জুমাদাল উলা ১৪৩০   ||   মে ২০০৯

মাদরাসা : প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের ভবিষ্যত কী?

ওয়ারিস রব্বানী

প্রথম দিকে মিডিয়াগুলোর প্রচারণাই ছিল জোরদার। ছুতা একটা পেলেই হল, জঙ্গিবাদের ঘাঁটি হিসেবে কওমী মাদরাসাগুলোর দিকে দুহাতের দশটি আঙ্গুলই তাক করা হয়েছে। অন্ধের হাতি দর্শনের মতই সব উগ্রতার সূতিকাগার হিসেবে মাদরাসাকেই দায়ী করা  হয়েছে। সর্বশেষ ভোলার গ্রিনক্রিসেন্ট ঘটনার পরও কওমী মাদরাসাকে টার্গেট করা হয়েছে।

এ ধরনের একটি ধুন্ধুমার পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকারের আইনমন্ত্রী হঠাৎ করে প্রকাশ্য মিটিঙে বলে ফেললেন, কওমী মাদারাসাগুলোই জঙ্গিবাদের প্রজননকেন্দ্র। তার এই বক্তব্যে সারা দেশের সব কটি মাদরাসায় ক্ষোভ ও বেদনার বাতাস ছড়িয়ে পড়ল। ছোট-বড় সব স্তরের আলেম-উলামার মাঝে প্রতিবাদী ও ক্ষুব্ধ অনুভূতি জেগে উঠল। ঠিক তখনি বিশেষ উদ্যেগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করা হল কওমী আলেম-উলামার প্রতিনিধিত্বশীল একটি গ্রুপের। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হল প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় বাসভবন-যমুনায়। ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের খবর ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ওই দিন রাতেই প্রচারিত হয় এবং পরদিন  প্রচারিত হয় সংবাদপত্রগুলোতে। ইতিবাচক আলোচনার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হওয়া বৈঠকটির কারণে কওমী মাদরাসা ও সরকারের মাঝে বিরাজমান উত্তেজনা যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস পায়।

ওই বৈঠকের প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত বিভিন্ন সূত্রের খবরে জানা যায়, কওমী মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি দিতে ১১ সদস্যের একটি কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। আর কওমী মাদরাসার প্রতিনিধিগণ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের প্রতি সহযোগিতার আশ্বাস দেন। অপরদিকে মাদরাসা প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার সহ পেশকৃত ৫ দফা দাবি পূরণে সুবিবেচনার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।

কওমী মাদরাসা বিরোধী অবস্থান ও জঙ্গিবাদ সম্পৃক্ততার সরকারী অভিযোগ-অপবাদের জটিল মুহূর্তে সরাসরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কওমী মাদরাসা প্রতিনিধিদের এই বৈঠকটিকে আমরা একটি স্বস্তিকর ঘটনা হিসেবেই দেখতে চাই। এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে অন্তত কওমী মাদরাসা নিয়ে সরকারী অপবাদ-অভিযোগের ভিতটি ধ্বসে পড়েছে বলে মনে করলে ভুল হবে না। তাই এটিকে আগাগোড়া ব্যর্থ ও সম্ভাবনাহীন একটি বৈঠক হিসেবে চিহ্নিত করার পথে আমরা যেতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী যদি আন্তরিকতার পরিচয় দেন তাহলে এ বৈঠক উভয় পক্ষের জন্য সাফল্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে বলেই আমরা মনে করি।

বিশেষত সরকারের কোনো মন্ত্রী কিংবা কর্মকর্তা, সরকারী দলের কোনো নেতা কিংবা সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট মিডিয়া, থিংকট্যাংক ও বুদ্ধিজীবী মহলের পক্ষ থেকে যদি কওমী মাদরাসা বিরোধী অহেতুক অবস্থান গ্রহণের ফালতু খেলা বন্ধ করার প্রতি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সযত্ন দৃষ্টি রাখা হয় তাহলে সেটিও একটি শুভ উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। কারণ অনেক সময় আওয়ামী লীগের শুভানুধ্যায়ী বলে পরিচিত বুদ্ধিজীবী মহলের অতিশয়োক্তি সমস্যার পাথরকে পাহাড়ে পরিণত করে থাকে। তথ্য-প্রমাণহীন ও যুক্তি-বুদ্ধি বহির্ভূত পন্থায় সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমানের মতো দেশী-বিদেশী মহলের গাঁজাখোরি বক্তব্য সেন্সর করার সরকারী উদ্যোগ থাকলে সরকার ও কওমী মাদরাসার মাঝের সম্পর্কে দিন দিন ইতিবাচক আবহ সৃষ্টি হতে পারে বলে আশা করা যায়। 

 

 

advertisement