জুমাদাল উলা-১৪৩৩   ||   এপ্রিল-২০১২

আ ন্ত র্জা তি ক : মার্কিন বাহিনী : বিচার-ঊর্ধ্ব অতিমানব!

ওয়ারিস রব্বানী

অপরাধ করেছে আফগানিস্তানে। সে এখন বহাল তবিয়তে অবস্থান করছে আমেরিকায়। সেই অপরাধী একজন মার্কিন সেনা। তার নাম রবার্ট ব্যালেস। গত ১১ মার্চ রাতে আফগানিস্তানের দক্ষিণ কান্দাহারে ১৬ জন আফগান গ্রামবাসীকে সে গুলি করে হত্যা করে। নিহতদের ৯ জন শিশু ও ৩ জন নারী। বাকি  ৪ জন পুরুষ। নিহতদের কেউ মার্কিন বিরোধী কোনো রকম যুদ্ধ-তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। এ রকম দাবি কেউ করেননি। তার মানে, নিছক আক্রোশ বশতই এই হত্যাকান্ড  ঘটানো হয়। কিন্ত মার্কিন সেনা বলে কথা। তার জন্য রয়েছে অন্য রকম নিরাপত্তা। কোনো রকম জিজ্ঞাসাবাদের ঝক্কি তাকে পোহাতে হয় নি। ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই কুয়েত হয়ে তাকে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গণমাধ্যম জানিয়েছে, তাকে এখন ক্যানসাসের সামরিক ঘাঁটির একটি নিঃসঙ্গ প্রকোষ্ঠে রাখা হয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, দোষী সাব্যস্ত হলে তার মৃত্যুদন্ড হতে পারে। কিন্তু তার এ হুমকি বা আশ্বাসে আফগান জনগণ আস্থা রাখতে রাজি হয়নি। তারা বলেছে, খুনী ব্যালেসের বিচার করতে হবে আফগানিস্তানেই। কারণ সে অপরাধ করেছে আফগানিস্তানে।

কিন্তু মার্কিন সেনাদের ব্যাপারে মার্কিন নীতির ধরনটাই অন্য রকম। তাদের কোনো সেনা অন্য দেশে যত বড় অপরাধই করুক, প্রথমে তারা তাকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। এরপর বিচারের কথা বলে পানি ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিছুদিন পর বেমালুম সব কিছু ভুলে যায় এবং অস্বীকার করে। সেই ইরাকের আবু গারিব ও কিউবার

গুয়ান্তানামো-বে কারাগারের বর্বর নির্যাতনগুলোর ক্ষেত্রেও এ ব্যাপারই ঘটেছে। এ ক্ষেত্রেও সেরকম কিছুই ঘটতে যাচ্ছে বলে আফগান জনগণ মনে করছেন। সেজন্যই তাকে নিয়ে এসে

আফগানিস্তানে বিচার করার দাবি তারা জানিয়েছেন।

আসলে সমস্ত বিচারের ঊর্ধ্বে অবস্থানকারী মার্কিন সেনাদের বিচার মার্কিনীরা কখনও করে না। যত বড় অন্যায় ধ্বংসযজ্ঞ ও যুদ্ধবহির্ভূত নৃশংসতাই তারা চালাক তাদেরকে সামান্যতম ফুলের টোকা দেওয়ারও নজির পাওয়া যায় না। সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় এটি আরও প্রকটভাবে ধরা পড়েছে।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তানের বাগরাম বিমান ঘাঁটিতে মার্কিন সেনারা পবিত্র কোরআন পোড়ায়। এরপর আফগানিস্তান জুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন সহিংসতায় ৩২ জন আফগান নিহত হন। কিন্তু ওই কুরআন শরীফ পোড়ানোর ঘটনায় জড়িতদের কারো কোনো বিচার হচ্ছে বা হয়েছে বলে শোনা যায়নি।

এছাড়া গত জানুয়ারিতে ইন্টারনেটে আফগানিস্তানে তিন লাশের উপর মার্কিন সেনাদের প্রস্রাবের ভিডিওচিত্র প্রকাশিত হয়। তখন দুনিয়াজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলে মার্কিন কর্তৃপক্ষ দায়ে পড়ে বলেছিল, এ ঘটনার তদন্ত ও বিচার হবে। কিন্তু গত মার্চ মাসের শেষ নাগাদ সে তদন্ত ও বিচারের কোনো আলামতই প্রকাশিত হয়নি।    

 

 

advertisement