একটি কুরআনী পরিভাষার অপপ্রয়োগ : মাতবরদের দেওয়া সালিশী রায় কি ‘ফতোয়া’?
কিছুদিন যাবৎ লক্ষ করা যাচ্ছে যে, গ্রাম্য মাতবরদের সালিশী রায়কে কেন্দ্র করে ‘ফতোয়া’ সম্পর্কে বিষোদগার করা হচ্ছে। বিভিন্ন অসামাজিক কাজের উপর সালিশী রায় ও শাস্তি প্রদানের বেশ কয়েকটি ঘটনা পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছে। একাধিক ঘটনায় দেখা গেছে যে, কোনো কোনো পত্রিকায় তা এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যা প্রকৃত বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
যেকোনো সচেতন নাগরিক এতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারেন না। এখানে তিনটি বিষয় মনোযোগের দাবিদার : ১. অসামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি ২. স্থানীয় জনগণ ও গ্রাম সালিশ কর্তৃক বিচারের ব্যবস্থা এবং ৩. সালিশী রায়কে ‘ফতোয়া’ আখ্যায়িত করে একশ্রেণীর এনজিও তোষণকারী লেখক, প্রাবন্ধিক ও মিডিয়াকর্মীর অব্যাহত বিষোদগার।
ফতোয়া একটি ইসলামী ও কুরআনী পরিভাষা। যে কারো যে কোনো রায়কে ফতোয়া বলে না। ইসলামী শরীয়তে ফতোয়াদানের জন্য নির্ধারিত শর্ত ও নীতিমালা রয়েছে। ওই শর্ত ও নীতিমালায় উত্তীর্ণ কুরআন-সুন্নাহসম্মত শরয়ী সিদ্ধান্তকে ‘ফতোয়া’ বলে।
এটি এমন এক বিষয়, যার গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামের সূচনা কাল থেকে আজ পর্যন্ত গোটা মুসলিম বিশ্বে ‘ফতোয়া’ শব্দটি আস্থা ও মর্যাদার সঙ্গে সমাদৃত। মুসলিম জনগণের ঈমান-আকীদা, ইবাদত-বন্দেগী, লেনদেন, সামাজিকতা, আইন-বিচার, রাষ্ট্র পরিচালনা ইত্যাদি সকল বিষয়ে ‘ফতোয়া’ একটি মূল্যবান সূত্র ও পথ-নির্দেশক। যারা এই ইসলামী পরিভাষার অপপ্রয়োগ ঘটিয়ে একে অপাংক্তেয় করতে আগ্রহী তাদের উদ্দেশ্যে ও গোত্র-পরিচয় সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়া খুবই স্বাভাবিক।
প্রসঙ্গত বলা যায় যে, অতীতেও দেখা গেছে, এখনও লক্ষ করা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হলেই এ জাতীয় প্রচার-প্রচারণা যেন নতুন মাত্রা লাভ করে। সরকারের দায়িত্ব, সতর্ক তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটন করা এবং অনুসন্ধান করা যে, এ ধরনের সালিশী ঘটনা সংটিন কিংবা একে ফতোয়া নাম দিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টির পিছনে কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধন ও অদৃশ্য তৎপরতা আছে কি না এবং এসবের মাধ্যমে দ্বীনদার ইসলামপ্রিয় জনগণের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টির কোনো অশুভ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না?
অসামাজিক কার্যকলাপ প্রতিরোধে দেশীয় আইনে যেসব শাস্তির কথা বলা আছে সরকারের কতর্ব্য তা বাস্তবায়ন করা। যথাযথ কর্তৃপক্ষ যদি বিদ্যমান আইন বাস্তবায়নে তৎপর হয় তাহলে গ্রাম্য সালিশীর মাধ্যমে এই জাতীয় বিচার ও রায়ের প্রয়োজন হবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। এ বিষয়ে সরকারের আশু মনোযোগ কাম্য।
সব ধরনের সালিশী রায়ের পক্ষে আমরা নই, কিন্তু যেসব এনজিও কর্মী এবং তাদের সমর্থক লেখক, বুদ্ধিজীবী এই সব রায়ের বিরুদ্ধে মুখর হয়ে উঠেছেন তাদের প্রতি আমাদের প্রশ্ন যে, সামাজিক অবক্ষয় ও অনৈতিকতা রোধে তারা কী কর্মপন্থা গ্রহণ করেছেন? নারী-পুরুষের অবৈধ সম্পর্ক যে সমাজ ও জীবনকে কলুষিত ও বিপর্যস্ত করে তা তো আলোচনা করে বোঝানোর প্রয়োজন নেই। এই সমাজ-বিধ্বংসী ব্যধির প্রতিরোধের জন্য তারা তাদের কণ্ঠ ও কলমের জোর কতটুকু খরচ করেছেন?
আমরা আবারও বলছি যে, এ ধরনের সালিশী রায় ন্যায় কি অন্যায় সে বিষয়ে দায়িত্বশীলগণ যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবেন, কিন্তু এগুলোকে ফতোয়া বলে আখ্যায়িত করা সম্পূর্ণ অন্যায় ও অপ্রাসঙ্গিক।
আমরা একটি ইসলামী পরিভাষার এই অপপ্রয়োগের প্রচন্ড প্রতিবাদ জানাই এবং আশা করতে চাই যে, সরকার তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, এনজিও ও মিডিয়াকর্মীদের বাক্যসন্ত্রাস দমনে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। #