ছবির অপর পিঠটিও দেখুন
ইসলাম ও মুসলিম বিশ্ব সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের সংবাদপত্রে বিভিন্ন ধরনের খবর ও রিপোর্ট ছাপা হয়ে থাকে। সেসব খবর ও রিপোর্টে থাকে ইসলামী বিশ্বের বিরুদ্ধে সংঘটিত নানা ষড়যন্ত্রমূলক কাজ এবং ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের ফিরিস্তি। আরো আলোকপাত করা হয় পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের সাম্রাজ্য বিস্তারী সমূহ লক্ষ্য ও টার্গেট সম্পর্কে। মুসলিম সংবাদকর্মীরা আবার এ ধরনের খবর ও বিশ্লেষণের আক্ষরিক নকলটাই ছাপিয়ে দেন। অথচ এমন ধারার রিপোর্ট ও প্রতিবেদন থেকে ইসলামী দাওয়াতের ময়দানে কর্মরতদের অন্তরে নৈরাশ্য ও অসফলতার অনুভূতি জন্ম নেওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। এ বেদনাময় অনুভূতি আরো তীব্র হয়ে ওঠে যখন খোদ মুসলিম দেশগুলোর পক্ষ থেকে-নাইন ইলেভেনের পর যেসব দেশের শাসন ব্যবস্থা পরোক্ষভাবে মার্কিনী নিয়ন্ত্রনে চলে গেছে-ইসলাম, ইসলামী দাওয়াত এবং ইসলামপন্থিদের ওপর আরোপিত নিয়ন্ত্রন ও জোর-জুলুমের পীড়াদায়ক সংবাদ চলে আসে।
এ বিষয়ে সন্দেহ নেই যে, এসব রিপোর্টে কিছু না কিছু সত্যের প্রলেপ থাকে। এসব রিপোর্ট অনেকাংশে মুসলিম বিশ্বের চালচিত্রের প্রতিচ্ছবি হিসেবে ভূমিকাও রাখে। তাই এসব রিপোর্টের সবটুকুকেই মিথ্যা বলে সাব্যস্ত করা যায় না, যদিও তাতে অন্তর্ভুক্ত থাকে ভুল আলোচনা, ভুল ব্যাখ্যা এবং ঘটনাবলির পক্ষপাতমূলক চিত্র। এজন্য ইসলামী দাওয়াতের ময়দানে কর্মরত ব্যক্তি ও মহল এসব রিপোর্টকে এড়িয়েও যেতে পারেন না। এসব রিপোর্ট থেকে অনুমান হয় যে, বিশ্বব্যাপী ইসলামের দুশমনদের আক্রমণের আওতা এখন আর সেনাতৎপরতা পর্যন্ত সীমিত নেই; বরং তার আওতা সেনাতৎপরতা বা রণাঙ্গনের সঙ্গে সঙ্গে প্রচারমাধ্যম, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং চিন্তা-বুদ্ধির ময়দান পর্যন্তও ছড়িয়ে পড়েছে। স্পষ্টতই বোঝা যায়-পশ্চিমা দেশগুলো সেক্যুলারিজম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং বুদ্ধির মুক্তির দাবিদার হওয়া সত্ত্বেও ইসলামের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে ‘বদনাম’ করার জন্য পূর্ণ প্রচেষ্টা নিয়োগ করে রেখেছে। এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এমন সব পদক্ষেপ তারা নিচ্ছে, যা ইসলাম ও মুসলমানের অবয়ব বিকৃত করতে বড় রকম সহায়কের ভূমিকা রাখে। আর এসব ক্ষেত্রে বুঝে-না বুঝে মিডিয়া তাদেরকে পুরোপুরি সঙ্গ-সহায়তা দিচ্ছে এবং জনমতকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে।
পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে ইসলাম বিরোধী তৎপরতা, সংগঠন-সংগ্রাম এবং ইসলামবিরোধী চিন্তা-মতবাদের প্রতি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা দান কোনো নতুন ঘটনা নয়। শত শত বছর ধরে এ বৈরী আচরণের ধারাবাহিকতা বিদ্যমান। প্রাচ্যবাদের ইতিহাসও পুরনো। খৃষ্টান মিশনারীদের কর্ম তৎপরতাও ক্রুসেডযুদ্ধের যুগ থেকে চলে আসছে। এ যুগে কেবল তার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রচার যন্ত্র তাকে সামনে নিয়ে এসেছে। আজকের যুগে ইউরোপের দাবি হল, গির্জা ও রাষ্ট্রের মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ দলিল-দস্তাবেজ ও রিপোর্ট-প্রতিবেদনে পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হয় যে, ইউরোপে গির্জা ও রাষ্ট্রযন্ত্রের মাঝে গভীর সম্পর্ক বিরাজমান। ইটালি, ফ্রান্স, জার্মানি, বৃটেন ও আমেরিকার শাসকরা খ্রষ্টীয় ধর্মাদর্শের প্রচার-প্রসারে খ্রীষ্টান মিশনারী সংস্থাগুলোকে পূর্ণ পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে এবং প্রকাশ্য সহায়তা করছে। এমনকি মুসলিম দেশগুলোর শাসকদেরকে এ ব্যাপারে বাধ্য করা হচ্ছে যে, তাদের দেশে যেন খ্রীষ্টবাদ বিস্তারের পথে কোনো বাধা না দেওয়া হয়। খ্রীষ্টান মিশনারীগুলোর পূর্ণ সুরক্ষা ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। অপর দিকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে-ইসলামপ্রেমীদের যেন শাসনক্ষমতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়, ইসলামের দাওয়াতী কাজে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়, ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আর্থিক সাহায্য বন্ধ করা হয়, শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ইসলামী রূহ-জাগরুক উপাদান নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য পশ্চিমা সংস্কৃতি-সভ্যতার ব্যাপকতা দেওয়া হয়, নিজেদের দেশকে পশ্চিমের রঙে রাঙানোর জন্য আবশ্যকীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, ধর্মীয় প্রতীক ও স্বাতন্ত্র্য মুছে দেওয়া হয় এবং পশ্চিমা জীবন ব্যবস্থা ও জীবনধারণার বিরোধিতাকারীদের ওপর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো হয়। এসব পয়েন্ট ও পলিসি সম্বলিত একটি টার্গেটমূলক প্রতিবেদন ইদানিংকার আরবী সংবাদপত্রসমূহে প্রকাশিত হয়েছে। মার্কিন প্রশাসন এ পলিসিগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করছে বলে জানানো হয়েছে।
মূলত পশ্চিমা শাসকদের মাঝে ইসলামবৈরিতার বর্তমান বাড়তি প্রবণতার পেছনে রয়েছে একটি বাস্তবতার স্বীকৃতি এবং নতুন একটি প্রবণতার সূত্র। পশ্চিমা মিডিয়া এ বাস্তবতা ও প্রবণতাকে সম্পূর্ণ আড়াল করতে চাইলেও মিডিয়ারই নানান রিপোর্টে সে বাস্তবতা ও প্রবণতার বিভিন্ন সূত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আর সেটিই হচ্ছে বিরাজমান এই ছবি বা চিত্রের অপর পিঠ।
আরব সাময়িকী ‘আলমুজতামা’ মার্চ ২০০৭ সংখ্যায় একটি জার্মান সংবাদপত্রের বরাতে লেখা হয়েছে-গোটা দুনিয়ায় ইসলাম প্রচারে বাধা সৃষ্টি করতে ভ্যাটিকান একটি বড় অংক অনুমোদন দিয়েছে। আর এ কাজ সম্পাদনের জন্য পাদ্রীদের এমন একটি দলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যারা ইঞ্জিল প্রকাশ ও প্রচারের কাজে নিয়োজিত। এ লক্ষ্য পূরণের জন্য বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করা হয়েছে। সেসবের শীর্ষে রয়েছে স্কুল-নির্মাণ ও জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা। বিশেষভাবে মুখাপেক্ষী, দরিদ্র ও নিঃস্বদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা। পাদ্রীদের উল্লেখিত সংস্থায় কাজ করে প্রায় এক মিলিয়ন সদস্য। পাদ্রী ও যাজকদের সংখ্যা তাতে এক লাখ পঁচাশি হাজার। অন্যান্য কর্মীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লাখ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ২৮০টি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প সম্পন্ন করে পয়ষট্টি হাজার খ্রীষ্টান প্রচারকর্মী তৈরি করা হয়েছে। এ সংস্থায় প্রায় এক মিলিয়ন এমন কর্মীও অন্তর্ভুক্ত আছে, শহরে-নগরে, গ্রামে-গঞ্জে যারা চষে বেড়ায় এবং নিঃস্ব-গরীবদের শিকার করে এনে ক্যাথলিক চার্চের অনুসারী বানায়। &
ওই রিপোর্টে এ তথ্যও প্রকাশ করা হয়েছে যে, বুশ প্রশাসন ২০০৫ সনে জনসেবা ও খ্রীষ্টান মিশনারী সংস্থাকে দুই বিলিয়ন ডলারের চেয়েও অধিক অংক দান করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, বর্তমান সাম্রাজ্যবাদী শক্তি অস্ত্র ও মিশনারী-উভয় পথেই ইসলামের ওপর আক্রমণ রচনা করে যাচ্ছে।
এ ধরনের তৎপরতা কোনো নতুন ব্যাপার নয়। এর আগেও ইন্দোনেশিয়াকে খ্রীষ্টান স্টেট বানানোর ঘোষণা দিয়েছিল গির্জা। এ ব্যাপারে তারা অনেক বেশি মনোযোগও দিয়েছিল। বড় বড় পদক্ষেপও নিয়েছিল। এভাবে আফ্রিকার কয়েকটি মুসলিম দেশকে খ্রীষ্টান অধ্যুষিত বানানোর চেষ্টা ও চক্রান্তও চালানো হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বর্তমান পোপ কয়েকটি মুসলিম দেশ সফর করেছেন। তাজা একটি উদাহরণ হচ্ছে পোপের তুরষ্ক সফর। তুরষ্কে অত্যন্ত সুসংগঠিত উপায়ে খ্রীষ্টান মিশনারীগুলো সক্রিয়। সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী তুরষ্কের নাগরিকদের একটি বড় সংখ্যা খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছে। পোপের সফরও হয়েছে এসব তৎপরতায় শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে। খ্রীষ্টান মিশনারীগুলো বিশেষভাবে ওইসব মুসলিম দেশগুলোকে তাদের কাজের জন্য টার্গেট করে থাকে, যেসব দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক, গৃহযুদ্ধ, বন্যা, ভূমিকম্প, ঘুর্ণিঝড় এবং এ ধরনের আপদ-বিপদের শিকার হয়ে যায়। তারা এসব বিপন্ন দেশে সাহায্য দানের নামে কাজ করে এবং সমবেদনার প্রকাশ ঘটিয়ে মানুষকে খ্রীষ্টান বানিয়ে ছাড়ে।
সন্দেহ নেই এ ধরনের রিপোর্টগুলো অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং বড় রকম বিপদের চিহ্নবাহী। এসব পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন প্রখর মনোযোগ, দীর্ঘ প্রস্ত্ততি এবং উপযোগী কর্মপন্থা অবলম্বনের। কিন্তু এতে নিরাশ হওয়া উচিত নয়। কেননা আল্লাহ তাআলা ইসলামের স্থায়িত্ব ও সুরক্ষার ওয়াদা ব্যক্ত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে-(অর্থাৎ) ‘আমি কুরআন নাযিল করেছি এবং আমিই তার সুরক্ষা করব।’ (সূরা হিজর : ৯) ‘এবং তারা চায় আল্লাহর আলোকে তাদের মুখের ফুৎকারে নিভিয়ে দিতে, কিন্তু আল্লাহ তার আলোর পূর্ণতা দানকারী-যদিও কাফেররা অপছন্দ করে।’-সূরা ছফ : ৮
এ ধরনের ইসলাম বিরোধী প্রচেষ্টা, তৎপরতা, ষড়যন্ত্র ও ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড প্রথম দিন থেকেই সংগঠিত হয়ে এসেছে। সাম্রাজ্যবাদীদের যুগে সেটির ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। অপরদিকে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে দিন দিন ইসলামের অগ্রসরতা ও গ্রহণযোগ্যতার হিম্মত বাড়ানো ও আনন্দদায়ক বিভিন্ন সংবাদও পাওয়া যাচ্ছে। আর মুসলমানদের মাঝে দ্রুত লয়ে বড়ছে আপন ধর্মের সঙ্গে নিজেদের সম্বন্ধ দৃঢ়করণের আগ্রহ এবং ইসলামী মর্যাদাবোধ ও ঈমানী চেতনাবোধ। দেশে দেশে মানুষ ইসলামের শান্তির ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছে। আরো চিত্ত প্রশান্তিদায়ক কথা হচ্ছে এই যে, স্বয়ং খ্রীষ্টান অধ্যুষিত দেশগুলোতে বিস্ময়কর দ্রুততায় ইসলাম ছড়িয়ে পড়ছে। খ্রীষ্টান মিশনারীদেরও এ বিষয়ে স্বীকারোক্তি রয়েছে। প্রাক্তন পোপও এ বিষয়টি স্বীকার করেছেন। স্পেন, বৃটেন, আমেরিকা, ফ্রান্স, গ্রীস, জার্মানি ও রাশিয়ায় হাজারো প্রতিবন্ধকতা, শত্রুতা ও সংকট সত্ত্বেও ইসলাম ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত গতিতে। আরব সাময়িকী ‘আলমুজতামা’ রাশিয়ান সূত্রের বরাত দিয়ে লিখেছে-সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ৩ লাখ রুশ নাগরিক ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ইসলাম গ্রহণকারীদের মাঝে বড় সংখ্যাটা এমন সব মানুষের, যারা খ্রীষ্টীয় শিক্ষাদীক্ষায় কঠোরভাবে দীক্ষিত ছিলেন। আমেরিকা, বৃটেন ও জার্মানিতে মুসলমান বাসিন্দা দিন দিন বাড়ছেন। ফরাসী এক সাংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী ফ্রান্সে ইসলাম দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। বোরকেনা ফাসুতে ২০১০ জন ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে, বিশেষত বৃটেনে গির্জা বিক্রি করার প্রবণতা ব্যাপক হয়ে ওঠেছে। কারণ সেখানকার খ্রীষ্টানরা গির্জায় যাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। বহু গির্জা রূপান্তরিত হয়েছে মসজিদে। ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে নামাযীর সংখ্যাবৃদ্ধির ফলে মসজিদগুলোতে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। ইদানীং হল্যান্ডের কোনো কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে সেখানে মসজিদের সংখ্যাবৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। মসজিদগুলোতে এসে নামায পড়ার আগ্রহের মাত্রা এত অধিক যে, দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করে মুসলমানরা মসজিদে এসে হাজির হন। বহু জায়গায় নামাযের প্রতি মুসলমানদের এই আগ্রহের মাত্রা লক্ষ্য করে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব হল ও গ্যারেজে এবং কোম্পানিগুলো নিজস্ব লনে নামায পড়ার অনুমোদন দিয়েছে। একইভাবে কোনো কোনো দেশে সরকারী স্কুলগুলোতেও দ্বীনী শিক্ষা দান ও গ্রহণের অনুমতি পাওয়া গেছে। খোদ খ্রীষ্টীয় স্কুলগুলোতেও ইসলামী বিষয়াদির অন্তর্ভুক্তি ঘটানো হচ্ছে। আর বহু সংখ্যক স্বতন্ত্র ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানতো প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেই। খ্রীষ্টীয় দেশগুলোতে রেডিও ও টিভি স্টেশনগুলো থেকে ইসলামী শিক্ষা বিষয়ক প্রোগ্রাম প্রচারের অনুমতি পাওয়া গেছে। কিন্তু পশ্চিমা মিডিয়া এ জাতীয় খবরগুলো প্রচার করে না। উল্টো ইসলামের বিরুদ্ধে তারা বিষোদগার করে থাকে এবং ইসলামের প্রতি ঘৃণা জন্মানো উপাদান প্রচার করে ইউরোপকে ইসলাম সম্পর্কে সন্ত্রস্ত করে তুলে।
ইসলামের প্রতি বাড়তে থাকা সাধারণ এই আগ্রহ এবং নিজেদের ধর্মের সঙ্গে মুসলমানদের বাড়তে থাকা গভীর এই সম্বন্ধ দুশমনদের জন্য উদ্বেগের কারণ। এজন্যই ইসলাম-দুশমনরা ইসলামকে মিটিয়ে দেওয়ার নানান রকম উপায় অবলম্বন করে চলেছে। কিন্তু ইসলামের প্রতি এই আগ্রহ ও কৌতূহল বস্ত্তত পশ্চিমের বস্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা ও যান্ত্রিক জীবনেরই প্রতিক্রিয়া। তাই এ আগ্রহ ও প্রবণতা একটি স্বভাবজাত আগ্রহ ও প্রবণতা। ইরশাদ হয়েছে-(অর্থাৎ) ‘আল্লাহ তাআলা লিখে দিয়েছেন, অবশ্যই আমি এবং আমার রাসূলগণ বিজয়ী হবো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা শক্তিমান ও পরাক্রমশালী।’-সূরা মুজাদালা : ২১
(অর্থাৎ) : ‘নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলগণকে এবং ঈমানদারকে সাহায্য করবো দুনিয়ার জীবনে এবং সেই দিন, যেদিন স্বাক্ষদাতারা দন্ডায়মান হবেন।’-সূরা গাফির : ৫১ (অর্থাৎ) : যাদের সঙ্গে (কাফেররা) লড়াই করছে তাদেরও অনুমতি দেওয়া হয়েছে লড়াই করার। কেননা তাদের ওপর জুলুম করা হয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সাহায্য করায় শক্তিমান।’-সূরা হজ : ৩৯
ইসলামের ইতিহাস এ সত্যের সাক্ষ্যদাতা যে, প্রত্যেক যুগেই হক ও বাতিল এবং ভালো ও মন্দের মাঝে সংঘাত চালু ছিল এবং ইতিহাসে এমন যুগও গিয়েছে যে, ইসলাম নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল, কিন্তু ইসলাম প্রতিটি রণক্ষেত্রেই শেষ পর্যন্ত সফল ও বিজয়ী হয়েছে। কারণ আল্লাহ তাআলা এই দ্বীনের স্থায়িত্ব ও সুরক্ষার জিম্মাদারি নিয়েছেন। যে মানুষটিই পরিষ্কার মাথা নিয়ে পক্ষপাতমুক্ত হয়ে ইসলামের পাঠ গ্রহণ করে সে-ই ইসলামের সত্যতা ও সততার স্বীকৃতি দিতে নিজ থেকেই বাধ্য হয়। ইরশাদ হয়েছে-(অর্থ) ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে ধর্ম হচ্ছে শুধু ইসলাম। আর আহলে কিতাবরা তাদের কাছে ইলম এসে যাওয়া সত্ত্বেও নিজেদের অহংকার ও হিংসার কারণে বিরুদ্ধাচরণ করেছে এবং আল্লাহ তাআলার নিদর্শনাবলির প্রতি যারাই অস্বীকৃতি জানায়, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাদের থেকে দ্রুত হিসাব গ্রহণ করবেন।-সূরা আল ইমরান : ১৯ #
[উর্দু পাক্ষিক ‘তামীরে হায়াত’-এর ১০ জুন ২০০৭ সংখ্যায় প্রকাশিত এ লেখাটির অনুবাদ করেছেন-শরীফ মুহাম্মদ]