স্কুল-কলেজের ইসলামিয়াতের সিলেবাস : একটি পর্যালোচনা
আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। তাওহীদের বিশ্বাস অন্তরে ধারণ করে তাঁর বন্দেগী ও ফরমাবরদারীর মাধ্যমে মানব জীবনযাপন করবে এই উদ্দেশ্যেই তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা পৃথিবীকে মানুষের আবাসস্থল বানিয়েছেন এবং দুনিয়ার জীবনে আখিরাতের প্রস্ত্ততি গ্রহণের আদেশ করেছেন। তবে মানুষের জাগতিক প্রয়োজনও রয়েছে। হিকমতের কারণে আল্লাহ তাআলা মানুষকে নানাবিধ প্রয়োজনের মুখাপেক্ষী করেছেন। এই প্রয়োজন পূরণের জন্য যে জ্ঞান ও বিদ্যা আবশ্যক তাকেই আমরা বলি জাগতিক বিদ্যা। বহু শাখা-প্রশাখায় বিস্তৃত এই জ্ঞানের উৎস ইন্দ্রিয়, বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা।
পক্ষান্তরে যে উদ্দেশ্যে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার ইবাদত, তাঁর হুকুম-আহকাম পালন এবং আখিরাতের জীবনের প্রস্ত্ততি ইত্যাদির জন্যও জ্ঞানের প্রয়োজন। এই জ্ঞানের নাম ইলমুদ্দীন। এর মূল উৎস ওহী যা কুরআন মজীদ ও সুন্নতে নববীরূপে আমাদের মাঝে বিদ্যমান রয়েছে। ইলমুদ্দীনেরও অসংখ্য শাখা-প্রশাখা রয়েছে।
একটি অবক্ষয়মুক্ত সভ্য সমাজের জন্য দু’টোরই প্রয়োজন। দ্বীনী জ্ঞান ও জাগতিক বিদ্যা দু’টোই অপরিহার্য। জাগতিক বিদ্যা চর্চা বন্ধ হলে মানুষের দেহ ও মানবজীবনের বাহিরের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে আর ইলমে ওহীর চর্চা বন্ধ হলে আক্রান্ত হবে মানুষের হৃদয় ও আত্মা এবং মানবজীবনের ভিতরের অংশ। মানুষের অবয়ব থাকবে কিন্তু মনুষ্যত্বের অপমৃত্যু ঘটবে। ফলে মানুষের মধ্যেই বৃদ্ধি লাভ করবে পশুত্ব। যার একমাত্র প্রবণতা হবে পাশবিক চাহিদা পূর্ণ করা।
দুই.
আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এ এক পরীক্ষা যে, মানুষের স্বভাবের মধ্যেই পার্থিব প্রয়োজন পূরণের প্রেরণা বিদ্যমান রয়েছে। এই স্বভাবজাত প্রেরণা থেকেই মানুষ জাগতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় আত্মনিয়োগ করে থাকে।
সম্ভবত এজন্যই জাগতিক বিদ্যাচর্চার বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহয় সরাসরি তাকিদ করা হয়নি। সাধারণ অবস্থায় একে রাখা হয়েছে ‘মুবাহে’র পর্যায়ে। তবে এ বিষয়ে তাকিদ করা হয়েছে যে, যারা জাগতিক বিদ্যা চর্চায় আত্মনিয়োগ করবে তারা যেন আল্লাহর রেযামন্দীর কাজে তা ব্যবহার করে। মানুষের দ্বীনী ও দুনিয়াবী সেবা করে এবং নিজ দায়িত্ব সুচারুরূপে সম্পন্ন করে।
পক্ষান্তরে ইলমে ওহীর সম্পর্ক হচ্ছে এমন এক জীবনের সঙ্গে, যা দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। গাইব ও আখিরাতের প্রতি ঈমানই এই ইলমের ভিত্তি। তদ্রূপ হৃদয় ও আত্মার পরিশুদ্ধি, চরিত্র ও জীবন গঠন, ব্যক্তি সংশোধন ও সমাজ সংস্কার হচ্ছে এই ইলমের লক্ষ্য উদ্দেশ্য। যা মানব স্বভাবের জন্য অত্যন্ত কঠিন। তদ্রূপ এই ইলমের সম্পর্ক আল্লাহ ও বান্দার যাবতীয় হক আদায়ের সঙ্গে, যা স্বভাবত কঠিন। সম্ভবত এজন্যই কুরআন-হাদীসে ইলমে ওহী বা ইলমে দ্বীনের পঠন-পাঠনের ব্যাপারে জোর তাকিদ দেওয়া হয়েছে এবং এর ছওয়াব ও ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে।
তিন.
যদিও উপরোক্ত দু’ধরনের জ্ঞানই প্রয়োজনীয়। তবে কোনটির প্রয়োজন ও গুরুত্ব অধিক তা অনুধাবন করা চিন্তাশীলদের জন্য কঠিন নয়।
বলাবাহুল্য যে, যে ইলমের সম্পর্ক সৃষ্টির পরিবর্তে স্রষ্টার সঙ্গে, যার ভিত্তি অভিজ্ঞতার স্থলে আসমানী ওহীর উপর, যার লক্ষ্য নশ্বর জগতের স্থলে অবিনশ্বর জগত, যার বিষয়বস্ত্ত মানুষের শরীরের স্থলে তার কলব ও হৃদয় এবং যার লক্ষ্য মানুষের অবয়বের স্থলে মনুষ্যত্বের পরিচর্যা সেই ইলমই অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও উত্তম হবে। আর তা হচ্ছে ইলমে দ্বীন, যার ভিত্তি ওহী।
কিন্তু ইলমে দ্বীনের বিস্তার ও গভীরতা সম্পর্কে চিন্তা করলে প্রতীয়মান হয় যে, তা এক অথৈ সমুদ্র। তাই প্রত্যেককে পূর্ণ দ্বীনের ইলম অর্জনের আদেশ করা হলে এবং প্রত্যেকের উপর ইলমে দ্বীনের বিশেষজ্ঞ হওয়া অপরিহার্য করা হলে তা পালন করা অসম্ভব হয়ে দাড়াত। কিংবা জীবনের শৃঙ্খলা ও ভারসাম্য সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যেত। সম্ভবত এজন্যই শরীয়তে সকল বিষয়ের পূর্ণ ইলম ও বিশেষজ্ঞতা অর্জন ‘ফরযে আইন’ করা হয়নি। একে করা হয়েছে ‘ফরযে কিফায়া’। অর্থাৎ প্রত্যেক মুসলিম জনপদে ইলমে দ্বীনের মাহির ও বিশেষজ্ঞ বিদ্যমান থাকলে সকলেই দায়মুক্ত হবে। তবে প্রয়োজন পরিমাণ ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরয সাব্যস্ত করা হয়েছে।
এই ফরযে আইন ইলমের মধ্যে রয়েছে ঈমানিয়াত ও আকাইদের ইলম, ফরয ইবাদতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইলম, হালাল-হারামের ইলম, ঈমানের শাখা-প্রশাখা, দৈনন্দিন প্রয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিধান, যে যে পেশায় জড়িত তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মাসাইল ও আহকাম, কুরআন মজীদের সহীহ-শুদ্ধভাবে তেলাওয়াত (যদিও তা কিছু অংশই হোক)। এই পরিমাণ ইলম অর্জন করার পর আরো অধিক ইলম অর্জন করাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে তা ফরযে আইন করা হয়নি।
চার.
জ্ঞানের বিষয়ে শরীয়তের নীতি এই যে, জাগতিক জ্ঞান ও দ্বীনী ইলম দু’টোই প্রয়োজনীয় এবং দু’টোরই চর্চা সমাজে থাকতে হবে। তবে জাগতিক জ্ঞানকে দ্বীনী ইলমের অনুগত রাখতে হবে এবং একে ইলমে ওহীর সেবা ও সৃষ্টির সেবায় নিয়োজিত করতে হবে।
ইতিহাস সাক্ষী যে, ইসলামী খিলাফত আমলে খলীফাতুল মুসলিমীনগণ উভয় জ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। সকল শ্রেণীর নাগরিকদের মাঝে ফরযে আইন পর্যায়ের দ্বীনী ইলমের চর্চা ছিল। মুসলিম সমাজে যেমন ইলমে ওহীর বিশেষজ্ঞ বিদ্যমান ছিলেন তদ্রূপ জাগতিক বিদ্যায় পারদর্শী ব্যক্তিত্বেরও অভাব ছিল না। তবে জাগতিক বিদ্যা চর্চায় মগ্ন থাকার ফলে যদিও তারা ইলমে ওহীর পারদর্শী হতেন না কিন্তু তারা হতেন দ্বীনদার। ফরযে আইন পরিমাণ ইলম ছাড়াও আরও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তাদের ইলমে দ্বীন আত্মস্ত থাকত।
মোটকথা, শরীয়ত জাগতিক জ্ঞান অর্জনকে নাজায়েয বলে না। নাজায়েয বলে ক্ষতিকর বিদ্যাচর্চাকে। তদ্রূপ জাগতিক বিদ্যায় এ পরিমাণ মগ্নতাকেও শরীয়ত নাজায়েয বলে, যা মানুষকে আল্লাহর পরিচয় ও স্মরণ, তাঁর ইবাদত-বন্দেগী ও আদেশ-নিষেধের বিষয়ে উদাসীন করে দেয়।
শরীয়ত প্রয়োজনীয় ও উপকারী জ্ঞান অর্জনকে উৎসাহিত করেছে এবং অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর জ্ঞান চর্চা নিষিদ্ধ করেছে। শরীয়তের দৃষ্টিতে জাগতিক বিদ্যা ও দ্বীনী ইলমের মধ্যে কোনো সংঘর্ষ নেই। সংঘর্ষ হল উপকারী ও ক্ষতিকর বিদ্যার মাঝে।
পাঁচ.
ব্রিটিশ বেনিয়া শক্তি ভারতীয় মুসলমানদের যে চরম ক্ষতিগুলো করেছে তার মধ্যে অন্যতম এই যে, তারা মুসলিম তরুণদের চিন্তাচেতনায় ধর্মবিমুখতা ও ধর্মদ্রোহীতার বিজ বপন করেছে। তাদের চিন্তা-চেতনায় এই ধারণা বদ্ধমূল করে দিয়েছে যে, ইলমে দ্বীন ও জাগতিক বিদ্যার মধ্যে রয়েছে অলঙ্ঘনীয় বৈপরীত্ব। ইলমে দ্বীন চর্চার অর্থই হল, জীবন ও জগত সম্পর্কে অজ্ঞতার শিকার হওয়া ...! ...!
পক্ষান্তরে জাগতিক জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা সম্ভবই নয় যদি না বৈষয়িক ভাবনায় সম্পূর্ণ আচ্ছন্ন থাকা হয় এবং আল্লাহকে ও তাঁর ইবাদত-বন্দেগী, ইতাআত ও আনুগত্য পরিহার করা হয়!!
মুসলিম উম্মাহর দুর্ভাগ্য যে, মানবতার দুশমন খোদাদ্রোহী এ সম্প্রদায় তাদের উদ্দেশ্য হাসিলে সফল হয়েছে। তারা জাগতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের জন্য যা ছিল একটি প্রয়োজনীয় ও উপকারী বিষয় এমন পরিবেশ ও পাঠ্যক্রম উদ্ভাবন করেছে, যাতে আল্লাহর পরিচয় এবং তাঁর মর্যাদা ও মহববত অন্তরে সৃষ্টি হওয়ার কোনো অবকাশই থাকে না।
একই সঙ্গে বহু ক্ষতিকর বিষয়ের অন্তর্ভুক্তি ঘটিয়ে বিষয়টাকে আরো জটিল করা হয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থায় এমনসব উপাদান সন্নিবেশিত হয়েছে, যার দ্বারা মুসলমানের সন্তানেরা শুধু ইসলাম থেকেই দূরে সরে যায় না; বরং তারা ধর্মদ্রোহীতা ও চারিত্রিক অবক্ষয়ের শিকার হয়ে যায়।
ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা ইংরেজদেরকে এ অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করেছি, কিন্তু ইংরেজ দাসত্ব থেকে এখনও আমরা মুক্ত হতে পারিনি।
আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা ও শিক্ষাব্যবস্থায় এখনো আমরা তাদের অন্ধ আনুগত্য বজায় রেখেছি।
ছয়.
বৃটিশ খেদাও আন্দোলনের সময় এ অঞ্চলের জনগণ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ শ্লোগানে দশদিক প্রকম্পিত করেছে। তাদের দাবি এই ছিল যে, মুসলমানদের ভিন্ন আবাসভূমি চাই যেন আমরা ইসলামের বিধান মোতাবেক জীবনযাপন করতে পারি। এর দাবি তো ছিল, এই ভূখন্ডে ইসলামী শাসনব্যবস্থা কার্যকর হবে, শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী নীতি ও আদর্শের প্রতিফলন থাকবে এবং ফরযে আইন পরিমাণ ইলমে দ্বীন; বরং প্রয়োজনীয় আরো কিছু বিষয় সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হবে। এইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গ্রাজুয়েটরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জনের পাশাপাশি আল্লাহর অনুগত বান্দা হবে এবং খালিক ও মাখলুকের যাবতীয় হক আদায়ে সচেতন ও সচেষ্ট হবে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই আশা পূর্ণ হয়নি। শত্রুর কূট-কৌশলের কাছে এ অঞ্চলের মুসলমানরা পরাজিত হয়েছে। ফলে সেই সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থাই বহাল থাকল, উপরন্তু আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সংস্কারের পরিবর্তে ইলমে দ্বীনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই ‘পরামর্শ’ দিতে লাগল যে ‘এই এই বিষয় সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হোক!’
দেশের নেতৃবৃন্দ ও বুদ্ধিজীবীদের অপরিহার্য কর্তব্য ছিল, তারা নিজেরাও ইলমে দ্বীনের ব্যাপারে মনোযোগী হবেন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও দ্বীনদারী ও ইনসানিয়াতের পরিবেশ সৃষ্টি করার এবং প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ফরযে আইন পরিমাণ মানসম্মত দ্বীনী শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু এটা না করে তারা সর্বদা সমাজ ও মানবতার সেবক এই দ্বীনী মাদরাসাসমূহের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রপাগান্ডায় লিপ্ত হলেন!
সাত.
তবে এটাও গনীমত যে, তৃতীয় শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত মাত্র একটি বিষয় ‘ইসলাম শিক্ষা’ নামে রাখা হয়েছে। ‘ইসলাম শিক্ষা’ নামে সাতটি বই রয়েছে, নবম ও দশম শ্রেণীর জন্য একটি বই রাখা হয়েছে। বেশ কিছু দিন ধরেই আমার ইচ্ছা ছিল যে, এই বইগুলোর ভেতরের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়ার। কোনো কথা সংশোধনের প্রয়োজন হলে সে ব্যাপারে সতর্ক করার। এদিকে কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধু বর্তমান সিলেবাসের এ সাতটি বইয়ের কপি পাঠিয়ে দেন এবং কাজটির জন্য বিশেষভাবে তাকিদ দেন। এ উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে আমি প্রথমে বইগুলোতে একবার চোখ বুলাই। তাতে এমন কিছু ভালো বিষয় নযরে এসেছে যা প্রকৃত পক্ষেই প্রশংসাযোগ্য। পাশাপাশি এমন কিছু বিষয় নযরে এসেছে যেগুলো সংশোধন করা একান্ত জরুরি। নিম্নে এ ব্যাপারে কিছু মৌলিক কথা বলা হল :
১. এ বইগুলোতে দ্বীনের ফরযে আইন বিষয়গুলো পুরোপুরি অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এমনকি দশম শ্রেণীতেও না।
২. এ বইগুলো পড়ার পর একজন শিক্ষার্থীর দ্বীনে ইসলাম সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ও সহীহ ধারণা কখনোই হবে না।
৩. আশ্চর্যের বিষয় এই যে, দ্বীনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক কথাও তাতে আসেনি। ঈমানের কালেমারও কোনো সুস্পষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা এখানে নেই। সর্বশেষ বইতেও তাওহীদ ও শিরক এবং সুন্নত ও বিদআতের স্পষ্ট কোনো পরিচয় দেওয়া হয়নি। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ও শরীয়ত যার নিজস্ব তাহযীব তথা সংস্কৃতি রয়েছে। অথচ এ সম্পর্কে কোনো আলোচনা এখানে নেই। ঈমানের শাখা-প্রশাখা এবং কবীরা ও সগীরা গুনাহের কোনো তালিকাও এখানে দেওয়া হয়নি।
এছাড়া যা কিছু লেখা হয়েছে সেগুলো সহীহভাবে লেখার যথাযথ ইহতিমাম করা হয়নি। কোনো হাদীস সর্ম্পূণ সূত্রবিহীন হওয়ার পরও লেখা হয়েছে। দ্বীনী পরিভাষাসমূহের সংজ্ঞা প্রদানের ক্ষেত্রে বহু ভুল হয়েছে। কোনো কোনো বুনিয়াদী বিষয়ের পরিচয় খুবই ত্রুটিপূর্ণভাবে বা ভুলভাবে করা হয়েছে। যেমন সুদ ও ঘুষের পরিচয়ের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ‘ইবাদত’-এর যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা মূলত ‘ইতাআত’-এর সংজ্ঞা। ‘ইবাদত’ যা একটি কুরআনী পরিভাষা, তার কোনো শরয়ী পারিভাষিক সংজ্ঞা কোথাও দেওয়া হয়নি। এরকম আরো ছোট বড় ভুলত্রুটি রয়ে গেছে।
এ সমস্যার কারণে সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থার দ্বীনিয়াত সংক্রান্ত সিলেবাসের বর্তমান এবং পূর্ববর্তী বইগুলো (যা যোগাড় করা সম্ভব হয়) শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গভীরভাবে অধ্যয়ন এবং সব ধরনের ভুল চিহ্নিত করে সেগুলো সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। সাথে সাথে এই বিষয়কে সফল ও মানোত্তীর্ণ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তাবনা পেশ করা প্রয়োজন। যেন ভবিষ্যতে এ বিষয়টি ত্রুটিমুক্ত হতে পারে এবং স্বীয় উদ্দেশ্যে সফল হতে পারে। আর ইতোপূর্বে যে সকল শিক্ষার্থী ঐ বইগুলোর ভুল থেকে প্রভাবিত হয়েছেন তারাও যেন সহীহ দিক-নির্দেশনা লাভ করতে পারেন। আল্লাহ তাআলা এই নেক কাজকে কবুল করুন এবং ইখলাস ও ইতকানের সাথে এই দায়িত্ব আঞ্জাম দেওয়ার তাওফীক দান করুন।
এই সংখ্যায় শুধুমাত্র জরুরি ভূমিকার উপরই ক্ষান্ত করা হল। ইনশাআল্লাহ পরবর্তী সংখ্যা থেকে ধারাবাহিকভাবে পাঠকবৃন্দ এ বিষয়ে বিস্তারিত লেখা পাবেন। যাতে কলেজ-ভার্সিটির ইসলাম শিক্ষা বিষয়ক বইগুলোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আলোচনা ও সংশোধনীও থাকবে ইনশাআল্লাহ। #
দারুত তাসনীফ
মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা