সালাফের বাণী
আলিম ও আমীর
(১) আবু হাযিম সালামা ইবনে দীনার একজন বিখ্যাত তাবেয়ী ছিলেন। তিনি মদীনায় বসবাস করতেন। খলীফা সুলায়মান ইবনে আবদুল মালিক মদীনায় এলে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, এখন মদীনায় এমন কেউ কি আছেন যিনি একাধিক সাহাবীর সাহচর্য লাভ করেছেন? আবু হাযিম রাহ.-এর কথা বলা হল। খলীফা তাঁর নিকটে দূত পাঠালেন। আবু হাযিম রাহ. উপস্থিত হলে খলীফা অনুযোগ করে বললেন, হে আবু হাযিম! এ কেমন অসৌজন্য! আবু হাযিম রাহ. বললেন, আমীরুল মু’মিনীন, আপনি কী অসৌজন্য দেখতে পেয়েছেন? খলীফা বললেন, ‘মদীনার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সবাই আমার কাছে এলেন, কিন্তু আপনি তো এলেন না!’ আবু হাযিম বললেন, আমীরুল মু’মিনীন, আমি তো আপনার পরিচিত ব্যক্তি নই। অতএব এই অনুযোগ যথার্থ নয়। সুলায়মান প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বললেন, হে আবু হাযিম! আমরা কেন মৃত্যুকে ভয় পাই? আবু হাযিম রাহ. বললেন, আপনারা দুনিয়া আবাদ করেছেন এবং আখেরাত বরবাদ করেছেন। তাই আবাদী ছেড়ে বরবাদীর দিকে যেতে আপনাদের
ভয় হয়।
অন্য বর্ণনায় আছে, খলীফা বললেন, আপনার কোনো প্রয়োজন থাকলে আমাকে বলুন। আবু হাযিম রাহ. বললেন, আমি তো আমার সকল প্রয়োজন এমন একজনকে জানিয়েছি, যার কাছে এর মর্যাদা নষ্ট হবে না। তিনি যা পূরণ করবেন তা আমি গ্রহণ করব আর যা অপূর্ণ রাখবেন তাতে সবর করব।
(২) সুফিয়ান ছাওরী রাহ. বলেন, এই সব আমীর শান-শওকতের সাথে তুর্কী ঘোড়ায় আরোহন করে। অথচ পাপাচারের হীনতা তাদের অন্তরকে দুর্বল করে রাখে।
ভাষা ও বগ্মীতা
(১) একজন জ্ঞানী ব্যক্তি তার সন্তাদের উপদেশ দিয়ে বললেন, ‘প্রিয় সন্তানেরা, তোমরা শুদ্ধভাষিতা অর্জন কর। কেননা, প্রয়োজনের সময় বন্ধুর কাছ থেকে পোষাক চেয়ে নেওয়া যায়, কিন্তু শুদ্ধভাষিতা চেয়ে নেওয়া যায় না।
(২) ইবনুস সাম্মাক রাহ. একজন মশহুর ওয়ায়িজ ছিলেন। একদিন ওয়াজের পর তার প্রিয়জনকে জিজ্ঞাসা করলেন, ওয়াজ কেমন হয়েছে? সে বলল, চমৎকার হয়েছে। তবে আপনার মাঝে পুনরুক্তির প্রবণতা আছে। সাম্মাক বললেন, আমি তো এজন্য পুনরাবৃত্তি করি, যেন প্রথমে যারা বুঝতে পারেনি তারাও বুঝতে পারে। বন্ধু বলল, যারা বোঝেনি তাদেরকে বোঝাবার চেষ্টা যারা বুঝেছে তাদের যে বিরক্ত করে। (অর্থাৎ দু’ দিকেই লক্ষ্য রাখা উচিত।)
শান্তি ও অশান্তি
(১) উমর রা. বলেন, ‘জীবনের শান্তি আমরা ছবরের মাঝে পেয়েছি।’
(২) কুফা নগরীর একজন শায়খ বলেছেন, ‘দুনিয়ার এই এক অনিষ্টই তো যথেষ্ট যে, যা তোমার পছন্দ হবে তা-ই কিনবে।’ -সংগ্রহে : ইবনে নসীব
সময়ের মূল্য
আবদুল্লাহ মাসুমজীবনের সারাংশ হল সময়। যখন তা শেষ হয়ে যায় তখন জীবনের অবসান ঘটে। বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফকীহ হাসান বসরী রাহ. বলেন, ‘হে আদমসন্তান, তুমি তো কিছু দিবস ও রজনী। সুতরাং একটি দিবস গত হলে তোমার একটি অংশ শেষ হয়ে যায়।’
তাই সময়ই জীবন এবং সময়ই জীবনের মূল্যবান সম্পদ। অর্থ-সম্পদ হারিয়ে গেলে পুনরায় উপার্জন করা যায়, পক্ষান্তরে সময়-সম্পদ অতীত হলে তা আর ফিরে আসে না। তাই সময়ের অপচয় এমন ক্ষতি, যা কখনো পূরণ হয় না।
তাবেয়ী আমর ইবনে আবদে কায়েসের সাথে এক ব্যক্তি কথা বলতে চাইল। তিনি বললেন, ‘এই চলমান সূর্যকে থামতে বল, তাহলে তোমার সাথে কথা বলতে পারি।'