ঘূর্ণিঝড় আইলা : দুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব
গত ২৫ মে সোমবার বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল দিয়ে বয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড় আইলা। সঙ্গে ১০ থেকে ১৩ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের জনজীবন লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে। বৃহত্তর খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলাসহ পশ্চিম উপকুলের বিস্তীর্ণ জনপদ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুর্যোগ কবলিত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের চরম দুর্ভোগের সংবাদ পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, আইলার ক্ষয়ক্ষতি সিডরের ক্ষয়ক্ষতিকেও ছাড়িয়ে যাবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতার যুগেও বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, ভূমিকম্প প্রভৃতি আসমানী বালা-মুসীবতের হাতে মানুষ কত অসহায়! কয়েক ঘন্টার ঝড়, কয়েক মিনিটের ভূমিকম্প কীভাবে জনপদের পর জনপদ মিসমার করে দেয়!
প্রযুক্তি আমাদের সামনে উপস্থিত করে দিচ্ছে আমাদের দুর্দশার চিত্র, কিন্তু দুর্দশা থেকে মুক্তি দিতে পারছে কি? আমাদের চিন্তাশক্তি আচ্ছন্ন না হয়ে থাকলে এই দুর্যোগপূর্ণ দিনগুলি পৃথিবীর শেষ দিবসের কথা অবশ্যই স্মরণ করিয়ে দিবে। শত শত মানুষের মৃত্যুও স্মরণ করিয়ে দিবে এমন এক অমোঘ সত্য, যা প্রত্যেকেরই জীবনে আসবে।
আইলায় অনেক মানুষ তাদের স্বজন হারিয়েছেন, অনেক মানুষ হারিয়েছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অসংখ্য মানুষ চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছেন। আমাদের সবার কর্তব্য সাধ্য মতো তাদের সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসা।
মানুষের বিপদ-আপদে এগিয়ে আসা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মহান আদর্শ। তাই নবীর ওয়ারিছদের এই আদর্শের অনুসরণে সবার আগে এগিয়ে আসা উচিত। মসজিদের খতীব সাহেবান মুসল্লীদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। মাদরাসার উলামা-তলাবা এবং দ্বীনদার ভাইরা সাধ্যমতো দুর্গতদের সাহায্যে অংশগ্রহণ করতে পারেন। এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি গুরত্বপূর্ণ সুন্নাহ জিন্দা করা হবে।
যদিও আমাদের নানাবিধ সীমাবদ্ধতা রয়েছে, বড় আকারে সহযোগিতা করার সামর্থ্য আমাদের এক রকম নেই বললেই চলে, কিন্তু সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ নিলে কিছু না কিছু কাজ অবশ্যই করা যাবে। আমরা মনে করি, সাধ্যের ভিতরে এদিকে মনোযোগ দেওয়া আমাদের কর্তব্য।
দ্বীনী প্রতিষ্ঠানগুলো এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
তাছাড়া সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষেরই সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসা উচিত। হাদীস শরীফে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘মুমিনগণ প্রীতি ও ভালবাসায় এক দেহের ন্যায়। দেহের কোনো এক অঙ্গে কষ্ট হলে গোটা দেহ জ্বর ও অনিদ্রায় ভুগতে থাকে।
তাই মুসলিম ভ্রাতৃত্বের প্রেরণা নিয়ে আমাদের এগিয়ে আসা উচিত। তাছাড়া বিপদে-আপদে অমুসলিমকেও সাহায্য দানের নির্দেশনা ইসলামে রয়েছে।
আমরা যদি দুর্গত ব্যক্তিদের সাহায্যে এগিয়ে আসি তাহলে একদিকে যেমন ইসলামী আদর্শের প্রকাশ ঘটবে তেমনি আল্লাহর দরবারেও তা অনেক বড় নেক আমল হিসেবে গণ্য হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দিন। #