যিলহজ্ব ১৪৩০   ||   ডিসেম্বর ২০০৯

গায়রত

শত বছর আগের ঘটনা। গোয়ালিয়রের এক হিন্দু রাজার অধীনে সৈনিকের চাকরি করত মুসলিম-হিন্দু সব ধর্মের লোকেরাই। ধর্মীয় বিষয়-আশয়ে তাদের ওপর রাজার পক্ষ থেকে কোনো আদেশ-নিষেধ থাকত না। সবাই স্বাধীনভাবেই যার যার ধর্মকর্ম পালন করত। যেমন দাড়ি রাখা-না রাখার বিষয়ে তারা ছিল স্বাধীন। সে রাজার এক মুসলিম সৈনিক দাড়ি কামিয়ে ফেলত। অপর কিছু দাড়ি রাখা মুসলিম সৈনিক তখন তাকে গালমন্দ করত, তুমি দাড়ি কামিয়ে ফেল কেন? সে উত্তর দিত, ভাই গোনাহ করছি। আল্লাহ তাআলা মাফ করে দিবেন।’ এর কিছুদিন পর রাজার পক্ষ থেকে নির্দেশ জারি হল, সৈনিকদের মাঝে কেউ দাড়ি রাখতে পারবে না। যেসব মুসলমান সৈনিক তাকে দাড়ি না রাখার জন্য গালমন্দ করত তারা ভয় পেয়ে গেল এবং নিজেদের দাড়ি কামিয়ে ফেলল। এরপর থেকে তাকে তারা বলল, তোমারই জিত হল, এখন থেকে তোমার চাহিদাই পুরা হবে।

সে জিজ্ঞাসা করল, কেন কী হয়েছে? তারা বলল, এখন তো রাজার পক্ষ থেকে নির্দেশ এসে গেছে, সৈনিকদের কেউ দাড়ি রাখতে পারবে না। এজন্য আমরা সবাই দাড়ি কামিয়ে ফেলেছি।

তখন সেই দাড়ি কামিয়ে ফেলা সৈনিক বলল, আরে মিয়া, এতদিন আমি যে দাড়ি কামিয়েছি আর খোদার নাফরমানী করেছি সেটি করেছি নিজের রিপুর তাড়নায়, কিন্তু এখন যেহেতু খোদার এক অবাধ্য কাফের দাড়ি কামানোর হুকুম দিয়েছে তাই দাড়ি কামানো আত্মমর্যাদা হানিকর কাজ। তারা তাকে বলল, যদি দাড়ি রাখ তাহলে সৈনিকদল থেকে তোমাকে বরখাস- করে দেওয়া হবে। তখন সে বলল, আল্লাহ রিযিকদাতা। তিনি অন্য কোনো পথ নিশ্চয়ই খুলে দিবেন।

এটা হল ঈমানী শক্তি ও ইসলামী আবেগ। এটাকে বলা হয় ইসলামের প্রেরণা ও গায়রত। কিন্তু আজ মুসলমানরা নিজেরাই দুর্বলতা ও নতজানু হওয়ার পথ ধরেছে। তারই ফল আজ চারদিকে প্রকাশ হচ্ছে।-ইরশাদাতে হাকীমুল উম্মত রাহ. পৃ. ৭০৪

 

advertisement