জুমাদাল আখিরাহ ১৪৩০   ||   জুন ২০০৯

কূ ট - কৌ শ ল : সোয়াতের লড়াই ফুটিয়ে তুলছে শত্রুর মুখে উল্লাসের রেখা

খলদুন

পাকিস্তানের সোয়াত এখন বোমা-বন্দুক আর রক্তের উপত্যকা। এক পক্ষে ইসলামী শাসনপন্থী তালেবান। অপরপক্ষে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। তালেবানদের হাত থেকে সোয়াতকে মুক্ত করার জন্য পাক সেনাবাহিনী এখন তুমুল লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি উভয় দিকেই হয়ে গেছে। আরো যে হবে তাও পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। ভ্রাতৃঘাতী এক আত্মহননের পথে চলেছে পাকিস্তান। কেন, কিভাবে এই রক্তক্ষয় শুরু হলো এবং কবে কিভাবে এর শেষ হবে সেই প্রশ্নই এখন শান্তিকামী    পাকিস্তানী মুসলিমদের ভাবিয়ে তুলেছে।

মাস খানেক আগে ইসলামাবাদের ১০০ কিলোমিটার দূরত্বের বুনার জেলায় তালেবানদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর দৃশ্যত এই পাল্টা অভিযানের সূচনা হয়। তালেবানরা নিজ থেকেই নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ায় বুনারকে অতি সহজেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয় পাক আর্মি। এরপর তালেবানদের নিজস্ব অঞ্চল বলে পরিচিত সোয়াতে হামলা শুরু হয়। সে হামলা এখনো চলছে। পাক সেনা কমান্ডারের ভাষায় সোয়াতের মিঙ্গোরাকে তালেবানমুক্ত করা এখন পাক সেনাবাহিনীর জন্য কেবল সময়ের ব্যাপার। ইতোমধ্যে উভয় দিকে প্রায় ৩০০ মুসলিম নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বহু। আর বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটে গেছে হাজার হাজার পরিবার। এখনও যাচ্ছে। বোমা-বন্দুক আর রক্তক্ষয়ের এক ধারাবাহিক বিপদের মধ্যে পড়ে গেছেন সোয়াতের বাসিন্দারা। এর শেষ যে কিভাবে হবে তা কেউ বুঝতে পারছেন না। এ হচ্ছে ভাইকে ভাইয়ের হত্যার এক অনিশেষ কালো অধ্যায়। কয়েকমাস আগে সোয়াতে শরীয়া আইন কার্যকর বিষয়ে সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পশ্চিমা শক্তিগুলো সে চুক্তি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে। সোয়াতে আগেও চালকবিহীন মার্কিন বিমানের হামলা হয়েছে। চুক্তির পরও সে হামলা বন্ধ হয়নি। তাতে নারী-শিশুসহ বহু হতাহতও হয়েছেন। এ নিয়ে তালেবানদের মাঝে ক্ষুব্ধতার সৃষ্টি হয়। পাক সরকারের সঙ্গেও টানাপড়েন শুরু হয়। এরই এক পর্যায়ে বুনার জেলার নিয়ন্ত্রণ তালেবানরা নিজেদের হাতে তুলে নেন। পশ্চিমা শক্তিগুলো পাক সরকারকে চাপ দেয়। ইসলামী শরীয়া আইন বাস্তবায়নকামী কোনো গোষ্ঠীকে যেন পাক সরকার কিছুতেই ছাড় না দেয় সেজন্য চাপ ও কূটকৌশল দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। সবশেষে মার্কিনী আর তালেবান নয়, তালেবান আর পাক আর্মির যুদ্ধ শুরু হয়। পশ্চিমাদের চাপে ও কারসাজিতে এখন পাকিস্তান হয়ে গেছে ভ্রাতৃহত্যার লীলাক্ষেত্র। নিঃসন্দেহে এতে উম্মাহর বিপুল ক্ষতি হচ্ছে আর তালেবান কিংবা পাক সরকার নয়, লাভবান হচ্ছে পশ্চিমা শক্তিগুলো।

পশ্চিমা মোড়লদের মুখে উল্লাসের রেখা ফুটিয়ে তোলার এই ভ্রাতৃঘাতী লড়াই সোয়াতে বন্ধ না হলে পারমাণবিক বোমাসহ পাকিস্তানের অনেক ক্ষতিই হয়ে যেতে পারে। একটি মুসলিম দেশ হিসেবে    পাকিস্তানে সেরকম দিন না আসুক-উম্মাহ এটাই চায়। #

 

 

advertisement