হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ.-এর মালফূযাত থেকে
হযরত মাওলানা বলেন, কী ভুল ধারার বিস্তার ঘটেছে! অন্যরা যদি আমাদের কথা গ্রহণ করে তাহলে একে আমাদের সফলতা মনে করি আর গ্রহণ না করলে একে আমাদের ব্যর্থতা মনে করি। এই পথে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। অন্যদের মানা, না-মানা তো তাদের কাজ। তাদের কাজের ভিত্তিতে আমাদের সফলতা-ব্যর্থতা নির্ণিত হবে কীভাবে? আমাদের সফলতা হচ্ছে আমরা আমাদের দায়িত্ব পুরাপুরি পালন করা। অন্যরা গ্রহণ না করলে সেটা তাদের ব্যর্থতা। তাদের না-মানার কারণে আমরা ব্যর্থ হব কেন? লোকেরা ভুলে গেছে, তারা ‘গ্রহণ করানো’কে (যা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাজ) নিজের কাজ ও নিজের দায়িত্ব ধরে নিয়েছে। অথচ আমাদের দায়িত্ব কেবল সুন্দরভাবে নিজের চেষ্টা সম্পন্ন করা। মানানোর ও গ্রহণ করানোর দায়িত্ব তো নবীগণকেও দেওয়া হয়নি।
হ্যাঁ, না মানলে এই শিক্ষা নেওয়া উচিত যে, হয়তো আমাদের চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রয়েছে এবং আমাদের পক্ষে কাজের হক আদায় করা সম্ভব হয়নি, যার কারণে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই ফলাফলের মুখোমুখি করেছেন। এরপর নিজের চেষ্টার পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া এবং মানে ও পরিমাণে দুআ ও তাওফীক প্রার্থনা বৃদ্ধি করার দৃঢ় সংকল্প করবে। (মালফূযাত : ২৮)
এক প্রসঙ্গে বলেন, কথায় তুষ্ট হওয়া আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ভালো কাজের কথা বলাকেই আমরা ভালো কাজের স্থলবর্তী ধরে নিয়েছি। এই অভ্যাস ত্যাগ করুন এবং কাজ করুন কাজ।
كار كن كار بگذر از گفتار
كندريں راہ كار دارد كار
কাজ কর কাজ। ত্যাগ কর কথা। কারণ এপথে কাজই হচ্ছে কাজের বিষয়। (মালফূযাত : ৩২)
* একদিন ফজরের নামাযের পর, যখন নিযামুদ্দীনের মসজিদে এই কাজে অংশ-গ্রহণকারীদের বড় মজমা ছিল এবং হযরত মাওলানা এত দুর্বল ছিলেন যে, বিছানায় শায়িত অবস্থায়ও দু-চার শব্দ জোরে বলতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় এক খাস খাদিমকে ডাকলেন এবং তার মাধ্যমে পুরা মজমাকে লক্ষ করে বললেন, ‘আপনাদের এই সকল চলাফেরা এবং সকল চেষ্টা-প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি না এর সাথে ইলমে দ্বীন ও আল্লাহর যিকরের বিষয়ে পুরাপুরি যত্মবান হন। (ইলম ও যিকর হচ্ছে দু’টি ডানার মতো, যা ছাড়া শূন্যে ওড়া সম্ভব নয়।) বরং প্রবল আশংকা আছে, ঐ দুই বিষয়ে অবহেলা করা হলে এই মেহনত-মুজাহাদা-আল্লাহ না করুন- ফিতনা ও গোমরাহির এক নতুন কারণ হয়ে দাড়াবে।
দ্বীনের ইলমই যদি না থাকে তাহলে তো ঈমান ও ইসলাম একটি নাম সর্বস্ব ও প্রথাগত বিষয়ে পরিবর্তন হবে। তদ্রূপ আল্লাহর যিকর ছাড়া ইলম যদিও থাকে তা তো পুরাপুরি অন্ধকার। আর এ কারণেই ইলমে দ্বীন ছাড়া যিকরুল্লাহর আধিক্য বড় আশংকাজনক। এককথায়, ইলমের মাঝে নূর আসে যিকরের দ্বারা। আর যিকরের প্রকৃত সুফল ও বরকত হাসিল হবে ইলমে দ্বীন দ্বারা। অনেক ক্ষেত্রেই জাহিল সূফীদেরকে শয়তান তার হাতিয়ার বানিয়ে নেয়। সুতরাং এই বিষয়ে ইলম ও যিকরের গুরুত্ব কখনো ভোলা যাবে না। সর্বদা এর দিকে বিশেষ যত্ন দেওয়া চাই। নতুবা আপনার এই তাবলীগী কাজকর্মও শুধু ইতস্তত ঘুরাফেরায় পর্যবসিত হবে এবং-আল্লাহ না করুন-আপনারা কঠিন ক্ষতির শিকার হয়ে যাবেন।
(এই নির্দেশনায় হযরত মাওলানার উদ্দেশ্যে এই ছিল যে, এ কাজের কর্মীরা দাওয়াত ও তাবলীগের পথের মেহনত-মুজাহাদা, সফর ও হিজরত এবং ঈছার ও কোরবানিকেই মূল কাজ মনে করবেন না। যেমনটা আজকাল ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে, বরং দ্বীনী ইলমের চর্চা, যিকরুল্লাহর অভ্যাস এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করাকেও নিজের কর্তব্য জ্ঞান করবেন। অন্যভাষায় তাদের শুধু ‘সৈনিক’ ও ‘ভলান্টিয়ার’ নয়, ইলমে দ্বীন অন্বেষণকারী ও আল্লাহকে স্মরণকারী বান্দাও হতে হবে।) (মালফূযাত : ৩৫)
* একবার বলেন, মাওলানা! আল্লাহর হুকুম-আহকামের ‘তাফাক্কুদ’ (কোনোটা অনাদায়ী থাকছে কি না তা খোঁজ করা) অতি প্রয়োজন। সর্বদা এই খোঁজে থাকা আবশ্যক। যেমন কোনো কাজে মশগুল হওয়া দুটো বিষয়কে অনিবার্য করে : এক. এ কাজে ব্যস্ত ও মনোযোগী হওয়া। দুই. এ কাজে মশগুল থাকা অবস্থায় অন্যান্য কাজ থেকে বিরত থাকা। সুতরাং চিন্তা করতে হবে, যেসব কাজ থেকে এখন বিরত থাকা হচ্ছে সেসবের মধ্যে কোনোটা বর্তমান কাজের চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ নয় তো। আর এটা ‘তাফাক্কুদ’ ও চিন্তা ভাবনা ছাড়া হবে না। (মালফূযাত : ৪৫)
* একবার বললেন, নামাযের আগে কিছুক্ষণ নামাযের মোরাকাবা (নামায সম্পর্কে চিন্তা) করা উচিত। প্রতীক্ষা ছাড়া যে নামায হয় তা হয় প্রাণহীন, হালকা নামায। সুতরাং নামাযের আগে নামায সম্পর্কে চিন্তা করা উচিত।
ফায়েদা : শরীয়ত এরই জন্য ফরযের আগে সুন্নত, নফল, ইকামত ইত্যাদির বিধান দিয়েছে, যাতে নামাযের মুরাকাবা ভালোভাবে হয়। কিন্তু আমরা না সুন্নত, নফল ও ইকামতের এই ফায়েদা ও উপকারিতা উপলব্ধি করি, না তা অর্জন করি। একারণে আমাদের ফরযসমুহও অপূর্ণাঙ্গভাবে আদায় হয়।
اللهم إني أسألك تمام الوضوء وتمام الصلاة وتمام رضوانك، آمين
ইয়া আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি পূর্ণ অযু, পূর্ণ নামায এবং তোমার পূর্ণ সন্তুষ্টি। আমীন। (মালফূযাত : ৪৬)
* একবার বললেন, আমি শুরুতে এভাবে যিকরের তালীম দেই : প্রতি নামাযের পর তাসবীহে ফাতেমী ও তৃতীয় কালেমা-‘সুবহানাল্লাহ,ওয়ালহামদুলিল্লাহ, ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ।’ সকাল-সন্ধ্যায় একশ বার করে দরূদ শরীফ ও ইস্তিগফার। কুরআন তিলাওয়াত কিরআত শুদ্ধ করার সাথে; নফল সমূহের মাঝে তাহাজ্জুদের তাকীদ এবং আহলে যিকরের কাছে যাওয়া। যিকির বিহীন ইলম অন্ধকার আর ইলম বিহীন যিকির ফিৎনার সূতিকাগার। (মালফূযাত : ৪৯)
* একবার বললেন, হযরত মাওলানা থানভী রাহ. অনেক বড় কাজ করেছেন। আমার অন্তর এ-ই চায় যে, তালীম তাঁরটি হোক আর তাবলীগের পদ্ধতি আমারটি। এর দ্বারা তাঁর তালীম বিস্তার লাভ করবে।
এরপর বললেন, ওয়াজের মধ্যে শরীয়তের হুকুম-আহকামের ‘ইলাল ও মাসালিহ’ তথা তাৎপর্য ও কার্যকারণ বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকুন। শুধু তিনটি বিষয় সামনে রাখার শিক্ষা লোকদের দিতে হবে : এক. সকল কাজে আল্লাহকে রাজি খুশি করার ইচ্ছা। দুই. ইয়াকীন ও বিশ্বাস। (মনে রাখতে হবে) যে আমল আখিরাতের ইয়াকীনের সাথে হবে তা আখিরাতে ফলপ্রসূ হবে। তিন. এ আমল এমন কোনো ফায়েদার জন্য করবে না, যা মৃত্যুর আগে দুনিয়াতে পাওয়া যায়। সেটা তো এমনি এমনি হাসিল হয়ে যাবে। তা উদ্দেশ্য নয়। যদিও তা হাসিল হওয়া নিশ্চিত এবং তার বিশ্বাস রাখাও জরুরি, কিন্তু তা আমলের উদ্দেশ্য বানানো যাবে না।
এরপর বললেন, হ্যাঁ, যেখানে প্রয়োজন হবে সেখানে তাৎপর্য ও উপকারিতা বর্ণনায় দোষ নেই, কিন্তু সব জায়গায় বর্ণনা না করা চাই। (মালফূযাত : ৫৬)
* বললেন, ইলম থেকে আমল পয়দা হওয়া চাই আর আমল থেকে যিকির। তাহলেই ইলম ইলম হবে এবং আমল আমল হবে। ইলম থেকে যদি আমল পয়দা না হয় তাহলে তা পুরাপুরি অন্ধকার আর আমল থেকে যদি আল্লাহর স্মরণ পয়দা না হয় তাহলে তা প্রাণহীন। আর ইলমহীন যিকর হচ্ছে ফিৎনা। (মালফূযাত : ৬৩)
* বললেন, আমাদের তাবলীগী কর্মীদের তিন শ্রেণীর মাঝে তিন উদ্দেশ্যেই বিশেষভাবে যাওয়া উচিত :
১. উলামা ও সালেহীনের খিদমতে, দ্বীন শেখা ও দ্বীনের উত্তম প্রভাব গ্রহণ করার জন্য।
২. নিজের চেয়ে নীচের স্তরের মানুষের মাঝে, দ্বীনের কথা প্রচারের মাধ্যমে নিজের পূর্ণতা ও নিজের দীনদারীতে মজবুতী আনার জন্য।
৩. বিভিন্ন শ্রেণীর মাঝে, তাদের বিভিন্ন গুণ নিজের মাঝে আহরণ করার জন্য। (মালফূযাত : ৮৬)
* বলেন, আমাদের এই দ্বীনী দাওয়াতের সকল কর্মীদের এ কথা ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত যে, তাবলীগী জামাতে বের হওয়ার উদ্দেশ্য কেবল অন্যকে জানানো এবং অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়া নয়; বরং এর দ্বারা নিজের ইসলাহ ও নিজের তালীম-তরবিয়াতও উদ্দেশ্য। সুতরাং বের হওয়ার সময়টুকু ইলম ও যিকরের খুব বেশি পাবন্দি করা চাই। ইলমে দ্বীন ও আল্লাহর যিকরের পাবন্দি ছাড়া বের হওয়া কিছুই না।
এরপর এটাও জরুরি যে, ইলম ও যিকরের এই পাবন্দি এ পথে নিজের বড়দের সাথে সম্পর্ক রেখে এবং তাদের নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে হওয়া। আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের ইলম ও যিকর ছিল আল্লাহ তাআলার নির্দেশনা অনুযায়ী আর সাহাবা কেরাম ইলম ও ও যিকর নিতেন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে। হজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের পুরা নেগরানী (তদারকি) করতেন। এভাবে প্রতি যুগের মানুষ নিজের বড়দের নিকট থেকে ইলম ও যিকর গ্রহণ করেছেন এবং তাদের নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানেই পূর্ণতা অর্জন করেছেন। এভাবে আজও আমরা আমাদের বড়দের তত্ত্বাবধানের মুখাপেক্ষী। অন্যথায় শয়তানের জালে ফেঁসে যাওয়ার বড় আশংকা আছে। (মালফূযাত : ১৩৪)
* একদিন এক স্নেহের পাত্রকে (মাওলানার তাবলীগী কাজের সাথেও যার সম্পর্ক ছিল এবং রচনা ও লেখালেখি তাঁর বিশেষ ব্যস্ততা ছিল) লক্ষ্য করে বলেন, বর্তমান সময় পর্যন্ত আমার পছন্দ ছিল না যে, তাবলীগী কাজের বিষয়ে বেশি পড়া-লেখা হোক এবং লেখনীর মাধ্যমে এর দাওয়াত দেওয়া হোক; বরং আমি তা নিষেধ করে এসেছি। কিন্তু এখন আমি বলি, লেখা উচিত। তুমিও খুব লেখ। তবে এখানে অমুক অমুককে আমার এই কথা জানিয়ে তাদের মতামতও নিও। (মাওলানা যাদের নাম বলেছিলেন তাদেরকে তাঁর কথা জানিয়ে মশোয়ারা চাওয়া হলে তারা এই মত প্রকাশ করলেন যে, এ বিষয়ে এ পর্যন্ত যে নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে সেটিই বলবৎ থাকুক। আমাদের মতে এটিই উত্তম) হযরত মাওলানাকে তাঁদের মতামত জানানো হলে তিনি বললেন, ‘প্রথমে আমরা ছিলাম একদম সঙ্গীসাথীহীন অবস্থায়। আমাদের কথা কারো বুঝেই আসত না। ঐ সময় এটাই জরুরি ছিল যে, আমরা নিজেরা সশরীরে যেয়ে মানুষের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি করি এবং নিজেদের বাস্তব কর্মের দ্বারা আমাদের কথা বোঝাই। ঐ সময় যদি লেখনীর দ্বারা ব্যাপকভাবে এই দাওয়াত দেওয়া হত তাহলে মানুষের উল্টো-সিধা বোঝার এবং নিজেদের সেই বুঝমতো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আশঙ্কা ছিল। তদ্রূপ এই দাওয়াত কারো কিছুটা মনে ধরলে নিজেদের বুঝ মতো উল্টো-সিধা প্রয়োগের চেষ্টা করত। এরপর ফলাফল ভুল হলে আমাদের স্কিমকেই ত্রুটিপূর্ণ বলত। এজন্য লেখনীর মাধ্যমে লোকদের কাছে আমাদের দাওয়াত পৌঁছুক তা উত্তম মনে করিনি। কিন্তু আল্লাহ তাআলার ফযল ও করমে, তাঁর নুসরতে এখন হালতের পরিবর্তন ঘটেছে। আমাদের অনেক জামাত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে কাজের নিয়ম-পদ্ধতি দেখিয়ে দিয়েছে। এখন লোকেরা আমাদের কাজের বিষয়ে আগ্রহী হয়ে আমাদের কাছে আসছে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এত মানুষ দিয়েছেন যে, যদি বিভিন্ন এলাকায় তাকাযা তৈরি হয় এবং কাজ শেখানোর জন্য জামাতের প্রয়োজন হয় তাহলে জামাত পাঠানো যাবে। তো এ অবস্থাতেও প্রাথমিক সঙ্গীহীন অবস্থার প্রতিটি অংশকে ধরে রাখা ঠিক নয়। এ জন্য আমি বলি, লেখনীর মাধ্যমেও দাওয়াত দেওয়া উচিত। (মালফূযাত : ১৩৯)
এক প্রসঙ্গে বলেন, এ বিষয়ের এক মূলনীতি এই যে, স্বাধীন ও স্বেচ্ছাচারী না হওয়া চাই; বরং নিজেদেরকে ঐ সকল বড়দের পরামর্শের অধীন রাখুন, যাদের উপর দ্বীনের বিষয়ে ঐ সকল পূর্বসূরী আস্থা প্রকাশ করেছেন, আল্লাহর সাথে যাঁদের সম্পর্ক সর্বজনবিদিত ও সর্বজনস্বীকৃত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর সাহাবায়ে কেরামের সাধারণ নীতি এ-ই ছিল যে, তারা ঐ-ব্যক্তিত্বদের উপরই বেশি ভরসা করতেন, যাদের উপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষ আস্থা রেখেছেন। এঁদের পর ঐ সব ব্যক্তিবর্গই অধিক আস্থাযোগ্য গণ্য হয়েছেন যাদের উপর হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর রা. আস্থা রেখেছেন। দ্বীনের বিষয়ে নির্ভর করার জন্য খুব সতর্ক নির্বাচন জরুরি। অন্যথায় বড় রকমের গোমরাহীর আশঙ্কা আছে। (মালফূযাত : ১৪৩)
* বলেন, আমি রাজনৈতিক অঙ্গনে কর্মব্যস্তদের প্রতিও কৃতজ্ঞ। তাঁরা সরকারকে নিজেদের দিকে মনোযোগী করে রেখেছেন, যার কারণে আমি এতদিন নিশ্চিন্তে কাজ করতে পেরেছি। (মালফুযাত : ১৫৯-এর অংশবিশেষ, পৃষ্ঠা : ১১৭)
* বলেন, তাবলীগী জামাতের শিক্ষাসিলেবাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ তাজভীদ। কুরআন শরীফ উত্তমরূপে পাঠ করা খুবই জরুরি।
ما اذن الله لشيء ما اذن لنبى يتغنى بالقرآن
তাজভীদ মূলত ঐ ‘তাগান্নী বিল কুরআন’ যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম থেকে আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে।
কিন্তু তাজভীদের শিক্ষার জন্য যতটা সময় দরকার জামাতে ততটা সময় পাওয়া যায় না। এজন্য এই দিনগুলোতে শুধু এতটুকু চেষ্টা করবে যেন লোকেরা এর গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হয় এবং কিছুটা সম্পর্কও হয়ে যায়। এরপর তা শেখার জন্য তারা আলাদা সময় বের করতে প্রস্ত্তত হয়। (মালফূযাত : ২০২)
* বলেন, বড়দের খিদমতের উদ্দেশ্য মূলত এই যে, যে সকল সাধারণ ও ছোট খাট কাজের দায়িত্ব অন্যরা গ্রহণ করতে পারেন তা গ্রহণ করা, যার দ্বারা তাঁদের পূর্ণ সময় ও পূর্ণ সক্ষমতা ঐসব বড় কাজে ব্যয় করতে পারেন যা শুধু তাদের মাধ্যমেই সম্পন্ন হওয়া সম্ভব। যেমন কোনো শায়খ ও মুরশিদ বা কোনো আলিম ও মুফতীর ঐ সব সাধারণ কাজ আপনারা নিজেদের যিম্মায় নিয়ে নিন, যা আপনাদের পক্ষে সম্ভব। এই সবের চিন্তা থেকে তাদেরকে সম্পূর্ণ মুক্ত করে দিন। তাহলে ঐসব ব্যক্তিত্ব দ্বীনের যে বড় বড় কাজ করেন যেমন ইসলাহ ও তরবিয়াত এবং দরস ও ইফতা ইত্যাদি, সেগুলো তারা আরো নিশ্চিন্ত মনে একাগ্রতার সাথে করতে পারবেন আর এভাবে এই খাদিমগণও তাঁদের বড় কাজের ছওয়াবের অংশীদার হবেন। তাহলে বড়দের খিদমত তাদের বড় খিদমতে শরীক হওয়ার উপায়। (মালফূযাত : ২০৪)
* এক প্রসঙ্গে বলেন, আমাকে যেন একজন সাধারণ মুমিনের চেয়ে বড় মনে করা না হয়। শুধু আমার কথার উপর আমল করা বদদীনী। আমি যা বলব তা কুরআন-সুন্নাহয় যাচাই করে এবং নিজেরাও চিন্তা-ভাবনা করে নিজ দায়িত্বে আমল করবেন। আমি তো শুধু পরামর্শ দিয়ে থাকি।
আরো বলেন-হয়রত ওমর রা. নিজের সঙ্গীদের বলতেন, ‘তোমরা আমার কাঁধে অনেক বড় দায়িত্ব আরোপ করেছে। (সুতরাং) তোমরা সকলে আমার কাজের তদারকি করো।
আমিও আমার বন্ধুদের সমীপে অতি তাকিদ ও তাকাদার সাথে এই আবেদন করছি, তাঁরা যেন আমার তদারকি করেন। যেখানেই ভুল করি তা ধরেন এবং আমার সঠিক সিদ্ধান্ত ও সঠিক কর্মের জন্য দুআও করেন। (মালফূযাত : ২১০)
সংকলন ও অনুবাদ : মাওলানা যাকারিয়া আবদুল্লাহ