স্কুল-কলেজের ইসলামিয়াতের সিলেবাস : একটি পর্যালোচনা
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
বিগত সংখ্যায় এ বিষয়ে ভূমিকা স্বরূপ কিছু কথা পাঠকবৃন্দের খিদমতে পেশ করা হয়েছিল। এই আলোচনা বইভিত্তিক না হয়ে বিষয়ভিত্তিক হলে সম্ভবত অধিক সহজ ও উপকারী হবে। তাই সিলেবাসের প্রত্যেকটি বইয়ের উপর আলাদা আলাদা আলোচনা না করে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করা অধিক সমীচীন মনে হয়েছে। এই হিসেবে আমরা আমাদের আলোচনাকে নিম্নোক্ত শিরোনামে ভাগ করতে পারি :
১. পরিভাষা ও পরিচিতি।
দ্বীন ও শরীয়তের কিংবা দ্বীনী ইলম ও ফনের বিশেষ কোনো পরিভাষার, যার নির্ধারিত অর্থ ও তাৎপর্য রয়েছে, ভুল বা অসম্পূর্ণ ব্যাখ্যা করা হলে তার সংশোধন।
২. আকীদা-বিশ্বাস এবং চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি
ইসলামের কোনো ‘আকীদায়ে মুতাওয়াছা’ (খাইরুল কুরূন থেকে স্বীকৃত ও গৃহীত বিশ্বাস) বা ‘ফিকরে মুতাওয়াছ’ (খাইরুল কুরূন থেকে স্বীকৃত ও গৃহীত চিন্তা)-এর ভুল বা অসম্পূর্ণ ব্যাখ্যা হয়ে থাকলে কিংবা তার বিরুদ্ধে কিছু লেখা হলে তার নিরসন।
৩. আহকাম ও মাসাইল
মাসআলা-মাসাইল ভুল বা অসম্পূর্ণ উল্লেখ করা হলে তা সংশোধন।
৪. হাদীস ও রেওয়ায়াত
হাদীস, সীরাত ও তারীখে ইসলামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মুনকার, মওজু বা ভিত্তিহীন বর্ণনা উল্লেখিত হলে তা চিহ্নিত করা।
৫. আয়াত ও হাদীসের তরজমা
কোথাও শরীয়তের কোনো দলীলের পাঠ-তরজমায় ভুল হয়ে থাকলে তা চিহ্নিত করা।
৬. অন্যান্য
বিভিন্ন বিষয়ে যেসব তথ্য উল্লেখিত হয়েছে, কিন্তু তা সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হওয়ার বিষয়ে লক্ষ্য করা হয়নি তা চিহ্নিত করা।
৭. মৌলিক কিছু প্রস্তাবনা
‘ইসলাম শিক্ষা’ বিষয়ে সিলেবাসের বইপত্র তৈরি এবং অন্যান্য ব্যবস্থাপনাগত বিষয় কিছু মৌলিক নীতি ও প্রস্তাবনা তথ্যগত বা ব্যবস্থাপনাগত মৌলিক ত্রুটিসমূহের বিস্তারিত আলোচনা।
পরিভাষা ও পরিচিতি
ইবাদত শব্দের অর্থ
১. এই প্রসঙ্গে ইসলাম শিক্ষা তৃতীয় শ্রেণী (পৃ. ১৩) তে বলা হয়েছে, ‘ইবাদত কী? আল্লাহর হুকুম মানা, তাঁর কথামতো ও রাসূলের দেখানো পথে চলাকে ইবাদাত বলে।’ ...’
চতূর্থ শ্রেণীর বইতে (পৃ. ২৩) তে বলা হয়েছে, ‘ইবাদাত মানে বন্দেগী, মহান আল্লাহর হুকুম পালন করা। আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ মতো সব কাজ করাকে ইবাদাত বলে। যেমন, নামায পড়া, রোযা রাখা, কুরআন মজীদ তেলাওয়াত করা ইত্যাদি। ভালো কাজ করাও ইবাদাত। যেমন, রুগীর সেবা করা, সবার সাথে ভালো ব্যবহার করা, সত্য কথা বলা, দান-খয়রাত করা ইত্যাদি।’
পঞ্চম শ্রেণীর বইতে (পৃ. ৩০) বলা হয়েছে, ‘ইবাদাত আরবী শব্দ। ইবাদাত মানে আল্লাহর হুকুম পালন করা। আল্লাহ যা আদেশ করেছেন তা করা, আর যা নিষেধ করেছেন তা না করাই হল ইবাদাত। আমাদের কাজ হল, তাঁর হুকুম মানা। তাঁর ইবাদাত-বন্দেগী করা। মানুষ তাঁর বান্দাহ। আল্লাহ তাআলা মানুষের একমাত্র মাবুদ। বান্দাহ তার মাবূদের সন্তুষ্টির জন্য যা কিছু করে সবই ইবাদাত।’
ষষ্ঠ শ্রেণীর বইতে (পৃ. ১০) বলা হয়েছে, ‘ইবাদাত আরবি শব্দ। এর অর্থ দাসত্ব ও আনুগত্য। আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্য। ইসলামী পরিভাষায় আল্লাহর সকল আদেশ-নিষেধ মেনে চলার নামই ইবাদাত।’
নবম ও দশম শ্রেণীর বইতে (পৃ. ৪৭) বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা আমাদের সৃষ্টি করেছেন। আমাদের দিয়েছেন অসংখ্য নিআমত। আমরা তাঁর বান্দা। আমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে তাঁরই সন্তুষ্টি লাভের আশায় তাঁর প্রেরিত নবীর দেখানো পথে যে কাজ করি তাই ইবাদাত। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون
অর্থ : ‘জ্বিন ও মানুষ জাতিকে আমি আমার ইবাদাতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা আয-যারিআত : ৫১)
ইবাদাত মানে আনুগত্য করা। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা।
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হল ইবাদাতের মূল লক্ষ্য। সুতরাং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যে কোনো উত্তম কাজই ইবাদাত। অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স) কর্তৃক নির্দেশিত পথের সমস্ত কাজই ইবাদাত হিসেবে গণ্য।
আমরা কীভাবে ইবাদাত করব সে সমস্ত বিষয় ও পদ্ধতি সম্পর্কে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স) শিখিয়ে দিয়েছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
قل اطيعوا الله والرسول، فان تولوا فان الله لا يحب الكفرين.
‘তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও রাসূলের, আর যদি তোমরা তা থেকে বিমুখ হও তাহলে জেনে রেখ, আল্লাহ কাফিরদের ভালবাসেন না।’ (সূরা আলে-ইমরান : ৩২)
উক্ত আয়াতের মর্মার্থ হল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স) কর্তৃক নির্দেশিত পথই ইবাদাতের মূল। সুতরাং এই নির্দেশিত কাজগুলো আমরা সঠিকভাবে পালন করতে পারলেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম হব।’
পর্যালোচনা : উপরে ইবাদতের সংজ্ঞায় যা বলা হয়েছে তার দ্বারা ইবাদতের পারিভাষিক বা শরয়ী অর্থ পরিষ্কার হয়নি। যা কিছু বলা হয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে ‘ইতাআত’ ও ‘আমলে ছালিহ’-এর অর্থ।
‘ইতাআত’ অর্থ আনুগত্য করা, আদেশ পালন করা। আল্লাহর ইতাআত অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তাআলার আদেশ নিষেধ মান্য করা, সকল বিষয়ে তাঁর আনুগত্য করা।
‘আমলে ছালিহ’ অর্থ হচ্ছে, নেক আমল। এতে দ্বীন-দুনিয়ার সকল কাজই অন্তর্ভুক্ত যদি তা হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যে, শরীয়তের বাতলানো তরীকা মোতাবেক।
মোটকথা, উপরে সিলেবাসের বইগুলো থেকে যে আলোচনা উদ্ধৃত করা হয়েছে তাতে ‘ইতাআত’ ও ‘আমলে ছালিহ’-এর পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে, কিন্তু ‘ইবাদত’ শব্দের পারিভাষিক অর্থ মোটেই বলা হয়নি। বিষয়টি সহজে এভাবে বোঝা যায় ইবাদত একমাত্র আল্লাহরই হতে পারে এবং তিনিই একমাত্র মাবূদ। যে সব কাজ ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত তা যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য করা হয় তবে তা শিরক হয়ে যায়।
এই সর্বজনবিদিত বিষয়টি সামনে রেখে চিন্তা করা হলে পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, উপরোক্ত উদ্ধৃতিতে ইবাদাত ও ইতাআতকে সমার্থবোধক করে যে পরিচয় দেওয়া হয়েছে এবং তাতে সকল নেক আমলকে শামিল করে দেওয়া হয়েছে তা কখনো ইবাদাতের পারিভাষিক অর্থ নয়।
যেমন ইতাআত অর্থাৎ আনুগত্য আল্লাহ তাআলা একান্ত নিজের জন্য নির্ধারিত রাখেননি; বরং বান্দাদেরকে আদেশ করেছেন তারা যেন রাসূলের নিঃশর্ত আনুগত্য করে। তদ্রূপ অধীনস্তদের আদেশ করা হয়েছে দায়িত্বশীলদের অনুগত থাকার, সন্তানকে আদেশ করা হয়েছে পিতামাতার অনুগত থাকার এবং স্ত্রীকে আদেশ করা হয়েছে স্বামীর অনুগত থাকার। তবে শর্ত এই যে, আল্লাহর অবাধ্য হয়ে কারো আনুগত্য গ্রহণযোগ্য নয়। যদি আনুগত্যও ‘ইবাদতে’র অন্তর্ভুক্ত হত তাহলে তো সেটাও আল্লাহর জন্যই একান্তভাবে নির্ধারিত থাকত। অন্য কারো আনুগত্য বৈধ হওয়া তো দূরের কথা, তা শিরক হিসেবে গণ্য হত। এজন্য ইবাদতের পারিভাষিক অর্থ বা শরীয়তের দৃষ্টিতে তার বিশেষ অর্থ পরিষ্কারভাবে বুঝে নেওয়া কর্তব্য।
আমি এখানে মাওলানা মুহাম্মদ মনযুর নু’মানী রাহ.-এর আলোচনা উল্লেখ করছি। তা সহজ ও সর্বজনবোধ্য।
তিনি লেখেন, ‘ইবাদত হচ্ছে দ্বীন ও শরীয়তের একটি বিশেষ পরিভাষা। কোনো স্বত্তাকে গায়বীভাবে ভালো-মন্দের মালিক এবং সকল হাজত পুরা করার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী বলে বিশ্বাস করে তাঁর সামনে নিজ অনুরাগ ও অসহায়ত্ব এবং নিতান্ত হীনতা ও মুখাপেক্ষীতা প্রকাশের জন্য, তাকে রাজি-খুশি করার জন্য এবং তাঁর নৈকট্য অর্জনের জন্য যেসব উপাসনাধর্মী কাজ করা হয় তাকেই ‘ইবাদত’ বলে। যেমন, নামায, রোযা, হজ্জ্ব, সদাকা, সিজদা, তওয়াফ, দুআ, নযর-মান্নত, কুরবানী এবং নাম জপ করা ইত্যাদি।
এই ইবাদত একান্তভাবে আল্লাহ তাআলারই অধিকার। কেউ যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে এই আচরণ করে তবে সে নিঃসন্দেহে মুশরিক। পৃথিবীর অধিকাংশ মুশরিক কওমের মাঝে এই শিরকই প্রচলিত যে, তারা গায়রুল্লাহকে ভালো-মন্দের মালিক-মুখতার মনে করে থাকে এবং তাদের কৃপা ও সন্তুষ্টি লাভের জন্য বিভিন্ন উপাসনাধর্মী কাজ করে থাকে। একেই বলা হয় ‘শিরক ফিল ইবাদাহ’। আম্বিয়ায়ে কেরামকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই শিরকেরই মোকাবেলা করতে হয়েছে।’
মাওলানা নু’মানী রাহ. আরো বলেন, ‘জেনে রাখা ভালো যে, আরবী ভাষায় ইবাদতের অন্য অর্থ ইতাআত ও আনুগত্য। তবে এই দুই অর্থের মাঝে একটি স্পষ্ট ও সর্বজনবোধ্য পার্থক্য এই যে, পারিভাষিক অর্থে ইবাদত আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য হতে পারে না। এটা সর্বাবস্থায় শিরক এবং সবচেয়ে বড় শিরক। পক্ষান্তরে ইতাআত বা আনুগত্য মাখলুকেরও করা যায়; বরং কিছু ক্ষেত্রে স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই এর আদেশ করেছেন। যেমন, রাসূলের আনুগত্যের আদেশ করা হয়েছে, দায়িত্বশীল ও পিতামাতার আনুগত্যের আদেশ করা হয়েছে। স্ত্রীর জন্য স্বামীর সেবা ও আনুগত্যের আদেশ করা হয়েছে।
অতএব যারা পারিভাষিক অর্থে ইবাদত এবং আনুগত্য অর্থে ইবাদতের মাঝে পার্থক্য করে না এবং একটিকে অন্যটির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে তারা দ্বীনের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মারাত্মক ভুল করে ফেলে, যার কারণে তাওহীদ ও শিরকের অর্থই পরিবর্তন হয়ে যায়।-দ্বীন ও শরীয়ত পৃ. ৫৩; কালেমায়ে তাইয়েবা কী হাকীকত পৃ. ৮-৯
প্রত্যেক ধর্মেই ইবাদতের ধারণা আছে। তবে যেভাবে সে ধর্মগুলো বিৃকত হয়ে গেছে তদ্রূপ তাদের ইবাদতও বিকৃতির শিকার হয়েছে। তাতে শিরক ও বিদআত যুক্ত হয়েছে। ইসলাম তাওহীদের ধর্ম এবং এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য-স্বাভাবিকতা। আর কিয়ামত পর্যন্ত তা সংরক্ষিত থাকবে। ইসলামে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ইবাদতের বিশুদ্ধতার উপর। অর্থাৎ ইবাদত শুধু এবং শুধু আল্লাহর জন্য হবে এবং একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য হবে আর ইবাদতের পদ্ধতি যে কারো উদ্ভাবিত বা মনগড়া হতে পারবে না, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলা যেভাবে শিখিয়েছেন সে তরীকা অনুযায়ী হতে হবে। মোটকথা, শিরক, রিয়া এবং বিদআত ও ইত্তেবায়ে হাওয়া সকল বিষয় থেকে পূর্ণ রূপে মুক্ত হতে হবে। অতএব বলা যায় যে, ইসলামের দৃষ্টিতে ইবাদতের দু’টি স্তম্ভ : ১. ইবাদত শুধু আল্লাহরই হবে, অন্য কারো হবে না। ২. ইবাদতের যে পন্থা ও পদ্ধতি আল্লাহ নির্দেশ করেছেন সে অনুযায়ী হতে হবে। মনগড়া কোনো পন্থা গ্রহণযোগ্য নয়। (ইবনে তাইমিয়া : আলউবূদিয়্যাহ পৃ. ১৭)
আলোচিত বইগুলোর লেখক ও সম্পাদকদের আরো আশ্বস্তির জন্য এখানে ফিকহ ও শরহুল হাদীসের নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ থেকে কিছু উদ্ধৃতি উল্লেখ করছি।
1ـ قال الإمام اللامشي : العيادة عبارة عن الخضوع والتذلل، وحدها : فعل لا يراد به إلا تعظيم الله تعالى بأمره، بخلاف القربة والطاعة، فإن القربة ما يتقرب به إلى الله تعالى، أو يراد به تعظيم الله تعالى مع إرادة ما وضع له الفعل، كبناء الرباطات، والمساجد، ونحوها، فإنها قربة يراد بها وجه الله تعالى مع إرادة الإحسان للناس وحصول المنفعة لهم، والطاعة ما يجوز لغير الله تعالى، أطيعوا الله وأطيعوا الرسول، وأولى الأمر منكم، والعبادة ما لا يجوز لغير الله تعالى، وحسن الطاعة موافقة الأمر، انتهى.
وحسن العبادة عبارة عن كونها خالصة عن شائبة الربا. أبو السعود (الطحطاوي على الدر، باب الحج عن الغير).
দেখুন : ১.হাশিয়াতু আহমদ আততাহতাবী আলাদ্দুররিল মুখতার খন্ড : ১ পৃষ্ঠা : ৫৪৬
২. ইবনে আবিদীন শামী : রদ্দুল মুহতার (ফতোয়া শামী) খন্ড : ৭ পৃষ্ঠা : ৩৮৭-৩৮৮
৩. আবুসসাউদ, ফতহুল মুয়ীন (শরহুল কান্য্) খন্ড : ১ পৃষ্ঠা : ৫৫৬
2ـ قال الراغب : العبودية إظهار التذلل، والعبادة أبلغ منها، لأنها غاية التذلل، ولا يستحقها إلا من له غاية الإفضال، وهو الله تعالى، ولهذا قال : ألا تعبدوا إلا إياه.
দেখুন : আর রাগিব আসপাহানী, মুফরাদাতু আলফাযিল কুরআন পৃষ্ঠা : ৫৪২, দারুল কলম, দামেশ্ক ১৪১২ হি.
3ـ قال ابن تيمية : لكن العبادة المأمور بها تتضمن معنى الذل ومعنى الحب، فهي تتضمن غاية الذل لله بغاية المحبة له، ...
ومن خضع لأنسان مع تغضه له فلا يكون عابدا، ولو أحب شيئا ولهم يخضع له لم يكن عابدا له، كما قد يحب ولده وصديقه.
ولهذا لا يكفي أحدهما في عبادة الله، بل يجب أن يكون الله أحب إلى العبد من كل شيء، وأن يكون الله عنده أعظم من كل شيء، بل لا يستحق المحبة والذل التام إلا الله...
فجنس المحبة يكون لله ورسوله، كالطاعة تكون لله ورسوله، والإرضاع لله ورسوله، ولله ورسوله أحق أن يرضوه، والإيتاء لله ورسوله ولو انهم رضوا ما آتاهم الله ورسوله.
وأما العبادة وما يناسبها من التوكل والخوف ونحو ذلك فلا يكون إلا لله وحده.
দেখুন : ইবনে তাইমিয়া (৭২৮ হি.) আলউবুদিয়্যাহ পৃ. ৬, মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, রিয়াদ
4.قال المناوي : (العبادة) الصادقة بأقصى غاية الخضوع، وتعارف في الشرع فيما جعل علامة لنهاية الخضوع من صلاة وصوم وجهاد وقراءة.
দেখুন : আবদুর রউফ আলমুনাভী (১০০৩ হি.) শরহুশ শামাইল খন্ড : ২ পৃষ্ঠা : ৬৪
এ সকল উদ্ধৃতির সারকথা এটাই যে, পূর্ণ মুহববতের সঙ্গে আল্লাহ তাআলার নির্দেশিত পন্থায় বিশেষ আমলসমূহের মাধ্যমে তাঁর সম্মুখে চূড়ান্ত বিনয় ও হীনতা প্রকাশের নাম ইবাদত। আর এটা শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলারই হক, গায়রুল্লাহর জন্য সম্পূর্ণ অবৈধ।
ইবনে তাইমিয়া রাহ. এ প্রসঙ্গে ‘আলউবুদিয়াহ’ নামে একটি পুস্তিকা রচনা করেছেন। তার এক স্থানে তিনি ইবাদত-এর সাধারণ ও রূপক অর্থ হিসেবে যদিও এ কথা বলেছেন যে, আল্লাহর পছন্দনীয় প্রত্যেক নেক আমলই ইবাদত
(العبادة اسم جامد لكل ما يحبه الله ويرضاه من الأقوال والأعمال الباطنة والظاهرة).
কিন্তু এরপর তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, উল্লেখিত অর্থটি ইবাদতের পারিভাষিক অর্থ নয়, এর পাভিাষিক অর্থ তা-ই যা ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। যার বিষয়ে আমরা প্রত্যহ কয়েকবার সূরায়ে ফাতিহায় আল্লাহ তাআলার সামনে নিম্নোক্ত বাক্যসমূহ পাঠ করি :
اياك نعبد واياك نستعين.
আর এই ইবাদত সম্পর্কেই আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন :
وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون.
আরো ইরশাদ করেছেন :
وقضى ربك ان لا تعبدوا الا اياه.
আশা করি, এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা দ্বারা মূল বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে। থাকল ঐ সমস্ত বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ আমলসমূহের বিষয়ে সবিস্তর আলোচনা যেগুলোকে আল্লাহ তাআলা নিজের জন্য নির্ধারিত করে রেখেছেন। এবং যা গায়রুল্লাহর জন্য করা হলে শিরক হবে ইনশাআল্লাহ এ বিষয়ে আগামী সংখ্যায় কিছু লিখতে চেষ্টা করব। #