স ত তা : বিডিআর বিদ্রোহ : প্রচারে ছিল বহু জঙ্গি তদন্তে নেই কেউ
শেষ পর্যন্ত একাধিকবার সময় বাড়িয়ে অবশেষে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনার সরকারী তদন্ত কমিটির রিপোর্ট গত ২১ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হয়েছে। ৩০৯ পৃষ্ঠার রিপোর্টের প্যাকেট সিলগালা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন কমিটির সভাপতি সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনিছুজ্জামান খান। এলেখা প্রস্ত্তত কালে (২৬ মে ’০৯) কমিটির জমা দেওয়া রিপোর্টের বিষয়বস্ত্ত প্রকাশ করা না হলেও জমা দানের পরদিনের সংবাদপত্রে কমিটি সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটি বিডিআর বিদ্রোহে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ পায়নি। তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভকে পুঁজি করেই বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। সরকারী এ তদন্ত রিপোর্টে বিডিআর বিদ্রোহে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোনো কথা যেমন উল্লেখ করা হয়নি তেমনি এ ঘটনায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের-বিশেষত ক্ষমতাশীন দলের কারো কোনো-সংশ্লিষ্টতার বিষয়েও কিছু বলা হয়নি। তবে এর ঠিক এগারদিন আগে সেনাবাহিনীর তদন্ত কমিটি যে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন তাতে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সংশ্লিষ্টতার কিছু কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে বলে বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে বেশ ক’টি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। ওই রিপোর্টেও বিডিআর বিদ্রোহে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোনো সূত্র উল্লেখিত হয়নি বা উদঘাটিতই হয়নি।
দুটি রিপোর্টের কোনোটিই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত না হলেও সেগুলোর উল্লেখযোগ্য প্রতিপাদ্য সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে বিভিন্ন সূত্রের বরাতে। এতে যখন সরকারী দল সমর্থিত কোনো কোনো ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার কথা পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে তখন প্রভাবশালী দু-তিনজন মন্ত্রী রিপোর্টের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন এবং সংবাদপত্রের ভূমিকা নিয়ে তীব্র বিষোদগার পর্যন্ত করেছেন। কোনো কোনো মন্ত্রী তদন্ত শুরুর সময়ই এ ট্রাডেজির সঙ্গে জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার কথা বলে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন। আর একটি তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর আরেক অতি প্রভাবশালী মন্ত্রী বিদ্রোহের সময় বিডিআর জওয়ানদের মুখে ব্যবহৃত রূমালের কয়েকটি রঙের সূত্র ধরেও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কথা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন। কিন্তু সরকারী তদন্ত কমিটির রিপোর্টেও যখন জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কথা আসেনি তখন সবাই খামোশ হয়ে আছেন। অথচ এসব দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ (যারা প্রভাবশালী মন্ত্রীও বটেন) কোন্ স্বার্থে, কেন, কিসের ভিত্তিতে বিডিআর বিদ্রোহে জঙ্গিসূত্র আবিষ্কারের গায়েপড়া চেষ্টা করেছেন বুঝা মুশকিল।
বাংলাদেশে ঘুষখোর, পকেটমার, রাজনৈতিক সন্ত্রাসী, জমি দখলকারী, খুনী, রেপিষ্ট, ছিনতাইকারী, বন্দুকবাজ, দুর্নীতিবাজ, টেন্ডারবাজ, টাউট ব্যবসায়ী, ফন্দিবাজ আমলা যেমন আছে, তেমনি কিছু জঙ্গিও আছে। এর কোনোটার অস্তিত্বই অস্বীকারযোগ্য নয়। কিন্তু সবকিছুর গোড়ায় কেবল জঙ্গিতত্ত্ব দাঁড় করানো আর ধর্মপ্রাণ গোষ্ঠীকে কথায় কথায় কোন্ঠাসা করার মতলব যে নিঃসন্দেহে বদ ও অসাধু তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
এসব বদমতলবী কাজ স্বঘোষিত বদ লোকেরা করলে হয়তো কিছুটা মানিয়ে যায়। কিন্তু দায়িত্বের উঁচু আসনে বসে এত বড় দায়িত্বহীন কথাবার্তা বললে সেটা মানায় না। মনও মানে না।
দু’টি তদন্ত কমিটির রিপোর্টে কথিত জঙ্গিতত্ত্বের কোনো রেশ না পাওয়ায় বুঝা গেল, জঙ্গি নিয়ে জুজুবুড়ির ভয় যারা দিন দুপুরেও দেখিয়েছেন তারা হয় মতলবী না হয় ভূতগ্রস্ত ছিলেন। #