জুমাদাল উখরাাহ ১৪৩৪   ||   এপ্রিল ২০১৩

আমাদের রাজ্যশাসন-৭

মাওলানা আবদুস সালাম কিদওয়ায়ী

(৮ম হিজরী)

হুনাইন যুদ্ধ

মক্কা বিজয়ের পর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনও মক্কাতেই ছিলেন। একদিন জানতে পারলেন, হাওয়াজেন ও ছাকীফ গোত্র বিশাল বাহিনী নিয়ে হুনাইন নামক স্থানে এসে পৌঁছেছে। মালিক ইবনে আওফ আননাসরীর নেতৃত্বে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য তারা এখানে সমবেত হয়েছে।

সংবাদ পাওয়ার পর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাৎক্ষণিকভাবে তাদের উদ্দেশে রওনা করেন। হুনাইন প্রান্তরে তাদের সাথে লড়াই হল। তখন মুসলমানদের সংখ্যা ১২ হাজার আর যুদ্ধের সরঞ্জামও ছিল পর্যাপ্ত ও উন্নত। তাই মুসলমানদের কারো কারো মনে এই নিশ্চয়তাবোধ জাগল যে, সংখ্যায় কম হয়েও যখন আমরা বিশাল বিশাল বাহিনীকে পরাজিত করেছি তাহলে এখন এই বিপুল লোকবল ও যুদ্ধ-সরঞ্জাম  সত্ত্বেও আর কার সাধ্য আছে আমাদের পরাজিত করে?! কিন্তু তাদের এই নিশ্চয়তাবোধ আল্লাহ তাআলার পছন্দ হয়নি। তাই আল্লাহ তাদের পরীক্ষা নিলেন। শুরুতে মুসলমানরা কিছুটা পিছু হটতে বাধ্য হল। শুধু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও বিশেষ কয়েকজন সাহাবী তখনো লড়াই করে চলেছেন। এ পরিস্থিতিতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আববাস রা.কে ঘোষণার আদেশ দিলেন।

হযরত আববাস রা. মুসলমানদেরকে যুদ্ধে ফিরে আসার ঘোষণা করলেন। ঘোষণাটি কানে পৌঁছামাত্র সকল মুসলমান আবার ময়দানে ফিরে এল। মুহূর্তেই ময়দানের অবস্থা পাল্টে গেল। অল্প সময়ের ব্যবধানে দুশমনরা পরাজয় বরণ করল।

এ যুদ্ধে মুসলমানগণ যুদ্ধলব্ধ সম্পদ হিসেবে ৬ হাজার যুদ্ধবন্দী, ২৪ হাজার উট, ৪০ হাজার ছাগল ও ৪ হাজার ওকিয়া রূপা  লাভ করে।

হুনাইনে পরাজিত হওয়ার পর মুশরিকরা পালিয়ে তায়েফের দুর্গে একত্র হয় এবং পুনরায় যুদ্ধের জন্য প্রস্ত্ততি শুরু করে। এ সংবাদ শুনতে পেরে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনাইন থেকে তায়েফের দিকে রওনা হন। এরপর সেখানে অল্প কয়েকদিন দুর্গ অবরোধ করে রাখার পর ফিরে আসেন।

 

 

(৯ম হিজরী)

তাবুক যুদ্ধ

তাবুক হল মদীনা ও দামেশকের মধ্যবর্তী শামের একটি অঞ্চল। ৯ম হিজরী সনে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন।

মদীনায় ব্যাপকভাবে এই সংবাদ প্রচার করা হয় যে, রোমকরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত বিশাল বাহিনী নিয়ে মদীনা আক্রমণের প্রস্ত্ততি নিচ্ছে। আরবের গাসসান ও জুযাম গোত্রও তাদের সাথে যোগ দিয়েছে।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধ-প্রস্ত্ততির নির্দেশ দিলেন। তখন আরবে ছিল প্রচন্ড দুর্ভিক্ষ, গরমও ছিল তীব্র। ফলে যুদ্ধে যাওয়া ছিল বেশ কষ্টের। এতে মুনাফিকরা সুযোগ পেয়ে বসল। তারা গোপনে মুসলমানদের বাধা দিতে লাগল। এমনতিইে মুসলমানরা ছিল রিক্তহস্ত। দুর্ভিক্ষের কারণে তাদের অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে পড়ল। এজন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরবগোত্রসমূহ থেকে অর্থ সংগ্রহ করলেন। ধনী সাহাবীগণ মোটা অংকের অর্থ দিলেন। হযরত উসমান রা. দিলেন তিনশত উট। এরপরও অনেক সাহাবী অর্থের অভাবে যুদ্ধে যেতে পারেননি। ওজরের কারণে তাদের জন্য যুদ্ধে অংশগ্রহণের আদেশ স্থগিত রেখে কুরআন মজীদের আয়াত অবতীর্ণ হল।

হযরত আলী রা.কে মদীনায় নিজের নায়েব (স্থলাভিষিক্ত) নিযুক্ত করলেন। এরপর ত্রিশ হাজার সাহাবীকে নিয়ে মদীনা থেকে শামের পথে রওনা হলেন। তাবুক পৌঁছার পর জানতে পারলেন, রোমকদের মদীনা আক্রমণের সংবাদটি সত্য ছিল না। তবে তা একেবারে ভুলও ছিল না। কারণ জনৈক গাসসানী নেতা আরবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ষড়যন্ত্র করছিল। 

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে দুই দিন অবস্থান করেন। এ সময়ে আয়লা জনপদের নেতা ইউহান্না এবং জারবা ও আযরুহ-এর খ্রিষ্টানরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত হয় এবং জিযিয়া (কর) প্রদানের শর্তে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়।

দুওমাতুল জান্দাল-এর শাসক উকায়দির ছিল খ্রিষ্টান ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে কায়সার সম্রাটের সহযোগী। তাই তাকে গ্রেফতারের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত খালেদ রা.কে পাঠান। খালেদ রা. তাকে গ্রেফতার করে আনেন। তবে  জিযয়া প্রদানের শর্তে সেও চুক্তিবদ্ধ হয় এবং প্রাণদন্ড থেকে মুক্তি লাভ করে।  

রোমকদের মদীনা আক্রমণের সত্যতা না পাওয়ায় তাবুকে বিশ দিন অবস্থানের পর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় ফিরে আসেন।      

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

অনুবাদ : আবদুল্লাহ ফাহাদ    

 

 

advertisement