স্বদেশ: ইতিবাচকতার পথে কেন নয়?
যতটুকু জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ জেলার অধীনে ভৈরবকে স্বতন্ত্র জেলা করার একটি নির্বাচনী আশ্বাস দিয়েছিলেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি। তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ওই এলাকায় উপ নির্বাচনে এমপি হয়েছেন তারই ছেলে। এখন ভৈরবকে জেলা বানানোর দাবি ও সরকারী প্রয়াসে তারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মাঠে-ময়দানে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন তার ও তাদের রাজনৈতিক অনুসারী নেতাকর্মীরা। অপরদিকে কিশোরগঞ্জের অখণ্ডতা রক্ষার পক্ষে বর্তমান জাতীয় সংসদের স্পীকার এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর মনোভাবের কথাও আসছে পত্র পত্রিকার পাতায়। শোনা যাচ্ছে, কিশোরগঞ্জ শহরে ভৈরবকে জেলা বানানোর উদ্যোগের বিরুদ্ধে যেসব নরম-গরম কর্মসূচি পালিত হচ্ছে তার নেতৃত্বে এ দু’নেতার অনুসারীদের ভূমিকা বড়। এর মধ্যে প্রেসিডেন্টের কুশপুত্তলিকা পুড়ানোর ঘটনাও ঘটে গেছে কিশোরগঞ্জ সদরে। এরপর থেকে ভৈরব জেলা আন্দোলনের নেতাকর্মীরা চরম কর্মসূচি দিয়ে কিশোরগঞ্জকে সম্ভাব্য সব উপায়ে বয়কট করোর পথ বেছে নিয়েছেন। ভৈরব একটি বড় বাজার, নৌ বন্দর এবং বৃহত্তর সিলেট ও ক্ষেত্র বিশেষে ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল থেকে কিশোরগঞ্জসহ কয়েকটি জেলায় যোগাযোগ রক্ষার প্রবেশ পথ হওয়ায় ভৈরবে অনুষ্ঠিত টানা ধর্মঘট-হরতালে কয়েকটি জেলার অধিবাসীরা নানা ধরনের সংকটে পড়ে গেছেন। সাধারণ পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের সমস্যা তো এর সঙ্গে আছেই। ভৈরবকে জেলা করা-না করার দুদিকেই সরকারের সবচেয়ে প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তিত্বের উপস্থিতির কারণেই যদি ঘটনা এ পর্যায়ে পৌঁছে থাকে, তাহলে এই জনদুর্ভোগ দূর করার দায়িত্ব নেবে কে?
একটি জেলা ভেঙ্গে আরেকটি জেলা করা হবে অথবা হবে না-এরকম একটি প্রাথমিক পর্যায়ের প্রশাসনিক উদ্যোগ নিয়েই যদি এত লাঠালাঠি-ফাটাফাটির ঘটনা ঘটে, এতদিনকার এক জেলার অধিবাসীরা ভাই-ভাইয়ের পরিবর্তে ঠাইঠাই হয়ে যাওয়ার পথ ধরেন তাহলে আর জাতীয় ঐক্য নামের শ্লোগানটি মাঝে-মধ্যে ব্যবহার করার সুযোগ থাকে কি? এ লেখা প্রকাশ হতে হতে হয়ত এ সমস্যাটির কিছু একটা সমাধান ঘটেই যাবে, ভৈরব নতুন জেলা হবে কিংবা কিশোরগঞ্জকে অখণ্ড রেখেই আন্দোলনকারীদের ধমক দিয়ে থামিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু স্থানীয়ভাবে বিরাট উদ্যোগ নিয়ে জনদুর্ভোগ ঘটানোর সংস্কৃতির কী হবে? এসব দুর্ভোগের দায় ও দুর্নাম কে নেবে? ভৈরবকে জেলা ঘোষণার উদ্যোগের প্রথম কয়দিন আবার কিশোরগঞ্জের অপর উপজেলা বাজিতপুরের বাসিন্দারা বাজিতপুরকে জেলা ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও রেলপথ অবরোধের ঘটনা ঘটিয়েছেন। সেখানে বিক্ষোভরত অবস্থায় একজনের মৃত্যুর খবরও সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছিল। জানা নেই, ভৈরবকে জেলা ঘোষণা করলে বাজিতপুরবাসীরা আবারো মাঠে-ময়দানে সোচ্চার হয়ে উঠেন কিনা।এখানে বড় একটি প্রশ্ন হচ্ছে, নতুন একটি জেলা হলে সাধারণ যে পদ্ধতি ও অবকাঠামোগত পরিবর্তন ঘটবে তাতে ওই জেলারই ৮০% দরিদ্র লোকের জীবনমানে কোনো ধরনের উন্নয়ন ঘটবে কি না। নাকি এটা কেবল উপর তলায় বসবাসকারী দু’য়েকশ লোকের জীবনের দিনবদলে ভূমিকা রাখবে।
নতুন জেলা বাস-বায়ন আর পুরনো জেলার অখণ্ডতা রক্ষায় মাঠে-ময়দানে যত মানুষের ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ ও অব্যাহত সমাগম ঘটেছে ও ঘটছে, নিজেদের এলাকার উন্নয়নে রাস্তা নির্মাণ, সেচ ব্যবস্থাপনা কিংবা বৃক্ষ রোপনে যদি স্বোচ্ছাশ্রমের উন্মুক্ত আহ্বান জানানো হয় তাহলে আর তাদের মাঝে তেমন সমাগম ঘটবে বলে মনে হয় না। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। কেবল এক দু’ জেলায় নয়, সারা দেশের সব জেলার বাসিন্দাদের মাঝেই।