শিশু-কিশোর : আমরা কাউকে গালি দিব না
কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের ভদ্রতা শিক্ষা দিয়েছেন, (তরজমা) ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কোনো দল যেন অপর কোনো দলকে উপহাস না করে। কেননা, যাদের উপহাস করা হল তারা উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং নারীরা যেন অপর নারীদের উপহাস না করে। কেননা, যাদের উপহাস করা হল তারা উপহাসকারীনী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরকে দোষারোপ করো না এবং মন্দ নামে ডেকো না। ঈমানের পর ফুসূক অতি মন্দ। যারা তওবা করে না তারাই যালেম।’-সূরা হুজুরাত : ১১
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমিন ও মনাফিকের পরিচয় দিয়ে বলেছেন-‘চারটি বৈশিষ্ট্য যার মধ্যে পাওয়া যাবে সে প্রকৃত মুনাফিক। আর যার মধ্যে কোনো একটা পাওয়া যাবে তার মধ্যে মুনাফিকের একটি বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেল, যে পর্যন্ত না সে তা পরিত্যাগ করে। সেই বিষয়গুলো এই যে, যখন তাকে বিশ্বাস করা হয় সে বিশ্বাস ভঙ্গ করে। যখন কথা বলে তো মিথ্যা বলে। যখন অঙ্গিকার করে তো অঙ্গিকার ভঙ্গ করে এবং যখন বিবাদ-বিসম্বাদে উপনীত হয় তখন অন্যায় পথ অবলম্বন করে।’-সহীহ বুখারী হাদীস : ৩৪; সহীহ মুসলিম হাদীস : ১০৬
অন্য হাদীসে আছে, ‘মুমিন কখনো দোষারোপকারী, অভিশাপকারী, অশ্লীল ও গালিগালাজকারী হয় না।’-জামে তিরমিযী হাদীস : ২০৪৩ এমনকি ইসলামের মাহাত্ম দেখ। মক্কার কাফিরেরা নবীজীকে কত কষ্ট দিল, সাহাবীদেরকে কষ্ট দিল কিন্তু যখন আল্লাহ তাআলা মুমিনদের বিজয় দান করলেন তখন কাফিরদের প্রতি বিন্দুমাত্রও জুলুম করা হয়নি। তাদের জান-মাল, ইযযত-আব্রু সম্পূর্ণ নিরাপদ ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন এবং মুমিনগণ আল্লাহর আদেশের অনুগত ছিলেন।
ইসলাম এসেছে মানুষকে ভালো বানানোর জন্য। তাই যারা ইসলামের শিক্ষা গ্রহণ করে তারা হয় ভদ্র ও শালীন। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে বলেছেন, (তরজমা) ‘যারা পবিত্র মসজিদ থেকে তোমাদেরকে বাধা প্রদান করেছিল, সেই সমপ্রদায়ের শত্রুতা যেন তোমাদেরকে সীমালঙ্ঘনে প্ররোচিত না করে। সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমা লঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা কঠোর শাস্তিদাতা।’-সূরা মাইদা : ২
এটাই হচ্ছে ইসলামের শিক্ষা। এই শিক্ষাই আমাদের জন্য অনুসরণীয়। কেননা, এর চেয়ে উত্তম শিক্ষা আর হতে পারে না। আজকের আধুনিক শিক্ষা আজ পর্যন্ত এই পর্যায়ে উন্নীত হতে পারেনি। এজন্য কোনো ‘শিক্ষিত’ মানুষকেও যদি দেখি তিনি তার প্রতিপক্ষকে অন্যায়ভাবে দোষারোপ করছেন এবং বিভিন্ন মন্দ উপাধী ব্যবহার করে তাকে হেয় করার চেষ্টা করছেন তবে তার ওই কাজটা আমরা বর্জন করব। তিনি ‘শিক্ষিত’ বা ‘ভদ্র’ বলেই তার অভদ্র আচরণকে আমরা অনুসরণ করব না।
আমরা কিন্তু এমন দৃষ্টান্ত অহরহ দেখছি। বেশ কিছুদিন আগে একজন ‘শিক্ষিত’ মানুষ একটি দৈনিক পত্রিকায় কলাম লিখেছিলেন। তাতে তিনি কী ধরনের শব্দ ও বাক্য ব্যবহার করেছেন দেখ-‘ধর্মান্ধ এই শক্তিটা হচ্ছে অশুভ শক্তি। আমাদের দেশে এই অশুভ শক্তিটা কীভাবে জানি নিজেদের উদ্দেশ্যগুলো বাস্তবায়িত করে ফেলছে। তাঁরা (যারা এই শক্তিকে সহযোগিতা করেন) যদি সারাক্ষণ ধর্মব্যবসায়ীদের মতো ‘ইসলাম গেল, ইসলাম গেল, বলে আহাজারি করতেন তাহলেও আমরা বুঝতে পারতাম। কিন্তু আধুনিক চেহারার প্রগতিশীল মানুষ কাজ করে যাচ্ছেন মধ্যযুগের ধর্মান্ধ মানুষের জন্য-এর চেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার আর কিছু হতে পারে না।
‘... যাদের লক্ষ্য করে এই আলোচনা (অর্থাৎ মাদারাসার ছাত্র-শিক্ষক) তাদের কানে তুলো ঠেসে দেওয়া হয়েছে, কালো কাপড় দিয়ে তাদের চোখ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কাজেই সেই আলোচনা বোঝার ক্ষমতা তাদের নেই।’
(ড. জাফর ইকবাল, এখন তারুণ্যের সময়, দৈনিক প্রথম আলো) পুরো নিবন্ধে বহুবার তিনি এভাবে গালাগালি করেছেন।আরেকজনের দৃষ্টান্ত দেই। তিনিও একজন অধ্যাপক।
বললেন, ‘চারদিকে দাঁতাল দানবেরা মাথা তুলে দাড়িয়েছে। অসহায়দের (অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক, সংস্কৃতির প্রতিপক্ষকে মোকাবেলার আহ্বান, দৈনিক প্রথম আলো ১৫ নভেম্বর ’০৮)
এ ধরনের বাক্যই তারা লিখে থাকেন এবং সেগুলো পত্রিকার পাতার প্রকাশিতও হয়। তা লেখুন গে। তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু তাঁরা যে নিজেদেরকে ভদ্র, শিক্ষিত, সুশীল এবং আলোকিত মানুষ বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন! এগুলোও কি তাদের আলোকিত কর্মকাণ্ড! আমরা এই চরিত্র অনুসরণ করব না। প্রতিপক্ষের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হবে শালীন ও যুক্তিপূর্ণ। আমরা মোকাবেলা করব দলীলপ্রমাণ দিয়ে, গালাগাল দিয়ে নয়। আমাদের আদর্শ ও সুমহান ঐতিহ্য এরই নির্দেশনা দেয়।
আমাদের আদর্শ আলকুরআন ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ। আমাদের রয়েছে সাহাবা-তাবেয়ীন এবং ফুকাহা-মুহাদ্দিসীনের আদর্শিক উত্তরাধিকার। তাহলে আমরা কেন বিভ্রান্ত হব? এই আদর্শ আমাদেরকে আলোকিত পথে মনযিলে মাকসূদ পর্যন্ত নিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। বলাবাহুল্য, সে আদর্শের ধারে কাছে পৌঁছতেও আমাদের ‘সুশীল’ বন্ধুদের অনেক সময় লাগবে।