আরো বেশি হকদার। কারণ এখানে তার কেউ নেই। গরীব অসহায়। একমাত্র পেটের দায়েই সে এখানে এসেছে। এ ব্যপারে চলুন আল্লাহর নবীর  আদর্শের প্রতি খেয়াল করি।

হযরত আনাস রা. বলেন, আমি মদীনায় দশ বছর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমত করেছি। আমি কম বয়সের বালক ছিলাম। এজন্য আমার সমস্ত কাজ রাসূলের মর্জি মোতাবেক হতো না। (অর্থাৎ বয়স কম হওয়ার কারণে অনেক সময় ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে যেত, কিন্তু দশ বছরের এই সময়ের মধ্যে) কখনও তিনি আমাকে উফ পর্যন্ত বলেন নাই এবং কখনও বলেন নাই যে, অমুক কাজ কেন করলে বা কেন করলে না (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪৭৪১ [৪৭৭৪]; সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬০৩৮)

সুব্হানাল্লাহ! এত দীর্ঘ সময়ের মধ্যে এতটুকু বালককে কিছু না বলা কত বড় ধৈর্যের ব্যাপার! কী অনুপম চরিত্র! তিনিই তো আমাদের আদর্শ। আল্লাহর নবী জীবনের শেষ মুহূর্তেও উম্মতকে সতর্ক করে বলে গিয়েছেন,‘‘নামায

এবং গোলামদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর।’’

কাজের লোকের কিছু না কিছু ভুল ত্রুটি হবেই। এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী? সাহাবীগণ এ বিষয়ে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছেন। হাদীস শরীফে এসেছে, এক ব্যক্তি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার খাদেমের ভুলত্রুটি কতবার ক্ষমা করব? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ রইলেন। ঐ ব্যক্তি আবার জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার খাদেমকে কতবার ক্ষমা করব। নবীজী চুপ থাকলেন। তৃতীয়বার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, দৈনিক সত্তরবার। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৫১২১ [৫১৬৪])

একবার দুইবার নয় সত্তরবার ক্ষমার কথা বলা হয়েছে, এখন হিসাব করা প্রয়োজন কে কার কাজের লোককে দৈনিক কতবার ক্ষমা করি। এ হাদীস জানার পরও কোনো বিবেকবান মানুষ কি তাদের সাথে দুর্ব্যববহার করতে পারে?

আমাদের সন্তানরাও অনেক সময় কাজের মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার করে। আমরা দেখেও না দেখার ভান করি বা ভাবি কাজের মানুষের এমনটিই পাওনা। এ আচরণ নিজের জন্যও মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। অন্তত দুটি ক্ষতি তো পরিষ্কার। একতো কাজের মানুষের উপর জুলুম করার গুনাহ আমার কাঁধে আসবে। দ্বিতীয়ত আমার সন্তান দুর্ব্যবহার শিখবে, জুলুম করতে শিখবে। পক্ষান্তরে যদি সন্তানকে শাসন করা হয় এবং সুন্দর করে বোঝানো হয় যে, তুমি যা করছ তা অন্যায়; তাহলে সন্তান ন্যায়-অন্যায় শিখতে পারবে। সবার সাথে ভাল আচরণ ও ইনসাফ শিখবে।

আল্লাহ চাইলে আমাকে-অপনাকেও কারো বাড়ির কাজের মানুষ বানাতে পারতেন। তখন আমি-আপনি যে আচরণ আশা করতাম আমাদেরও বাড়ির কাজের মানুষের সাথে তেমন আচরণ করা উচিত। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং কাজের মানুষের প্রতি সদয় হওয়ার তাওফীক দান করুন। ষ

 

 

advertisement