খৃষ্টধর্ম না পৌলবাদ-৭
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
খৃষ্টধর্ম কি কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী ধর্ম
কোন ধর্মের দাওয়াত ও প্রচারের জন্য ধর্মের কার্যকরিতা জরুরি। কোন ধর্ম যদি রহিত ও অকার্যকর হয়ে যায় তবে তার প্রচারের কোন বৈধতা থাকে না। বলাবাহুল্য প্রত্যেক পরবর্তী নবীর মাধ্যমে তাঁর পূর্ববর্তী নবীর আনীত ধর্ম রহিত হয়ে যায়। তখন আগের ধর্ম ছেড়ে পরবর্তী ধর্ম গ্রহণ করা আবশ্যিক হয়ে যায়। সুতরাং আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে আগের সমস্ত নবীর নবুওয়াতকাল শেষ ও তাঁদের প্রচারিত ধর্মের কার্যকারিতা খতম হয়ে গেছে, যেহেতু তাঁদের কেউ সর্বশেষ নবী ছিলেন না; বরং তাঁদের পরে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই নবী হিসেবে সর্বশেষ। আর তিনি যেহেতু সর্বশেষ নবী, তাই তাঁর প্রচারিত দীন ও শরীয়তই সর্বশেষ। সুতরাং তাঁর আগমনের পর সকলের জন্য আপন আপন ধর্ম ত্যাগ করে তাঁর আনীত ধর্ম গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে গেছে। এখন আর আগের কোন নবীর প্রচারিত ধর্ম প্রচারের অবকাশ নেই, এখন প্রচার করা যাবে কেবল সর্বশেষ ধর্ম ইসলাম।
কিন্তু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাবের পরও যে খৃষ্টসম্প্রদায় তাঁর ধর্ম গ্রহণ না করে আগের ধর্মই আকড়ে ধরে রেখেছে এবং তাই প্রচার করে যাচ্ছে আর অন্যদেরকে সেই পুরানো ধর্ম গ্রহণের দাওয়াত দিচ্ছে এর কী যুক্তি? তবে কি তারা হযরত মসীহ (আ)-কেই সর্বশেষ নবী মনে করছে যে, কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর ধর্মই চলবে?
প্রকাশ থাকে যে, মথির লেখা ইনজীলে ‘হযরত ঈসা মসীহের শেষ হুকুম’ শিরোনামে আছে, ‘ঈসা কাছে এসে তাদের বললেন, বেহেশতের ও দুনিয়ার সমস্ত ক্ষমতা আমাকে দেওয়া হয়েছে। এজন্য তোমরা গিয়ে সমস্ত জাতির লোকদের আমার উম্মত কর, পিতা-পুত্র ও পাক-রূহের নামে তাদের তরিকাবন্দী দাও’ (মথি ২৮ : ১৮-১৯)।
এমনিভাবে মার্কের ইনজীলে আছে, ‘তোমরা দুনিয়ার সব জায়গায় যাও এবং (সব লোকদের কাছে) আল্লাহর দেওয়া সুসংবাদ তবলীগ কর’ (মার্ক ১৬ : ১৫)।
এদিকে লক্ষ করে কেউ বলতে পারে, খৃষ্টধর্ম একটি সর্বজনীন ধর্ম, এটা দুনিয়ার সমস্ত মানুষের জন্যই অনুসরণীয়। তা না হলে ঈসা (আ) তাঁর শিষ্যদেরকে সমস্ত জাতির কাছে তাঁর ধর্মের দাওয়াত নিয়ে যাওয়ার হুকুম দিতেন না।
কিন্তু এই ধারণা অবান্তর। কেননা প্রশ্ন হচ্ছে নবী তাঁর জীবদ্দশায় যেই হুকুম দেন তাই মানা হবে, না তাঁর মৃত্যুপরবর্তী হুকুম? জীবদ্দশায় যেখানে তিনি নিজ সম্পর্কে বলছেন, ‘আমাকে কেবল বনী ইসরাঈলের হারানো ভেড়াদের কাছেই পাঠানো হয়েছে’ (মথি ১৫ : ২৪)। আর শিষ্যদেরকে হুকুম করেছেন, ‘তোমরা অ-ইহুদীদের কাছে বা সামেরীয়দের কোন গ্রামে যেয়ো না; বরং ইসরাঈল জাতির হারানো ভেড়াদের কাছে যেও’ (মথি ১০ : ৫-৬)।
সেখানে কথিত মৃত্যুর তিন দিন পর কবর থেকে ওঠে বাস্তবিকই যদি সব জাতির কাছে তাঁর ধর্ম প্রচারের হুকুম দিয়ে থাকেন, তবে যুক্তি-বুদ্ধির বিচারে জীবদ্দশার আদেশের বিপরীতে সে হুকুম আদৌ কি পালনযোগ্য হত? অথচ বাস্তব কথা হল, এ হুকুমের কোন বাস্তবতা নেই। কারণ বহুবিধ।
প্রথমত, এ হুকুমের সম্পর্ক কবর থেকে ওঠার পর আকাশে চলে যাওয়ার পূর্বমুহূর্তের সাথে। কিন্তু কবর কি তাঁকে আদৌ দেওয়া হয়েছিল? হাওয়ারী বার্ণাবাসের মতে তো তাঁকে আদৌ শূলে চড়ানো হয়নি, শূলে চড়ানো হয়েছিল এহুদা এস্কারিয়োতকে। আর প্রধান হাওয়ারী পিতরের মতে শূলে চড়ানোর আগেই তাঁকে আকাশে তুলে নেওয়া হয়েছিল। কুরআন মজীদও সাক্ষ্য দেয়, তাঁকে ইহুদীরা হত্যা করতে ও শূলে চড়াতে পারেনি; বরং আল্লাহ তাআলা তাঁকে নিজের কাছে তুলে নিয়েছেন। তো যার মৃত্যুই হয়নি, তাঁকে কবর দেওয়ার অবকাশ আসে কোত্থেকে? সুতরাং কবর থেকে উঠে তাঁর এরূপ হুকুম দেওয়ার ধারণাটাই অবান্তর।
দ্বিতীয়ত, এ হুকুমটি তাঁর জীবদ্দশার হুকুমের সাথে সাংঘর্ষিক। এমন বেফাঁস সাংঘর্ষিক হুকুম একজন মহান নবী তো দূরের কথা, সাধারণ কোন বিবেকবান লোকও দিতে পারে না।
তৃতীয়ত, প্রধান শিষ্য পিতর আরও পরে অ-ইহুদীদের লক্ষ্য করে বলেছেন, ‘আপনারা তো জানেন, একজন ইহুদীর পক্ষে একজন অ-ইহুদীর সঙ্গে মেলামেশা বা তার সংগে দেখা করা আমাদের শরীয়তের বিরুদ্ধে, (প্রেরিত ১০ : ১৮)।
হযরত ঈসা (আ) সত্যিই এরকম আদেশ দিয়ে থাকলে পিতরের তো একথা বলার সুযোগ থাকে না।
চতুর্থত, পৌল নিজেই বলছেন, ইহুদীদের কাছে সুসংবাদ তবলীগ করার ভার যেমন পিতরের উপর দেওয়া হয়েছিল, তেমনই অ-ইহুদীদের কাছে সুসংবাদ তবলীগ করার ভার আল্লাহ আমার উপর দিয়েছেন’ (গালাতীয় ২ : ৭)।
কেন, হযরত ঈসা (আ) সর্বশেষ এ রকম আদেশ দিয়ে থাকলে পৌল যে দায়িত্বভার ভাগাভাগির কথা বলছেন, তার প্রশ্ন আসে কি করে? সেক্ষেত্রে পৌল ও হাওয়ারী সকলেরই সমস্ত মানুষের কাছে তবলীগ করার কথা।
মোটকথা এসব কারণে এটা স্পষ্ট যে, হযরত মসীহ (আ) এ রকম আদেশ করেননি; বরং কেউ মনগড়া এ উক্তি মথি ও মার্কের ইনজীলে জুড়ে দিয়েছে।
কিন্তু এই সকল কিছুর বিপরীতে তাদের বাস্তব অবস্থা তো এই যে, তারা হযরত মসীহ (আ)-কেই সর্বশেষ নবী মনে করছে। তারা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত মানছে না, উপরন্তু তাঁর বিরুদ্ধে নানা রকম কুৎসা রটনা করে যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে এ বিষয়ে খোদ হযরত মসীহ (আ)-এর অবস্থান কী ছিল? তিনি কি নিজের নবুওয়াতকালকে স্থায়ী মনে করতেন এবং পরবর্তী আর কোন নবীর আগমনের সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছিলেন? প্রচলিত ইনজীলসমূহ এ সম্পর্কে কী তথ্য সরবরাহ করে?
হাজারও বিকৃতি ও রদবদল সত্ত্বেও ইনজীলসমূহে এমন অনেক বাণী ও বক্তব্য চোখে পড়ে, যা প্রমাণ করে হযরত মসীহ (আ) নিজেকে সর্বশেষ নবী মনে করতেন না। বরং তিনি তাঁর পরে আরেক নবীর আগমনের কেবল সম্ভাবনাই জাহের করেননি; বরং তাঁর আগমন সম্পর্কে
সুসংবাদও দিয়ে গেছেন এবং তাঁর প্রতি মানুষকে উৎসাহী করে গেছেন।
ইওহোন্নার ইনজীলে আছে, ‘আমি তোমাদের সংগে আর বেশিক্ষণ কথা বলব না। কারণ দুনিয়ার কর্তা আসছেন’ (১৪ : ৩০)।
আমার যাওয়া তোমাদের পক্ষে ভালো, কারণ আমি না গেলে সেই সাহায্যকারী তোমাদের কাছে আসবে না। কিন্তু আমি যদি যাই তবে তাঁকে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেব। তিনি এসে গুনাহ সম্বন্ধে, আল্লাহর ইচ্ছামত চলা সম্বন্ধে এবং আল্লাহর বিচার সম্বন্ধে লোকদের চেতনা দেবেন’ (ইওহোন্না ১৬ : ৭-৮)।
সেই সত্যের রূহ যখন আসবেন তখন তিনি তোমাদের পথ দেখিয়ে পূর্ণ সত্যে নিয়ে যাবেন। তিনি নিজ থেকে কথা বলবেন না, কিন্তু যা কিছু শোনেন তাই বলবেন আর যা কিছু ঘটবে তাও তিনি তোমাদের জানাবেন’ (ইওহোন্না ১৬:১৩)।
ইনজীলে হযরত মসীহ (আ)-এর এ জাতীয় আরও বহু বাণী পাওয়া যায়। এতে তিনি যে ‘দুনিয়ার কর্তা’, ‘সাহায্যকারী’ ও ‘সত্যের রূহ’-এর কথা বলেছেন, মুক্তমনে চিন্তা করলে এর দ্বারা তাঁর পরবর্তীকালীন কোন নবীরই প্রতি ইঙ্গিত বোঝা যায়, যিনি তার সার্বজনীন ও স্থায়ী নবুওত দ্বারা দুনিয়ার সমস্ত মানুষের উপর কর্তৃত্ব করবেন, যিনি তাঁর পূর্ববর্তী সমস্ত নবীর সমর্থকরূপে নবী হিসেবে তাঁদের প্রতি ঈমান আনতে সাহায্য করবেন এবং সত্যের আলোরূপে তিনি মানবতাকে পূর্ণাঙ্গ সত্যের পথ দেখাবেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, এসব আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ
মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমন সম্পর্কেই ভবিষ্যদ্বাণী। কুরআন মজীদে তাঁর সে ভবিষ্যদ্বাণীর কথা বর্ণিত হয়েছে এভাবে-
وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِنْ بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ
(তরজমা) স্মরণ কর, মারয়াম-পুত্র ঈসা বলেছিল, হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের প্রতি আল্লাহর রাসূল এবং আমার পূর্ব হতে তোমাদের কাছে যে তাওরাত আছে আমি তার সমর্থক এবং আমার পরে আহমদ নামে যে রাসূল আসবে আমি তার সুসংবাদদাতা। (সূরা সাফফ : ৬)
কিন্তু খৃষ্টসম্প্রদায় হযরত মসীহ (আ)-এর এ সুসংবাদকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য প্রযোজ্য মনে করে না। তাদের মতে এ সুসংবাদ ‘পাক-রূহ’ সম্পর্কে, যা হযরত মসীহ (আ)-এর দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার পর পঞ্চাশওমী ঈদের দিন তার শিষ্যদের উপর নেমে এসেছিল। তাদের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। এ সুসংবাদ পাক-রূহ-এর সাথে নানা কারণেই সংগতিপূর্ণ নয়। বিদগ্ধ মুহাদ্দিছ মাওলানা আবদুল মতীন সাহেব তার ‘খৃষ্টবাদ বিকৃতি : তথ্য ও প্রমাণ’ শীর্ষক পুস্তকে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ার সতেরটি কারণ উল্লেখ করেছেন। নিচে তার সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হল-
‘খৃষ্টানদের বিশ্বাসমতে হযরত ঈসা (আ) নিজেই পাক-রূহে পূর্ণ ছিলেন এবং পাক-রূহ সর্বক্ষণ তার সঙ্গে থাকত। এ অবস্থায় তাঁর কথা বলা আর পাক-রূহের বলা একই কথা। কাজেই দুনিয়ার কর্তা আসছেন বিধায় আমি বেশিক্ষণ কথা বলব না-উক্তিটি কিছুতেই পাক-রূহের বেলায় খাটে না এবং ‘কর্তা আসছেন’ কথাটিরও কোন অর্থ হয় না। তা ছাড়া তাদের মতে ঈসা (আ) স্বয়ং যেহেতু খোদা তাই দুনিয়ার কর্তা আসার কারণে তার কথা বলা বন্ধ করারও কোন যুক্তি থাকতে পারে না। বরং এ কথা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কেই প্রযোজ্য, যেহেতু তিনি ছিলেন সকল নবীর সর্দার, তিনি ঈসা (আ)-এর পরে এসেছেন এবং তখন ঈসা (আ)-এর কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে।
খৃষ্টানদের বিশ্বাসমতে ‘পাক-রূহ’-এর মর্যাদা হযরত ঈসা (আ)-এর নিচে। সুতরাং ‘আমার যাওয়া তোমাদের পক্ষে ভালো’ কথাটি পাক-রূহের বেলায় খাটে না। কেননা এ কথার মানে যিনি পরে আসবেন তিনি আরও বেশি মর্যাদাসম্পন্ন হবেন, সে মর্যাদাসম্পন্ন সত্তা ‘পাক-রূহ’ নয়; বরং আখেরী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
হযরত মসীহ (আ)-এর যে উক্তিটি সবশেষে উল্লেখ করা হয়েছে এটি তো আরও স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, তাঁর ভবিষ্যদ্বানী পাক রূহ সম্পর্কে নয়; বরং রাসূলে কারীম সম্পর্কে। কেননা ‘সত্যের রূহ এসে মানুষকে পথ দেখিয়ে পূর্ণ সত্যে (ইংরেজি ও উর্দু অনুবাদ অনুযায়ী সঠিক অর্থ হল সকল সত্যে) নিয়ে যাবেন’ কথাটি ইসলামী শরীয়তের চিত্রাঙ্কন করে, যা সর্বতোভাবে পূর্ণাঙ্গ, যাতে সকল সত্যের পরিপূর্ণতা ঘটেছে। সেই সকল সত্যের সমষ্টিসম্বলিত ইসলামী শরীয়তের পথ তো শেষ নবীই দেখিয়েছেন। আর তিনিই এমন সত্তা, যার কোন কথা নিজের পক্ষ থেকে হত না; বরং হত ওহীর মাধ্যমে।
ইরশাদ হয়েছে-
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى l إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى
তিনি নিজ থেকে কোন কথা বলেন না। যে ওহী তার উপর নাযিল হয় কেবল তাই বলেন (নাজম : ৩-৪)।
আর তিনিই সেই সত্তা, যার পক্ষ থেকে কিয়ামতের আলামত, কবরের শান্তি ও শাস্তি, জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদি ভবিষ্যত বিষয়ক বৃত্তান্ত বিবৃত হয়েছে। পাক-রূহ বা অন্য কারও পক্ষ থেকে বিবৃত হয়নি। সুতরাং তিনি নিজ থেকে কথা বলবেন না এবং যা কিছু ঘটবে তাও তিনি তোমাদের জানাবেন-এর ইঙ্গিত নিঃসন্দেহে শেষনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি, পাক-রূহের প্রতি নয় (বিস্তারিত দ্র. খৃষ্টবাদ বিকৃতি : তথ্য ও প্রমাণ, পৃ. ৯৭-১১২)।
সেন্ট পৌলের দৃষ্টিভঙ্গি
পৌলের পত্রাবলি ও শিষ্যদের লেখাজোখায় খৃষ্টধর্মের স্থায়িত্ব সম্পর্কে সরাসরি কোন বক্তব্য পাওয়া যায় না বটে, কিন্তু তিনি যে পাপমোচন তত্ত্বের জন্ম দিয়ে গেছেন তা দ্বারাই এ ধর্মের স্থায়িত্ব সম্পর্কিত বিশ্বাসের বীজ বোনা হয়ে গেছে। কেননা তার সে তত্ত্বমতে মানুষের পাপ থেকে মুক্তি ও নাজাতের বিষয়টা সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে হযরত মসীহের তরিকায় বন্দি হওয়ার উপর। যে ব্যক্তি তরিকাবন্দীর মাধ্যমে হযরত মসীহের সংগে যুক্ত হবে কেবল সেই পাপ থেকে মুক্ত হয়ে অনন্তজীবন লাভ করবে। তাছাড়া অন্য কেউ পাপ থেকে মুক্তিলাভ করতে পারবে না। এ বিশ্বাসের অন্তর্নিহিত ফল তো এটাই যে, হযরত মসীহ (আ)-এর পর নতুন নবীর প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে, যেহেতু নাজাত ও মুক্তিলাভ করতে হলে যুক্ত হতে হবে হযরত মসীহেরই সাথে, নতুন কোন নবীর সাথে নয়। তাই নতুন নবীর আগমনের কোন সার্থকতা নেই। এ কারণেই খৃষ্টসম্প্রদায় আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অস্বীকার করছে এবং তার আবির্ভাবের পরও বিশ্বব্যাপী খৃষ্টধর্মের প্রচারণা চালাচ্ছে।
সুতরাং বলা যায় সরাসরি না হলেও ‘হযরত মসীহ (আ.) শেষনবী এবং তাঁর ধর্ম শেষ ও স্থায়ী ধর্ম-পরোক্ষভাবে এ ধারণার জন্মদাতাও সেন্ট পৌলই। না হয় এ ধারণার সাথে হযরত মসীহ (আ.)-এর বিন্দু-বিসর্গও সম্পর্ক নেই। বরং তিনি সর্বশেষ নবী হিসেবে হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সর্বশেষ দীন হিসেবে তাঁর প্রচারিত দীন সম্পর্কেই সুসংবাদ শুনিয়ে গেছেন। ষ