সফর-১৪৩৩   ||   জানুয়ারি-২০১২

সিলেটের মাইমল সমাজ : ঐতিহ্য সত্ত্বেও উপেক্ষিত-২

মাওলানা আবদুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী

আবদুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

শেখ সিকান্দার আলী আরেক দিক থেকে এক অনন্যসাধারণ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তিনি জীবনে কোনোদিন কোনো শিক্ষাগারে গিয়ে বিদ্যাভ্যাস না করেও এমনি স্বশিক্ষিত হয়ে উঠেছিলেন যে, সে যুগেই তিনি একটি পশ্চাৎপদ সমাজকে উন্নত করার জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেছেন ১৯৪০ সালে। পত্রিকাটির নাম ছিল আলজালাল। এটি প্রথমে তদানীন্তন আসাম প্রদেশের মুসলিম মৎস্যজীবী সমাজের মুখপত্ররূপে প্রকাশিত হলেও কলকাতাসহ উভয় বাংলার মুসলিম-অমুসলিম মৎস্যজীবী সমাজ এতে অত্যন্ত উৎসাহিত হয় এবং সকলের অনুরোধে পরে তার পরিচিতিতে বাংলা ও আসামের মৎস্যজীবী সমাজের মুখপত্র ব্যবহার করে তা প্রকাশিত হত। ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত এ পত্রিকাটি চলেছিল। পরে অর্থাভাবে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়।

আজ থেকে সত্তর বছর পূর্বে যখন দেশে শিক্ষিত লোকের হার ৪% বা ৫% এর বেশি ছিল না তখন অনুন্নত আসাম প্রদেশের একটি জেলা শহর থেকে (তখন সিলেট আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল) এমন উঁচু চিন্তা ও উঁচু মানের পত্রিকা একজন একাডেমিক শিক্ষাহীন লোকের সম্পাদনায় প্রকাশ ছিল রীতিমতো অচিন্তনীয় ব্যাপার। অনেক উচ্চ শিক্ষিত লোক নামে বে-নামে এ পত্রিকায় লিখতেন।

এরূপ আরো একজন মাত্র কৃতি লোকের দেখা আমি ১৯৮০ সালে আমার ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়ায় সরকারী সফরের সময় জাকার্তায় পেয়েছিলাম-যিনি একাডেমিক ডিগ্রি ছাড়াই প্রেসিডেন্ট আহমদ সুকর্ণসহ গোটা ইন্দোনেশিয়ায় জাতির লোকদের মুখে বুইয়া হামকা বা পিতা বলে পরিকীর্তিত হতেন। তাঁর পূর্ণ নাম ছিল হাজী আমরুল্লাহ আবদুল করীম, যিনি ১০,০০০ পৃষ্ঠায় ইন্দোনেশিয় ভাষায় আলকুরআনের তাফসীর লিখে মিসরের আলআযহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছিলেন। সিলেটের মাইমল সমাজের কৃতী সন্তান শেখ সিকান্দার আলীর তুলনা কেবল তাঁরই সাথে হতে পারে।

কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও আজীবন তিনি এর নির্বাহী পরিষদের সদস্য, অনেকবার সহ-সভাপতি এবং পরবর্তীতে পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ফলে সংসদের বার্ষিক প্রতিবেদনসমূহে অনেক দেওয়ান, চৌধুরী ও উচ্চ শিক্ষিত পদস্থ ব্যক্তির উপরেই থাকত শেখ সিকান্দার আলীর নাম। এটা যে কত বড় প্রাপ্তি ও স্বীকৃতি তা ঐ যুগের সিলেটের সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে যাদের ধারণা নেই তারা  কল্পনাও করতে পারবেন না।

এরচেয়েও এ সমাজের বড় আরেকটা কীর্তি বা প্রাপ্তি হচ্ছে, দীর্ঘ পৌনে এক শতাব্দীকাল আসাম প্রদেশের একটি জেলারূপে থাকার পর গণভোটের মাধ্যমে ১৯৪৭ সালে তা পূর্ব পাকিস্তানভুক্ত করার ব্যাপারে মৎস্যজীবী সমাজের অবদান। তাদের নেতৃত্বে, কর্তৃত্বে এবং সর্বাত্মক সমর্থনে সে উদ্দেশ্যটি সফল হওয়ায় সিলেট আজ বাংলাদেশের প্রধান অর্থ উপার্জনকারী জেলা ও বিভাগরূপে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারছে।

দেওবন্দ দারুল উলূমের সদরুল মুদাররিসীন ও নিখিল ভারত জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ নামক সক্রিয় রাজনৈতিক সংগঠনের সভাপতি শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী রহ.-এর অপ্রতিহত দাপট ছিল সিলেটে। তিনি ও তার দল জমিয়তুল উলামা মুসলিম লীগ ও কায়েদে আজম মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্ব ও পাকিস্তান দাবির ঘোর বিরোধী ছিলেন। তাঁরা ভারতবর্ষের বিভক্তির মাধ্যমে নতুন মুসলিমরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে বৃহত্তর মুসলিম স্বার্থের পরিপন্থী ও আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত বলে মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন। এমতাবস্থায় গণভোটে সিলেটের মুসলিম সমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে পাকিস্তানের সপক্ষে দাঁড় করানো ছিল একটি অসম্ভব ব্যাপার। ভারতবর্ষের নামীদামী আলেমগণ এ মতে বিশ্বাসী ছিলেন। এর বিপক্ষে হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. ছিলেন পাকিস্তানের পক্ষে। তাঁরই শিষ্য ও মুরীদ মাওলানা আবদুর রশীদ টুকের বাজারীর সমর্থন ও সক্রিয় ভূমিকা মুসলিম লীগের জন্য অপরিহার্য ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সমাপ্তি পর্যন্ত দীর্ঘ ১২/১৩ বছর তিনি নিরন্তর ইবাদত-বন্দেগীর উদ্দেশ্যে নির্জন খানকায় আত্মবন্দি ছিলেন।

১৯৩৬ সালে কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর মুসলিম লীগ অভিজাত মুসলিম নেতাদের বৈঠকখানার সীমানা ডিঙিয়ে আম মুসলিম জনতার সংগঠনে পরিবর্তিত হয়। ঐ বছর সিলেটের পূর্বোল্লেখিত শেখঘাটের শেখ সিকান্দার আলীও মুসলিম লীগে যোগদান করেন। তিনি ছিলেন সিলেট জেলার মুসলিম মৎস্যজীবী সমিতি ও মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর দূরদর্শী নজর পড়ে মাওলানা আবদুর রশীদ মরহুমের উপর। মুসলিম মৎস্যজীবী সমাজের পশ্চাৎপদতা ও দুরবস্থার দিকে তিনি মাওলানা আবদুর রশীদের সহানুভূতিপূর্ণ দৃষ্টি আকর্ষণ করে সিলেট জেলার মুসলিম মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি পদ গ্রহণে তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেন। তারপর কায়েদে আজমের বামহস্ত বলে মশহুর আসামের মন্ত্রী ও নিখিল ভারত মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা ভাদেশ্বরের আবদুল মতিন চৌধুরী, আসামের অপর দুই মন্ত্রী সুনামগঞ্জের মুনাওয়ার আলী ও পাঠানটোলার মওলবী আবদুল হামীদ (পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তানের নূরুল আমীন মন্ত্রীসভার শিক্ষামন্ত্রী) প্রমুখ প্রভাবশালী মুসলিম লীগ নেতাদেরকে নিয়ে টুকের বাজার সংলগ্ন টুকের গাওঁ-এ অবস্থিত মাওলানা আবদুর রশীদ (রহ.)এর বাড়িতে এসে মুসলিম লীগের উত্তর সিলেট মহকুমার (বর্তমান সিলেট জেলার) সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তাব দেন। তাঁদের সাথে ছিল পাকিস্তানের পক্ষে প্রদত্ত মাওলানা থানভীর বিখ্যাত তানযিমুল মুসলিমীন শীর্ষক বিখ্যাত ফতোয়াটির কপি। যাঁর শিষ্যত্বে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় তিনি আধ্যাত্মিক সাধনা চালিয়ে গেছেন সেই মাওলানা থানভীর ফতোয়া হাতে পাওয়ার পর তাঁর আর ওযরখাহী করার উপায় ছিল না। সেই যে ১৯৪২-৪৩ সালের দিকে তিনি ঐ প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব নিলেন তারপর দীর্ঘ কুড়ি বছর পর্যন্ত যত দিন তিনি কর্মক্ষম ছিলেন সে দায়িত্ব অবিরাম পালন করে যান।

১৯৪৬ সালের গণভোটকে উপলক্ষ করে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ ব্যতিক্রমস্বরূপ এই উত্তর সিলেট মুসলিম লীগ মহকুমা এবং সাথে সাথে কলকাতা মহানগরী মুসলিম লীগকে পূর্ণ জেলা মুসলিম লীগের মর্যাদা দান করেছিল। কলকাতা মুসলিম লীগের সেক্রেটারি ছিলেন আল্লামা রাগিব আহসান আর সিলেট মুসলিম লীগের সভাপতি মাওলানা আবদুর রশীদ। সমগ্র বাংলাদেশের তো বটেই নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অনেক জাঁদরেল নেতাই তখন সিলেটের গণভোট উপলক্ষে সিলেটে প্রচার অভিযানে এসেছিলেন। আলস্নামা যাফর আহমদ উছমানী (রহ.), হযরত মাওলানা আবদুল হাই সিদ্দীকী (পীর সাহেব ফুরফুরা) ,হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.) এবং তাঁর সাথী ভলন্টিয়াররূপে মাওলানা আবূ জাফর সালেহ (পীর সাহেব শর্ষিণা) ও মাওলানা আযীযুর রহমান (কায়েদ সাহেব হুযুর রহ.)শাহ আজীজুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, সিলেটের (পরবর্তীতে) বিচারপতি এটি এম মাসুদ, মুসলিম লীগ নেতা আজমল চৌধুরী (পরবর্তীতে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী), জি. এ. খান সদ্যপ্রয়াত দেওয়ান ফরীদ গাজি, এডভোকেট জসীমুদ্দীন (বিখ্যাত আওয়ামী লীগ নেতা ও পরবর্তীতে পূর্বপাকিসানের সর্বশেষ মন্ত্রীসভার মন্ত্রী) আবদুস সামাদ আজাদ মরহুম, বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহীত প্রমুখ তখন উদ্যমী ছাত্রনেতারূপে ঐ গণভোটের কর্মী ছিলেন।

মাওলানা ভাসানী, আবুল হাশিম, সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আকরম খাঁ, মওলবী তমীযুদ্দীন (পরবর্তীতে পাকিস্তান গণ পরিষদের স্পিকার) আলস্নামা যাফর আহমদ উছমানী (রহ.), হযরত মাওলানা আবদুল হাই সিদ্দীকী (পীর সাহেব ফুরফুরা) এবং তাঁর সাথী ভলন্টিয়াররূপে মাওলানা আবূজাফর সালেহ(পীর সাহেব শর্ষিণা) ও মাওলানা আযীযুর রহমান (কায়েদ সাহেব হুযুর রহ.) হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.) উলেস্নখযোগ্য প্রায় সকলেই তখন সিলেটের গণভোটের প্রচার অভিযানে শরিক হয়েছিলেন। মৌলবী তমীযুদ্দীন খান তো তখন বেশ কয়েকদিন সিলেট শহরের পরিবর্তে পাঁচমাইল দূরবর্তী মাওলানা সাহেবের বাড়িতেই অবস্থান করে প্রচার অভিযান চালাচ্ছিলেন।

মাওলানা আবদুর রশীদ কেবল মুসলিম লীগের সভাপতিত্বই গ্রহণ করলেন না, একটি পবিত্র ধর্মীয় কর্তব্যজ্ঞানে তিনি জানমালের কুরবানি দিতেও সর্বাগ্রে এগিয়ে আসেন। তিনি মাওলানা থানভীর পূর্বোক্ত বিখ্যাত তানযীমুল মুসলিমীন ফতোয়ার বঙ্গানুবাদ করে তাহকীমুল মুসলিমীন নামে নিজ খরচে ছেপে ব্যাপকভাবে প্রচার করে পাকিস্তানের পক্ষে জনমত গঠনে অসামান্য সফলতা অর্জন করেন। সিলেট বিশেষজ্ঞ বন্ধুবর দেওয়ান নূরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরী তাঁর মাসিক অগ্রপথিকের কোনো এক সংখ্যায় প্রকাশিত তাঁর ‘‘সিলেটের গণভোট’’ প্রবন্ধে (পরবর্তীতে পুস্তাকারে প্রকাশিত হয়েছে) এ কথাটির উল্লেখ করেছেন এভাবে-‘‘উত্তর সিলেট মুসলিম লীগের সভাপতি নিজ ব্যয়ে তার অনূদিত মাওলানা থানভীর তানযীমুল মুসলিমীন ফতোয়ার অনুবাদ পুস্তক ছেপে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন।’’ কিন্তু ঐ সভাপতি যে ছিলেন পূর্বোল্লেখিত তালুকদার বংশীয় সিলেট জেলা মুসলিম মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মাওলানা আবদুর রশীদ টুকের বাজারী এ তথ্য ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় তিনি চেপে যান। এমনকি বন্ধুবর তার সিলেট সংক্রান্ত সর্বশেষ পুস্তক সিলেট বিভাগের ইতিহাসেও ফতোয়াটির কথা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু  পূর্বের অকুণ্ঠ স্বীকৃতির সাথে নয়। অবশ্য সি আবদুল ওয়াহিদ মরহুম তঁর ‘‘সিলেটের গণভোট’’ গ্রন্থে উল্লেখযোগ্য-অনুল্লেখযোগ্য অনেকের সাথে মাওলানা আবদুর রশীদ (টুকের বাজারী)-এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু ঐ ঝঞ্ঝাবিমুখ রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিততে তিনি যেভাবে ত্যাগের প্রতিমূর্তি হয়ে জান-মালের কুরবানি দিতে এগিয়ে এসেছিলেন সেভাবে তাঁর নামটি কারো রচনায়ই উঠে আসেনি।

মাওলানা আবদুর রশীদ মরহুম আমার পিতামহের আপন ভাতিজা। অর্থাৎ তিনি আমার পিতার চাচাতো ভাই। বয়সে তিনি আমার আববা থেকে ১০/১২ বছর কনিষ্ঠ ছিলেন। বিগত শতকের আশির দশকের মাঝামাঝিতে নিঃসন্তান অবস্থায় অত্যন্ত জরাজীর্ণ বয়সে (প্রায় ৯৫ বছর) তিনি ইন্তেকাল করেন। কবি মাহমুদ লশকর, মরহুম ফযলুর রহমান দেওয়ান, নূরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরী প্রমুখ শুভাকাঙ্খী লেখক বন্ধু ও মুরববীগণ তাঁর সম্পর্কে আমার লেখালেখি নেই কেন এ প্রশ্নটি অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গেই করেন। আসল কথা হল, তাঁর পূর্ণ কর্মজীবনে যখন তিনি গণভোট ও পাকিস্তান আন্দোলনে গৌরবময় ভূমিকা রেখেছিলেন তখন আমার বয়স একান্তই কম ছিল। কায়েদে আজম মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুর তারিখ (১১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮) পাঠানটোলার মৌলবী আবদুল হামিদ (মন্ত্রী) চাচাজানের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন তা বেশ মনে আছে। এর বছর দুয়েক আগে লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান শ্লোগান নিয়ে তাঁর নেতৃত্বে মিছিল দেখেছি। এর বছর তিনেক পরে ১৯৫০/৫১ এর দিকে পাকিস্তানের গভর্ণর জেনারেল হিসেবে খাজা নাজিমুদ্দীন সিলেট আসলে তাঁরই সভাপতিত্বে হায়দরপুরের দানবীর হাজী আবদস সাত্তার উরফে মুতলিব হাজী সাহেবের বাড়ির প্রাঙ্গনে বিশাল জনসভা প্রভৃতি স্বচক্ষে দেখেছি মনে পড়ে। কিন্তু ঐ সমস্ত কর্মকারে মূল্যায়ন করার বয়স তখন আমার ছিল না। যখন বয়স হল, লেখালেখি শুরু করলাম. তখন তাঁর আর স্মৃতিচারণের তেমন শক্তি ছিল না। কিন্তু নিজে বলেছেন, গণভোট ও পাকিস্তান আন্দোলনের পক্ষে প্রচারণার সুবিধার্থে ভারতবিখ্যাত আলেম ভাগলপুরের মাওলানা সহুল উসমানীকে সিলেট নিয়ে আসাটা তখন খুবই জরুরি বিবেচিত হল। কিন্তু এই শেষ বয়সে তিনি পরিবার-পরিজন ছাড়া আসতে সম্মত হলেন না। তাঁকে সপরিবারে সিলেট আনার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল প্রেরণ এবং তাঁর পরিবারবর্গকে আনার জন্য যে প্রচুর অর্থের দরকার সে রকম কোনো ফা ও সিলেট মুসলিম লীগের ছিল না। অগত্যা তিনি ঘোষণা করলেন, আমি একাই সে বিপুল ব্যয়ের অর্ধেক বহন করব। বাকিটা মুসলিম লীগের অন্য নেতাগণ (মানে দেওয়ান, চৌধুরী, জায়গীরদার সাহেবগণ) দিন। অবশেষে সে মতেই কাজ হল। মাওলানা সহুল উসমানী (রহ,) সপরিবারে সিলেট এসে দীর্ঘ দিন পর্যন্ত অবস্থান করে পাকিস্তান আন্দোলনকে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে বিশাল ভূমিকা পালন করেন। তাঁর নিজের পক্ষ থেকে একটি ফতোয়াও সিলেটের শাহ আবু তুবাব মসজিদের ইমাম ও সিলেট জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সেক্রেটারি মাওলানা ওয়াছিফ উল্লাহ কর্তৃক প্রচারিত হয়ে বিরাট অবদান রাখে।

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

 

 

advertisement