জ ন স্বা র্থ : ধমকপ্রবণ নেতৃত্বের মুখ নয় ...
নাগরিক অধিকার ও সুবিধাগুলো নাগরিকদের হাতে তুলে দেওয়াই সরকারের প্রধান কাজ। এ কাজগুলো যখন কোনো সরকার করতে না পারে তখন সে সরকার তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দোষে দোষী হয়। এ দোষ স্খলনের জন্য কেউ কেউ ক্ষমা চায়। কেউ কেউ জনরোষ সামলানোর জন্য তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নিয়ে জায়গা ত্যাগ করে। কিন্তু নাগরিকদের অধিকার দিতে না পেরে উল্টো হুমকি ও ধমক দেওয়ার কাজ করতে সাধারণত কেউ সাহসী হন না। এ সাহসটাই দেখালেন তরুণ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। গত ২২ এপ্রিল এই প্রতিমন্ত্রী বললেন-পানি ও বিদ্যুৎ পরিস্থিতিসহ জনদুর্ভোগ নিয়ে কেউ আন্দোলন-সংগ্রামে নামলে তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে। পানি-বিদ্যুৎ নিয়ে কেউ আন্দোলনের ইন্ধন দিলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সাহসী এই তরুণ প্রতিমন্ত্রী খুব ভালো করেই জানেন, বিদ্যুৎ ও পানির অভাবে মহানগরীর বাসিন্দাদের ত্রাহি অবস্থা চলছে। তীব্র গরমের মধ্যে ২৪ ঘন্টায় অন্তত ১৪/১৫ বার লোডশেডিং-এর যন্ত্রণায় নগরীর প্রায় প্রতিটি পরিবারে দু-একজন করে অসুস্থতায় আক্রান্ত হচ্ছেন। নগরীর বহু এলাকায় পানির অভাবে মানুষ শৌচকর্ম তো দূরের কথা, খাবার পানিই সংগ্রহে রাখতে পারছেন না। এসব পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও পানির সাপ্লাই বৃদ্ধির বিষয়ে চিন্তাভাবনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নাগরিক সাধারণদের প্রতি শান্তনা দান ও ধৈর্য্য ধরার আহবান জনানোই ছিল মন্ত্রীদের কাজ। তা না করে মন্ত্রীরা এখন ধমক-ধামকে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। তারা সবকিছুর মধ্যেই আন্দোলনের জুজু দেখছেন।
জনস্বার্থ, জনদুর্ভোগ ও জনসেবার এসব বিষয়ে জবাবদিহিতার অনুভূতি ছুঁড়ে ফেলে এভাবে মারমুখি মনোভাব দেখানো এবং ধমকাধমকি করা একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির মুখে মোটেই মানানসই নয়। অভাবিতপূর্ব বিদ্যুৎ ও পানি সংকটে মানুষজন অতিষ্ঠ। এ সংকট থেকে উত্তরণে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, কতদিনের মধ্যে তার সুফল লক্ষ্য করা যাবে, উভয় ক্ষেত্রে বিতরণ ব্যবস্থার বিদ্যমান ত্রুটিগুলো সারানো হচ্ছে কি না, সরকারের পক্ষ থেকে এসব তথ্য জনগণ জানতে চাইতেই পারেন। তার পরিবর্তে যদি জনগণকে ‘দমন করব’ জাতীয় উস্কানিমূলক কথাবার্তা একজন প্রতিমন্ত্রীর মুখ থেকে বের হয় তাতে মানুষের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে যেতে পারে। কানসাট ও শনির আখড়ার উদাহরণ সবার মনে তাজা থাকার কথা। হম্বিতম্বি করে জনরোষ থামানো যায় না। এতে উস্কানির মাত্রা আরো বেড়ে যায়।
ধমকপ্রবণ ও বাচাল নেতৃত্বের পরিবর্তে আমরা শান্ত, বাস্তবানুগ কর্মপন্থা গ্রহণকারী নেতৃত্বের মুখ দেখতে চাই। উত্তেজনার পরিবর্তে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুরাহা ও সরকারের সাফল্য দেখতে চাই। এর জন্য দ্রুত আন্তরিক উদ্যোগ এবং পাশাপাশি বাকসংযমের নিদর্শনও দেখতে চাই। চিড়া না ভিজিয়ে শুকনা কথাবার্তায় এখন কাজ হবে বলে মনে হয় না। এমন কিছুই সরকারের করা উচিত যাতে চিড়া ভিজে, অর্থাৎ মানুষের জীবনের দুর্ভোগ কমে আসে।