পে ছ ন - ফে রা : ৯/১১-এর পাগলা ষাঁড়
আগেও কথাটা সামনে এসেছে। অনেক তথ্য-উপাত্ত ও আলামত তুলে ধরে বলা হয়েছে। কিন্তু প্রচার ও বিচারের কোনো পর্যায়েই সে কথার মূল্য দেওয়া হয়নি। একতরফা ধমকি-হুমকি ও প্রপাগান্ডার মধ্য দিয়েই ওই ঘটনার কাঠামো দাঁড় করানো হয়েছে। আসামী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এরপর হামলা ও যুদ্ধের করাতের নিচে বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের টেনে আনা হয়েছে। ১১ বছর আগে সেই ২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার টু-ইন টাওয়ার (বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্র) ও সেনাদপ্তর- পেন্টাগনে বিমান হামলার ঘটনাটি নিয়ে এমনটিই ঘটেছে। আমেরিকার মতো মোড়ল রাষ্ট্রের কর্ণধাররা ও তাদের গণমাধ্যম ওই ঘটনার জন্য আঙ্গুল যে দিকে তাক করেছে দুনিয়াবাসীর বিষ্ফোরিত চোখ ওই দিকেই ধাবিত হয়েছে। ঘটনার মূলে যাওয়ার চিন্তা ও সুযোগ কোনোটাই সাধারণ মানুষের ছিল না। কিন্তু খোদ পশ্চিমা চিন্তাশীলদের অনেকেই তখন থেকে ওই একতরফা প্রচারণা ও আসামী সাব্যস্তকরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে এসেছেন। ঘটনার পর পর এটি যেমন ঘটেছে, তেমনি ১১ বছর পরও এ প্রশ্ন ও বিশ্লেষণের ধারা বন্ধ হয়নি। এ রহস্যের চাদর যেন এক অনিশেষ অন্ধকার। এ অন্ধকারের তলদেশ থেকে সত্যের আলো বের করে আনার ইচ্ছাই রহিত হয়ে গেছে। এবারের ৯/১১ বার্ষিকীতে একজন মার্কিন বিশেষজ্ঞের বক্তব্যেও এটা মনে হয়েছে।
আমেরিকার প্রেসটিভিকে একটি সাক্ষাতকার দিয়েছেন খ্যাতনামা মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মার্ক ড্যানকফ। তার ওই সাক্ষাৎকারের বিবরণ এদেশের প্রায় সব পত্রিকায় ছাপা হয়েছে গত ১৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার। যথেষ্ট খোলামেলা ভাষায় তিনি বলেছেন, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্র এবং পেন্টাগনে সন্ত্রাসী হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হচ্ছে ইহুদিবাদী ইসরাঈল। এ হামলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইসরাঈল এর সঙ্গে জড়িত ছিল। তিনি আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি ৯/১১-এর ঘটনা ছিল
অভ্যন্তরীণ ও সাজানো ঘটনা। মানুষ যদি একটু ঘনিষ্ঠভাবে খেয়াল করে তাহলে দেখতে পাবে-ইসরাঈলের সে উদ্দেশ্য ছিল, তাদের হাতে সে উপায় ছিল, তাদের সে সুযোগ ছিল, এটা করার জন্য তাদের সে পরিমাণ অর্থ-সম্পদ ছিল, তাদের অভ্যন্তরীণ সে যোগাযোগ ছিল এবং সর্বোপরি আমেরিকার গণমাধ্যমে ইসরাঈলের লোকজন ছিল। মার্কিন সরকারও ওই হামলার ঘটনার পর তাদেরকে সেভাবে সুযোগ দিয়েছে।’
মার্ক ড্যানকফ তার বক্তব্যের পক্ষে বেশ কিছু যুক্তি তুলে ধরেন। এরপর তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, মনে হয় ৯/১১-এর ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত কোনোদিন হবে না। কারণ মার্কিন গণমাধ্যম এবং পররাষ্ট্রনীতি এমন কিছু ব্যক্তি ও থিংকট্যাংক নিয়ন্ত্রণ করে যাদের এগুলোতে একচেটিয়া প্রভাব রয়েছে এবং ইসরাঈলী জাতির সঙ্গে এদের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। যারা ১১ বছর আগের এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে চাইবেন তারা আমেরিকায় দেশদ্রোহী বলে পরিচিত হবেন। কিন্তু এ ঘটনার অবশ্যই নিরপেক্ষ ও সত্যিকার তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত হওয়া দরকার।’
আমরাও মনে করি সত্যিকার তদন্ত হওয়া দরকার। এটা যেমন সত্য ইতিহাসের প্রয়োজনে হওয়া দরকার, তেমনি একথাও সত্য যে, এ তদন্ত মার্কিন নাগরিক ও রাষ্ট্রের অস্তিত্বের প্রয়োজনেও হওয়া দরকার। কারণ এমন হতে পারে অন্ধবিদ্বেষ আর আক্রোশে মার্কিনীরা শত্রু নিধনে ছুটতে থাকবে একদিকে, আর ভেতরে বসে ইসরাঈলী ইহুদীরা করাত চলাতে থাকবে তাদেরই বুকে-বক্ষে। এতে এ জাতীয় কিংবা এর চেয়েও ভয়াবহ ঘটনার মুখোমুখি তাদের বার বার হতে হবে। এখানে স্মরণ করা যেতেই পারে যে, ৯/১১-এর ঘটনার পর পর মার্কিন বিশেষজ্ঞদের কারো কারো বিশ্লেষণে এঘটনার সঙ্গে ইহুদী সংশ্লিষ্টতার বিভিন্ন প্রামাণিক উপাদান তুলে ধরা হয়েছিল। ওই দিন বিমান হামলার সময় অনেকটা কাকতালীয় ভাবেই টু-ইন টাওয়ারে কোনো ইহুদী কর্মী বা চাকুরিজীবী উপস্থিত ছিল না। কয়েক হাজার ইহুদী ওই ভবনে কর্মরত থাকলেও হামলার শিকার হয়নি কেউ। নিঃসন্দেহে এটা সন্দেহজনক ছিল।
বিমান হামলার আগে থেকেই পাশের ভবন থেকে মার্কিন ইহুদী কর্তৃক ভিডিওচিত্র ধারণের বিষয়টিও এক্ষেত্রে সন্দেহের জন্ম দিয়েছিল। তাছাড়া ভবনের ওপরের অংশে বিমান হামলার কারণে পুরো ভবনটি ধ্বসে পড়েছিল বলে প্রচারণা চালানো হলেও বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, এটা মূলত ঘটেছে ভবনের নিচে কোনো শক্তিশালী বিষ্ফোরণের কারণে। যে বিষয়টির কোনো হদিস করতে চায়নি মার্কিন প্রশাসন। এ রকম বহু প্রশ্ন ও প্রামাণিক উপাদানে ৯/১১-এর ঘটনাটির সঙ্গে ইহুদী-সংশ্লিষ্টতার আলামত পাওয়া গিয়েছে। এসব বিশ্লেষণ নিয়ে খোদ আমেরিকা থেকেই বই প্রকাশিত হয়েছে। সে হিসেবে আমরা বলতে পারি, এবারও মার্কিন বিশ্লেষক ড্যানকফ ওই ঘটনার বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অবশ্যই মূল্যায়নযোগ্য। একচক্ষু আমেরিকান প্রশাসন যদি সে মূল্যায়ন না-ও করে কিংবা করতে দেরিও করে তবুও বিবেকবান মানুষের উচিত ঘটনাটির মূলে যাওয়ার চেষ্টা করা। কারণ ওই একটি ঘটনার সূত্র ধরে প্রমাণের ভুল-শুদ্ধ পরখ না করে দুনিয়াজুড়ে পাগলা ষাঁড়ের উন্মাদনা চলতে দেওয়া যায় না। একটি সুস্থ, শান্তিময় পৃথিবীর জন্য পাগলা ষাঁড়ের অস্থির কুদোকুদি বন্ধ করা খুবই প্রয়োজন।