সফর-১৪৩৩   ||   জানুয়ারি-২০১২

ব ক্তৃ তা : অভূতপূর্ব-অশ্রুতপূর্ব

ওয়ারিস রব্বানী

দুজনই প্রতিমন্ত্রী। একজন আইনের। একজন ধর্মের। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন তারা। দুদিনের ব্যবধানে দুজনই। আইনের জন ডিসেম্বরের আট তারিখে। ধর্মের জন দশ তারিখে। দুদিনেই দুজন দুটি বোমা ফাটালেন। ইসলামের ব্যাখ্যা ও নবীজীর সীরাত আলোচনায় তারা অশ্রুতপূর্ব কথা শোনালেন। সব ইসলাম বিশেষজ্ঞরা হয়ে গেলেন তাদের কথায়। এমন কথা তারা কোথাও পাননি। শুনেনওনি। প্রতিমন্ত্রী দুজন সে কথাই শোনালেন। ইসলাম বিষয়ে তাদের পান্ডিত্য (?) তারা প্রকাশ করার লোভ সামলাতে পারেননি। তাই চৌদ্দ শ বছরের ইতিহাস টপকে গিয়ে দুজনই দুটি নতুন কথা শোনালেন।

আইন প্রতিমন্ত্রী সাহেব বললেন, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মতো ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তা চেতনার মানুষ পৃথিবীতে দেখা যায় না। তিনি একথাটি বললেন ফাউন্ডেশনের একটি ইমাম সম্মেলন উদ্বোধন করতে এসে। কাফেরদের দাবিতে হুদাইবিয়ার সন্ধির প্রাক্কালে নবীজী নিজ হাতে রাসূলুল্লাহ শব্দটি কেটে দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি এ কথাটি বললেন। এতে হয়ত তার উদ্দেশ্য ছিল তার নিজের এবং তার দলের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের মাহাত্ম তুলে ধরা। কিন্তু এতে উপস্থিত ইমামদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে কানাঘুষার একপর্যায়ে তিনি অনুষ্ঠান ত্যাগ করেন।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী সাহেব বললেন, রাসূল (সা.) মসজিদের অর্ধেক জায়গা হিন্দুদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন। বর্তমান সরকারও সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি এ বক্তব্যটি দিলেন ফাউন্ডেশন আয়োজিত একটি সম্মেলনে। উপস্থিত সুধীরা তার এ বক্তব্যে প্রতিবাদ জানালেন। তখন নানা কারণে বিতর্কিত ফাউন্ডেশনের ডিজি বললেন, রাসূল (সা.) ইহুদীদের জন্য মসজিদের অর্ধেক জায়গা ছেড়ে দিয়েছিলেন। পন্ডিতের উপর পন্ডিত! ইসলামের ব্যাখ্যা ও সীরাত উপস্থাপনায় (?) একজনের চেয়ে আরেকজনের দৌড় আরও বেশি!

দুই প্রতিমন্ত্রীর তথ্যই অভূতপূর্ব। দুজনের বক্তব্যই অশ্রুতপূর্ব। ইতিহাসে এমন কোনো তথ্যের কথা কেউ জানে না। কিন্তু অত্যন্ত দাপটের সঙ্গে তারা তথ্য উপস্থাপন করে গেলেন। আরেকজন খেঁক শিয়ালের মতো সংযোজনী হুক্কাহুয়া করলেন। তাদের বক্তব্য পত্রপত্রিকায় ছাপা হল। দুদিনের মাথায় দেশব্যাপী প্রতিবাদ উঠল। পত্রিকার পাতায় প্রবীণ আলেমদের দীর্ঘ দীর্ঘ বিবৃতি ছাপা হল। কিন্তু দু প্রতিমন্ত্রী তাদের পান্ডিত্যে কোনো সংশোধনী আনতে রাজি হলেন না। ধর্মনিরপেক্ষতা ও হিন্দুদের জন্য মসজিদের অর্ধেক জায়গা ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে তাদের একীনে (?) তারা কোনোই গলদ খুঁজে পেলেন না। এদিকে ডিজিটাল সরকারের একীনদার এই প্রতিমন্ত্রীদের নতুন আবিষ্কৃত ইসলামী তথ্যে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কিন্তু তাতে তাদের কিছুই যাচ্ছে আসছে না।

দুই প্রতিমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর আড়ালে-আবডালে নানাজন নানা কথা বলছেন। কেউ বলছেন, নবীজী যদি সবচেয়ে বেশি ধর্মনিরপেক্ষই হয়ে থাকেন তাহলে সংবিধানের মূলনীতিতে ও আওয়ামী লীগের আদর্শে ধর্ম নিরপেক্ষতার বদলে নবীজীর আদর্শ লিখে দিলেই তো হত। এটা তারা কেন করে না? আর মসজিদের অর্ধেক জায়গা হিন্দুদের জন্য নবীজী কীভাবে ছাড়বেন? তখন কি জযীরাতুল আরবে কোনো হিন্দু ছিল? আরেকজন তখন বললেন, হিন্দু সেখানে না থাকলেও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হিন্দুর জন্য মসজিদের জায়গা ছাড়ার কথা বলেছেন। কারণ বলতে তার গলায় আটকায়নি। তথ্য তিনি সৃষ্টি করতে পারেন। আসলে তিনি যথেষ্ট সংযমীও। দলের জন্য, দলীয় আদর্শের মাহাত্ম বুঝানোর জন্য নবীর ওপর, ইসলামের ওপর মিথ্যা আরোপ করতে তার যেহেতু বাধেনি তাহলে তিনি তো আরও কঠোর কথাও বলতে পারতেন।  সেটা তিনি বলেননি। তাই তার সংযমের মূল্য দেওয়া উচিত। তিনি তো বলতে পারতেন-নবীর যুগে সবাই জয়বাংলা শ্লোগান দিত।

সাহাবীদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ পছন্দ করতেন। এরকম আরও বহু অশ্রুতপূর্ব ও নব-আবিষ্কৃত কথা তিনি বলতে পারতেন। তার ইচ্ছাই যথেষ্ট ছিল। সত্য-মিথ্যা, ভালো-মন্দ, সভ্যতা-ভব্যতা কোনো ব্যাপার ছিল না। কিন্তু তিনি বলেননি। তার মানে ইতিহাসের ওপর কিছুটা দয়া তিনি করেছেন। এজন্য বাংলাদেশী মুসলমানদের তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।

নানাজনের নানা কথায় আমরা কান দিতে চাই না। আমরা শুধু বলতে পারি, দলের পচা আদর্শকে ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুলেও সেটা তাজা হয়ে উঠবে না। এজন্য ভুয়া ও ধৃষ্টতাপূর্ণ কোনো চেষ্টা কারো করা উচিত নয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও বায়তুল মুকাররমের বুকের উপর দাঁড়িয়ে ইসলাম নিয়ে এ ধরনের গর্হিত কাজের সুযোগ কেউ পেতে পারে না। এরপরও এ জাতীয় সুযোগ যারা দেয় এবং যারা নেয় তাদের কারো পরিণতি ভালো হতে পারে না।

 

 

 

advertisement