মুহাররম-১৪৩৪   ||   ডিসেম্বর-২০১২

শারীরিক সুস্থতা : একটি মূল্যবান নিয়ামত

মাসুমা সাদীয়া

সুস্থতা একটি মূল্যবান নিয়ামত। একজন মানুষ কতক্ষণ পর্যন্ত সুস্থ আছে কেউ জানে না। এখন যে সুস্থ কিছুক্ষণ পরেই সে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। সুস্থতা কত বড় নিয়ামত তা সেই বলেতে পারে যে রোগযন্ত্রণায় হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। সে তার সব কিছু দিয়ে হলেও সুস্থ হতে চায়। সাধারণ একটা আঙ্গুল কাটা গেলেই আমরা বুঝতে পারি, এই আঙ্গুলটা সুস্থ অবস্থায় কত কাজ করত। আর বর্তমান যুগে তো নিত্যনতুন রোগ দেখা দিচ্ছে, চিকিৎসা বিজ্ঞানেরও ক্রমোন্নতি ঘটছে। স্ট্রোক এমন এক মারাত্মক ব্যাধি, যা  হঠাৎ করে একটা সুস্থ মানুষের ব্রেনকে অকেজো করে দেয়। বাকি জীবন যত দিন সে  বেঁচে থাকে তার নিজস্ব চলাচল-ক্ষমতা রহিত হয়ে যায়। কারো আবার সঙ্গে সঙ্গে জীবন-প্রদীপ নিভে যায়। যে কোনো বয়সের লোক এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যত বড় বিশেষজ্ঞের কাছেই নেয়া হোক, লন্ডন, আমেরিকা গেলেও স্রষ্টার হুকুম না হলে সব ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এজন্য জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সময়ের মূল্য দিয়ে সুস্থতার কদর করা উচিত।

আর নারীদের তো জীবনের একটি বড় অংশ অসুস্থতা (বাস্তব অসুস্ততা ও আমলহীন অবস্থা) ও সাংসারিক ব্যস্ততায় কেটে যায়। সুতরাং সুস্থতা ও অবসরের কদর করা তাদের জন্য আরো বেশি জরুরী। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মহা নেয়ামতের কদর করতে বলেছেন। এক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা পাঁচটি অবস্থায় পতিত হওয়ার পূর্বে পাঁচটি জিনিসকে মূল্য দাও।

(১) বৃদ্ধ হওয়ার পূর্বে যৌবনকে

(২) রোগ আক্রমণ করার পূর্বে সুস্থতাকে

(৩) কর্মব্যস্ততার পূর্বে অবসর সময়কে

(৪) মউত আসার পূর্বে জীবনকে

(৫) দরিদ্রতার পূর্বে সচ্ছলতাকে।

-আলমুসতাদরাক হাকিম, হাদীস : ৭৯১৬

সহীহ বুখারীর একটি হাদীসে এসেছে, দুটি নিয়ামতের বিষয়ে মানুষ ক্ষতির মাঝে থাকে (১) সুস্থতা (২) অবসর।

আরো অনেক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্থ থাকতে থাকতে নেক আমলের প্রতি মনোযোগী হতে বলেছেন এবং সময়কে যথাযোগ্য কাজে ব্যয় করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। কারণ অসুস্থ অবস্থায় মানুষ সকল দিক দিয়ে অক্ষম হয়ে যায়। না সে দুনিয়ার জন্য কিছু করতে পারে, না আখেরাতের জন্য । আর সুস্থ সময়টাকে কাজে লাগিয়ে মেহনত করলে অসুস্থ অবস্থায় তার নেকীর ধারা চলতে থাকে। আল্লাহ তাআলা তার পরিপূর্ণ প্রতিদান দেন।

আল্লামা আফেনদী রাহ. সুন্দর বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক আদমসন্তানের কোনো না কোনো কাম্যবস্ত্ত থাকে। আমার কাম্যবস্ত্ত হল সুস্থতা ও অবসর। যাতে আমি ইলমে শরীয়তের এমন এক পর্যায়ে পৌঁছতে পারি, যা জান্নাতে পৌঁছার জন্য যথেষ্ট হয়। আর এ বিষয়েই তো জ্ঞানীদের প্রতিযোগিতা করা উচিত। ধোকার দুনিয়ায় আমরা জন্য প্রয়োজন পরিমাণ রিযিকই যথেষ্ট। চূড়ান্ত সফলতা তো চিরস্থায়ী নিয়ামতের মাঝে, যেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করা যায় এবং সুমিষ্ট পানীয় পান

করা যায়।’’

 

 

 

advertisement