রজব-১৪৩৩   ||   জুন-২০১২

পা ঠ্য সূ চি : কী শিখছে মার্কিন সেনারা?

আবু তাশরীফ

আমেরিকার একটি অঙ্গরাজ্য ভার্জিনিয়া। সেই ভার্জিনিয়ার নরফোকের জয়েন্ট ফোর্সেস স্টাফ কলেজে (সামরিক সদস্যদের উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) ইসলাম বিষয়ক একটি পাঠ্যসূচি পড়ানো হচ্ছে। কী আছে ওই পাঠ্যসূচিতে? গণমাধ্যমের ভাষায়-ইসলামের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ। খবরে জানা যায়, ইসলাম বিষয়ক ওই পাঠ্যসূচি সারা বিশ্বের মুসলমানদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের বিষয়টি সমর্থন করে। এমনকি মুসলমানদের অতি পবিত্র দুটি স্থান-মক্কা ও মদীনায় সম্ভাব্য পারমাণবিক হামলারও উস্কানি দেওয়া হয় তাতে। এ ছাড়া পাঠ্যসূচিতে এমনভাবে ইসলামকে উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে মার্কিন সেনা কর্মকর্তারা ভাবতে বাধ্য হবেন, ইসলাম সরাসরি তাদের শত্রু।

বিবিসির বরাতে এই খবরটি এদেশের পত্রিকাগুলোতে ছাপা হয়েছে ১২ মে

শনিবার। আন্তর্জাতিক পাতায় ছাপা হওয়া খবরটিতে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের কিছু সাফাই-বয়ানের তথ্যও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন স্বীকার করেছে, পাঠ্যসূচিতে কিছু আস্বাভাবিক বিষয় রয়েছে। মার্কিন বাহিনীর জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্টিন ডেম্পসি সামরিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওই পাঠ্যসূচি পড়ানোর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বিষয়টির পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পাশাপাশি অন্য সামরিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ইসলাম সম্পর্কে কী শিক্ষা দেওয়া হয়, তা-ও খুঁজে  বের করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেছেন, এটি আপত্তিকর ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন।

খবরটি পড়ে মনে হতে পারে, ইসলামের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের ডাক দেওয়া এই পাঠ্যসূচি সম্পর্কে সামরিক বাহিনীর উঁচু কর্তারা নিজেদের উদ্যোগেই সচেতন হয়ে ওঠেছেন। অনুচিত একটি কাজ তারা স্বেচ্ছায় বন্ধ করে দিয়েছেন। বাস্তবে তা ঘটেনি। বরং ভেতর থেকে অভিযোগ ওঠার পর এদিকে তারা চোখ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। খবরটির একটি অংশে জানানো হয়েছে, গতমাসে ওই পাঠে অংশ নেওয়া একজন সামরিক কর্মকর্তা প্রথমবারের মতো এ বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

মার্কিন তদন্ত! সেটিও আবার ইসলাম ও মুসলমানকে আঘাত করে ভূমিকা রাখায় মার্কিন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে! এই তদন্তের সার কথা তো চোখের ধুলা। এরচেয়ে বেশি কিছু নয়। সেই গুয়ান্তানামো-বে আর আবু গারিব থেকেই এ দৃশ্য চোখে পড়ছে। এ খবরে তো ভার্জিনিয়া নামের একটি অঙ্গরাজ্যের জয়েন্ট স্টাফ কলেজের পাঠ্যসূচির কথা জানা গেল। আসলে গোটা আমেরিকা জুড়ে সামরিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠ্যসূচিতে কী আছে? এ পাঠ্যসূচিতে ইসলামকে সরাসরি শত্রু সাব্যস্ত করা আর মক্কা-মদীনায় পারমাণবিক হামলার উস্কানি রয়েছে। অন্য পাঠ্যসূচিগুলোতে আরও কী কী থাকতে পারে?  অভিযোগ ওঠার পর পেন্টাগন এই পাঠ্যসূচি সম্পর্কে শুধু বলেছে, কিছু অস্বাভাবিক বিষয় তাহলে অন্য আরও ভয়ঙ্কর পাঠ্যসূচিগুলো সম্পর্কে তাদের অবস্থান এর চেয়ে ভিন্ন কিছু হওয়ার কথা তো নয়।

সম্প্রতি যোগ হয়েছে পবিত্র কোরআন শরীফ পোড়ানোর মতো নির্মম সাম্প্রদায়িক ঘটনা। এখন পাঠ্যসূচি বিষয়ক এ ঘটনার মধ্য দিয়ে সামনে এল মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ আর মুসলিম জাতির প্রতি মার্কিন সেনাদের অব্যাহত আক্রোশের একটি প্রাতিষ্ঠানিক প্রমাণ। মার্কিনীরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে খুব গলা উঁচু করে কথা বলে। সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণ-বিদ্বেষ, বাকস্বাধীনতা,

মুক্তচিন্তা-এসব শ্লোগান তাদের চেয়ে জোরালো কেউ দিতে পারে না। মুখরোচক বুলি মুখে নিয়েই তারা কামান-বন্দুকসহ বিভিন্ন দেশে-ঢুকে পড়ে। আহা! কী মহান অভিভাবক। সেই তারাই আবার তাদের বন্দুকবাজ বাহিনীকে একটি গোটা ধর্মের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক শত্রুতা করার শিক্ষা দেয়। সর্বাত্মক যুদ্ধের সিলেবাস পড়ায়। পারমাণবিক হামলার উৎসাহ যোগায় মক্কা-মদীনায়। সভ্যতার স্যুট-কোট পরা এত বড় অসভ্য ও দিগম্বর গোষ্ঠী দুনিয়াতে আর কে আছে, কে কবে ছিল- বড় জানতে ইচ্ছা করে।

বুশ ও ওবামা বার বার লাউডস্পিকারের সামনে বলেছেন, আমাদের যুদ্ধ ইসলামের বিরুদ্ধে নয়। আর পর্দার আড়ালে তাদের সৈনিকেরা পড়ছে, শিখছে আর জানছে-আমাদের সর্বাত্মক যুদ্ধ ইসলামের বিরুদ্ধে। ইসলামের বিরুদ্ধেই অমাদের যু্দ্ধ করতে হবে। এরাই বিভিন্ন মুসলিম জনপদে ঢুকছে এবং প্রাপ্ত শিক্ষার ভিত্তিতে কাজ করছে। এরপর তাদেরই কোনো বর্বরতার খবর গণমাধ্যমে চলে এলে বলা হচ্ছে-তদন্ত করা হবে। অদ্ভূুত তামাশার মধ্যে আছে পৃথিবীর মানুষ।

 

 

advertisement