বাইতুল্লাহর ছায়ায়
মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
এবার মিনায় ফিরে যাওয়ার পালা। শিকদার সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা দু’জন বের হলাম। বিদায়ের সময় শিকদার সাহেব হেসে হেসে একটা কথা বলে আমাকে কাঁদালেন। মানুষের দিল যে কী জিনিস তা মানুষ নিজে কোনদিন জানতে পারবে না; দিলের হাকীকত জানেন শুধু আল্লাহ। আমাদের পেয়ারা হাবীব ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘শোনো, দেহের মধ্যে একটি মাংসপিন্ড আছে, যদি সেটা ঠিক হয়ে যায়, সমস্ত দেহ ঠিক হয়ে যায়, আর যদি সেটা নষ্ট হয়ে যায়, সমস্ত দেহ নষ্ট হয়ে যায়। শোনো, সেটাই হল কলব।’
এই কলব বা দিল যখন নূরানিয়াত হাছিল করে তখন মুখে, চোখে, চোখের দৃষ্টিতে, সবকিছুতে সেই নূরানিয়াতের বিচ্ছুরণ ঘটে।
তাই তো পেয়ারা হাবীব ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের শরীর চেহারা দেখেন না, দেখেন তোমাদের কলব ও দিল।’
এত কথা বলতে হলো, কারণ বিদায়ের সময় শিকদার সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, শরীরটা যতদিন সচল ছিলো, শরীরের ভিতরে দিলটা অচল হয়ে পড়ে ছিলো। এখন শরীরটা অচল, কিন্তু দিলটাকে আল্লাহ সচল করে দিয়েছেন। আমার দিলটা কিন্তু আপনাদের সঙ্গে মিনার তাঁবুতে গিয়ে হাযির হবে। না, না আলাদা জায়গা লাগবে না, শুধু আপনার দিলের ভিতরে আমার দিলটাকে একটু জায়গা দিয়েন।’
চোখের পানি আর রোধ করা সম্ভব হলো না, দরজার কাছ থেকে ফিরে এসে তার মাথায় হাত রেখে বললাম, ‘ভাই আমার পেয়ারা হাবীব ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গ্রামের এক সাধারণ ছাহাবীকে বলেছিলেন, ‘কিন্তু আল্লাহর কাছে তো তুমি কমদামী নও?’
তো সেই কথাটাই বলতে চাই, ইনশাআল্লাহ এই হজ্বের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আপনি অনেক দামী হয়ে গেছেন।
শিকদার সাহেব খুব আব্দার করে বলেছিলেন, ঐ ছাহাবীর ঘটনাটা কী, দয়া করে বলেন।
সময় ছিলো কম, তাই বললাম, ফিরে এসে বলবো। কিন্তু আর বলা হয়নি। আমি ভুলে গিয়েছিলাম, তিনিও মনে করিয়ে দেননি।
যেদিন তার মৃত্যুসংবাদ শুনলাম, কেন জানি বে-ইখতিয়ার মুখে হাদীছের এই বাক্যটি এসে গিয়ে ছিলো-
ولكنك عند الله لست بكاسد
কিন্তু আল্লাহর কাছে তো তুমি কমদামী নও!
গোনাহগার হলেও মুমিনের সাক্ষি আল্লাহ কবুল করেন। মরহূম শিকাদার সাহেব সম্পর্কে আমার দিল সবসময় এ সাক্ষী দেয়। তিনি দেখতে যেমন ছিলেন তাতে বারবার আমার মনে পড়তো মদীনার বাজারে নবীজীর সঙ্গে দেখা হওয়া সেই বেদুঈন ছাহাবীর কথা। মনে পড়তো, আর মনে হতো, দেখতে তিনিও হয়ত এমন ছিলেন!
আমার পাঠানো নেক আমলের ছাওয়াব ফিরেশতারা যখন তার কবরে পৌঁছে দেন তখন তিনি হয়ত বুঝতে পারেন, তার দিলটাকে আমার দিলের মধ্যে এখনো সযত্নে লালন করছি।
আমার ইচ্ছা ছিলো আজ সকালে যেভাবে সুড়ঙ্গ পথে হেঁটে এসেছি সেভাবে হেঁটে চলে যাবো। ভাই কামরুল ইসলাম, রাজী হলেন না। তিনি বললেন, হেঁটে গেলে তাকে কাঁধে করে নিতে হবে। ‘শাবাশ মর্দ জোয়ান’! প্রচন্ড যানজটের আশঙ্কা সত্ত্বেও অগত্যা গাড়ীতে যাওয়াই ঠিক হলো, যদি আল্লাহ আল্লাহ করে গাড়ী পাওয়া যায় এবং ওঠা যায়।
মক্কা টাওয়ার পার হয়ে হোটেল তায়বা, উত্তর দিকে জাবালে উমরের পাদদেশ থেকে মিনার উদ্দেশ্যে বাস ও অন্যান্য গাড়ী আসা-যাওয়া করে, জানা ছিলো। সেহিসাবে আমি ও ভাই কামরুল সেখানে হাজির হলাম। কিন্তু অবস্থা যা দেখলাম, সংক্ষেপে যদি বলি তাহলে দাঁড়ায় এই, ‘যাত্রী আছে, গাড়ী নেই’! হাজার হাজার মানুষ এবং সবারই সমান তাড়া মিনায় ফেরার, কিন্তু গাড়ীনামক বস্ত্তটি যে কোথায়, বলতে পারে না কেউ। হঠাৎ হঠাৎ একটি দু’টি বাস, মিনিবাস, বা পিকআপ উদিত হয় মুহূর্তের জন্য এবং যাত্রীসমুদ্রে হারিয়ে যায় মুহূর্তের মধ্যে। গাড়ীর দেহটা দেখা যায় না, শুধু দেখা যায়, মানুষের একটা জটলা যেন ধীরে ধীরে চলতে শুরু করেছে। সেই জটলার উপর আরো কিছু মানুষ সওয়ার হতে চেষ্টা করে; কেউ পারে, কেউ পারে না। শুধু দেখার জন্য হলে দৃশ্যটা যথেষ্ট উপভোগ্য, কিন্তু নিজে এর অংশ হওয়ার কথা ভাবতেই গায়ে দিয়ে উঠলো। ভয়াবহ বললেও কম বলা হয়। তবে হাঁ, এ অবস্থায়ও তেমন কোন হৈচৈই বা গোলমাল যে নেই এবং নেই কোন দুর্ঘটনা, সেটা অবশ্যই অবাক হওয়ার মত। হজ্বের সামবেশ না হয়ে যদি হতো অন্য কিছু তাহলে যে কী হতো তা কল্পনা করাও সম্ভব নয়।
একসময় একটা মিনিবাস কীভাবে আমাদের প্রায় সামনে এসে থামলো এবং চোখের পলকে ভিতরটা বোঝাই হয়ে গেলো। আমাদের বুদ্ধিতে এসেছিলো, শুরুতেই আমরা ভিতরের চিন্তা বাদ দিয়ে বাইরের, অর্থাৎ ছাদের চিন্তা করলাম এবং তাতে সফল হলাম। ভাড়া চাওয়া হলো দশ রিয়ালের স্থানে চল্লিশ রিয়াল। আমাদের মনোভাব তখন, সত্তর রিয়াল যে চাওনি সেজন্য শুকরিয়া।
ছাদে উঠতে গিয়ে আমার হাত-পা ছড়ে গেলো, রক্ত বের হলো। ডায়াবেটিসের রোগী বলে ঘাবড়ে গেলাম, কিন্তু তখন কিছু করার ছিলো না।
ছাদে আমরা উঠেছিলাম দু’তিনজনের পরে; দেখতে দেখতে চড়ে বসলো ত্রিশ পয়ত্রিশজন। আমি পড়ে গেলাম একেবারে কিনারে। গাড়ী যখন চলতে শুরু করলো তখন আমার পড়ে যাওয়ার অবস্থা। ভাগ্য ভালো, সামান রাখার ব্যবস্থা হিসাবে ছাদের চারদিকে লোহার পাতের ঘেরাও ছিলো। একহাতে একটা লোহার পাত ধরে কোনমতে পতন রক্ষা করেছি। এমন সময় আমার উপর এসে পড়লো একজন নাইজেরীয় হাজী। হিসাবে তিনি ভাড়া দেবেন চল্লিশ রিয়াল, তবে ওজনে আয়তনে ছিলেন আমার ও কামরুলের সমান, কিংবা একটু বেশী। তাতে একটা সুবিধা হলো যে, আমার আর নড়াচড়া করার, কিংবা পড়ে যাওয়ার কোন সুযোগ থাকলো না, কিন্তু অসুবিধা হলো কয়েকটা। হাত পা অসাড় হয়ে আসতে লাগলো, ছাদের কিনারের লোহার পাত যেন শরীরে কেটে বসে যাচ্ছে। গাড়ী যত ঝাঁকি দেয় তিনি তত জেঁকে বসেন। আমি হাতের নাগালের সবক’টি ভাষার সাহায্যে অনুনয় করি, বাবা, একটু সরো, আমার জান বেরিয়ে গেলো। বেচারার দোষ কী, আমার কথা তো তিনি বোঝেন না! আর বুঝলেই বা কী! তারও তো সরার উপায় নেই।
বাস চলছে কখনো থেমে থেমে কখনো পূর্ণ গতিতে। একসময় আমার চোখের সামনে অন্ধকার হয়ে এলো। আশঙ্কা হলো যে, জ্ঞান হারিয়ে ফেলবো। এমন সময় কীভাবে যে নাইজিরীয় হাজী একটু সরে গেলেন, আর তখনই আমি ছাদ থেকে প্রায় পড়ে গিয়েছিলাম, যদি না ঐ নাইজিরীয় একহাতে আমাকে ধরে ফেলতেন। সত্যি সত্যি তখন মৃত্যুর মুখে প্রায় চলে গিয়েছিলাম। আল্লাহ মেহেরবান রক্ষা করেছেন।
কিছুক্ষণ পর হতে পারে কিছুটা বোধ ফিরে এলো এবং আমি একটু নড়েচড়ে বসতে পারলাম। বস্ত্তত এটা ছিলো আমার জীবনের ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতা। আমি বাংলাদেশের মানুষ। আমার দেশে বাসে ট্রেনে ভিতরে থাকে যে পরিমাণ যাত্রী, ছাদের উপরে থাকে তার সমপরিমাণ মানুষ। টঙ্গি ইজতেমা থেকে ফেরার পথে দু’একবার ছাদে ওঠার অভিজ্ঞতা আমার আছে, কিন্তু এ অভিজ্ঞতা জীবনে এই প্রথম, মনে হলে এখনো বুকটা কেঁপে ওঠে।
চলন্ত গাড়ীতেই একটা ঝামেলা বাঁধলো। যাত্রী আমরা বিভিন্ন দেশের, কিন্তু দেখা গেলো মানসিকতায় সবাই অভিন্ন। ভাড়া নিয়ে বিবাদশুরু হলো ‘হেলপারের’ সঙ্গে। বিশ রিয়ালের বেশী কেউ দেবে না। চল্লিশ রিয়াল তো ডাহা যুলুম। ঢাকায় হলে কী হতো জানি না, মক্কার হেলপার দেখি অল্পতেই থেমে গেলো। মনটা খারাপ করে বিশ রিয়ালই নিতে লাগলো। যাত্রীদের মুখে বিজয়ীর হাসি। ভাই কামরুল ইসলামকে বললাম, যদিও এটা যুলুম, কিন্তু আমরা তো চল্লিশ রিয়ালের ওয়াদা করেছি; সুতরাং ওয়াদা ভঙ্গ করা হবে আরো বড় যুলুম। তিনি বিষয়টা বুঝলেন। আমরা আশি রিয়াল দিলাম। অন্তত হজ্বের সফরে এধরনের বিষয়ে খুব সতর্ক থাকা উচিত, না হয় অনেক সময় পুরো হজ্ব নিয়ে টান পড়ে।
বাস থামার কথা ছিলো মক্কার দিক থেকে প্রথম ওভার ব্রিজের উপর। নীচে নামলে জামারা খুব কাছে, কিন্তু বাস থামলো ব্রিজের অনেক আগে। যাত্রীরা যত হৈচৈ করলো কাজ হলো না। চালক ও তার সহকারী শুধু মৃদু হাসে আর বলে ব্যস, খালাস। কেউ কেউ ভাবলো, এর অর্থ হচ্ছে বাস খালস করে দাও। শেষ পর্যন্ত বাস খালাস করে সবাই নামতে শুরু করলো। আমি পড়লাম বিপদে। উঠেছি কীভাবে তা জানি না, কিন্তু নামতে আর পারছি না। ভাই কামরুল এবং অন্য একজন নামতে সাহায্য করলেন। আমার উপর দিয়ে এতক্ষণ কী অবস্থা গেছে কামরুল তা কিছুই টের পাননি, তাই হালকা পরিহাস করলেন। আমি কিছু মনে করলাম না এবং কিছু বললাম না। রাস্তার পাশে একটি বাগান ছিলো। ঝিরঝির বাতাস ছিলো। বেশ আরাম বোধ হলো। মাগরিবের সময় হয়ে গেছে। সেখানে বড় জামাত হলো।
ভাই কামরুল ইসলামের আবার চা না হলে শরীরে ‘ফুর্তি’ আসে না। শব্দটা অবশ্য তার নিজের। আমি তো অবাক! এমন গরমের মধ্যে আবার গরম চা! নিজেও খেলেন, আমাকেও জোর করে খাওয়ালেন। অবশ্য চায়ের কাগুজে পেয়ালায় চুমুক দিয়ে আমিও কিছুটা সজীবতা বোধ করলাম। কিন্তু কামরুলের শরীরে ফুর্তি এলো না। চা খাওয়ার পরো অনেক্ষণ নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকলেন।
কিন্তু উঠতে তো হবেই। তাই বিসমিল্লাহ বলে পদযুগলের উপর ভরসা করে রওয়ানা হলাম, তবে দিকদিশা না বুঝেই। কিছুক্ষণ হেঁটে একজন আসকারীকে পেয়ে পথ জিজ্ঞাসা করলাম। আল্লাহ তাকে উত্তম বিনিময় দান করুন, তিনি অনেক দূর সঙ্গে এলেন। ভাই কামরুলের তখন সঙ্গিন অবস্থা। এটা তার একবিশেষ শারীরিক সমস্যা। শরীর কাঁপতে থাকে, চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। কিছুই দেখতে পান না। কিছুক্ষণ লম্বা হয়ে শুয়ে বিশ্রাম নিলে আবার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে। আসকারী অত্যন্ত মানবিকতার পরিচয় দিলেন। বড় একটা পানির বোতল কিনে নিজে সামান্য পান করে কামরুলে হাতে দিলেন। বুঝলাম, পানির তার প্রয়োজন ছিলো না। নিয়েছেন আসলে আমাদের জন্য, কিন্তু সেটা বুঝতে দিতে চাননি। খাওয়াতে পারে অনেকেই, কিন্তু খাওয়াতে জানে খুব কম মানুষ।
কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর ভাই কামরুলে অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হলো। তিনি উঠে দাঁড়ালেন। আমরা আবার হাঁটতে শুরু করলাম। আসকারী তখনো আমাদের সঙ্গে, শুধু সামনের পথটা আমাদের বলে দেয়ার জন্য। মিনার সরকারী হাসপাতালের সামনে এসে তিনি বললেন, দুঃখিত, আমার দায়িত্ব রয়েছে। তোমাদের সঙ্গে আর যেতে পারছিনা। এখান থেকে সোজা গেলে। টিন শেড পেয়ে যাবে। সোজা হেঁটে টিনশেডের শেষ মাথা পাবে। সেখান থেকে বামে কিছু দূর গিয়ে আবার ডানে যাবে, একটু এগুলে ৮৬ নম্বর পেয়ে যাবে।
আমরা তাকে অনেক অনেক জাযাকাল্লাহ বলে চলতে শুরু করলাম। কিন্তু আসকারী যত সহজ করে বলে দিলেন, কাজটা তত সহজ হলো না। রাতের বেলা সবকিছু মনে হয় একরকম। সবদিক যেন একদিক। অনেক দূর চলার পরো দেখি টিনশেড আসে না। যাকে জিজ্ঞাসা করি, একই জওয়াব, ‘কুদ্দাম’, মানে সামনে। হজ্বের সফরে এই কুদ্দাম যে কী চীজ তার বেশ কিছু চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা আমার ঝুলিতে জমা হয়েছে। এখন আর শুধু ‘কুদ্দাম’ শুনে আগে বাড়ি না। যাক সে প্রসঙ্গ।
শেষে একজন বললেন, আরে, এদিকে টিনশেড কোথায়! তোমরা তো উল্টো দিকে মক্কার পথে চলেছো!
হায় আল্লাহ, এতক্ষণের ‘হণ্টন’ তাহলে খাজনা এবং বাজনা দু’টোই! তখন মনের অবস্থা যে কী তা জানেন শুধু আল্লাহ।
দিক পরিবর্তন করলাম, কিন্তু হাঁটতে আর পারলাম না। ভাই কামরুল হাল ছেড়ে দিয়ে পথের উপর শুয়ে পড়লেন। বদনামটা যদিও শুধু বাঙ্গালীর, কিন্তু ভিড় জমাতে পারঙ্গম দেখা গেলো সবাইকে। দেখতে দেখতে বড় সড় একটা বহুজাতিক ভিড় জমে গেলো শুয়ে পড়া কামরুলকে ঘিরে। ‘কী হয়েছে? কেয়া হুয়া?’ শুধু বুঝতে পারলাম, বাকিগুলো শুধু কানে এসে আঘাত করলো, ভিতরে গেলো না!
এর মধ্যে একজন, কে জানে কোন্ দেশী, করলেন অদ্ভুত এক কান্ড। পাঁচ না দশ রিয়ালের একটা নোট আমার হাতে গুঁজে দিতে চাইলেন। হয়ত ভাবলেন, বেচারাদের ক্ষুধা পেয়েছে, কিংবা অন্যকিছু। ছাওয়াবের এমন সুযোগটা হাতছাড়া করবেন কেন!
আমার তখন দিশেহারা অবস্থা! ভিতরে কান্না পাচ্ছে, তবু শান্ত থেকে মুখের কথায়, হাতের ইশারায় বোঝাতে চেষ্টা করছি, দোহাই লাগে, ভিড়টা ছেড়ে দাও একটু বাতাস আসুক। কিন্তু কে শোনে কার কথা! কে বোঝে কার ইশারা!
আল্লাহ আল্লাহ করে ভাই কামরুল উঠে বসলেন, আর বললেন, কিছুটা সুস্থ বোধ করছেন, এখন হাঁটতে পারবেন। ভিড়ের মধ্যে থেকে দু‘একজন আলহামদুলিল্লাহ বললেন, অন্যরা নীরবে ভিড় ছেড়ে নিজ নিজ পথে রওয়ানা হলেন। আশ্চর্য! মানুষগুলো এতক্ষণ গন্তব্য ভুলে দাঁড়িয়েছিলো কীভাবে? কী উদ্দেশ্যে?
অনেকক্ষণ হাঁটার পর জামারাটা এলো, আমাদেরও জানে পানি এলো। ঠিক পথেই আছি তাহলে। অন্তত মিনার শেষ মাথা পর্যন্ত পৌঁছতে পারবো কাউকে জিজ্ঞাসা না করেই। তবে তখনো দীর্ঘ পথ বাকী; দু’কিলো মিটারের বেশী। কিছু দূর হাতের ডানদিকে মসজিদে খায়ফ দেখতে পেয়ে কী যে শান্তি লাগলো। পথের দূরত্ব ভুলে গিয়ে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলে উঠলাম, ভাই কামরুল! এই তো মসজিদে খায়ফ এসে গেছে! পবিত্র ভূমির মসজিদ তো বটেই, পৃথিবীর যে কোন অপরিচিত জনপদে তুমি যাও, আল্লাহর ঘর মসজিদ দেখতে পেলে আশ্চর্য এক প্রশান্তি এবং আশ্বস্তি তোমার সর্বত্তাকে আচ্ছন্ন করবে। তোমার মনে হবে, এই তো আমার ঠিকানা! এই তো আমার আশ্রয়! কিন্তু হায়, মসজিদ থাকে এখন তালাবদ্ধ! আমরা কি এতই নষ্ট হয়ে গেছি যে, মসজিদের দুয়ার খোলা রাখা মসজিদের জন্যও এখন আর নিরাপদ নয়?! মসজিদে এত মূল্যবান কী থাকে? না থাকলে কী হয়?!
(চলবে ইনশাআল্লাহ)