১৯.০২.১৪৩৪ হিজরী ০২.০১.২০১৩ ঈ. বুধবার
১৯.০২.১৪৩৪ হিজরী ০২.০১.২০১৩ ঈ. বুধবার
প্রত্যেক ইংরেজী মাসের প্রথম বুধবার আসর থেকে এশা পর্যন্ত মারকাযুদ দাওয়াহ-এর প্রধান দফতর ৩০/১২ পল্লবীতে ‘দ্বীনী মাহফিল’ অনুষ্ঠিত হয়। এ মাসের মাহফিলে আসরের পর আলোচনা করেছেন মাওলানা মুহাম্মাদ ফজলুল বারী। তিনি ‘তাওবার গুরুত্ব ও ফযীলত’ বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, আল্লাহ বড় মেহেরবান । তিনি চান না বান্দা জাহান্নামে যাক। সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে- ‘‘আল্লাহ রাতে তার (ক্ষমার) হাত প্রসারিত করেন যাতে দিনে যারা গুনাহ করেছে তারা তাওবা করতে পারে। আর দিনে তার (ক্ষমার) হাত প্রসারিত করেন যাতে রাতে যারা গুনাহ করেছে তারা তাওবা করতে পারে। আর এ ধারা চলতে থাকবে (কিয়ামতের পূর্বে) পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত।’’ তিনি বান্দাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাওবার সুযোগ দিয়েছেন; বরং জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। তারপরও কি বান্দা তাওবা ছাড়া দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে? সহী মুসলিমের আরেক রেওয়ায়েতে এসেছে, আল্লাহ বান্দার তাওবা কবুল করেন মৃত্যুর ‘গরগরা’ আসা পর্যন্ত।
বাদ মাগরিব আলোচনা করেন, মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মাজীদ। তিনি ‘ঈমানের আলামত’ সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, দুনিয়ার প্রতিটি বস্ত্তর জন্য যেমন রয়েছে নির্ধারিত কিছু আলামত বা চিহ্ন, তদ্রূপ মুমিনের অন্তরে লুকায়িত ঈমান বুঝবারও রয়েছে কিছু নিদর্শন। এ প্রসঙ্গে সহীহ বুখারীতে বিখ্যাত সাহাবী হযরত আম্মার রাযি. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, ‘‘সে ব্যক্তির ঈমান পরিপূর্ণ হল, যে নিজের মধ্যে তিনটি গুণ অর্জন করতে সক্ষম হল। এক. নিজের প্রতি সুবিচার করা, দুই. চেনা অচেনা সবাইকে সালাম দেয়া, তিন. অভাব-অনটন থাকা সত্ত্বেও দান করা।’’
প্রথমোক্ত গুণ তথা নিজের প্রতি সুবিচার করার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে মুহাদ্দিসগণ লেখেন এর অর্থ বান্দা নিজের উপর কোনো জুলুম না করা। কুরআন ও হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী জুলুম একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ, যা কুফর-শিরিক ও ছগীরা-কবীরা গুনাহসহ সকল নিষিদ্ধ বিষয়কে শামিল করে। তাইতো তওবার দুআগুলোতে গুনাহকে প্রকাশ্য জুলুম বলা হয়েছে। এ মর্মে হাদীস শরীফে একটি শিক্ষনীয় ঘটনা বর্ণিত হয়েছে- ‘‘দুজন পথিক এমন এক জাতির নিকট দিয়ে যাচ্ছিল, যাদের ছিল একটি মূর্তি, মূর্তির নামে কোনো কিছু উৎসর্গ করা ছাড়া কেউ সেখান দিয়ে যেতে পারত না। তাদের প্রথামত তারা একজনকে বলল, তুমি মূর্তির নামে কিছু উৎসর্গ কর। সে বলল, আমার কাছে উৎসর্গ করার মত কিছুই নেই। তারা বলল, সামান্য মাছি হলেও কর। সে তাই করল। অমনি লোকেরা তার পথ ছেড়ে দিল। এ কারণে মৃত্যুর পর উক্ত ব্যক্তি দোযখে গেল। দ্বিতীয় ব্যক্তিকেও তারা অনুরূপ কুরবানী করতে বলল, সে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলে দিল, মাছির চেয়েও নগন্য কোনো বস্ত্ত যদি আমাকে দেওয়া হয় তাও আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য কুরবানী করব না। এ কথা শুনে তারা তাঁর গর্দান উড়িয়ে দিল। আর সে বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করল।’’
লক্ষ্য করুন এক লোক নিজের প্রতি সুবিচার করল, ফলে সে জান্নাতে গেল। আরেক লোক নিজের প্রতি জুলুম করল ফলে সে জাহান্নামে গেল।