শাওয়াল ১৪৩৩   ||   সেপ্টেম্বর ২০১২

বাইতুল্লাহর ছায়ায়-২৬

মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

আছরের প্রস্ত্ততি নেয়ার জন্য হাম্মামে গেলাম এবং .. এবং একেবারে আচানক মাওলানা হিদায়াত হোসায়নের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো, আর মনের মধ্যে এক অনির্বচনীয় আনন্দের অনুভূতি হলো। তিনিও খুশী হলেন; হওয়ারই কথা, দীর্ঘ ঊনিশ বছর পর দেখা!

তিনি এবং তার এক সঙ্গী মিনায় রাত যাপন করবেন। সুতরাং আমরা পাঁচজনের কাফেলা হয়ে গেলাম। আমার অনুরোধে তিনি হলেন কাফেলার আমীর।

এই মানুষটিকে আমি অন্তর থেকে ভালোবাসি। তিনি মাওলানা কাযী মুতাসিম বিল্লাহ ছাহেবের ছোট ভাই। সাতাশী সনে আমাদের চারজনের কাফেলায় কাযী ছাহেবই ছিলেন সবার বড়, সবদিক থেকে। আমার জীবনে তাঁর বড় একটি ইহসান রয়েছে। আমি  চেষ্টা করি, আমার প্রতি যাদের ইহসান রয়েছে, কোন না কোনভাবে সামান্য হলেও তার বদল দিতে, কিন্তু কাযী ছাহেবের ইহসানের কোন বদল দেয়ার মওকা এখনো আমার হয়নি। অবশ্য যখনই মনে পড়ে, উচ্চারণ করি-

جزاه الله عني أحسن الجزاء

তো মাওলানা হেদায়াত হোসাইন সাতাশী সনে আমার ভাই সাঈদ মেছবাহ-এর সঙ্গে রিয়াদে চাকুরি করতেন। রিয়াদ থেকে তিনি এসেছিলেন হজ্ব করার জন্য এবং মেঁয়াছাব অর্থাৎ বড় ভাইকে সঙ্গ দেয়ার জন্য। মিনার দিনগুলো তিনি আমাদের সঙ্গে ছিলেন। টিনশেডের নীচে বড় উপভোগ্য ছিলো সেই দিনগুলো। সেটাই ছিলো তার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। যদিও এই দীর্ঘ ঊনিশ বছরে আর কখনো দেখা হয়নি, তবে তাকে আমি ভুলিনি। তার মত মানুষকে ভোলার জন্য স্মৃতিবিমুখ মনের প্রয়োজন।

এবারও তার সঙ্গ পাওয়া গেলো এবং একটি রাত ও অর্ধদিন তা উপভোগ করা গেলো। আচরণ ও অন্তরঙ্গতা রয়ে গেছে প্রায় একই রকম, তবে সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বয়স ও অভিজ্ঞতার ছাপ। আমারও বয়স বা অভিজ্ঞতা আগের জায়গায় বসে নেই! তবে মনে হয় জীবনের উপর বয়স ও অভিজ্ঞতার ছাপটা পড়েছে কম। অবশ্য নিজের সম্পর্কে নিজের বিচারে ভুলের সম্ভাবনা থাকে যথেষ্ট।

তাঁবুতেই আছরের মুখতাছার জামাত হলো। নামায পড়ালেন এবং মুনাজাত করলেন মাওলানা হিদায়াত হোসাইন। মিনার তাঁবুতে এবারের শেষ মুনাজাত; শেষ মিনতি ও অশ্রুপাত।

মাত্র তো তিনটি দিন, চারটি রাত, কিন্তু মনে হয় কত দিনের কত পরিচিত, কত প্রিয় বাসস্থান! ছেড়ে যেতে ভিতরে কোথায় যেন টান পড়ে! কী যেন ছিঁড়ে যায়! বেদুঈন আরবের জীবন ছিলো মরুভূমির তাঁবু-জীবন। একসময় তারা যখন তাঁবু গুটিয়ে অন্যত্র চলে যেতো তখন মনের অবস্থা কেমন হতো; আবার কখনো পুরোনো বাসভূমি অতিক্রম করার সময় অতীতের স্মৃতি তাদের কীভাবে নাড়া দিতো সে সম্পর্কে বহু মর্মস্পর্শী কবিতা রয়েছে জাহেলিয়াতের কাব্যভান্ডারে। সেই সব কবিতা মনে পড়ে এমন বেদনার্ত হলাম, যেন আমিও অতীতের কোন আরব-বেদুঈন। মিনার এই দুদিনের তাঁবু-জীবন, যেন জীবনের মধুরতম অংশ। তাঁবুর রশিগুলো যেন আমার হৃদপিন্ডের রক্তবাহী শিরা। সেই শিরাগুলো যেন ছিঁড়ে ছিঁড়ে হৃদপিন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হলো, আর তা থেকে রক্তক্ষরণ হলো। অশ্রম্নসজল চোখে শেষবারের মত তাঁবুর চারদিকে তাকালাম। তখন ভিতর থেকে যেন এই সুর উত্থিত হলো, আবার আসিব ফিরে মিনার তাঁবুতে! তাই যেন হয়, হে আল্লাহ, তাই যেন হয়! আবার যেন ফিরে আসা হয়, মিনার মরুভূমিতে, এই তাঁবুর শহরে!

জামারায় যাওয়ার পথে নিঃসঙ্গ থাকতেই আমার ভালো লাগে; তবে কৃতজ্ঞ চিত্তে স্বীকার করি, ভাই হিদায়াত হোসাইনের সঙ্গ বাইরে ভিতরে সেদিন আমাকে অশেষ আনন্দ দিয়েছে। উত্তম সঙ্গীর উত্তম সঙ্গ এখনকার দিনে বড় দুর্লভ।

***

জামারা অভিমুখী এই ঢল শুরু তো হয়েছে দুপুর থেকে, কিন্তু  সেই জোয়ার এখন এই শেষ বিকেলেও একই রকম জোরওয়ার। মানুষ চলছে তো চলছে! কাফেলার পর কাফেলা, যেন মহাকালের অন্তহীন পথচলা! ভূখন্ডের কত অঞ্চলের কত ভাষার মানুষ! কারো সঙ্গে কারো যোগ নেই, যোগাযোগ নেই, তবে মনে হলো, অন্তরে অন্তরে আছে কোন অদৃশ্য সংযোগ; উদ্দেশ্যের ও গন্তব্যের সংযোগ। নিজ নিজ ভাবনায় বিভোর সবাই, তবে উদ্দেশ্য ও গন্তব্য সবার অভিন্ন। সবাই জামারায় হাজির হবে, শয়তান ও শয়তানিয়াতকে ধিক্কার জানিয়ে সাতটি করে একুশটি কঙ্কর নিক্ষেপ করবে। উদ্দেশ্য ও গন্তব্যের এই অভিন্নতার কারণেই কাউকে না চিনেও মনে হয় সবাইকে চিনি, সবার ভাব ও ভাবনা বুঝি। এই জামারার পথে সবদেশের, সবভাষার মানুষ আমার আপন এবং আপনার।

পৃথিবীর সব মানুষ একদিন এভাবেই তো চলবে ময়দানে হাশর অভিমুখে! এ দৃশ্য তো সেই দৃশ্যেরই পূর্বাভাস!

আজকের জামারামুখী স্রোতের দৃশ্য দশ তারিখ এবং গতকালের চেয়ে অনেক ভিন্ন। দশতারিখে ছিলো লাবাইক আল্লাহুম্মা লাববাইক-এর সুমধুর সঙ্গীত। সবার চোখে মুখে ছিলো আত্মার সজীবতার দীপ্তি ও উদ্ভাস। গতকাল ছিলো শেষ মুহূর্তের উদ্দীপনা ও উচ্ছ্বাস, কিন্তু আজ! পদক্ষেপে পদক্ষেপে যেন বিদায়ের বিষণ্ণতা এবং বিচ্ছেদের বেদনা। মুখে মুখে যিকিরের গমগম আওয়ায আছে, কিন্তু তা থেকে যেন রাশি রাশি বেদনা ঝরে পড়ছে।

জামারার বেশ কাছে এসে থামতে হলো। লাল আলো জ্বলছে; অর্থাৎ সামনের জনচাপ ঝুঁকির স্তরে পৌঁছে গেছে। গতি নিয়ন্ত্রণকারী পুলিশ-দল স্রোতের গতি থামিয়ে দিলো। ব্যবস্থাটা ভালো। বোঝা যায় গতবারের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কারণে এই অতিরিক্ত সতর্কতা। পার্থক্য শুধু এই যে, অন্যদের সতর্কতা হয় দুর্ঘটনার আগে, যেটাকে তারা বলে সম্ভাব্য সতর্কতা, আর আমাদেরটা হয় দুর্ঘটনার পরে, যেটাকে বলা যায় দুর্ঘটনার শিক্ষা।

সবুজ আলো জ্বলে উঠলো এবং থেমে যাওয়া স্রোত আবার গতি লাভ করলো।

ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ইরান ও তুরস্কের কাফেলাগুলো খুব সুশৃঙ্খল। দীর্ঘ কাফেলার অগ্রভাগে আমীরে কাফেলা পতাকা উঁচিয়ে চলছেন। আরেকজন মাইকে তাকবীর বলছেন, আর মাঝে মধ্যে সতর্কবাণী উচ্চারণ করছেন। কাফেলার প্রত্যেকে অপরকে মযবূতভাবে ধরে আছেন। ফলে কারো পিছিয়ে পড়ার বা হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম। আমাদের কাফেলাগুলোতে দেখা যায় মাঝখানে অন্যরা ঢুকে পড়ে এবং কাফেলা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়, বড় পেরেশানির কারণ হয়। ওদের কাফেলায় এমন কিছু ঘটার সুযোগই নেই। তারপরো কোন সমস্যা হলে কীভাবে যেন আমীরে কাফেলার কাছে খবর পৌঁছে যায় এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গে পুরো কাফেলা থেমে যায়। হজ্বের পুরো সফরে এরা অত্যন্ত সুশৃঙ্খল। বোঝা যায়, হজ্বের আগে স্বদেশে এরা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে এবং প্রতিটি কাফেলা যোগ্য ও অভিজ্ঞ লোকের নেতৃত্বে এসেছে। এগারো তারিখে জামারায় যাওয়ার পথে ইমাম ছাহেবের সঙ্গে মিলে চেষ্টা করেছিলাম, কাফেলাকে সুশৃঙ্খল রাখতে। কাজও হয়েছে কিছুটা, মাত্র একজন হারিয়েছেন। তিনি আর তাঁবুতে ফিরে যেতে পারেননি। সোজা মক্কায় চলে গেছেন। মক্কায় যাওয়া অবশ্য খুব সহজ এবং নিরাপদ। একটা কথা সবাই জানে। হারামে আসার সময় কেউ পথ হারায় না; পথ হারায় হারাম থেকে যখন বাসায় যায়।

সামান সঙ্গে নিয়ে যাওয়া কষ্টকর এবং অসঙ্গত। তাই আমি এবং ভাই মুহিউদ্দীন কাফেলার সামান নিয়ে একপাশে বসলাম। বাকি তিনজন জামারায় গেলেন। তারা ফিরে আসার পর আমরা গেলাম। জনস্রোত তখন হালকা হয়ে এসেছে; তারপরো হিমশিম অবস্থা। এটা আমাদের শেষ রামী নয়, ইনশাআল্লাহ আগামীকাল আবার আমরা রামী করবো। আমাদের কাছে শয়তানের জন্য বরাদ্দ আছে আরো একুশটি পাথরকণার আঘাত।

সামানের স্থানে ফিরে এসে পাঁচজন একত্র হলাম। সেখানে বেশ ঠান্ডা বাতাস। এরই মধ্যে বিছানা পড়া শুরু হয়ে গেছে রাত যাপনের জন্য। আমরাও বিছানা পাতলাম। কাছেই দুই যুবক খাবার নিয়ে বসেছে। চেহারা দেখে আন্দায করা গেলো এবং ভাজা মাছটি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেলো, বাঙ্গালী; আমাদের দেশ থেকে আসা সস্তা শ্রমিক, কিন্তু দস্তরখানে শরীক হওয়ার দাওয়াত দিলো বেশ আন্তরিকভাবে। বোঝা গেলো, আরবের আদব ইতিমধ্যে রপ্ত হয়েছে। আমরা ধন্যবাদের সঙ্গে না বললাম, কিন্তু তারা দেশীয় রেওয়াজে জোর করে মৎসভোজন করিয়ে ছাড়লেন। এ পর্যন্ত ঠিক ছিলো, কিন্তু একজন যখন জানতে চাইলেন, কত খরচ হইছে জনপ্রতি তখন বিরক্ত বোধ করলাম। এধরনের অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নের কোন মানে হয়? কিন্তু বিরক্তি দূর হতে সময় লাগলো না, বরং আনন্দে শ্রদ্ধায় আপ্লুত হলাম। এখনো তাদের নাম মনে আছে; এখনো তাদের চোখের পানি আমার চোখে ভাসে! এখনো তাদের জন্য দিল থেকে দুআ আসে! আহা, কত সুন্দর স্বপ্ন বুকে লালন করছে মাত্র তিনশ রিয়ালের সস্তা শ্রমিক বাংলাদেশের দুটি যুবক! এমন মানুষকে যারা তিনশ রিয়ালে কাজ করায় তারা আরব হোক বা অনারব, তাদের সম্পর্কে আমার মন যা ভাবে তা এখানে উচ্চারণ করা সঙ্গত মনে হয় না। শুধু কামনা করি, মানুষ হওয়ার এবং মানুষকে মানুষ ভাবার যোগ্যতা যেন আমাদের সবার হয়।

খরচের কথা জিজ্ঞাসা করছে, কারণ তারা স্বপ্ন দেখছে আগামী বছর একজন এবং পরের বছর অন্যজন তাদের বুড়ো মা-বাবাকে হজ্ব করাবে। তারা বি, বাড়িয়ার (শহীদবাড়িয়ার) একই গ্রামের বাসিন্দা। দুজনে মিলে কিছু কিছু  জমাইতেছে। একসঙ্গে তো সম্ভব হবে না, তাই উভয়ের সঞ্চয় দিয়ে আগামী বছর একজনের মা-বাবাকে হজ্ব করাবে; পরের বছর আরেকজনের। আল্লাহর ঘরের সামনে তারা লটারী করেছেন, কার মা-বাবা আগে হজ্ব করবেন। বয়সে বড় শামসুদ্দীন, তার নাম উঠেছে। তিনি তার মা-বাবাকে আগে হজ্ব করাবেন। আল্লাহর ইচ্ছা মেনে নিয়েছেন অপরজন, হেলাল আহমদ। আমি অবাক বিস্ময়ে বিমুগ্ধ হৃদয়ে শুনছি হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে ভগ্নস্বাস্থ্যের যুবকদ্বয়ের স্বপ্নের কথা। শামসুদ্দীন বলে গেলেন তার কথা, গতবছর আল্লাহ হজ্ব করাইছেন, এবারও; কিন্তু হুযূর, মনে শান্তি নাই। গতবারও দেখছি, এবারও দেখলাম। কতজনে বুড়া মা-বাবারে দুই হাতে আগলাইয়া তাওয়াফ-সাঈ করায়। তখন আর চোখের পানি ধইরা রাখতে পারি না। আল্লায় যদি তাওফীক দিতো বুড়া মা-বাবারে হজ্ব করাইতাম! আমার দুই হজ্ব হইল। আর এত কষ্ট কইরা আমারে যারা লালন-পালন করল তারার এখনো আল্লাহর ঘর দেখা হইলো না। হজ্বের পরে দেশে যাওয়ার ছুটি আছে। নিয়ত করছি দেশে যামু না। তাইলে কিছু বাড়তি পয়সা জমবো। মা-বাবা বিয়ার তাগাদা দিতাছে। কিন্তু বিয়া-শাদী করলে তো আর পারা যাইতো না। আগে মা-বাবারে হজ্ব করাই, তারপর বিয়া-শাদীর চিন্তা।

শামসুদ্দীনের চোখে পানি, হেলাল আহমদের চোখ ভেজা, আমিও ধরে রাখতে পারলাম না আমার উদগত অশ্রু। শিক্ষার আলো না পেলেও আমি মনে করি, এরা আলোকিত যুবক, নূরানি মানুষ। দেশের সব শিক্ষিত যুবক যদি এমন হতো! হৃদয়ের গভীরে এমন সুন্দর স্বপ্ন লালন করতো!

এবার পুরো হজ্বে আফসোস ছিলো যে, হযরত হাফেজ্জী হুযূর (রহ)-এর মত কোন নূরানী মানুষের ছুহবত নছীব হলো না। কিন্তু বার তারিখে সূর্যাস্তের সময় মনে কোন আফসোস ছিলো না। এ দুই যুবকের সামান্য সান্নিধ্যই আমার কাছে মনে হলো নূরানী ছোহবতের মতই মূল্যবান। হয়ত এটা আল্লাহর পক্ষ হতে হজ্বের কবুলিয়াতের নেক ইশারা। আল্লাহর নেক বান্দা হওয়ার জন্য বুযুর্গ হওয়া তো জরুরি না, মায়ের জন্য, বাবার জন্য বুকে এমন স্বপ্ন লালন করাই যথেষ্ট।

মনে পড়ে আরেকটি যুবকের কথা। কয়েক বছর আগে রামাযানে মদীনা শরীফে আল্লাহর নবীর মসজিদে দেখা। এখনো কানে বাজে তার কথা, আমার মত গোনাগাররে আল্লায় নবীর মসজিদে ঝাড়ুদার বানাইছে, এই নেয়ামতের কী শোকর আদায় করতাম! এখন শুধু একটাই আশা, মা-বাবারে একবার যেন নবীর দেশে আনতে পারি।

বেশ কিছু দূর চলে এসেছিলাম। পিছনে ফিরে দেখি, যুবক ছেলেটি অপলক চোখে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। পকেটে যে কয়টি রিয়াল ছিলো ছেলে মুহম্মদের হাতে দিয়ে বললাম, যাও দিয়ে এসো, আর বলো, আপনার মা-বাবাকে নবীর দেশে আনার জন্য দিলাম।

দূর থেকে দেখি, আমার ছোট্ট ছেলেটিকে খুশিতে সে বুকে জড়িয়ে ধরেছে। ছেলে ফিরে এসে বললো, আববু, লোকটা না  কেঁদেছে, আর আমার জন্য অনেক দুআ করেছে।

***

শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো, আজকের রাতটি আমরা মসজিদে খায়ফে যাপন করবো। মসজিদে দাখেল হওয়া তখন বেশ কঠিন ছিলো, তবে আল্লাহর শোকর, সামান্য চেষ্টাতেই সে সৌভাগ্য আমাদের হলো, জীবনে প্রথম সৌভাগ্য।

কেমন কেটেছে সৌভাগ্যের সেই রাত। কী দেখেছি! কী অনুভব করেছি! কত শান্তি ছিলো! কেমন প্রশান্তি ছিলো! আল্লাহর এক বান্দার কান্না ও মুনাজাত কত মর্মস্পর্শী ছিলো! সবই বলার মত এবং গ্রহণ করার মত বিষয়, কিন্তু ....!

হযরত হাফেজ্জী হুযূর রহ বলেছিলেন, তোমরা জোয়ান মানুষ, যদি মওকা হয় মিনার দিনগুলা মসজিদে খায়ফের কাছে কাছে থাকার কোশিশ করো।

যুবক হলেই কি আর জোয়ান হওয়া যায়! সাতাশি সনে কথাটা মনে ছিলো, কিন্তু পারা যায়নি, এবার তো আমি বুড়োদের দলে! তবু আল্লাহর শোকর একটি রাতের জন্য হলেও আমার প্রিয় হজরতের সেই কথাটি আজ পালন করা হলো এবং কিছুটা হলেও তার বরকত অনুভব করা গেলো।

রাত বারটা বাজে প্রায়। বিশাল মসজিদ, কোথাও পা রাখার ফাঁক নেই। সবাই শুয়ে আছে, অনেকে ঘুমিয়ে আছে, কিছু মানুষ বসে আছে, আর কেউ কেউ নামাযে দাঁড়িয়ে আছে। কোথাও কোন শব্দ নেই এবং আশ্চর্য, মিনার তাঁবুতে যেটা ছিলো পুরো মাত্রায়, নিদ্রার শব্দ সেটাও নেই, একেবারেই নেই! এটাকে কী বলবো মসজিদে খায়ফের বরকত ছাড়া!

এর মধ্যে হঠাৎ খুব হালকা একটি কান্নার আওয়ায কানে এলো; হালকা এবং মিষ্টি! কোন কারণ ছাড়াই মনে হলো কেয়ামতের সময় হযরত ইসরাফিলের শিঙ্গার আওয়ায শুরুতে হয়ত এমন হবে, হালকা এবং মিষ্টি; ধীরে ধীরে বাড়বে এবং প্রচন্ড হতে থাকবে।

কিছুটা অবাক হয়ে চারদিকে তাকালাম; কোত্থেকে আসছে হালকা, মিষ্টি এই কান্নার আওয়ায! একটু দূরে, কেবলার দিকে কয়েক কাতার সামনে একজন সিজদায় আছেন, মনে হলো তারই কান্নার আওয়ায। এমন মিষ্টি আওয়াযে কারো ঘুম ভাঙ্গে না, ঘুম যেন আরো জড়িয়ে আসে। বোঝা যায় শেষরাতের কান্না ইনি ভালো রপ্ত করেছেন। নিজের অজান্তেই উঠে গেলাম। বসার সুযোগ নেই, পিছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই অজানা অচেনা মানুষটির কান্না শুনলাম। কী শব্দ এখানে ব্যবহার করবো, সম্মোহন! সেই সম্মোহনে আমার ভিতরেও যেন কান্না তৈরী হলো। ইচ্ছে হলো, এমন হালকা মিষ্টি আওয়াযে আমিও কাঁদি! হলো না, ভিতরের কান্না ভিতরেই থাকলো, বাইরে এলো না।

মানুষটি সিজদা থেকে উঠলেন, দাঁড়ালেন, কান্নাটা তখন নেই। কিয়াম থেকে রুকুতে গেলেন, তখনো নেই। রুকু থেকে সিজদায় গেলেন, তখন আবার সেই হালকা কান্নার মিষ্টি আওয়ায!

আশ্চর্য! অনেক নামায দেখেছি, অনেক কান্না শুনেছি; এমনটি কখনো দেখিনি, শুনিনি।

কখন ঘুমিয়েছি মনে নেই, জেগে ওঠে দেখি সবাই অনেক আগেই জেগেছে এবং কাতারের পর কাতার তৈরী হয়ে গেছে। কেউ তিলাওয়াতে, কেউ যিকিরে, নামাযে; তবে ঘুমিয়ে নেই কেউ, আমি এবং আমার মত দুএকজন ছাড়া। খুব লজ্জাবোধ হলো। তাড়াতাড়ি উঠে বসলাম। পাশের একজন বললেন, তোমার সঙ্গীরা অযু করতে গিয়েছে, আমাকে বলে গেছে একটু পরে তোমাকে জাগাতে। আমি এখনি তোমাকে জাগাতাম, আল্লাহর শোকর তুমি নিজেই জেগে গেছো।

মুহিউদ্দীনের উপর মনটা একটু নাখোশ হলো, আমাকে জাগালো না কেন? একজনকে দায়িত্ব দিয়ে গেলেই হলো! এখন যদি হাম্মাম থেকে ফারেগ হয়ে আসতে আসতে জামাত ফউত হয়!

তাড়াতাড়ি হাম্মামে গেলাম, আর তখন মনটা ভালো হয়ে গেলো। মসজিদ থেকে কিছুটা দূরে মিনার দিকে আলাদা দ্বিতলভবনের বিরাট হাম্মাম। সংখ্যায় যেমন প্রচুর, তেমনি যথেষ্ট রুচিসম্মত। পুরো সফরে এই প্রথম হাম্মাম দেখে মনটা খুশী হলো। এ ব্যবস্থাটা মিনায় হতে দোষ কী ছিলো!

ফজরের জামাত হলো এবং বড় সুন্দর নামায হলো। জীবনে যে দুএকটি প্রশান্তির নামায আল্লাহ দান করেছেন তার মধ্যে মসজিদে খায়ফের এই নামায একটি। এমন নামায আবার কবে নছীব হবে! হবে তো!

ফজরের পর সরকারের পক্ষ হতে নিযুক্ত কোন আলিমের বক্তব্য শুরু হলো। আরবী ভাষার এ বক্তব্য বোঝবে কজন! তার চেয়ে বড় কথা শোনবে কজন! দেখতে দেখতে মসজিদ খালি হয়ে গেলো। সবাই চলেছে জামারায় রামি করার উদ্দেশ্যে এবং সেটাই স্বাভাবিক। আলিম সাহেব প্রায় শূন্য মসজিদেই তার বক্তব্য অব্যাহত রাখলেন। বলতে গেলে কিছুটা মায়াই হলো। কাফেলার আমীর মাওলানা হিদায়াত হোসায়ন ছাহেবকে বললাম, বয়ানটা শুনে গেলে হয় না!

তিনি বললেন, ঠিক আছে। আমরা যোগ দিলাম। তাতে শ্রোতার সংখ্যা বিশ থেকে বেড়ে পঁচিশ হলো। বক্তব্যের বিষয় বস্ত্তও সেই একই। শিরক-বিদআত থেকে হজ্বকে পাকছাফ রাখতে হবে।

বক্তব্য শেষ হলো, আমরাও জামারায় এসে আল্লাহু আকবার বলে কঙ্কর নিক্ষেপ করলাম।

তারপর সুড়ঙ্গ পথে মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলাম।

অর্ধেকের বেশী পথ পার হওয়ার পর ভাই মুহিউদ্দীন নাস্তার

প্রস্তাব করলেন এবং নিজেই ব্যবস্থা করলেন। সামান্য ব্যবস্থা, কিন্তু সেটাই অসামান্য হয়ে উঠলো পরিবেশ ও পরিবেশন দুটোর সমন্বয়ে, সেই সঙ্গে ঐ ছোট্ট দস্তরখানে একজন মেহমানের শরীক হওয়ার বদৌলতে। এমন মেহমান এমন শহরেই পাওয়া যায় এবং একদুবারই পাওয়া যায়। গুণে গুণে তিনটুকরো রুটি তিনি গ্রহণ করলেন এবং তোমাদের খাবারে আল্লাহ বরকত দান করুন বলে উঠে গেলেন। যেন এই দুআটুকু আমাদের দান করার জন্যই

দস্তরখানে শরীক হওয়া।

প্রথম সুড়ঙ্গটি শেষ হওয়ার পর মাঝখানে সামান্য একটু ফাঁকা জায়গা। এখান থেকে ইচ্ছা করলে বামদিকের সড়কপথে চলে যাওয়া যায়। যারা

মিসফালায় যেতে চায় তারা এপথেই যায়, আর যারা হারামে যেতে চায় তারা সামনের সুড়ঙ্গপথের দিকে এগিয়ে যায়।

ভাই হিদায়াত হোসায়ন ও তার সঙ্গী মিসফালার পথে চলে গেলেন। আমরা তিনজন দ্বিতীয় সুড়ঙ্গপথে প্রবেশ করলাম। সেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো জীবনের এক

মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা!

সুড়ঙ্গপথে একপাশে একজন মানুষ অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। আফ্রিকার কোন দেশের কালো মানুষ এবং কঙ্কালসার তার পাশ দিয়ে শত শত মানুষ চলে যাচ্ছে হারামের পথে আল্লাহর ঘরের উদ্দেশ্যে। কেউ ফিরে তাকাচ্ছে না অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকা মানুষটির দিকে। ফিরে তাকাচ্ছে না, কথাটা ঠিক হলো না, ফিরে তাকাচ্ছে কেউ কেউ, কিন্তু বড় নির্লিপ্ত তাদের দৃষ্টি। দুএকজন দাঁড়াচ্ছেও, কিন্তু কারো যেন কিছুই করার নেই, কৌতূহল মেটানো ছাড়া!

এসব ক্ষেত্রে ভাই মুহিউদ্দীন অন্যরকম মানুষ! সবকিছু তখন তিনি ভুলে যান। তার নাকি তখন মনে হয়, এ মানুষটি মানুষ নয়, স্বয়ং আল্লাহ! নইলে কেয়ামতের দিন কেন বলা হবে, আমি অসুস্থ হলাম, তুমি আমার শুশ্রূষা করলে না কেন?

তো আল্লাহকে শুশ্রূষা করার এবং আহার দান করার সুযোগ পেলে ভাই মুহিউদ্দীন কখনো তা হাতছাড়া করেন না। এবারও করলেন না। তার সঙ্গে একটু শরীক থাকতে পেরে নিজেকে আমার ধন্য মনে হলো।

***

ঘরে এসে শুনি অবাক ঘটনা! শিকদার সাহেব মাযূর মানুষ। তাকে তাওয়াফে যিয়ারত করানোর জন্য যে লোক ঠিক করা হয়েছিলো সে আসেনি। আসেনি তো আসেইনি; এখন কী করা! শিকদার সাহেব যখন পেরেশান তখন প্রকাশ পেলো আল্লাহর কুদরত। ঘরে সবার আগে এলেন আমাদের কাফেলার সবচে বয়োবৃদ্ধ এবং প্রায় মাযূর মিনহাজ সাহেব। তিনি বললেন, আল্লাহ ভরসা, চলেন আমার সঙ্গে। মিনহাজ সাহেব তাকে নিয়ে গেলেন এবং শান্তিমত তাওয়াফ করিয়ে আনলেন! শিকদার সাহেবের মতে, আসলে আল্লাহ তাআলা ফিরেশতা দ্বারা আমাদের সাহায্য করেছেন। না হলে এটা কিছুতেই সম্ভব ছিলো না।

আসলে যখন কোন উপায় থাকে না, অবলম্বন থাকে না তখন যদি আল্লাহর উপর ভরসা করা যায়, আল্লাহ তাঁর কুদরতের কারিশমা বান্দাকে দেখিয়েই দেন।

***

হজ্বের পর নিজেকে খুব হালকা আর পরিপূর্ণ মনে হয়। কারণ টুটা-ফাটা যেমনই হোক হজ্ব তো হয়ে গেলো। হজ্বের আগে প্রতিদিনের প্রতিমুহূর্তের সেই উৎকণ্ঠা তো আর নেই। এখন শুধু আছে আশা ও কুণ্ঠা। আল্লাহর নেকবান্দাদের নূরানিয়াতপূর্ণ হজ্ব আমার দ্বারা হয়নি, কত ত্রুটি কত বিচ্যুতি ঘটেছে প্রতিটি আমলে, এ কুণ্ঠা ও লজ্জা যেমন আছে তেমনি আছে এই আশা ও ভরসা যে, দাতা এতটুকু তাওফীক যখন দান করেছেন তখন অবশ্যই তিনি কবুল করবেন। সুতরাং এখন শুধু শোকর করো আর নিবেদন করো, যতক্ষণ পারো হারামে হাযির থাকো, তাওয়াফের উত্তাপ এবং যমযমের শীতলতা গ্রহণ করো। শব্দগুলো আমার, তবে কথাগুলো হযরত হাফেজ্জী হুযূর রহ-এর। তাঁর নূরানী ছোহবতে জীবনের প্রথম হজ্বটি যখন সম্পন্ন হলো তখন একদিন তিনি একথাগুলো আমাকে বলেছিলেন হারামে উম্মেহানিতে আল্লাহর ঘরকে সামনে রেখে। প্রথমে বললেন, মিয়া আবু তাহের, পেয়াস লাগছে।

আহা, আমার প্রিয় হযরতের পিপাসা লেগেছে! এমন করে আর কবে কে বলবে আমার মত অধমকে! তখন হারামের ভিতরে যমযমের এমন আসান ইন্তিযাম ছিলো না। দৌড়ে গেলাম অনেক দূরে। বোতল পূর্ণ করে যমযম আনলাম। হাঁপাচ্ছি দেখে বড় মায়ার দৃষ্টিতে তাকালেন, আর যমযম পান করে বললেন, আলহামদু লিল্লাহ, জাযাকাল্লাহ, বড় শান্তি হইছে। 

তারপরই বললেন উপরের ঐ কথাগুলো।

 সেই নছীহত, সেই উপদেশ এখন মনে পড়ে আর অন্তরে যেন নতুন উদ্যম ফিরে আসে। তাওয়াফ তো আর সেই বুড়ো মানুষটির মত করতে পারি না, বড় জোর দুটি তিনটি; তবে হারামে পড়ে থাকি, হারামেই রাত যাপন করি, আর প্রাণভরে যমযম পান করি, যাকে বলে আকণ্ঠ পান করা।

***

মিনায়, আরাফায়, মুযদালিফায় এবং হারামে উম্মেহানিতে কতজনের সঙ্গে দেখা হলো, দেখা হলো না শুধু আমার ভাই সাঈদ মেছবাহের সঙ্গে। ব্যাকুল দৃষ্টিতে প্রতিদিন খুঁজি এবং আশা করি, কাল পাইনি, তবে আজ অবশ্যই তার দেখা পেয়ে যাবো। কিন্তু পাই না। মিনায় একদিন চোখের ভুলে পিছন থেকে একজনকে সাঈদ বলে ডেকে উঠেছিলাম এবং দৌড়ে গিয়েছিলাম। পিছন থেকে তার মতই মনে হয়েছিলো। সে আমার ভাই ছিলো, তবে সাঈদ ছিলো না।

মিনা থেকে আসার পরদিন, অর্থাৎ চৌদ্দ তারিখে আছরের কিছু আগে উম্মেহানির নীচের অংশে দূর থেকে দেখলাম আমার ভাইকে। মনের ভুলে কখনো কখনো অন্যকিছু মনে হয়, কিন্তু ভাই কখনো অন্যকিছু হয় না, ভাই-ই থাকে। মায়ের ক্ষেত্রে বলি নাড়ীর টান, ভাইয়ের ক্ষেত্রে কী বলা যায়, উদরের টান! হয়ত ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের টান বোঝাবার জন্য আলাদা কোন শব্দ নেই, তবে সেই টান আমাকে তখন এমনই উতালা করলো যে, খেয়ালই হলো না, আমি কাতার ডিঙ্গিয়ে ডিঙ্গিয়ে যাচ্ছি, আর মানুষ ফিরে ফিরে আমাকে দেখছে, বিরক্ত হচ্ছে। একেবারে পিছনে গিয়ে সাঈদ বলে ডাক দিলাম এবং নিজেই অবাক হলাম গলার অদ্ভুত কম্পনে!

সাঈদ ফিরে তাকালো, আমরা আলিঙ্গনাবদ্ধ হলাম। পঁচিশ বছর আগে এখানে আল্লাহর ঘরে, উপরে এই উম্মে হানিতে একটি আলিঙ্গন হয়েছিলো আমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে, আজ হলো দ্বিতীয় আলিঙ্গন। দুই আলিঙ্গনের মাঝখানে সুদীর্ঘ পঁচিশ বছর হারিয়ে গেছে আমাদের উভয়ের জীবন থেকে এবং সম্ভবত আমরা উভয়ে তা অনুভব করলাম।

মিসফালায় আমাদের কাফেলা যে ভবনে থাকে তার ঠিক অপর দিকে পাঁচহাত দূরের ভবনে সাঈদ থাকে। দুজনই অবাক হলাম। এত কাছে! এত দূরে! পৃথিবীতে জীবন যত দিন আছে, দূর ও কাছের রহস্য রহস্যই থেকে যাবে।

মক্কার বাকি দিনগুলো হারাম শরীফে নিয়মিত দেখা হয়েছে আমাদের দুভাইয়ের। অনেক কথা হয়েছে, অতীতের, বর্তমানের, এমনকি ভবিষ্যতেরও; হয়নি শুধু ...!

পঁচিশ বছর আগে আমি যে ক্ষুধার্ত ছিলাম সে কথা এবারও তার মনে ছিলো। কিছু না কিছু আমার জন্য সে হারামে নিয়ে আসতো; অন্তত একটা আপেল, আরবীতে যাকে বলে তুফফাহ। তুফফাহ ও তোহফা, শব্দ দুটিতে কত মিল। আমার কাছে তা তোহফাই মনে হতো; ভাইয়ের জন্য ভাইয়ের তোহফা!

পঁচিশ বছর আগে আমাদের দুজনেরই দাড়ি ছিলো কুচকুচে কালো। এখন আমি প্রায় সাদা; শুরু হয়েছে তারও। আবার কি কখনো দেখা হবে আমাদের মিনায়, আরাফায়, হারামে, বাইতুল্লাহর ছায়ায়! যেন দেখা হয় দাড়ির এবং হৃদয়ের শুভ্রতার সঙ্গে। আমার জীবনের যা কিছু শুভ্র-সুন্দর তা যেন আল্লাহ আমার ভাইকে, ভাই-বোন সবাই দান করেন। আমার জীবনে যা কিছু অসুন্দর তা থেকে আল্লাহ যেন আমাকে এবং আমার ভাইবোন সবাইকে মুক্ত রাখেন, আমীন। ষ

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

 

 

advertisement