জুমাদাল উলা ১৪৩০   ||   মে ২০০৯

আমাদের চাওয়া, আমাদের পাওয়া

ইবনে নসীব

প্রার্থনা করলে তিনি সন্তুষ্ট হন। বান্দা যত বেশি প্রার্থনা করে তিনি তার প্রতি তত বেশি সন্তুষ্ট হন। প্রার্থনার মাধ্যমে বান্দা তাঁর নৈকট্য অর্জন করে। আর তিনি বান্দাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তার প্রার্থনা গ্রহণ করবেন। এটা তাঁর শানে রহমত, শানে রুবূবিয়্যাত।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাশ্বত শিক্ষা-ইযা ছাআলতা ফাছআলিল্লাহ অর্থাৎ যখন চাইবে তো শুধু আল্লাহর নিকটেই চাইবে।

আমরা কী চাইব  আল্লাহ তাআলার কাছে? সবকিছু। এমন কিছু কি আছে যা অন্য কেউ দিতে পারে? জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে নিয়ে সবচেয়ে সামান্য জিনিসও তাঁর কাছেই প্রার্থনা করব। ঈমান-ইয়াকীন, সুস্থতা-কর্মক্ষমতা, শান্তি-নিরাপত্তা সবই তো আল্লাহর দান। তাঁর নিকট থেকেই বান্দা এই নেয়ামতগুলো লাভ করে। এছাড়া পার্থিব জীবনের আরো যত প্রয়োজন সব আল্লাহ তাআলাই পূরণ করেন। প্রয়োজনের সঠিক অনুভূতিও তাঁর নিকট থেকেই আসে। আল্লাহর তাওফীক না হলে কি আমরা আমাদের প্রকৃত প্রয়োজনগুলোও অনুভব করতে পারি? পারি না। এজন্যই তো মানুষের প্রয়োজনে-প্রয়োজনে কত পার্থক্য হয়ে যায়।

আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের সকল প্রয়োজন পূরণ করেন-যা আমাদের বোধগম্য তা-ও, যা বোধগম্য নয় তা-ও। যা দুনিয়ার প্রয়োজন তা-ও, যা আখিরাতের প্রয়োজন তা-ও।

মানুষকে আল্লাহ শুধু ইহজগতের জন্য সৃষ্টি করেননি। তাই তার প্রয়োজনও ইহজগতের গন্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের যেমন প্রয়োজন ঈমানী জীবন তেমনি প্রয়োজন ঈমানী মৃত্যু। কবরের আযাব থেকে মুক্তি, মুনকার-নকীরের সওয়ালের জওয়াব, ডান হাতে আমলনামা, মিযানের পাল্লা ভারী হওয়া, পুলসিরাত বিদ্যুৎ গতিতে পাড়ি দেওয়া, জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতে প্রবেশ করা ... এই সবই তো আমাদের অপরিহার্য প্রয়োজন। আর তা শুধু পূরণ হতে পারে মহান আল্লাহর অসীম করুণার দ্বারা।

আমি আল্লাহর কাছে কতটুকু চাই? আমার ধারণক্ষমতা অনুযায়ী, না আল্লাহর শান অনুযায়ী? আল্লাহ তাআলার দান তো অফুরন্ত, তাঁর করুণা তো সীমাহীন। বান্দার ধারণ-ক্ষমতাও তো তাঁরই দান। তিনি যদি ইচ্ছা করেন তবে কি পাত্রের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে পারে না? তাই ইয়া রব! আমি তোমার করুণা কামনা করি তোমার শানমতো। ইয়া আল্লাহ! ইলম ও হিকমতের অফুরন্ত খাযানা তোমার হাতে, বরকত ও প্রাচুর্যের অসীম ভান্ডারও তোমারই কাছে। ইযযত ও যিল্লত, হেদায়েত ও গোমরাহী, হায়াত ও মওতের তুমিই অধিপতি। তোমারই কুদরতী হাতে সকল সৌভাগ্যের চাবিকাঠি। অতএব হে মহান! তুমি আমাকে উপযুক্ত কর, অতঃপর সিক্ত কর করুণার শিশিরে।

রাববুল আলামীনের বান্দাদের মধ্যে সে-ই উত্তম যে গ্রহণ করে এবং বিতরণ করে। খালিকের নিকট থেকে গ্রহণ করে আর মাখলূকের মধ্যে বিতরণ করে। সে দুই সৌভাগ্যের অধিকারী-গ্রহণের সৌভাগ্য ও বিতরণের সৌভাগ্য। আবদিয়ত ও খিদমতের দ্বিমুখী সৌভাগ্য যিনি লাভ করেছেন তিনিই তো পূর্ণ সৌভাগ্যবান।

আমরা তো ওই নবীরই উম্মত, যাঁর পরিচয়-ইন্নামা আনা ক্বাসিমুন ওয়াল্লাহু ইউত্বী। অর্থাৎ আমি তো শুধু বিতরণকারী, দান করেন আল্লাহ।

ইয়া আল্লাহ! আমাদের তুমি সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত কর।

 

 

advertisement