নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে নারীর জিজ্ঞাসা ও নারীর বিষয়ে জিজ্ঞাসা
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
সালাত-প্রসঙ্গ
নামাযের পোশাক
উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালাম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, নারী কি ইযার ছাড়া শুধু একটি চাদর ও ওড়না পরে নামায পড়তে পারে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, চাদর যদি এত লম্বা হয় যে, তার পায়ের পাতাও ঢেকে যায় (তাহলে ইযার ছাড়াও নামায সহীহ হবে)।-সুনানে আবু দাউদ ১/৯৪
মহিলারা নিজের ঘরে নামায পড়বে
হযরত উম্মে হুমাইদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার ইচ্ছে হয় আপনার সাথে নামায পড়ি। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি জানি, তুমি আমার সাথে নামায পড়তে আগ্রহী। তবে (জেনে রেখ) নিজের ঘরের নিভৃত কোণে নামায পড়া তোমার জন্য বারান্দায় নামায পড়া থেকে উত্তম। বারান্দায় নামায পড়া উঠোনে নামায পড়া থেকে উত্তম। নিজ বাড়িতে নামায পড়া মহল্লার মসজিদে নামায পড়া থেকে উত্তম। আর মহল্লার মসজিদে নামায পড়া আমার মসজিদে এসে নামায পড়া থেকে উত্তম। বর্ণনাকারী বলেন, (একথার পরে) উম্মে হুমাইদ রা. তার গৃহের সবচেয়ে নির্জন ও অন্ধকার স্থানে তার জন্য নামাযের জায়গা তৈরির আদেশ করেন এবং সে স্থানেই নামায আদায় করতে থাকেন। এ অবস্থাতেই তিনি আল্লাহ তাআলা সান্নিধ্যে চলে যান।-মুসনাদে আহমদ ৬/৩৭১
ফায়েদা : মসজিদে নববীতে নামায আদায়ের ফযীলত সবারই জানা আছে। সেখানে এক নামাযের ছওয়াব মসজিদুল হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদের এক হাজার নামাযের সমান গুণ। আর স্বয়ং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে জামাতে নামায পড়ার ফযীলত যে কত বেশি তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে তাঁর পিছনে নামায পড়ার চেয়েও মহিলাদের জন্য নিজের ঘরে নামায পড়াকে উত্তম বলেছেন। এ হাদীসে অনুত্তম হলেও নারীর মসজিদে এসে নামায আদায়ের যে অনুমতির দিকটি রয়েছে, অন্যান্য হাদীস ও শরীয়তের নীতিমালা থেকে বোঝা যায়, এ অনুমতিরও বেশ কিছু শর্ত রয়েছে, যা বর্তমান সময়ে পুরোপুরি পালন করা হয় না। বর্তমান যুগের কথা তো বলাই বাহুল্য, খায়রুল কুরূনেও এ বিষয়ে শিথিলতা শুরু হয়েছিল, যার কারণে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দীকা রা. বলেছিলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি আজকের মেয়েদের আচরণ (সজ্জাপ্রিয়তা) দেখতেন, তাহলে তাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করে দিতেন, যেমন বনী ইসরাইলের নারীদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল।নামাযে এদিক সেদিক তাকানো
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা. বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নামাযে এদিক সেদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এ হ ল ছিনতাই, বান্দার নামাযের কিছু অংশ শয়তান ছিনিয়ে নিল।-সহীহ বুখারী ১/১০৪
বিশেষ নামায
হযরত উম্মে সালামা রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের নামায পড়ে আমার ঘরে এলেন এবং দুই রাকাত নামায পড়লেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আজ এমন একটি নামায পড়েছেন, যা সাধারণত পড়েন না। তিনি বললেন, আমার কাছে (গনীমতের) কিছু সম্পদ এসেছিল (সেগুলো বণ্টন করতে গিয়ে) যোহরের পরের দুই রাকাত নামায পড়তে পারিনি। সেই দুই রাকাত নামায এখন পড়ে নিলাম। উম্মে সালামা রা. জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদেরও যদি কখনো এই দুই রাকাত নামায ছুটে যায় আমরাও কি তা কাযা করব? তিনি বললেন, না।-মুসনাদে আহমদ ৬/৩১৫
যাকাত-সদাকা
হযরত উম্মে সালামা রা. স্বর্ণের কিছু গয়না পরতেন। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, এগুলো কি ‘কানয’ বলে গণ্য হবে? উত্তরে তিনি বললেন, যদি তুমি এর যাকাত আদায় কর তাহলে তা ‘কানয’ নয়।-মুসতাদরাকে হাকেম ১/৫৪৭
ফায়েদা : এখানে কানয বলে সূরা তাওবার আয়াতের দিকে ইশারা করা হয়েছে। আয়াতটি এই, (তরজমা) আর যরা স্বর্ণ ও রূপা পুঞ্জীভুত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও। (সূরা তাওবা : ৩৪)
হযরত আসমা বিনতে আবু বকর রা. বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার স্বামী যুবাইরের দেওয়া সামান্য কিছু সম্পদ ছাড়া আমার আর কোনো সম্পদ নেই। আমি কি তা সদকা করতে পারি? তিনি বললেন, তুমি দান কর, হিসাব করো না। নতুবা তোমাকে দেওয়ার ক্ষেত্রেও হিসাব করা হবে।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ২৫৯০
আত্মীয়স্বজনের জন্য খরচ করা
হযরত উম্মে সালামা রা. বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যদি আমার স্বামী আবু সালামা রা.-এর সন্তানদের জন্য ব্যয় করি তাহলে কি আমার ছওয়াব হবে, তারা তো আমারও সন্তান। তিনি বললেন, তাদের জন্যও খরচ কর; এর ছওয়াবও তুমি পাবে।-সহীহ বুখারী ১/১৯৮
আত্মীয়স্বজনকে নফল দান করা
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আযহার মাঠে মহিলাদেরকে সদকা করতে উদ্বুদ্ধ করলেন। ওয়াজ শেষে যখন ঘরে ফিরলেন তখন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর স্ত্রী যায়নাব রা. এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সদকা করার আদেশ করেছেন। আমার কাছে একটি গয়না ছিল আমি তা সদকা করার ইচ্ছা করেছি, কিন্তু আমার স্বামী আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলছেন, তিনি ও তার সন্তানরা এই দানের বেশি হকদার। রাসূলুল্লাহ বললেন, ইবনে মাসউদ ঠিকই বলেছেন। তোমার স্বামী ও সন্তানরাই তোমার দানের বেশি হকদার।-সহীহ বুখারী ১/১৯৭
মৃতের পক্ষ থেকে সদকা করা
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল যে, আমার মা হঠাৎ মারা গেছেন। আমার ধারণা, তিনি যদি কথা বলতে পারতেন তাহলে সদকা করতেন (অর্থাৎ সদকা করার কথা বলতেন) এখন আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি তাহলে কি তিনি এর ছওয়াব পাবেন? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ।-মুসনাদে আহমদ ১৭/২৭২
(চলবে ইনশাআল্লাহ)