সব পেয়েছির দেশ?
যদি প্রশ্ন করা হয়, বলুন তো বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে উন্নত দেশ কোনটি। উত্তর আসবে, আমেরিকা। যদি প্রশ্ন করা হয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে কারা এগিয়ে। উত্তর হবে, আমেরিকা। এমনকি যদি প্রশ্ন করা হয়, সভ্যতা ও মানবাধিকার চর্চায় কারা এক নম্বর। তাহলেও অনেকে বলবেন, আমেরিকা।
বাংলাদেশের অনেক মানুষের স্বপ্নের দেশ আমেরিকা। ঐ দেশে যেতে পারলে অনেকেরই জীবন ধন্য হয়ে যায়। আর কত মানুষ তো আমেরিকায় যেতে না পারার দুঃখ নিয়েই পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। ওরা আমেরিকাকে ভালবাসে। ওদের কাছে আমেরিকা মানে সব পেয়েছির দেশ।
এদেশের যারা বেশি বেশি দেশপ্রেমের কথা বলে তাদের অনেকেরই ভবিষ্যত-নিবাস আমেরিকা। কিন্তু কী আছে আমেরিকায়? কেমন আছে আমেরিকানরা?
সত্যিই যদি ঐ দেশটি হয় মানবাধিকারের দেশ তাহলে কেন হয় ওয়ালস্ট্রিট-আন্দোলন? খোদ মার্কিনীরাই কেন খুশি নয় তাদের অর্থব্যবস্থা ও সমাজ-ব্যবস্থার উপর?
অর্থব্যবস্থা ও সমাজ-ব্যবস্থা তো অনেক বড় বিষয়। এটার কথা না হয় বাদই দিলাম। ব্যক্তিজীবন ও পরিবার জীবনে কেমন আছে সে দেশের লোকেরা?
একজন খ্যাতিমান মার্কিন লেখক মাইকেল প্যারেন্টি ‘আগলি ট্রুথ’ নামে একটি বই লিখেছেন। তাতে তিনি বলেন, ‘মার্কিন মহিলাদের মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহৎ কারণ ঘরোয়া সহিংসতা। নবজাতকদের একটি বিরাট অংশ জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্ম নেয়। এর প্রধান কারণ অপুষ্টি, গর্ভকালীন পরিচর্যার অভাব, পরিবেশ দূষণ ও মাদকাসক্তি।’
সম্প্রতি (১৬ ডিসেম্বর ’১১) দৈনিক প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে, যার শিরোনাম, ‘যুক্তরাষ্ট্রে নারী নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র’। প্রতিবেদনের তথ্যগুলো সত্য হলে বলতে হবে, ভোগ ও বিকৃতির রাজ্য আমেরিকায় ছেলে-মেয়ে, নারী-শিশু কেউ নিরাপদ নয় এবং কোথাও নিরাপদ নয়; নিজের পরিবারেও নয়, আত্মীয়-স্বজনের কাছেও নয়।
প্রতিবেদনটি হুবহু তুলে দিচ্ছি।
‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় প্রতি পাঁচজন নারীর মধ্যে একজন জীবনে অন্তত একবার যৌন নিপীড়নের শিকার হন। আর প্রতি চারজন নারীর মধ্যে একজন স্বামী বা স্বজনদের হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। যুক্তরাষ্ট্রের এক জরিপে নারীর প্রতি সহিংসতার এ চিত্র বের হয়ে আসে। গত বুধবার এ জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা-ভিত্তিক ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ এ জরিপ চালায়।
‘জরিপে অংশ নেওয়া এক শতাংশ নারী বলেছেন, তাঁরা গত এক বছরের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। জরিপে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে বছরে ১৩ লাখ নারী ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের শিকার হন।
‘জরিপে পুরুষদের প্রতি পীড়নেরও ভয়াবহ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সাতজন পুরুষের মধ্যে একজন স্বজন কর্তৃক পীড়নের শিকার। প্রতি ৭১জন পুরুষের মধ্যে একজন যৌন নিপীড়নের শিকার। জরিপে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশই ১১ বছর বয়সের আগে ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
‘পীড়নের শিকার যুক্তরাষ্ট্রের এসব নারী-পুরুষের মধ্যে স্বাস্থ্যগত বিপর্যয় লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। নারীদের মধ্যে যাঁরা পীড়নের শিকার তাঁদের মধ্যে হাঁপানি, ডায়াবেটিস, মানসিক অসুস্থতাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যার হার বেশি। এসব নারী-পুরুষ ক্রমাগত মাথাব্যথা, নিদ্রাহীনতা ও কাজকর্মে অনীহায় ভোগেন।
ফিউচার উইদাউট ভায়োল্যান্স নামে মার্কিন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পরিচালক লিসা জেমস বলেছেন, পীড়নের শিকার নারী-পুরুষেরা জটিল স্বাস্থ্যসমস্যার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সহিংস দাম্পত্যজীবনে নারীদের মধ্যে ধূমপানের মাত্রা বেশি।
‘মার্কিন সরকারের জরিপে দেখা গেছে, অল্প বয়সীরাই বেশি যৌন পীড়নের শিকার হচ্ছে। পীড়নের শিকারদের মধ্যে ২৮ শতাংশ পুরুষ জানিয়েছে, ১০ বছর বয়সের আগেই তারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। নারীদের বেলায় তা ১২ শতাংশ। পীড়নের শিকারদের মধ্যে অর্ধেক ১৮ বছর বয়সে এবং ৮০ ভাগ ২৫ বছর বয়সের আগেই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
‘ধর্ষণের শিকার নারীদের মধ্যে যাঁরা অল্প বয়সে পীড়নের শিকার হয়েছেন তাঁদের ৩৫ শতাংশ পূর্ণ বয়স্ক হওয়ার পর পুনরায় যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।
সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-এর পরিচালক লিনডা ডিগাটিস বলেছেন, নারীদের যৌন পীড়নের শিকারসংক্রান্ত প্রাপ্ত তথ্য রীতিমতো ধারণার বাইরে।’
সত্যিই আমেরিকার প্রকৃত চিত্র আমাদের অনেকেরই ধারণার বাইরে।