মেহরে নবুওয়ত
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
দানশীলতা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো সুওয়ালকারীকে বিমুখ করতেন না। তাঁর পবিত্র যবানে না উচ্চারিত হত না। দেওয়ার মতো কিছু ‘না’ থাকলে এত নরম ভাষায় তা বলতেন, মনে হত যেন ক্ষমা চাচ্ছেন। একটি ঘটনা :
এক ব্যক্তি এসে তাঁর কাছে সুওয়াল করল।
তিনি বললেন, ‘আমার কাছে তো নেই, তুমি বাজারে গিয়ে আমার নামে ঋণ নিয়ে নাও।’
উমর ফারূক রা. বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, এ বিষয়ে তো আল্লাহ আপনাকে বাধ্য করেননি ( যে, না থাকলেও প্রার্থনাকারীর প্রয়োজন পূরণ করতে হবে)।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ করে রইলেন। তখন অন্য একজন বললেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় দান করাই তো উত্তম।’
একথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনন্দিত হলেন।
লজ্জাশীলতা
আবু সায়ীদ খুদরী রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্দানশীন কুমারী নারীর চেয়েও অধিক লজ্জাশীল ছিলেন।
নিজের কোনো কাজে অনেক বেশি কষ্ট হলেও নিজেই করার চেষ্টা করতেন, লজ্জার কারণে অন্যকে বলতেন না।
কারো কোনো কাজ পছন্দ না হলে সরাসরি তার নাম উল্লেখ করতেন না; সাধারণভাবে সবাইকে নিষেধ করে দিতেন।
মমতা ও কল্যাণকামিতা
১. নফল ইবাদত সাধারণত নির্জনে করতেন, যেন উম্মতের উপর অধিক ইবাদতের ভার না এসে যায়।
২.প্রত্যেক বিষয়ে সহজতম পন্থা পছন্দ করতেন।
৩. তিনি বলেছেন যে, আমার কাছে কারো নিন্দা করো না। কেননা আমি চাই, তোমাদের সবার প্রতি আমার অন্তর পরিষ্কার থাকুক।
৪. ওয়াজ-নসীহতের বিষয়েও লক্ষ রাখতেন যেন মানুষের মধ্যে বিরক্তি সৃষ্টি না হয়। এজন্য সবসময় নসীহত করতেন না, মাঝে মাঝে করতেন।
৫. অনেক সময় রাতভর উম্মতের জন্য দুআ করতেন এবং জার জার হয়ে কাঁদতেন।
আত্মীয়তার মর্যাদা রক্ষা
১. তিনি বলেছেন, শুধু মুমিনগণই আমার আপন, তবে আত্মীয়তার অধিকার সবার জন্য।
২. এক যুদ্ধে একজন নারী বন্দী হলেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে এসে তিনি পরিচয় দিলেন যে, আমি আপনার দাঈমার কন্যা তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের চাদরখানা তার জন্য বিছিয়ে দিলেন।
৩. মক্কার লোকেরা স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এবং তাঁর সাহাবীদেরকে বহু নির্যাতন করেছে এমনকি স্বদেশ ত্যাগে বাধ্য করেছে, অনেক মুসলমানকে শুধু এই জন্য হত্যা করেছে যে, তাঁরা এক আল্লাহর বন্দেগী করেন, কিন্তু যখন মক্কা নগরী বিজিত হল তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমাদের সকল অপরাধ ক্ষমা করে দিলাম।’
ন্যায়বিচার ও ভারসাম্য
১. দুই পক্ষে ঝগড়া-বিবাদ হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ন্যায়বিচার করতেন। পক্ষান্তরে তাঁর ব্যক্তিগত বিষয় হলে ছাড় দিতেন এবং অনুগ্রহ করতেন।
২. মক্কায় ফাতিমা নামক একজন মহিলা ছিল। সে একবার চুরি করল। লোকেরা তার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্নেহের পাত্র হযরত উসামা রা.-এর মাধ্যমে সুপারিশ করাল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হয়ে বললেন, ‘তোমরা আল্লাহর বিধান কার্যকর না করার জন্য সুপারিশ করছ?! যদি আমার কন্যা ফাতিমাও এই অপরাধ করত তবে তাকেও আমি এই শাস্তি দিতাম।’
৩. ভারসাম্য রক্ষার বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (তরজমা) ‘সকল বিষয়ে মধ্য পন্থাই সর্বোত্তম।’ এই হাদীস থেকে বোঝা যায় যে, সকল বিষয়ে প্রান্তিকতা পরিহার করে চলা উচিত।
সত্যবাদিতা ও আমানতদারী
১.নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জানী দুশমনও তাঁর সততা ও সত্যবাদিতা স্বীকার করত।
২. শৈশব থেকেই গোটা মক্কানগরী তাঁকে ‘ছাদিক’ (সত্যবাদী) ও ‘আমীন’ (আমানতদার) বলে সম্বোধন করত।
৩. একদিন আবু জাহ্ল বলল, ‘মুহাম্মাদ! আমি তোমাকে মিথ্যাবাদী মনে করি না তবে তোমার ধর্ম আমার কাছে ভালো লাগে না।’ (নাউযুবিল্লাহ)
৪. হিজরতের রাতে কাফেররা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করার সকল প্রস্ত্ততি গ্রহণ করেছিল (নাউযুবিল্লাহ)। সে সময়ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার দিকে যাত্রা করার আগে প্রিয় ভাই আলী মুরতাজা রা.কে শুধু এজন্য মক্কায় রেখে গেলেন যে, তিনি যেন মক্কাবাসীর আমানতগুলো তাদের নিকটে পৌঁছে দেন। #
(চলবে ইনশাআল্লাহ)