শাওয়াল ১৪৩৩   ||   সেপ্টেম্বর ২০১২

তা মা শা : অলিম্পিক ভাইরাসে চোখের ভোজ

বখতিয়ার

শুরু ২৭ জুলাই। শেষ হওয়ার কথা ১২ আগস্ট। ১৭ দিনের অলিম্পিক ভাইরাসে ভুগছে পৃথিবী। বৃটেনের লন্ডন শহরে অলিম্পিকের নানা পর্ব চললেও ইলেক্ট্রনিক প্রচারমাধ্যমের পাগল-প্রচারণায় গোটা পৃথিবীতেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। 

দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে দামী ও ইবাদতের গুরুত্বপূর্ণ মৌসুম-রমযানেই এই পাপের ভাইরাস দখল করছে বহু মানুষের চোখ, চিন্তা ও সময়। দেশে দেশে কম-হিম্মত ওয়ালা বহু মুসলিমও এর জৌলুস ও ঝলক থেকে মুক্ত থাকতে পারেননি।

এটি নাকি অলিম্পিকের ৩০ তম আসর। চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শহরে। এবার হচ্ছে লন্ডনে। এর আগেও আরও দুবার সেখানে এ আসরটি বসেছে। এবার ৩০০টি ইভেন্টে (৩০০ ধরনের খেলায়) অংশ নিচ্ছে ২০৫টি দেশের ১০ হাজার ৫০০ খেলোয়াড়। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই নাকি নারী। চেহারা দেখিয়ে শামিল থাকার জন্য বাংলাদেশ থেকেও পাঁচ জনের একটি দল সেখানে গেছে। এ আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৮০টি সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের উপস্থিতির খবর পাওয়া গেছে। না, অভাবে-সংকটে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও সে আসরে অনুপস্থিতির বদনাম নিতে চাননি। লটবহর নিয়ে তিনিও গিয়েছিলেন। হায়রে গরিবের ঘোড়া রোগ!

১৭ দিনের এই খেলার আয়োজনকে উপভোগ্য করে তুলতে বৃটেন সরকার খরচ করছে ১৪০০ কোটি ডলার। এর সঙ্গে যোগ হতে পারে আরও ২০ লাখ মানুষের যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার খরচ। প্রচার মাধ্যমের সেবা, তথাকথিত বিনোদন-আয়োজন আর দেশে দেশে এ আসরটি টিভির পর্দায় দেখার মাতোয়ারা পদক্ষেপের হিসাব তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে হিসাব কষলে এবারের অলিম্পিক বাবদ খরচের অংকটা তিনগুণ, চারগুণ হওয়াও বিচিত্র নয়। কিন্তু হাহাকার কবলিত আর মন্দাগ্রস্ত ইউরোপের কান্নার মাঝেও এ ধরনের পাপ ও বিলাসভরা অপচয় নিয়ে দুনিয়ার কোথাও কোনো রাষ্ট্রকর্তা বা প্রচারযন্ত্রের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি উঠল না। পরকাল তো বহুদিন ধরে পশ্চিমাদের কাছে পরেরই কাল। এখন দেখা যাচ্ছে ইহকালের

স্বাভাবিক জীবন-জীবিকাও তাদের কাছে তুচ্ছ। পেটের ক্ষুধার চেয়ে ভোগের উন্মাদনাই মূল ব্যাপার। এটিই মূলত আদি-আসল আসক্ত মাতালের মনস্তত্ত্ব। পেটে ভাত নেই, নেশায় স্বর্গ-বিচরণ চলছে।

অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখে চায়নারা নাকি বলেছে চোখের জন্য ভোজ-উৎসব

যে অর্থেই বলুক, বলাটা ভুল হয়নি। চোখের তারায় লোভের আতশবাজি জ্বালানোর কাজ অলিম্পিক ভালোভাবেই করেছে। মানবদেহের (বলা উচিত মানবী-দেহ) প্রতি মানবচোখের যে লোভ থাকে তার ষোল আনা চাঙ্গা করেছে অলিম্পিক। বিভিন্ন পত্রিকায় সচিত্র খবর চোখে পড়লে সেটা বাধ্য হয়েই বুঝে নিতে হয়। আর দেহের লোভ?

হ্যাঁ, ইভেন্টে ইভেন্টে না করলেও পার্শ্ব-আয়োজনে ঠিকই দেহের লোভ ও শরীরের ক্ষুধা মেটানোর রঙিন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অলিম্পিক অধ্যুষিত-অলিম্পিক পার্কের প্রায় সবটুকু জুড়েই চলছে পতিতাদের উৎসব। লন্ডনের পুলিশ একদিকে বলছে, পতিতাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরেকদিকে জানাচ্ছে, তাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই যে, অলিম্পিক উপলক্ষে যৌনব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। অলিম্পিক পার্কের পার্শ্ববর্তী এলাকার এক বাঙ্গালী নারী, যিনি তিনটি সন্তানের জননী-সাংবাদিকদের বলেন, এ এলাকাটি মাদক, পতিতাবৃত্তি ও অন্যান্য অপরাধের স্বর্গভূমিতে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও জানান, তিনি ও তার বন্ধুরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার পথে দেখতেন কনডমের স্ত্তপ জমে আছে।

যখন লিখছি তখন অলিম্পিক চলছে। পাঠকের কাছে যখন এটি যাবে তখন হয়তো অলিম্পিক ভাইরাস শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এ রকম ভাইরাস ও তার প্রতি মুগ্ধতা ও মত্ততা হয়তো অন্য নামে অন্য পোশাকে আবার চালু করা হবে। অভাবী-দুঃখী মানুষ আমরা। ঈমানের সম্পদেও মিসকীন, অর্থকড়িতেও ভিক্ষুক। এ ধরনের পাপের ভোজোৎসব আর মাতামাতির ভাইরাস থেকে আমাদের বেঁচে থাকা জরুরি। রাষ্ট্রীয়ভাবেও বাঁচা দরকার। বাঁচা দরকার ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবেও। কী হবে এসব অলিম্পিকে আমাদের! হা-ভাতের মতো এত লটবহর নিয়ে ছোটাছুটি করে কী লাভ? আমাদের একটি সেতু বানানোর পয়সা যোগাড় করতে গিয়ে এখন নাকের পানি, মুখের গালি আর চোখের শরম মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। এমন মুহূর্তে ফূর্তি আর পাপের রঙচঙ্গা আয়োজনে কিছুটা নিরাসক্ত থাকলেই তো ভালো দেখায়। দেখাদেখিই বড় কথা নয়, পরিণতিতেও সেটা ভালো হয়। মাথা ঠান্ডা করে ভাবা দরকার। 

 

 

advertisement