তালীমী সালের শেষে তালিবে ইলম ভাইদের খেদমতে
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
২. যোগ্যতা, সাধারণ প্রজ্ঞা ও বিশেষজ্ঞতা
আগামীতে আপনি দ্বীনের খিদমতের যে অঙ্গনেই পা রাখুন, দুটি বিষয় ছাড়া আপনার কোনো উপায় নেই। একটি হচ্ছে, কিতাবী ইসতিদাদ। যদ্বারা আপনি যে কোনো আরবী কিতাব থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য উদ্ধারে ও তা সঠিকভাবে বুঝতে সক্ষম হবেন। দ্বিতীয় বিষয়, সাধারণ প্রজ্ঞা।
দ্বীন ও শরীয়তের সাধারণ জ্ঞান এত প্রয়োজনীয় জিনিস যে, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে এর প্রয়োজন হয়। তালিবে ইলম দ্বীনের যে শাখাতেই কাজ করুক, এই সাধারণ প্রজ্ঞা ছাড়া তার চলবে না। যার মাঝে এই সম্পদ নেই সে না সামাজিকতার নিয়ম কানুন রক্ষা করতে পারবে, না দ্বীনের কোনো কাজ নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করতে পারবে। কখনো সুযোগ হলে ‘আলফিকহুল আম লিদ্দীন’ সম্পর্কে কিছুটা বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা আছে ইনশাআল্লাহ।
কিতাবী ইসতিদাদের জন্য তো ‘আততরীক ইলাল আরাবিয়্যাহ’র জামাত থেকেই নিষ্ঠা ও মনোযোগের সাথে যথানিয়মে মেহনত করা জরুরি। আর সাধারণ প্রজ্ঞার জন্য কুরআন মজীদে উল্লেখিত ঘটনাবলি, সীরাতের কিছু নির্ভরযোগ্য ও মাঝারি আকারের গ্রন্থ, হায়াতুস সাহাবা এবং আকাবিরের জীবন ও কর্ম এবং বাণী ও পত্রাবলি পাঠ করা জরুরি। এ ছাড়া দ্বীন ও শরীয়তের বিভিন্ন বিষয়ে মুহাক্কিক আলিমদের কিতাবসমূহও পাঠ করা জরুরি। এই মুহূর্তে আমি তালিবানে ইলমের কাছে হাকীমুল উম্মত থানভী রাহ., মাওলানা মুহাম্মাদ মনযূর নুমানী রাহ., মাওলানা সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী রাহ., মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ লুধিয়ানভী রাহ., মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উসমানী, শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ., শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা ও সালিহ আহমদ শামী-এর রচনাবলি মনোযোগের সাথে পাঠ করতে জোর তাকিদ করব এবং তাঁদের নির্বাচিত কিছু কিতাব বারবার অধ্যয়নের অনুরোধ করব।
এই দুটি বিষয়-কিতাবী ইসতিদাদ ও আলফিকহুল আম লিদ্দীন তো ফরয। এরপর তৃতীয় কাম্য বস্ত্তটি হচ্ছে, ইখতিসাস। যে দায়িত্বেই নিয়োজিত হোন, তা নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করে যাওয়ার জন্য ইখলাস ও ইখতিসাসের কোনো বিকল্প নেই। কোনো কাজ নিখুঁতভাবে করার চেষ্টা রিয়া নয় (নাউযুবিল্লাহ!); বরং দ্বীন-দুনিয়ার প্রত্যেক কাজে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। এজন্য প্রত্যেক তালিবে ইলমের কর্তব্য, নিজের তালীমী মুরবিবর সাথে পরামর্শ করে কোনো না কোনো বিষয়ে, অন্তত কোনো বিষয়ের একটি অংশে ইখতিসাস পয়দা করা। নামের ইখতিসাস নয়, আহলে ইখতিসাসের নেগরানীতে দীর্ঘ বাস্তব অনুশীলনের মাধ্যমে কাজের যোগ্যতা ও বিশেষজ্ঞতা।
যেমন কোনো তালিবে ইলম শুধু তাদরীসের ক্ষেত্রেই ইখতিসাস হাসিল করুন কিংবা কোনো একটি ফন্নের তাদরীসের ক্ষেত্রে অথবা একটি কিতাবের তাদরীসের ক্ষেত্রে যেন ঐ কিতাবের বিষয়ে তিনি মারজি ও সূত্র হয়ে যান এবং হুজ্জত ও ‘অথরিটি’র পর্যায়ে উপনীত হন।
কেউ যদি ইমলা ও খোশখত্তীতে ইখতিসাস হাসিল করে তাহলে এটিও অনেক বড় কথা। কেউ যদি ভাষার ক্ষেত্রে পারদর্শিতা অর্জন করতে চান তাহলে অপরিহার্য নয় যে, কয়েক ভাষায় পারদর্শী হতে হবে; কোনো একটি ভাষায়, বা তারও কোনো একটি অংশে পারদর্শিতা অর্জন করতে পারেন যেন এ বিষয়ে তিনি হুজ্জত ও মারজি হয়ে যান। এটিও অনেক মোবারকবাদ পাওয়ার যোগ্য।
তো বিষয়টি অনেক দীর্ঘ, তবে এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকেও আমার উদ্দেশ্য বোধহয় পরিষ্কার হয়েছে। এখন আমাদের তালিবে ইলম সমাজের এটা এক দুঃখজনক বৈশিষ্ট্য যে, আমরা ইখতিসাসের বিষয়ে মনোযোগী নই। এ কারণে কোনো খিদমত নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করা আমাদের দ্বারা হয়ে ওঠে না। নতুবা ইলমী, দাওয়াতী ও ইনতিযামী কাজের আছে এক বিস্তৃত ময়দান, যার অনেক অংশে শূন্যতা বিরাজ করছে, কোনো কোনো শাখা তো যোগ্য লোকের প্রতীক্ষায় রয়েছে। কিন্তু ইখতিসাসের বিষয়ে অবহেলার কারণে এই শূন্যতা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এখন আমাদের অধিকাংশেরই হচ্ছে মিশ্র অবস্থা। বিভিন্ন বিষয়ের বিক্ষিপ্ত কিছু তথ্য জানা আছে। এছাড়া হিফয ও তাফাক্কুহ এবং বিশেষ কোনো বিষয়ে ইখতিসাস ও মাহারাত কোনো কিছুই নেই। সুতরাং এখন করণীয় এই যে, প্রত্যেকে নিজ নিজ তালীমী মুরববীর সাথে মশোয়ারা করে নিজের স্বভাবগত যোগ্যতা ও আগ্রহের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে কোনো একটি বিষয় নির্বাচন করা। খিদমতে দ্বীন বা খিদমতে খালকের যে কোনো শাখা বা পেশা নির্বাচন করুন, এরপর এমনভাবে মেহনত করুন যেন ঐ বিষয়ে আপনার যোগ্যতা ও পারদর্শিতা স্বীকৃত হয়ে যায়। আর এখনই আরজ করেছি, এটি রিয়াও নয়, দুনিয়া অন্বেষণও নয়। এটি ইত্তিবায়ে সুন্নত।
এই অনুরোধও করছি যে, আজকাল মেহনত ও মুজাহাদার স্বল্পতা এবং
চিন্তার অগভীরতার কারণে সাধারণভাবে আমাদের ভাবনা ও কর্ম এবং আমল ও আখলাকের স্তর তালিবে ইলমের স্তর থেকে উত্তীর্ণ হতে পারে না। ফলে তরবিয়তের বিষয়ে আমরা তাদের প্রতি কঠোর হওয়ার অধিকার হারিয়ে ফেলি। আর তারাও আমাদের মধ্যে কোনো আদর্শ খুঁজে পায় না। কিতাব অধ্যয়ন ও বয়ান-আলোচনা থেকেই তাদেরকে ভালো গুণাবলি শিখতে হয়। আমাদের দেখে দেখে শেখার পথ যেন আমরা বন্ধই করে দিয়েছি। এটা ‘ইসলাম শুধু পুস্তকে আর মুসলমানেরা কবরে’-প্রবাদেরই যেন স্পষ্ট নমুনা!
আমাদের জন্য জরুরি, লৌকিকতা ও জোরপূর্বক কমপক্ষে দু-একটি গুণে হলেও যেন নিজেদেরকে অনুসরণীয় বানানোর চেষ্টা করি। যেন নমুনা দেখে তালিবে ইলমরা এটুকুই শিখতে পারে। আর জীবনে কিছু কিছু মেহনত ও মুজাহাদার নমুনা হই। যেন সব কিছু অতীত ইতিহাস থেকেই তালিবে ইলমদের শুনতে না হয়।
৩. মন্দ স্বভাব পরিহার
আমার যে সকল তালিবে ইলম ভাই এখনো তাআল্লুমের মাধ্যমে তাআল্লুমে নিয়োজিত, তাদের খেদমতে আরজ এই যে, তারা যেন খুব শক্তভাবে ঐসব মন্দ প্রবণতা পরিহার করেন, যেগুলো-আল্লাহ মাফ করুন-এখন ব্যাপকভাবে দেখা যায়।
তেমনি আমার যে সকল তালিবে ইলম ভাই, (যারা নিজেদেরকে আমার শাগরিদ বলেন, বা শাগরিদের শাগরিদ) এখন তালীম দ্বারা তাআল্লুমের পর্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন তাঁদের কাছেও দরখাস্ত, তাঁরা যেন এই পর্যায়ের তালিবানে ইলমের মাঝে বিস্তৃত মন্দ প্রবণতাগুলো থেকে নিজেদেরকে সযত্নে বাঁচিয়ে রাখেন।
প্রথম শ্রেণীর সংশোধনযোগ্য প্রবণতাগুলোর মধ্যে বেশি ক্ষতিকর কিছু প্রবণতা এই-
ক. খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রাম, গোসল ইত্যাদি বিষয়ে নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গের প্রবণতা।
খ. সময়ের কোনো সুশৃঙ্খল নেযাম তৈরি করা ছাড়াই সময় কাটাতে থাকা এবং নেযামুল আওকাতের পাবন্দি না করা।
গ. নিজেদের মূল্য না বোঝা। মনে করা যে, আমি আর কী, আমার দ্বারা কী কাজ হবে? একথা মনে করে নিজেকে প্রস্ত্তত না করে বেকার ফেলে রাখা। অথচ তালিবে ইলমের জন্য এমন চিন্তা জায়েযই নয়। তাকে প্রথমে আল্লাহর রহমতের উপর তাওয়াক্কুল করতে হবে। দ্বিতীয়ত আসাতিযায়ে কেরামের নির্দেশনার উপর আস্থা রাখতে হবে। তার চিন্তা এই হবে যে-
السعي مني والإتمام السعي مني والإتمام من الله من الله
(চেষ্টা করা আমার কাজ, সফলতা দান করবেন আল্লাহ তাআলা।)
এ কারণে হিম্মত বুলন্দ করুন এবং নিজেকে প্রস্ত্তত করার মেহনতে আত্মনিয়োগ করুন।
كن رجلا رجله في الثرى وهامة همته في الثريا
ঘ. শুধু কিতাবী ইসতিদাদ বা তার বাহ্যিক চিহ্ন-ইমতিহানের ফলাফল ভালো হওয়ার উপর সন্তুষ্ট থাকা। এ কথা মনে করা যে, আমার আর কিছুর প্রয়োজন নেই। এটাও একটা মন্দ প্রবণতা। একজন আদর্শ তালিবে ইলমকে জাহেরী-বাতেনী আরো কিছু বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে হয়। অথচ তা অর্জনের দিকে ভ্রুক্ষেপ করা হয় না।
কিংবা বলুন-
المؤمن القوي خير عند الله من المؤمن المؤمن القوي خير عند الله من المؤمن الضعيف
নীতির সঠিক ও বিস্তৃত মর্ম উপলব্ধি করে নিজেকে المؤمن القوي ওয়ালা তালিবে ইলমে বানানোর চিন্তা করা হয় না। যেমন হস্তলিপি সুন্দর করা, বিশুদ্ধ বানান ও সঠিক নিয়মে লেখা, শুদ্ধ ও প্রাঞ্জল ভাষায় কথা বলা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সময়ানুবর্তিতা ও নিয়মানুবর্তিতার মতো বিষয়গুলোতেও অবহেলা করা হয়।
ঙ. স্বাস্থ্য রক্ষায় সচেতন না হওয়া। স্বাস্থ্য নষ্ট হয়-এমন সকল কাজ ও বিষয় থেকে বেঁচে থাকা তালিবে ইলমের অবশ্য কর্তব্য।
চ. সহপাঠীদের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রান্তিকতার শিকার হওয়া। কারো সাথে বন্ধুত্ব করা, কারো সাথে শত্রুতা ও হিংসা-হাসাদ বজায় রাখা। অথচ হাসাদ সম্পূর্ণ হারাম। আর তালিবে ইলমীর যামানা দোসতী করার যামানা নয়। সকল তালিবে ইলমের সাথে সঙ্গী সূলভ ভালো ব্যবহার করার মধ্যেই ক্ষান্ত থাকতে হবে। আলহুববু ফিল্লাহর দায়িত্ব পালনের জন্য কাউকে দোসত বানানোর প্রয়োজন নেই। এ তো প্রত্যেক মুমিনের হক।
ছ. এই চিন্তা করা যে, আমরা তো ছাত্র। কতইবা বয়স আমাদের? এরপর নিজের জীবন ও কর্ম, চাল-চলন, আচার ব্যবহার এবং ইলমী ও আমলী তরক্কীর বিষয়ে অবহেলা করা। এটা অনেক বড় রোগ। একে বলা উচিত, তালিবানে ইলমের উম্মুল আমরায।
মনে রাখবেন, তালিবে ইলমীর যামানায় আপনার কৈশোর ও যৌবন অতিবাহিত হচ্ছে যা গোটা জীবনের মূলধন। একে রক্ষা করা ও ফলপ্রসূ করা আপনার দায়িত্ব। এখানে অবহেলা করার অর্থ আগামী জীবনকে বরবাদ করা। যাকে আপনি আসল জীবন মনে করছেন, আপনার ধারণা অনুযায়ী যদি আপনার আগামী জীবনই হয় মূল জীবন তাহলে ঐ জীবনের সফলতার বীজ নিহিত আছে কৈশোর ও যৌবনে, এর সুরক্ষা ও সঠিক ব্যবহারে। وشاب نشأ وشاب نشأ في عبادة الله في عبادة الله এর উদাহরণ আপনারা না হলে কারা হবে?
জ. উপরোক্ত চিন্তার একটি কুফল (যা আলাদা বিচারেও খুব মারাত্মক) এই যে, পারস্পরিক চাল-চলন ও ওঠা-বসায় শরীয়তের বিধিবিধান অনুসরণে অবহেলা করা। অথচ তাদের জানা আছে যে, এই বয়সেও তারা শরীয়তের বিধানের মুকাল্লাফ এবং পুরা মুকাল্লাফ। তো এই অবহেলা কি গুনাহ নয়?
সীমাতিরিক্ত হাসিঠাট্টা; কায় বা আচরণে কাউকে কষ্ট দেওয়া, কাউকে উপহাস বা তাচ্ছিল্য করা, গীবত করা .. ইত্যাদি সবই হারাম। সাথীদের সাথে এইসব আচরণ করা তো তাদের হক নষ্ট করার দিক থেকে আরো বেশি গুনাহ।
বিশেষত কোনো তালিবে ইলম যখন কোনো ভালো গুণ হাসিলের চেষ্টা করে তখন তাকে বিদ্রূপ করা। যেমন, নফল ও যিকরের ইহতিমাম করলে একথা বলা যে, সূফী হয়ে যাচ্ছে! বুযুর্গ হয়ে যাচ্ছে! শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা বা লেখার চেষ্টা করলে বলা যে, সাহিত্যিক হয়ে যাচ্ছে! পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি থাকার চেষ্টা করলে বলা যে, ফ্যাশন করছে! কোনো উস্তাদের কাছ থেকে বেশি ইস্তিফাদার চেষ্টা করলে বলা যে, খাস লোক হয়ে যাচ্ছে!-এ ধরনের ঠাট্টা বৈধ ও জায়েয ঠাট্টা নয়; বরং উপহাস, বিদ্রূপ ও কটূক্তির শামিল।
আল্লাহর ওয়াস্তে ভাবুন, আমরা অনিচ্ছাকৃতভাবে না বোঝার কারণে কত মানুষকে কষ্ট দিচ্ছি! আমি কষ্ট দিচ্ছি না, কিন্তু আমার কথা বা আচরণে কেউ কষ্ট পাচ্ছে-এ তো আমাদের প্রতিদিনের কাজ! যে সম্পর্কে আমরা সচেতন নই। শুধু নিয়ত করে ইচ্ছাকৃতভাবে কষ্ট দেওয়াকেই কষ্ট দেওয়া বলে? মানুষকে কষ্ট দেওয়া যে হারাম-এই বিধান থেকে আপনার সহপাঠীকে মুছতাছনা করছেন কীভাবে? নাকি তাকে কষ্ট দেওয়া আরো বেশি হারাম?
দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রবণতাগুলো সম্পর্কে এখন কিছু বলছি না। তবে আমার বন্ধুদেরকে শায়খুল হাদীস মাওলানা যাকারিয়া রাহ.-এর ‘আপবীতী’ বিশেষ করে তার ষষ্ঠ হিস্যা পাঠ করতে অনুরোধ করব।
শুধু একটি কথা আরজ করছি যে, খেদমতের ময়দানে যখন অবতীর্ণ হয়েছেন তখন নিজের কাজে ইতকান ও ইমতিয়াজ পয়দা করার চেষ্টা করুন, গড্ডালিকা প্রবাহে নিজেকে ভাসিয়ে দিবেন না। আপনার যোগ্যতাকে কাজে লাগানোর জন্য এমন কাজ নির্বাচন করুন, যার প্রয়োজন সমাজের আছে, কিন্তু সে দিকে দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে না। অভিজ্ঞ ও চিন্তাশীল আকাবিরের সাথে পরামর্শ করলে ইনশাআল্লাহ তাঁরা আপনাকে এমন অনেক কাজের কথা বলবেন।
এ তো খুবই সহজ যে, প্রচলিত ধারায় আপনি একটি মাদরাসা করে ফেললেন। তাখাসসুসের মাদরাসা খুলে দিলেন। নিজের মাদরাসায় দাওরা বা তাখাসসুসের জামাত খুলে দিলেন। এসব এমন বিষয় নয়, যার খুব বেশি প্রয়োজন আছে। আর না এগুলো এমন ক্ষেত্র, যেখানে আপনার বিশেষত্ব প্রমাণ হবে। বিশেষত্ব তো এই হবে যে, আপনি দাওরা-মিশকাত খুললেন না; বরং ইবতিদায়ী তালীমের আদর্শ দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। বিশেষত্ব তো এই যে, আপনি মাদরাসা-বিমুখ ছাত্রদের জন্য ইস্কুল বানালেন। বিশেষত্ব তো এই যে, আপনি তাখাসসুসের জামাত না খুলে হিদায়া থেকে দাওরা পর্যন্ত এমনভাবে পড়াবেন যে, আপনার ছাত্ররা প্রচলিত তাখাসসুস সমাপনকারীদের চেয়েও যোগ্যতর হয়।
মোটকথা, আপনি যখন আপনার যোগ্যতার ব্যবহারের ক্ষেত্র নির্বাচন করবেন তখন ঐ কাজে আপনার অবতীর্ণ হওয়ার বৈধতা ও প্রয়োজন সম্পর্কেও চিন্তা করা জরুরি। যাতে যোগ্যতা সঠিক জায়গায় সঠিক উপায়ে ব্যবহৃত হয়। এই আবেদনগুলা শুধু বছর শেষের জন্য নয়, বছর শুরু ও অন্যান্য সময়ের জন্যও। আল্লাহ তাআলা আমাকে ও আমার তালিবে ইলম ভাইদেরকে এর উপর আমলের তাওফীক দান করুন। আমীন।