আমাদের রাজ্যশাসন-৩
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
তায়েফ ও মদীনা
হিজরত
চাচা আবু তালেব ও উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজা রা. ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বড় অবলম্বন। নবুওয়তের ১০ম বছর তাঁদের ইন্তিকাল হয়ে গেলে কুরাইশের হাতে নবীজীকে কষ্ট দেওয়ার বিরাট সুযোগ এসে যায়। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আগের চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট দিতে থাকে।
মক্কার এই অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়েফ গমন করলেন। হয়তো সেখানকার লোকেরা আল্লাহর কথা শুনবে। কিন্তু তায়েফবাসী মক্কাবাসীর চেয়েও বেশি নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিল। পাথর নিক্ষেপ করে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বদন মোবারক রক্তাক্ত করে দিল। কষ্টে ও ক্লান্তিতে যখন নবীজী বসে পড়তেন পাপিষ্ঠরা এসে জোর করে তুলে দিত, আবার পাথর ছুড়তে আরম্ভ করত। এই মহা বিপদ থেকে কোনোভাবে বেঁচে নবীজী মক্কায় ফিরে এলেন। এখানেও বিরোধিতা আগের মতোই ছিল; বরং আগের চেয়েও বেড়ে গেল।
এই অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরবের অন্যান্য গোত্রকে আল্লাহর বাণী শোনাতে চাইলেন। এজন্য হজ্বের সময়টা ছিল সর্বোত্তম। তাই হজ্বের সময় যখন লোকেরা সমবেত হত তখন নবীজী তাদের নিকট যেতেন এবং ইসলামের দাওয়াত দিতেন। আল্লাহর ইচ্ছায় কুরাইশদের এত বিরোধিতা সত্ত্বেও কিছু মানুষ ইসলাম গ্রহণ করলেন। সবার আগে ইসলাম গ্রহণ করেন মদীনার কয়েকজন মানুষ। পরের বছর ১২ জন লোক এলেন এবং ইসলাম গ্রহণ করে ফিরে গেলেন। মদীনায় খুব দ্রুত ইসলাম প্রচার হতে লাগল। তৃতীয় বছর ৭৩ জন পুরুষ ও ২ জন নারী ইসলাম গ্রহণ করেন। এ সময় তারা এই অঙ্গিকারও করলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি মদীনায় চলে আসেন তাহলে তারা তাঁকে সব ধরনের সহযোগিতা করবেন।
এ কথা জানতে পেরে কুরাইশের ক্রোধের সীমা থাকল না। তারা সভা ডাকল এবং কী করা যায় ভাবতে লাগল। অবশেষে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল যে, পরিস্থিতি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। সুতরাং মুহাম্মাদকে হত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। (নাউযুবিল্লাহ)
পরিকল্পনামত এক রাতে কুরাইশের নেতৃস্থানীয় লোকেরা তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে বাড়ি ঘেরাও করল। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা ছিল নবীজীকে রক্ষা করা ও তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করা। তাই তিনি ওহীর মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সব জানিয়ে দিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী রা.কে নিজ বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গোপনে হযরত আবু বকর রা.-এর নিকট চলে গেলেন। আবু বকর রা. বাহন ও পাথেয় সংগ্রহ করলেন। এরপর দুজনে মদীনার পথে রওনা হলেন। কুরাইশও নবীজীকে খুঁজে বেড়াতে লাগল এবং তাঁকে ধরে দেওয়ার জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করল। নবীজী মক্কার নিকটবর্তী ‘সাওর’ পাহাড়ে আত্মগোপন করে থাকলেন। ৩ দিন পর অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হলে তিনি সেখান থেকে মদীনার উদ্দেশে রওনা করলেন। মদীনা যাওয়ার পথে ‘কুবা’য় কয়েক দিন অবস্থান করলেন। এ সময় সেখানে একটি মসজিদও নির্মাণ করেন। এরপর মদীনায় প্রবেশ করলেন এবং হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রা.-এর বাড়িতে অবস্থান করতে থাকেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমনে মদীনায় খুশির জোয়ার বইতে লাগল। নারী-শিশুরা পর্যন্ত সাক্ষাতের জন্য ঘর ছেড়ে বাইরে চলে এল। আর আনন্দের আতিশয্যে এই কবিতা আবৃত্তি করতে লাগল-
পূর্ণিমার চাঁদ যেন উদয় হল/ওদা’ পাহাড়ের পাদদেশ থেকে
আল্লাহ তাআলার শোকর করা আমাদের জন্য অপরিহার্য/যতদিন প্রার্থনাকারী আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে
হে আমাদের প্রতি প্রেরিত পুরুষ!/পালনযোগ্য বিষয়ই আপনি নিয়ে এসেছেন।
এর কয়েকদিন পর আরো কিছু মুসলমান মক্কা থেকে মদীনায় চলে আসেন এবং সেখানে নিরাপদে বসবাস করতে থাকেন। ষ
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
অনুবাদ : আবদুল্লাহ ফাহাদ