একটি ব্যতিক্রমী ইজতিমা
ইনসানিয়াতের সর্বপ্রথম বৈশিষ্ট হচ্ছে খালিকের মা’রিফাত অর্জন। কেননা, এ তো সহজ কথা যে, ইনসানকে সবার আগে পেতে হবে সৃষ্টিকর্তার পরিচয় এবং তাঁকে হতে হবে সকল সৃষ্টির প্রতি দায়িত্বশীল। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য, হৃদয়-জগতের পবিত্রতা। তৃতীয় বৈশিষ্ট্য, চিন্তার বিশুদ্ধতা ও বুদ্ধির পরিশুদ্ধি। যেন সে রক্ষা পায় ক্ষণস্থায়ীর জন্য চিরস্থায়ীকে বিসর্জন দেওয়ার নির্বুদ্ধিতা থেকে। সৃষ্টি জগতের বিভিন্ন রহস্য উদঘাটনের গর্বে আত্মহারা হওয়ার কিংবা চরম গাফলত ও উদাসীনতায় আত্মবিস্মৃত হওয়ার লজ্জা থেকে এবং চতুর্থ বৈশিষ্ট্য, তাকে শরাফত, উন্নত চরিত্র ও উত্তম আখলাকের অধিকারী হতে হবে। পঞ্চম বৈশিষ্ট্য, আমানতদারী। খালেক ও মাখলুক প্রত্যেকের আমানত আদায় করার মানসিকতা সৃষ্টি হবে।
সকল পেরেশানী, যাকে প্রকৃত পক্ষেই পেরেশানী বলা যায়-তার সমাধান ইনসানকে ইনসানিয়াত শেখানোর মধ্যেই নিহিত রয়েছে। অথচ এই সাদাসিধে কথাটি বোঝাও ওইসব মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়, যাদের আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম-এর শিক্ষার সাথে জানাশোনাও নেই এবং জানার আগ্রহও নেই। আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালাম-এর মধ্যে সর্বশেষ যিনি প্রেরিত হয়েছেন, তিনি হলেন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি ব্যাপকভাবে সকল মানুষের প্রতিই প্রেরিত হয়েছেন। স্থান-কাল-গোত্র ইত্যাদি সকল সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে তিনি সবার জন্যই রাসূল। তাঁর আনীত শিক্ষা ও নির্দেশনার সঙ্গে সম্পর্ক হওয়া ছাড়া এই সত্য উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। শুধু ঈমানের সম্পদে সম্পদশালীরা এই সত্য উপলব্ধি করবেন এবং ঈমানের মিষ্টতা যিনি যে পরিমাণ লাভ করেছেন তিনি ততটা গভীরভাবে তা উপলব্ধি করবেন। বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যাবে, আজ যারা উন্নতি-অগ্রগতির সবচেয়ে বড় দাবিদার এবং মানবতার শিরোপা যাদের অধিকারে, তারাই সবচেয়ে বেশি মানবতাহীন। তো যে নিজেই রিক্তহস্ত সে অন্যকে কী দিতে পারে? সারকথা এই যে, মনুষ্যত্বের অভাবই বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা আর এই বাস্তব সমস্যার একমাত্র সমাধানের ব্যাপারে যদি কিছু চিন্তা-ভাবনা এবং সাধ্যমতো কিছু কাজ হয়ে থাকে তবে ঈমানওয়ালারাই করছে।
একমাত্র ঈমানওয়ালারাই দাওয়াত- তালীম, তাবলীগ, তারবিয়্যাত-তাযকিয়া, ওয়াজ-নসীহত, দ্বীনী মোযাকারা, সাধ্য অনুযায়ী সীমিত আকারে ‘আমর বিল-মারূফ নাহি আনিল মুনকার’ এবং প্রয়োজনের মুহূর্তে সাধ্যমতো ‘জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ’র মাধ্যমে পৃথিবীতে ইনসানিয়াতের সবক প্রচারে যথাসাধ্য মশগুল রয়েছেন। এটা ভিন্ন কথা যে, ঈমানওয়ালাদের ঈমানী দুর্বলতা তাঁদের খেদমতগুলোকে মানে ও পরিমাণে যথেষ্ট সমৃদ্ধ করতে পারছে না। কিন্তু এ কথা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বিশ্বের মুক্তি ও উন্নতি ঈমানওয়ালাদের ঈমানী তরক্কীর মধ্যেই নিহিত আছে এবং পৃথিবীর ক্ষতি ও অকল্যাণও হয়েছে ঈমান ওয়ালাদের ঈমানী অবনতির কারণে। এই অবক্ষয়ের যুগেও ব্যাপক দাওয়াতের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য খেদমত আল্লাহ তাআলা হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ. (১৩০৩-১৩৬৩ হি.)-এর তাবলীগী জামাআতের মাধ্যমে নিচ্ছেন। এই কাজের মূল উদ্দেশ্য এই যে, বর্তমানে কালেমা পাঠকারী মুসলিমগণও দুনিয়ার মোহ ও বস্তুবাদিতার যে ব্যধিতে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়েছেন সে সম্পর্কে তাদের মধ্যে অনুভূতি সৃষ্টি হওয়া এবং তা থেকে মুক্তিলাভের প্রেরণা জাগ্রত হওয়া। এটাই এ কাজের রূহ বা প্রাণ। আর এর কর্মপদ্ধতি এমনভাবে বিন্যস্য যে, আত্মসংশোধনের সাথে সাথে অনুভূতিহীন মানুষের মধ্যেও দ্বীনের প্রয়োজনের অনুভূতি জাগ্রত করার মেহনত চলতে থাকে।
শরীয়ত দাওয়াতের নীতিমালা নির্ধারণ করে দিয়েছে এবং এর মৌলিক বিধানসমূহও বাতলে দিয়েছে। এই নীতিমালা ও বিধানাবলির অনুসরণ করা প্রত্যেক দাঈ ও দাওয়াতী জামাআতের সার্বক্ষণিক কর্তব্য। এসব নীতি ও বিধানের আওতার মধ্য থেকে দাওয়াতের কর্মপদ্ধতি স্থান-কাল-পরিবেশ ভেদে বিভিন্ন হতে পারে। হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ. কুরআন ও হাদীসের অনেক বড় মুহাক্কিক আলেম ছিলেন। তিনি ছিলেন হিন্দুস্থানের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ দুই দ্বীনী শিক্ষাকেন্দ্র দারুল উলূম দেওবন্দ ও মাজাহিরুল উলূম সাহারানপুর মাদরাসার সন্তান। তিনি কিতাব ও সুন্নাহ গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছেন। সীরাতুন্নবী ও সাহাবা-জীবনী বিস্তৃতভাবে অধ্যয়নের পাশাপাশি তাঁদের জীবনের দাওয়াত অংশটি মনোযোগের সাথে পর্যবেক্ষণ করেছেন। পরবর্তী দাঈ-ইলাল্লাহদের যুগের দাওয়াতের ইতিহাসও পাঠ করেছেন। বড়দের সঙ্গে মশওয়ারা ও মতবিনিময় করেছেন। এরপর একটি কর্মপদ্ধতি প্রস্তুত করেছেন। কাজ আরম্ভ করে যতই সামনে অগ্রসর হয়েছেন ততই অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কাজের মধ্যে মজবুতি এসেছে। তাঁর ব্যথিত হৃদয়ের আহাজারি ও আল্লাহর বান্দাদের প্রতি তাঁর দরদ আল্লাহ তাআলা কবুল করেছেন। ফলে তাঁর কাজ পুষ্পিত ও পল্লবিত হয়েছে এবং আজ পর্যন্ত লক্ষ-কোটি মানুষ এই মেহনতের মাধ্যমে সিরাতে মুস্তাকীমের সন্ধান পেয়েছে। এরপর যে ব্যক্তি যে পরিমাণ উসূলের পাবন্দী করেছেন এবং হক্কানী উলামা-মাশায়েখের সঙ্গে নিজেকে সংযুক্ত করেছেন তিনি তত বেশি উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছেন।
এই কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল, জেলাভিত্তিক ও দেশভিত্তিক তিন দিনের বার্ষিক ইজতিমা। এই ইজতিমাগুলোতে তাজদীদে ঈমান তথা ঈমান পুনর্জীবিত করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। সীরাতে নববী ও হায়াতে সাহাবার ঘটনাবলি শোনানো হয় এবং এ বিষয়ে জোর দেওয়া হয় যে, কিছু সময় দুনিয়ার ব্যস্ততা থেকে মুক্ত হয়ে মসজিদে নেককারদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে ঈমান ও আমলের সবক তাজা করা উচিত, যাতে দুনিয়ার ব্যস-তার মাঝেও আল্লাহ তাআলার স্মরণ থেকে গাফেল না হওয়ার অনুশীলন হয়ে যায়। সময় বের করার জন্য তাশকীল করা হয়, যা এই কাজের প্রাণ। এ ধরনের একটি ইজতিমা আমাদের দেশেও হয়ে থাকে, যা প্রতি বছর যথানিয়মে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটি এখন দেশভিত্তিক ইজতিমা নয়; বরং বিশ্ব ইজতিমার রূপ গ্রহণ করেছে। এই ইজতিমাগুলো এবং এ ধরনের অন্যান্য দ্বীনী ইজতিমা-তা ইলম, আমল, দাওয়াত কিংবা ওয়াজ ও মোযাকারা যে শ্রেণীরই হোক না কেন, সবগুলোর লক্ষ্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সেই শিক্ষার অনুসরণ, যা মুয়ায রা.-এর নিম্নোক্ত কথায় প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তিনি তাঁর সঙ্গীদের লক্ষ করে বলতেন-
‘বসুন, কিছুক্ষণ আমরা ঈমানকে তাজা করি।‘-সহীহ বুখারী
এসব ইজতিমায় অংশ গ্রহণকারীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিম্নোক্ত সুসংবাদের অন্তর্ভুক্ত হবেন, (আরবী) আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন অনেক মানুষকে এমনভাবে উত্থিত করবেন যে, তাদের চেহারা নূরে ঝলমল করতে থাকবে এবং তারা মোতির মিম্বরে উপবিষ্ট থাকবেন। তাঁদের এই মর্যাদা মানুষের মনে ঈর্ষা জাগ্রত করবে। অথচ তারা নবীও নন, শহীদও নন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন একজন গ্রাম্য আরবী ব্যক্তি দোজানু হয়ে বসলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, তাদের পরিচয় বলে দিন, যাতে আমরা তাঁদের চিনতে পারি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা বিভিন্ন গোত্র ও ভূখণ্ডের মানুষ, শুধু আল্লাহর জন্যই পরস্পরের প্রতি মহব্বত পোষণ করে এবং আল্লাহর স্মরণের জন্যই একত্র হয়ে আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করে। অন্য বর্ণনায় আছে, তখন তাঁরা এমনভাবে উত্তম কথামালা আহরণ করে, যেভাবে ফল অনুরাগী উত্তম ফল আহরণ করে থাকে।
তাবলীগী বিশ্ব ইজতিমার বৈশিষ্ট্য ও ফলাফল সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে অনেকগুলো শিক্ষণীয় বিষয় বের হয়ে আসে। যথা :
- ১. অসংখ্য সৌভাগ্যবান এই তিন দিনের ইজতিমায় অংশগ্রহণ করেন। এরপর সেখান থেকেই চিল্লা, তিন চিল্লার জন্য বের হয়ে যান। এই সামান্য সময়ের মেহনত তাদের জীবনে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসে। অন্তত এটুকু তো অবশ্যই হয় যে, তাদের মধ্যে আত্মসংশোধনের চিন্তা এবং ইবাদত-বন্দেগী ও অন্যান্য জরুরী নেক আমলের জন্য সময় বের করার মানসিকতা সৃষ্টি হয়। তাদের সঙ্গী ও সহকর্মীদের চিন্তা করা উচিত যে, আমরাও কেন কিছু সময় বের করে নিজেদের জীবন ও কর্মকে সজ্জিত করছি না।
- ২. অনেক দ্বীনদার মানুষ তাদের পরিবারের কোনো সদস্য, কোনো আত্মীয় কিংবা কোনো প্রতিবেশীর ব্যাপারে চিন্তিত থাকেন। তাদেরকে কীভাবে দ্বীনদার বানানো যায়-এর সহজ কোনো পদ্ধতি তারা খুঁজে পান না। তারা এই সহজ ব্যবস্থাটি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন যে, বুঝিয়ে-শুনিয়ে কোনোভাবে তাদেরকে এই কাজে বের করা যায় কি না। এটি একটি সহজ সমাধান এবং একটি পরীক্ষিত ব্যবস্থা।
- ৩. যাদের অন-রে এই ধারণা বদ্ধমূল যে, বাজেট ছাড়া কোনো বড় কাজ সম্পন্ন হয় না এবং আধুনিক প্রচার-মাধ্যম ব্যবহার করা ছাড়া কোনো সম্মিলিত বৃহৎ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়, তারা এই ইজতিমা থেকে শিক্ষা নিতে পারেন। কাজের মূল শর্ত হল ইখলাস, ইত্তেবায়ে সুন্নত এবং ইনাবত ইলাল্লাহ বা আল্লাহঅভিমুখীতা। আর প্রকৃত বিষয় হল, আল্লাহ তাআলার মদদ ও নুসরত। এটি হাসিল হলে অন্য সব উপকরণ ‘মিন হাইছু লা ইয়াহতাসিব’ অকল্পনীয়ভাবেই ব্যবস্থা হয়ে যায়। কোনো ধরনের আবেদন-নিবেদন ছাড়াই বিভিন্ন সূত্র থেকে সহযোগিতা আসতে থাকে, সে সহযোগিতা দ্বীনী উদ্দেশ্যে হোক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে। অনেক ব্যক্তি, দল বা প্রতিষ্ঠান; বরং রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সর্ব মহলের মানুষ এর ব্যবস্থাপনাগত সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। যদিও এ কথা ভুল নয় যে, যেসব ব্যক্তি বা দল এ ধরনের দ্বীনী কাজের সহযোগিতায় কোনো দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে, বিশেষত রাজনৈতিক স্বার্থে অগ্রসর হয়, তাদের দুনিয়াও বরবাদ আখেরাতও বরবাদ।
- ৪. ইজতিমার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার জন্য অসংখ্য মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ও আন্তরিক পরিশ্রম এবং এত বড় ইজতিমা সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হওয়ার তাৎপর্য সম্পর্কে যদি ক্ষমতাসীন ব্যক্তিবর্গ চিন্তা-ভাবনা করেন, তবে তারা বুঝতে পারবেন যে, মানুষের অন্তরের উপর যদি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা যায় তবে সেটিই হচ্ছে প্রকৃত কর্তৃত্ব। আর এর একমাত্র পদ্ধতি হচ্ছে ঈমান ও আমানত এবং ত্যাগ ও ন্যায়পরায়ণতা অর্জন করে ইনসান হওয়া এবং মানুষকে আল্লাহভীতির তালকীন করে তাদের মাঝে ইনসানিয়াতের রূহ ফুঁকে দেওয়া।
- ৫. সাধারণত মানুষ ইজতিমার বিশাল উপস্থিতি দ্বারা প্রভাবিত হয়। কেননা, তারা বাহ্যদর্শনে অভ্যস্ত। কিন্তু কাজের সঙ্গে জড়িত প্রাজ্ঞজনদের দৃষ্টি থাকে অভ্যন্তরের দিকে। তারা বাহ্যিক সংখ্যাধিক্য দেখেন না, দেখেন এর বৈশিষ্ট্য ও ফলাফল। তারা লক্ষ করেন যে, অংশগ্রহণকারীরা এখান থেকে কী নিয়ে ফিরছেন, কতজন সময় লাগানোর জন্য তৈরি হলেন এবং সময় লাগানোর পর তাদের মধ্যে কী পরিবর্তন এল। তাদের আকীদা-বিশ্বাস, কাজকর্ম, এবং রুচি ও স্বভাব কতটুকু বিশুদ্ধ হল। দ্বীনের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ার পর দ্বীনী বুঝ অর্জন করার জন্য তারা আলেমদের শরণাপন্ন হচ্ছেন কি না? সময় লাগানো অবস্থায় উসূলের পুরোপুরি পাবন্দী না করার কারণে তাদের মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছে কি না এবং হয়ে থাকলে তার সংশোধনের কী পন্থা হতে পারে।
- ৬. প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিদের এসব অনুভূতির মানদণ্ডে যারা নিজেদেরকে বিচার করেন এবং কাজের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে থাকেন, তারাই এ কাজের সুফল পেয়ে থাকেন। এজন্য এই কাজের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ.-এর মালফুযাত ও মাকতুবাতে (বাণী ও পত্রাবলিতে) উল্লেখিত নির্দেশনা ও নীতিমালা বেশি বেশি চর্চা করা প্রয়োজন এবং তাঁর সময়ের মতো সফরে ইলম ও যিকিরের প্রতি খুব বেশি পরিমাণে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। ওয়াপেসির পর কাজের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার পাশাপাশি উলামায়ে কেরাম ও মাশায়েখে কেরামের সাহচর্য গ্রহণ করার প্রতিও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। হযরত রাহ. এ বিষয়গুলোর প্রতি খুব তাগিদ করতেন। অনেক মানুষ শুধু ইজতিমার মুনাজাতে অংশগ্রহণ করে থাকে। অবশ্য কোনো দ্বীনী মজমায় এ ধরনের উপস্থিতিও সওয়াব ও উপকারিতা আছে, কিন্তু আসল কাজ হল পুরো তিন দিন বা সম্ভাব্য বেশি থেকে বেশি সময় সেখানে নেককার ব্যক্তিদের সংস্পর্শে কাটানো এবং উলামায়ে কেরামের বয়ান শুনে কাজের হাকীকত বোঝার চেষ্টা করা এবং নিজের মধ্যে দ্বীনের তলব ও সংশোধনের পিপাসা সৃষ্টি করা। যাদের ব্যাপারে ধারণা করা হয় যে, তারা ইজতিমায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অংশগ্রহণ করেন, যদি বাস্তবতা তাই হয় তবে তাদের খেদমতে আরজ থাকবে, তারা যেন নিয়ত শুদ্ধ করে তওবার নিয়তে সেখানে শরীক হন। হতে পারে, এই ওসিলায় আল্লাহ তাআলা তাদের অন্তরে হেদায়াত ঢেলে দিবেন। ফলে তাদের জীবন লক্ষ্যে পৌঁছবে এবং আসল গন্তব্যপথে বাঁধা দূর হবে।
আল্লাহ তাআলা বস্তুবাদী মানসিকতার বিনাশ করুন! এই মানসিকতা ইসলামী ইবাদত-বন্দেগী এবং ইসলামের নিদর্শন ও পরিভাষা সকল বিষয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে দাখিল করেছে। ফলে এখন অনেকের হজ্ব-উমরাও রাজনৈতিক হয়ে গিয়েছে এবং বিভিন্ন দ্বীনী ইজতিমায় অংশগ্রহণও রাজনৈতিক লক্ষ্যে ধাবিত হয়েছেন। এমনকি তারা এক নতুন প্রকার ‘শহীদ’ রাজনৈতিক শহীদও উদ্ভাবন করেছেন। আল্লাহ তাআলা সকল মুসলমানকে ইখলাস, ঈমান, আমানত ও তাকওয়া নসীব করুন এবং দ্বীনের নিদর্শনাদি বরং যে কোনো দ্বীনী আমলকে দুনিয়ার স্বার্থ হাসিলের মাধ্যম বানানোর মানসিকতা থেকে রক্ষা করুন। আমীন।