উম্মাহঃ বন্ধ-খোলার খেলা!
খসরূ খান
ইহুদী মালিকানাধীন বিশ্ব সংবাদ সংস'া রয়টার্সের একটি খবর ১৮ জুলাই ঢাকার বিভিন্ন সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। সে খবরে দেখা যাচ্ছে, গুয়ান-ানামোবে কারাগার খোলা রেখে বন্দিদের বিচার ও শাসি- দেওয়ার একটি আবেদন জানিয়েছেন ৯/১১ হামলায় নিহতদের কয়েক স্বজন। এই বন্দি শিবিরে বন্দি নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রক্ষার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামা শিবিরটি আগামী জানুয়ারির মধ্যেই বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন' ৯/১১ হামলায় ছেলে হারানো এক পিতা ও মাতা গুয়ান-ানামোবে খোলা রাখার আবেদন জানিয়েছেন। তারা অনেকটা আবেগাক্রান- স্বরেই বন্দি শিবিরটিকে চালু রেখে বিচার ও শাসি-র ব্যবস'া করতে বিভিন্ন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।
রয়টার্সের প্রকাশিত খবরে ৯/১১ হামলায় নিহতদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের যে প্রয়াসটি ফুটে ওঠেছে তাতে মনে হতে পারে, ৯/১১ হামলার ব্যাপারে সব প্রমাণ ও বিচারের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। চূড়ান-ভাবে দোষী সাব্যস- ব্যক্তিদেরই গুয়ান-ানামোবেতে ধরে এনে রাখা হয়েছে এবং এভাবেই এদের ধরে রেখে অমানবিক উপায়ে শাসি- দিতে না থাকলে ৯/১১ হামলায় নিহতদের স্বজনরা ভীষণ মুষড়ে পড়বেন। অথচ বাস-বতা এ রকম নয়। গুয়ান-ানামোবের সব বন্দিই সন্দেহের শিকার কিংবা অভিযুক্ত। সবাই প্রায় মুসলিম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ধরে ধরে এনে তাদেরকে এই বন্দি শিবিরে আটকে রেখে চরম অমানবিক উপায়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো আত্মস্বার্থপুজারী দেশেও এই বন্দি শিবিরটিকে বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলে ওবামা ভোটে নির্বাচিত হয়ে গেছেন। এর পেছনে অমানবিকতা, নির্যাতন, পৃথিবীব্যাপী মার্কিন স্বার্থের ঝুঁকি এবং চরম মানবাধিকার বিপর্যয়ের কত করুণ ও নির্মম কাহিনী থাকলে সেটা সম্ভব হতে পারে-তা সহজেই বোঝা যায়।
রয়টার্সের সেই রিপোর্টে গুয়ান-ানামোবেতে চলে আসা অমানুষিক বর্বরতার কোনো বিবরণ নেই। স্বজন হারানোরা তো বিচার ও শাসি- চাইতেই পারেন। এর জন্য তো সহানুভূতি থাকতেই পারে; বরং সেটাই উচিত। কিন' সত্য হচ্ছে, দীর্ঘ প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে ফিলিস-ীনে নিহত লাখো মানুষের স্বজনদের আহাজারির কথা রয়টার্সের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো তুলে ধরে না। তারাও যে বিচার চাইতে পারেন, তারাও যে হন-ারকদের শাসি- ও মৃত্যু কামনা করতে পারেন, তাদের সেই চাওয়া ও কামনাও যে সহানুভূতিযোগ্য-এ সত্য আড়াল করার চেষ্টায় দুনিয়ার সেরা সেরা
সংবাদমাধ্যমগুলো এখন তাদের কসরত ব্যয় করছে। কিন' এভাবে কি মিথ্যার প্রাসাদে সত্যের আলো জ্বলে উঠবে? ইরাক ও আফগানিস-ানে লাখ লাখ মানুষ খুনের বিচার ও শাসি-র জন্য যখন বানানো কিংবা তাৎক্ষণিক ও অন্যরকম কোনো গুয়ান-ানামোবে সৃষ্টি হবে বা হয়ে যায় তখন তার জন্যও কি স্বজনহারাদের প্রত্যাশায় কোনো দোলা লাগে না? লাগতে পারে না?
পৃথিবীর সব মানুষের চোখ একসঙ্গে অন্ধ হয়ে যায় না, সব বিবেকের দরজা অভিন্ন মুহূর্তে লক হতে পারে না। আন-র্জাতিক টাউট সংবাদমাধ্যমগুলো ছাই ছিটিয়ে চললেও বাস-বতা যারা বুঝতে চেষ্টা করে তারা একটু ভিন্নভাবেই চিন-া করে থাকে। গুয়ান-ানামোবে কে বন্ধ করতে চাইল, আর সেজন্য কারা ক্ষুব্ধ হতে চাইল-সে খবরের চেয়ে অনেক বড় খবর হচ্ছে এসব কৃত্রিম জেল আর জেলারদের অসি-ত্বের শেকড়েই এখন টান পড়তে শুরু করেছে। তারা যা করবে নিজেদের বাঁচার এবং বাঁচানোর জন্যই হয়তো করবে। কারণ স্বজন তো সবারই আছে, চোখের পানিও সব চোখের আছে, হৃদয়ে মমতা ও ক্ষোভের আগুন পোষার ক্ষমতাও সব হৃদয়ের আছে। রয়টার্স গোষ্ঠী কেবল একদিকেরটা দেখালেই সব একদিকের হয়ে যায় না। অন্যদিক ও দিগনে-র করুণ চিত্রটিও অক্ষুণ্ন থেকে যায়।