সফর-১৪৩৩   ||   জানুয়ারি-২০১২

না জে হা ল : বছরের শেষে মার্কিন সেনাদল

খসরূ খান

শেষ পর্যন্ত আগ্রাসী মার্কিন সেনারা ইরাক ছেড়ে গেছে। বলা যায়, ছাড়তে বাধ্য হয়েছে অথবা ছেড়ে গিয়ে বেঁচেছে। গত ১৮ ডিসেম্বর রোববার সকালে মার্কিন সেনাদের শেষ দলটি কুয়েত সীমান্ত দিয়ে কুয়েতে পাড়ি জমিয়েছে। সেখান থেকে তারা নিজ দেশে চলে যাবে। ২০০৩ সালের ২০ মার্চ ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের সূচনা হয়েছিল। এরপর পার হয়েছে প্রায় ৮ বছরের রক্তাক্ত এক অধ্যায়। লাখ লাখ ইরাকী নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের হিসাব অনুযায়ী এ আগ্রাসনে প্রায় সাড়ে চার হাজার মার্কিন সেনাও নিহত হয়েছে। অনেকের ধারণা, বাস্তবে এ সংখ্যা চার গুণেরও বেশি। বিবিসি ও এএফপির সূত্রে ১৯ ডিসেম্বর ঢাকার পত্রিকাগুলোতে মার্কিন সেনাদের ইরাক ত্যাগের যে খবর প্রকাশিত হয় তার একটি অংশ এখানে তুলে ধরা হল।

 ইরাকে মোতায়েন মার্কিন সেনাদের শেষ দলটি ইরাক ত্যাগ করেছে। একশ সাজোয়া গাড়ি নিয়ে পাঁচ শ মার্কিন সেনা রোববার সকালে ইরাক থেকে কুয়েত পৌঁছেছে। এর মধ্য দিয়ে ইরাকে মার্কিন সামরিক আগ্রাসনের অবসান ঘটল। সর্বশেষ মার্কিন সেনাদল ইরাক ত্যাগ করায় বাগদাদসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে জনগণ আনন্দ-উল্লাস করছে। ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র থাকার অভিযোগ তুলে মার্কিন সরকার এ আগ্রাসন চালায়। এতে লক্ষাধিক নিরীহ ইরাকি নিহত হয়। ইরাক যুদ্ধে মার্কিন সরকারের ব্যয় হয়েছে অন্তত ৮০  হাজার কোটি মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থ। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন, এ যুদ্ধের জন্য রক্ত ও ডলারে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে তাদের।

মার্কিন বাহিনী নির্বিচারে রাসায়নিক অস্ত্রসহ নানা অস্ত্র ব্যবহার করায় তারও দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া বহন করতে হবে সাধারণ ইরাকিদের।

ইরাকের ওপর মার্কিন আগ্রাসন শুরু হয়েছিল আড়ম্বরের সঙ্গে, কিন্তু মার্কিন বাহিনী সেখান থেকে চলে আসার ঘটনা ঘটল প্রায় আড়ম্বরহীনভাবে। মার্কিন সেনাদের শেষ দলটি নিজেদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে রাতের অন্ধকারে ইরাক ত্যাগ করে।

ইরাক থেকে শেষ সেনাদল প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন করলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল এবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিজয় হয়েছে এ ধরনের দাবি করা থেকে বিরত ছিলেন ওবামা। তিনি এ সাক্ষাৎকারে দাবি করেন মার্কিন বাহিনী ইরাকে তাদের মিশন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। ...

উল্লেখ্য, বিগত নয় বছর ধরে ইরাকের মোট ৫০০টি স্থানে শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে ঘাঁটি গেড়েছিল মার্কিন বাহিনী। আর এতে সৈনিকের সংখ্যা ছিল এক লাখ সত্তর হাজার।

অপরদিকে ইরানের কাছে আরেকবার ধরা খেয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গোয়েন্দাবৃত্তির জন্য ইরানে পাঠানো চালকবিহীন একটি বিমান -ড্রোন ভূপাতিত করেছে ইরান। সে বিমান এখন ইরানের কব্জায়। ঘটনা গত ৪ ডিসেম্বরের। এরই মধ্যে সে বিমানের ভিডিও ফুটেজ টিভিতে দেখিয়ে ইরানী কর্মকর্তারা বলেছেন, ড্রোন-প্রযুক্তি এখন ইরানের নাগালের মধ্যে। ইরান ওই মার্কিন ড্রোন ফেরত দেবে না। কিন্তু গত ১৩ ডিসেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা ড্রোনটি ফেরত দিতে ইরানকে অনুরোধ জানান। জবাবে ইরানী প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ড্রোন তো ফেরত দেওয়া হবেই না, উল্টো আমেরিকাকে ক্ষমা চাইতে হবে। ড্রোন বিষয়ে ইরানের সঙ্গে কিছুতেই জুৎ করে উঠতে পারছে না আমেরিকা।

পরের ও নিজের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়ে ইরাক থেকে সৈন্য সরিয়ে নিতে নিতেই ইরানের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আমেরিকা যত হম্বিতম্বিই করুক, ইরানে আগ্রাসন চালানোর সাহস তারা সম্ভবত পাবে না। পাকিস্তানেও এ মুহূর্তে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সৈন্যরা কোণঠাসা পরিস্থিতিতে রয়েছে। দুহাজার এগারর শেষ সময়টায় জায়গায় জায়গায় প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে আমেরিকান সেনা বাহিনী নাজেহাল হতে শুরু করেছে। আগ্রাসী এ দেশটির সামনের দিনগুলো দেখার অপেক্ষায় আছেন তৃতীয় বিশ্বের কোটি কোটি নিপীড়িত মানুষ। 

 

 

advertisement