ইনসাফ: উড়ন্ত সন্দেহে অবমাননা-হয়রানি
এ লেখা মুদ্রণে যাওয়ার একদম আগ মুহূর্তে জানা গেল, মুফতী হারুন জামিনে মুক্তি পেলেও তিন সঙ্গীসহ আবার তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হয়তো তিনি অচিরেই মুক্তি পেয়ে যাবেন অথবা নতুন করে নানান অভিযোগের শিকার হবেন। জানি না, শেষ পর্যন্ত সত্য প্রমাণিত হবে কোন বিষয়টি-অভিযোগ নাকি নির্দোষিতা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সম্মানহানি ও হয়রানির চৌদ্দ পর্ব শেষ করে বলা হচ্ছে তার দোষ নেই অথবা ছিল না। এদেশের আইন-শৃঙ্খলা ও মিডিয়া পাড়ার একশ্রেণীর মানুষের মাথায় তবে কি রিমাণ্ড ও রিপোর্টের নামে আলিফ-লায়লার কাহিনী জন্ম দেওয়ার সৃজনশীলতা ভর করেছে? তাদের কল্পিত গল্পের প্লট উপহার দেওয়ার জন্য কি দেশের আলেম সমাজকে এখন সব সময় তটস' ও সন্ত্রস- হয়ে দিন কাটাতে হবে? যে কোনো দাড়ি-টুপিওয়ালা ধার্মিক মানুষ কিংবা যে কোনো পর্যায়ের একজন আলেম কি এখন সার্বক্ষণিকভাবে লশকর কিংবা হুজির বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরবেন? তাকে ধরলেই হয়ে গেল। পরের দিনের পত্রপত্রিকায় গল্প বেরিয়ে যাবে? তারপর সে গল্প দিন দিন আরো রোমহর্ষক আরো রহস্যজনক উপসংহারের দিকে এগিয়ে যেতে থাকবে? এটা কি ইনসাফের কথা, সুশাসনের কথা, সুস্থতা, মানবিকতা ও বিবেকের কথা?
আলেম নামধারী কোনো মানুষই কোনো ধরনের উগ্র কাজের সঙ্গে জড়িত নয়-এ কথা আমরা দাবি করব না। জড়িত থাকাটা অসম্ভবও নয়। যে কোনো শ্রেণী, পেশা ও মহলের ক্ষেত্রেই এমনটি ঘটতে পারে। তবে একজন সম্মানীয় আলেম ও প্রতিনিধিত্বশীল ধর্মীয় নেতার দিকে সন্দেহের আঙ্গুল তাক করতে যথেষ্ট সতর্কতা ও নিশ্চয়তা প্রয়োজন। তাছাড়া একজনকে সন্দেহ করলেই সে দোষী, একজনকে ধরে নিলেই সে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী-এটাতো হতে পারে না। সন্দেহ আর গ্রেফতারির পর তাকে ‘দুর্ধর্ষ’ হিসেবে উপস্থাপন এবং তার পারিবার ও স্বজনকে বিচ্ছিন্ন করে কর্মক্ষেত্র ও সমাজে তাকে হেয় ও অপমানিত করার পর তাকে ‘নির্দোষ’ বলার অর্থ হল, তাকে ও তার ইমেজকে মেরে কবর দিয়ে আবার কবর থেকে তাকে টেনে তোলা।
এ ধরনের অন্যায় কর্মের সঙ্গে সরকার ও রাষ্ট্রের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের কোনো সম্পর্ক রয়েছে বলে আমরা এখনই মনে করতে চাই না। নিঃসন্দেহে এটি সরকারের সঙ্গে ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠীর দূরত্বপ্রত্যাশী একটি মহলের পরিকল্পিত কর্মপ্রয়াসের অংশ।
আলেমসমাজের যে কারো ব্যাপারে নিছক উড়ন্ত সন্দেহের ভিত্তিতে চুড়ান্ত অবমাননার পথ বর্জন করে যথার্থ খোঁজখবর নিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়ার চেষ্টা করাই সমীচীন। বারবার অহেতুক হয়রানি ও অবমাননার ঘটনা মারাত্মক বেদনা ও ক্ষোভের কারণে পরিণত হতে পারে। এ ধরনের বেদনা, ক্ষোভ ও অবমাননার পরিবেশ থেকে মুক্ত থাকা সবার জন্যই মঙ্গলজনক।