দুটি প্রশ্ন ও তার উত্তর : ইয়াওমে আরাফার রোযা ও কোরবানির সাথে আকীকা
প্রশ্ন : এবার ঈদুল আযহা হয়েছে শনিবার। শুক্রবার আমাদের এখানে অনেকেই রোযা রেখেছিলেন। কিন্তু জুমআর বয়ানে খতীব সাহেব বললেন, আজকে যারা রোযা রেখেছেন তারা হারাম কাজ করেছেন। রোযা রাখতে হবে আরাফার দিন, যেদিন আরাফার ময়দানে হাজিরা উকূফ করেন। কারন হাদীস শরীফে ‘ইয়াওমে আরাফা’র রোযার কথা বলা হয়েছে। নয় যিলহজ্বের কথা বলা হয়নি। যারা ‘ইয়াওমে আরাফা’ কে নয় যিলহজ্ব বলে ব্যাখ্যা করে তারা ভুল ব্যাখ্যা করে।
তিনি আরো বলেছেন, ‘অনেকে কুরবানীর সাথে আকীকার অংশ দিয়ে থাকেন এভাবে করা জায়েয নয়। কুরবানির সাথে আকীকার অংশ দিলে আকিকা আদায় হবে না।’
তাঁর এসব বক্তব্যে মুসল্লীদের মাঝে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। তর্ক-বিতর্কও হচ্ছে। কুরআন-হাদীসের দলীলসহ সঠিক সমাধান জানালে উপকৃত হব।
উত্তর : যিলহজ্বের প্রথম দশ দিন অতি ফযীলতপূর্ণ। এই দশদিনের আমল ও ইবাদত আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়। বিখ্যাত সাহাবী আবু হুরায়রা রা. আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লামের ইরশাদ বর্ণনা করেছেন-
ما من أيام العمل الصالح فيهن أحب إلى الله من هذا الأيام، قيل : ولا الجهاد في سبيل الله؟ قال : ولا الجهاد في سبيل الله إلا من خرج بنفسه وماله فلم يرجع من ذلك بشيء.
অর্থাৎ এমন কোনো দশক (দশদিন) নেই, যার নেক আমল আল্লাহর কাছে এই দিনগুলোর চেয়েও বেশি প্রিয়। আরজ করা হল, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও কি নয়? বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়, তবে যে তার প্রাণ ও সম্পদ নিয়ে বের হয়েছে এবং কোনো কিছু নিয়েই ফিরে আসেনি (অর্থাৎ শাহাদাত বরণ করেছে)। আলমুসনাদ, আহমদ, হাদীস : ১৯৬৮
হাদীসটি সহীহ বুখারীতে আছে। (দ্র. হাদীস : ৯৬৯, কিতাবুল ঈদাইন); ফতহুল বারী, ইবনে রজব ৬/১১৩
এ হাদীসে যিলহজ্বের দশ দিনের আমল-ইবাদতের ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। রোযাও একটি নেক আমল। তবে যেহেতু ঈদের দিন রোযা রাখা নিষেধ তাই ঈদের দিন বাদ দিয়ে তার আগের নয় দিন রোযা রাখাও এ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত।
আল্লামা ইবনে হায্ম জাহেরী রাহ.ও এই হাদীসের কারণে যিলহজ্বের প্রথম নয়দিন রোযা রাখা মুস্তাহাব বলেছেন।
তো যারা ঈদের আগের দিন রোযা রেখেছেন (যা ছিল নয় যিলহজ্ব) তারা হারাম কাজ করেছেন বলে দাবি করা উপরোক্ত হাদীসের সরাসরি বিরোধী।
তেমনি ‘ইয়াওমে আরাফা’র রোযা সম্পর্কে প্রশ্নে যে বক্তব্য উদ্ধৃত হয়েছে তা-ও সঠিক নয়। এ বিষয়ে প্রসিদ্ধ হাদীসে-
(صيام يوم عرفة أحتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله والسنة التي بعده)
‘ইয়াওমে আরাফার রোযার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, তিনি এর দ্বারা এর আগের এক বছরের ও পরের এক বছরের গোনাহ মাফ করবেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৬২
‘ইয়াওমে আরাফা’ অর্থ নয় জিলহজ্ব। এটিই সঠিক ব্যাখ্যা। কারণ এই রোযা আরাফা বা উকুফে আরাফার আমল নয়; তা ঐ তারিখের আমল। ‘ইয়াওমে আরাফা’ হচ্ছে ঐ তারিখের (নয় যিলহজ্বের) পারিভাষিক নাম। যেহেতু ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ রোকন হজ্বের প্রধান রোকন উকুফে আরাফা ঐ স্থানের তারিখ হিসাবে নয় যিলহজ্বে আদায় করা হয় তাই এ তারিখেরই নাম পড়ে গেছে ‘ইয়াওমে আরাফা’। একারণে যেসব আমল আরাফা বা উকূফে আরাফার সাথে বিশেষভাবে সংশ্লিষ্ট নয়; বরং যিলহজ্বের নয় তারিখের সাথে সংশ্লিষ্ট, সেগুলোকেও ‘ইয়াওমে আরাফা’র আমল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। উদ্দেশ্য, নয় তারিখে বা ঈদের আগের দিন আমলটি করতে হবে।
এ প্রয়োগের কারণে (নয় যিলহজ্বকে ‘ইয়াওমে আরাফা’ বলা) আরাফা ও তার নিকটবর্তী অঞ্চলে তো কোনো বিভ্রান্তি হয় না, কিন্তু দূরত্বের কারণে ঐ অঞ্চলের সাথে যেসব অঞ্চলের তারিখের পার্থক্য হয় সেখানে-যারা এই প্রয়োগের সঠিক অর্থ সম্পর্কে অবগত নয় তাদের-বিভ্রান্তি ঘটে। যেমনটা প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঘটেছে।
এ প্রয়োগের (ইয়াওমে আরাফা অর্থ নয় যিলহজ্ব) আরেকটি দৃষ্টান্ত ‘তাকবীরে তাশরীক’। এটি আরাফা বা উকুফে আরাফার বিশেষ আমল নয়। এটি শুরু হয় নয় যিলহজ্ব ফজর থেকে, অথচ যে দলীল দ্বারা নয় তারিখ থেকে তাকবীরে তাশরীক শুরু হওয়া প্রমাণিত তাতেও ‘ইয়াওমে আরাফা’ শব্দই আছে। দলীলের আরবী পাঠ এই-
عن علي رضي الله عنه : أنه كان يكبر بعد صلاة الفجر يوم عرفة، إلى صلاة العصر من آخر أيام التشريق، ويكبر بعد العصر.
رواه ابن أبي شيبة في مصنفه وإسناده صحيح كما في الدراية.
আলমুসান্নাফ, ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৫৬৭৭, ৫৬৭৮
এখানেও কি ‘ইয়াওমে আরাফা’ অর্থ নয় যিলহজ্ব করা ভুল?
দ্বিতীয়ত, গোটা মুসলিম উম্মাহর ইজমা আছে যে, ইয়াওমে আরাফার পরের দিনটিই ইয়াওমুন নাহর।
এটি প্রমাণ করে, ‘ইয়াওমে আরাফা’ একটি তারিখের নাম, আর তা হচ্ছে নয় যিলহজ্ব, যেমন ‘ইয়াওমুন নাহর’ একটি তারিখের নাম, আর তা হচ্ছে দশ যিলহজ্ব। কোনো অঞ্চলের অধিবাসীরা যদি ঐ অঞ্চলের তারিখ অনুযায়ী ইয়াওমুন নাহরের অর্থ দশ জিলহজ্ব ধরে ইয়াওমে আরাফার এমন কোনো অর্থ করেন, যদ্বারা সেখানের তারিখ হিসেবে তা হয়ে যায় আট যিলহজ্ব, তাহলে সেটা হবে এক উদ্ভট, হাস্যকর ও ইজমা বিরোধী কথা। কারণ ইয়াওমে আরাফা ও ইয়াওমুন নাহরের মাঝে আরেকটি দিন স্বীকার করে নেওয়া ইজমার সরাসরি বিরোধী।
তো এ জাতীয় বিচ্ছিন্ন চিন্তা ও বক্তব্য আরো কিছু ক্ষেত্রেও বিচ্ছিন্নতাকে অনিবার্য করে তুলবে, যা নিয়ে এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনার অবকাশ নেই।
উল্লেখ্য, আমাদের অঞ্চলে এবার নয় যিলহজ্ব ছিল শুক্রবার। একারণে শুক্রবারকে রোযার জন্য নির্দিষ্ট না করার হাদীসটিও কেউ উদ্ধৃত করতে পারেন। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, বাইতুল্লাহর তাওয়াফকালে হযরত জাবির রা.কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘শুক্রবারে রোযা রাখতে কি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন।’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, এই ঘরের মালিকের কসম!’
এই হাদীসে শুধু নিষেধের কথা বর্ণিত হয়েছে। তার ক্ষেত্র, পর্যায় ও তাৎপর্য সঠিকভাবে বুঝতে হলে এ হাদীসের অন্যান্য বর্ণনা এবং এ বিষয়ের অন্যান্য হাদীস সামনে রাখতে হবে। কিছু হাদীস লক্ষ্য করুন :
১. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা কেউ জুমুআর দিন রোযা রেখো না তবে যদি তার আগের বা পরের দিন রোযা রাখো (তাহলে অসুবিধা নেই)।
لا يصم أحدكم يوم الجمعة إلا أن يصوم قبله أو يصوم بعده. رواه البخاري ومسلم واللفظ له.
-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৯৮৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৪৪/১৪৭, কিতাবুস সিয়াম
২. অন্য বর্ণনায় আবু হুরায়রা রা. থেকে আছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা জুমার রাতকে অন্যান্য রাত থেকে আলাদা করে ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করো না। এবং জুমার দিনকে অন্যান্য দিন থেকে আলাদা করে রোযার জন্য নির্ধারণ করো না। তবে তা (জুমার দিন) যদি তোমাদের কারো রোযায় পড়ে যায় তাহলে অসুবিধা নেই।
لا تختصوا ليلة الجمعة بقيام من بين الليالي، ولا تختصوا يوم الجمعة بصيام من بين الأيام، إلا أن يكون في صوم يصومه أحدكم.
-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৪৪/১৪৮
৩. খোদ জাবির রা.-এর হাদীসটির মূল পাঠ, যা নাসায়ীর সুনানে কুবরায় রয়েছে-
محمد بن عباد بن جعفر قال : قلت لجابر : أسمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم ينهى أن يفرد يوم الجمعة بصوم؟ قال : إي ورب الكعبة.
এতে জুমআর দিন রোযা রাখা নয়; বরং শুধু জুমআর দিনকে রোযার জন্য নির্দিষ্ট করে নেওয়াকে নিষেধ করা হয়েছে।
(দ্র. আসসুনানুল কুবরা নাসায়ী, হাদীস : ২৭৬০-২৭৬২ ফাতহুল মুলহিম ৩/১৫৪)
এই সকল রেওয়ায়েত ও হাদীসের কারণে সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেন, এসব হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়, জাবির রা.-এর হাদীসের কোনো বর্ণনায় যে নিষেধ সাধারণভাবে বর্ণিত হয়েছে তা বিশেষ অবস্থার মাঝে সীমাবদ্ধ।
আরো প্রমাণিত হয় যে, যারা জুমার আগের বা পরের দিনও রোযা রাখে, কিংবা জুমার দিনটি পড়ে যায় তার সাধারণ অভ্যাসের রোযার তারিখে, যেমন কারো আইয়ামে বীযের রোযা রাখার অভ্যাস আছে (আর এর কোনো দিন জুমার দিন হল) কিংবা বিশেষ কোনো দিবসের যেমন ইয়াওমে আরাফার রোযা রাখার অভ্যাস আছে আর ঐ তারিখটি জুমার দিন হল, তার জন্য এ দিন (আলাদা করেও) রোযা রাখা বৈধ (হারাম নয়)। তেমনি কেউ মান্নত করল, অমুক যেদিন আসবে কিংবা অমুক যেদিন সুস্থ হবে সে দিন রোযা রাখব আর (ঘটনাক্রমে) দিনটি জুমার দিন হল, তার জন্যও (শুধু) এদিন রোযা রাখা জায়েয।-ফাতহুল বারী ৪/২৭৫ (সংক্ষেপিত)
হাদীস শরীফে জুমার দিনকে রোযার জন্য আর জুমার রাতকে ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করতে কেন নিষেধ করা হল-এ বিষয়ে আলিমগণ বিভিন্ন তাৎপর্য উল্লেখ করেছেন। শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহ.-এর ভাষায় এর একটি তাৎপর্য হল, শরীয়ত যখন এ দিবসকে বিশেষ কিছু ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করেছে এবং এর ফযীলত বর্ণনা করেছে তখন আশঙ্কা ছিল অতিউৎসাহীরা নিজেদের পক্ষ হতে এদিনের রোযাকেও বাড়িয়ে নিবে। এই বাড়াবাড়ির পথ বন্ধ করার জন্য এ আদেশ জারি করা হয়েছে। (এ থেকে জুমার রাতকে ইবাদতের জন্য নির্ধারণ না করার আদেশের তাৎপর্যও বোঝা যায়)। (দ্র. হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ; ফতহুল মুলহিম ৩/১৫৫-১৫৬)
যাহোক, উপরের আলোচনা থেকে অন্তত এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে, ইয়াওমে আরাফা (নয় যিলহজ্বের) রোযার উদ্দেশ্যে যারা এদিন রোযা রেখেছেন তাদের ক্ষেত্রে জুমার দিন রোযা না-রাখার আদেশ সম্বলিত হাদীস প্রয়োগ করার সুযোগ নেই।
আপনার দ্বিতীয় প্রশ্ন, কুরবানীর সাথে আকীকা করার প্রসঙ্গে। কুরবানি ও আকীকা আলাদাভাবেই করা উচিৎ। তবে একত্রে করলে আদায় হবে না তা নয়। একত্রে করলেও কুরবানী-আকীকা দুটোই আদায় হবে। কারণ আকীকাও এক ধরনের কুরবানী। হাদীস শরীফে আকীকার উপরও ‘নুসুক’ শব্দের প্রয়োগ হয়েছে। আর এখানে ‘নুসুক’ অর্থ কুরবানী। হাদীসের আরবী পাঠ এই-
سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن العقيقة، فقال : لا أحب العقوق كأنه كره الاسم، قالوا يا رسول الله! نسألك عن أحدنا يولد له، فقال : من أحب منكم أن ينسك عن ولده فليفعل، على الغلام شاتان مكافأتان، وعلى الجارية شاة.
(দ্র. আলমুসান্নাফ, আব্দুর রাযযাক : ৭৯৬১; আলমুসনাদ, আহমদ : ৬৭১৩, ৬৭২২; আসসুনান, আবু দাউদ (আকীকা অধ্যায়) ২৮৪২; আস-সুনান, নাসায়ী : ৭/১৬২, ১৬৩; আলমুসান্নাফ, ইবনে আবী শাইবা ১২/৩২৪ হাদীস : ২৪৭২৭; আলমুসতাদরাক, হাকিম, ৫/৩৩৭, হাদীস : ৭৬৬৬)
سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن العقيقة، فقال : لا يحب الله العقوق، من ولد له منكم ولد فأحب أن ينسك عنه فليفعل.
(দ্র. আলমুসান্নাফ, ইবনে আবী শাইবা ১২/৩২১, হাদীস : ২৪৭২২; আলমুয়াত্তা, ইমাম মালিক, আকীকা অধ্যায়, হাদীস : ৬৫৮)
আকীকাও যখন এক প্রকারের কোরবানী তখন একটি গরু বা উট দ্বারা একাধিক ব্যক্তির (সাত জন পর্যন্ত)
আলাদা-আলাদা কুরবানী আদায় হওয়ার হাদীসগুলো থেকে কুরবানী-আকীকা একত্রে আদায়ের অবকাশও প্রমাণিত হয়। এটা শরীয়তের পক্ষ হতে প্রশস্ততা যে, গরু বা উটের ক্ষেত্রে একটি ‘জবাই’ সাত জনের সাতটি জবাইয়ের স্থালাভিষিক্ত গণ্য হয়। একারণে একটি উট বা গরু সাত জনের পক্ষে যথেষ্ট হয়।
সহীহ মুসলিমে সাহাবী জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘আমরা হজ্বের ইহরাম বেঁধে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বের হলাম। তিনি আমাদেরকে আদেশ করলেন যেন প্রত্যেক উট ও গরুতে সাতজন করে শরীক হয়ে কুরবানী করি।’-সহীহ মুসলিম, কিতাবুল হজ্ব, হাদীস : ১৩১৮/৩৫১
خرجنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم مهلين بالحج، فأمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم أن نشترك في الإبل والبقر، كل سبعة منا في بدنة.
অন্য বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘(একটি) গরু সাতজনের পক্ষ হতে এবং (একটি) উট সাতজনের পক্ষ হতে (কুরবানী করা যাবে)।’
البقرة عن سبعة والجزور عن سبعة.
-আস-সুনান, আবু দাউদ, হাদীস : ২৮০১, কিতাবুল আযাহী
সারকথা, ‘নুসুক’ বা কুরবানীর ক্ষেত্রে শরীয়তের প্রতিষ্ঠিত মূলনীতি এই যে, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার ক্ষেত্রে একটি ‘জবাই’ (إراقة الدم) দ্বারা একটি কুরবানী আদায় হলেও উট ও গরুর ক্ষেত্রে একটি ‘জবাই’ দ্বারা সাতটি কুরবানী আদায় হতে পারে। অর্থাৎ এখানে ‘জবাইয়ে শরীক হওয়া’ও (সর্বোচ্চ সাত জনের) কুরবানী আদায়ের পক্ষে যথেষ্ট। আকীকাও যেহেতু ‘নুসুক’ বা কুরবানী তাই এ মূলনীতিতে আকীকাও শামিল থাকবে। সুতরাং ‘একটি পশু জবাই’ করা দ্বারা যেমন তা আদায় হবে, তেমনি নির্ধারিত নিয়মে ‘জবাইয়ে শরীক হওয়ার’ (شركة في دم) দ্বারাও তা আদায় হবে।
সুতরাং এ প্রশ্নের অবকাশ নেই যে, ‘আকীকায় তো পশু জবাই করতে বলা হয়েছে। অতএব অন্তত একটি পশু জবাইয়ের দ্বারাই তা আদায় হতে পারে।’ কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে পশু জবাই (إراقة الدم)-এর দায়িত্ব যেমন একটি পশু জবাই করার দ্বারা আদায় হয় তেমনি নির্ধারিত পশুতে ‘শরীক হওয়ার’ দ্বারাও (شركة في دم) আদায় হয়। আকীকার ক্ষেত্রে এই মূলনীতি প্রযোজ্য নয় বলে দাবি করলে ব্যতিক্রমের বিধানসম্বলিত দলীল লাগবে। আমাদের জানামতে এমন কোনো দলীল নেই।
থাকল, দুই ধরনের কুরবানী এক পশু দ্বারা আদায় হওয়ার প্রশ্ন, তো এটি একটি ইজতিহাদী বিষয়। একারণে মুজতাহিদ ইমামগণের মাঝে এ বিষয়ে কিছু মতপার্থক্যও আছে। কিন্তু নস বা কুরআন-সুন্নাহর সুষ্পষ্ট কোনো বিধানে এ বিষয়ে নিষেধ আছে বলে আমাদের জানা নেই; বরং অনুমোদনের পক্ষে হাদীস-আছারের দলীল আছে। পক্ষে বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম ‘আতা ইবনে আবী রাবাহ রাহ. এর ফতোয়াটিই সম্ভবত বিজ্ঞজনের যথেষ্ট হবে। তিনি বলেছেন, ‘উট ও গরু সাতজনের পক্ষ হতে কুরবানী হতে পারে। আর এতে শরীক হতে পারে কুরবানীকারী, তামাত্তু হজ্বকারী এবং হজ্বের ইহরাম গ্রহণের পর হজ্ব আদায়ে অপারগ ব্যক্তি।
(দ্র. আসসুনান, সায়ীদ ইবনে মানসূর-আল কিরা লি-কাসিদি উম্মিল কুরা, পৃ. ৫৭৩)
দেখুন সালাফের যুগেই একটি পশু দ্বারা তিন ধরনের কুরবানী আদায় হওয়ার ফতোয়া কত স্পষ্টভাবে দেওয়া হয়েছে।
আশা করি, আপনার প্রশ্নের উত্তরের জন্য আপাতত এটুকু আলোচনাই যথেষ্ট হবে।