তাবলীগী জামাতসমূহের প্রতি বিদায়ী হেদায়েত ও নির্দেশনা
কলকাতার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল মোগরাহাটে একটি ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ইজতেমার শেষ দিন তাশকীল শেষ হওয়ার পর যখন জামাতগুলোর রুখসতের সময় হল তখন হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ কান্ধলভী রাহ. যথারীতি হেদায়েতি কথা বললেন। হযরত মাওলানা মনযূর নুমানী রাহ. কথাগুলো সংক্ষেপে নোট করেছিলেন। পরে তা সাজিয়ে লেখেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য-এই গোটা আলোচনার বিষয়বস্ত্ত হযরত মাওলানা মারহূমের। তবে ভাষা ও শব্দের বিষয়ে এ দাবি করা যায় না। বর্তমান লেখক ড. আবদুর রাযযাক ইস্কান্দার এ আলোচনায় কিছু শিরোনাম যুক্ত করেছে, যাতে তা ধারণ করা সহজ হয়।
মাসনুন খোতবার পর হযরত বলেন, সূর্য আলোকিত। তাতে আলো আছে। সে যখন এ আলো নিয়ে ঘুরতে থাকে তখন পৃথিবীতে আলো ছড়িয়ে পড়ে। যদি সূর্যের নিজের আলো না থাকত তাহলে তা হত অন্ধকার ছড়ানোর কারণ।
আপনারা ঘর-বাড়ি ছেড়ে বের হচ্ছেন। কাছের-দূরের বিভিন্ন জায়গায় আপনারা ঘুরে বেড়াবেন। যদি আপনাদের মধ্যে আলো থাকে তাহলে আপনাদের মাধ্যমে চারদিকে আলো ছড়াবে আর যদি আপনাদের মধ্যে অন্ধকার থাকে তাহলে চারদিকে অন্ধকার ছড়াবে। এজন্য চেষ্টা করতে হবে যেন আপনাদের মধ্যে নূর ও আলো থাকে এবং আপনারা নূরানী ও আলোকিত হয়ে যান।
সত্ত্বাগতভাবে মানুষের মধ্যে নূর নেই; মানুষের মধ্যে নূর পয়দা হয় নূরানী আমলের দ্বারা। তাই আপনাদেরকে নূরানী আমল করতে হবে। যেন আপনাদের মধ্যেও নূর আসে এবং আপনাদের মাধ্যমে চারদিকে নূর ছড়ায়। তেমনি যেসব কাজে জুলমত ও অন্ধকার আছে তা থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। যেন আপনারা জুলমত ও অন্ধকার ছড়ানোর কারণ না হয়ে যান।
নূরানী আমল
নূরানী আমল হচ্ছে ঐ মুহাম্মাদী আমল, যা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয়। এই আমলগুলো এত বেশি বেশি করা চাই এবং এত নিয়মিত ও একাগ্রতার সাথে করা চাই যে, আপনি ঐ আমলের নূরে নূরানী হয়ে যান।
নূরওয়ালা আমলগুলো এই-
১. ইখলাসের সাথে ঈমান-ইয়াকীনের দাওয়াত দেওয়া, যা আম্বিয়া আ.-এর বিশেষ মীরাছ ও সম্পদ এবং আল্লাহর মাখলুকের প্রতি সবচেয়ে বড় খায়েরখাহী ও কল্যাণকামিতা।
২. নামায ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগী; অর্থাৎ যিকির, তিলাওয়াত, দুআ-ইস্তিগফার ইত্যাদি সকল আমল।
৩. ইলম হাসিলে মশগুল থাকা। বিশেষ করে ঐ ইলম, যার দ্বারা আখিরাতে মানুষের কাজকর্মের কী ফলাফল হবে তা জানা যায়। অর্থাৎ নেক আমলের পুরস্কার ও বদ আমলের শাস্তি সংক্রান্ত ইলম।
৪. উত্তম আখলাক। অর্থাৎ যা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আখলাক ছিল এবং যা তিনি মানবজাতিকে শিখিয়েছেন। যার সারকথা হচ্ছে, আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য মাখলুকের সেবা করা এবং তাদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করা।
এগুলো হচ্ছে এমন কিছু আমল, যা নিয়মিত ও বেশি বেশি করার দ্বারা নূর পয়দা হয় এবং যিন্দেগী নূরানী হয়। সুতরাং আপনাদের কর্তব্য এই আমলগুলোতে মশগুল থেকে দাওয়াতের কাজে চলা।
দুই দুশমন
মনে রাখবেন, আপনারা শুধু নিজেদের ঘরবাড়ি, পরিবার-পরিজন ও নিজস্ব পরিবেশ ছেড়ে বের হচ্ছেন। নফস ও শয়তান আপনাদের সাথেই আছে। এই দুই দুশমন দিনরাতের প্রতি মুহূর্তে আপনার সাথেই থাকবে। আপনার দোষ ও মন্দ প্রবণতাগুলোও আপনার সাথেই যাচ্ছে। এই সবগুলো মিলে আপনাকে এমন কাজের দিকে নিয়ে যেতে চেষ্টা করবে, যার দ্বারা আপনার মধ্যে জুলমত ও অন্ধকার পয়দা হয় এবং আল্লাহ তাআলা থেকে দূরে সরে যান, তাঁর রেযামন্দি থেকে মাহরূম হয়ে যান।
এইসব দুশমন থেকে নিরাপদ থাকার উপায়
এই সব দুশমনের অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় এই যে, আপনি দিনরাতের সকল সময়, শুধু বিশ্রামের ৬/৭ ঘণ্টা ছাড়া, নিজেকে উপরোক্ত নূরানী আমলে ব্যস্ত রাখুন। কিংবা নামায, যিকির, তিলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদতে মশগুল থাকুন। কিংবা ইলম চর্চায় মগ্ন থাকুন কিংবা কোনো খেদমতে নিয়োজিত থাকুন।
আপনাদের জন্য নফস ও শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচার এটাই হল একমাত্র উপায়। প্রবাদ আছে-‘খানায়ে খালি রা দেও মী গিরাদ’ অর্থাৎ বিরান ঘর শয়তানের আস্তানা।
আল্লাহর রেযামন্দি
আর এই আমলগুলো থেকে নূর শুধু তখনই পয়দা হবে যখন তা আল্লাহর রেযামন্দি ও আখিরাতের ছওয়াবের উদ্দেশ্যে করা হবে। আল্লাহ না করুন-যদি নিয়ত খাঁটি ও খালেস না হয় তাহলে এইসব আমলই হবে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ।
হযরত আবু হুরায়রা রা.-এর মশহূর হাদীস-আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন সবার আগে তিন ধরনের মানুষ সম্পর্কে জাহান্নামের ফয়সালা হবে এবং সবার আগে এদেরকেই জাহান্নামে ফেলা হবে। এক. দ্বীন ও কুরআনের ঐ আলিম, যে জীবনভর কুরআন শেখা ও শেখানোর কাজে ব্যস্ত ছিল। দুই. ঐ ধনী ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে অনেক মাল-দৌলত দান করেছিলেন এবং সে এই মাল-দৌলত মুক্ত হস্তে নেক কাজে খরচ করেছে। তিন. ঐ শহীদ, যে জিহাদের ময়দানে শত্রুর তলোয়ারের আঘাতে শাহাদত বরণ করেছে। তাদেকে এজন্য জাহান্নামে ফেলা হবে যে, তারা এসব আমল ইখলাসের সাথে আল্লাহর রেযামন্দির জন্য করেনি। তারা এসব আমল করেছিল দুনিয়াতে নাম-যশ ও ইজ্জত-সম্মানের জন্য।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন যখন এই তিন শ্রেণীর লোককে আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমি সবার মনের অবস্থা জানি। তোমরা এসব নেক আমল ও নূরানী আমল আমার রেযামন্দির জন্য করনি; বরং দুনিয়ার নাম-যশের জন্য করেছিলে। সে নাম-যশ তো তোমরা দুনিয়ায় পেয়েই গেছ। তাই এখানে তোমাদের জন্য কিছু নেই। এরপর তাদেরকে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে ফেলে দেওয়া হবে।
হাদীস শরীফে একথাও বলা আছে যে, এরাই হবে সর্বপ্রথম জাহান্নামী। যাদের সম্পর্কে সবার আগে জাহান্নামের ফয়সালা করা হবে। (নাউযুবিল্লাহ)
চিন্তা করে দেখুন, কত ভয়াবহ এই হাদীস। হযরত আবু হুরায়রা রা. যখন এই হাদীস বর্ণনা করতেন তখন কোনো কোনো সময় ভয়ে চিৎকার করে উঠতেন এবং বেহুঁশ হয়ে যেতেন।
জনৈক ব্যক্তি এই হাদীসটি মুআবিয়া রা.-এর নিকট বর্ণনা করলে হযরত মুআবিয়া রা. এত কাঁদলেন যে, আশপাশের লোকদের আশঙ্কা হল, এখনই তাঁর প্রাণবায়ু বের হয়ে যাবে। অনেক্ষণ পর যখন তাঁর অবস্থা স্বাভাবিক হল তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা সত্য বলেছেন এবং তাঁর রাসূল সঠিকভাবে তা জানিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি দুনিয়ার জীবন ও তার চাকচিক্য কামনা করবে আমি তার সকল কর্মের পূর্ণ
বিনিময় দুনিয়াতেই দিয়ে দিব এবং তাদেরকে কিছুমাত্র কম দেওয়া হবে না। এদের জন্য আখিরাতে আগুন ছাড়া আর কিছু নেই এবং ব্যর্থ হবে যা দুনিয়াতে করেছিল। যা তারা করত তা নিতান্তই পন্ডশ্রম।
মোটকথা, নূরানী আমল দ্বারা নূর তখনই পয়দা হবে যখন তা একমাত্র আল্লাহ তাআলার রেযামন্দির জন্য এবং আখিরাতের জন্য করা হবে। এজন্য আপনাকে যেমন পুরা সময় এসব আমলে মশগুল থাকতে হবে তেমনি নিয়তকেও সহীহ ও খালেস রাখতে হবে। শয়তান যখন কাউকে নেক আমল থেকে বিরত রাখতে পারে না তখন তার নিয়ত নষ্ট করার চেষ্টা করে। যে আমল আল্লাহর জন্য তা যদি গায়রুল্লাহর জন্য করা হয় তাহলে তার সাথে আল্লাহর নিসবত ও সম্পর্ক থাকে না। তেমনিভাবে যেসব আমলে আল্লাহর রেযামন্দি নেই তা যদি আল্লাহর রেযামন্দির উদ্দেশ্যে করা হয় তাহলে তাতে আল্লাহর নিসবত পয়দা হয় না এবং তার রেযামন্দি হাসিল হয় না। সুতরাং দুটো চেষ্টা করতে হবে : ১. যেসব কাজে আল্লাহ তাআলা রাজিখুশি হন তাতে মশগুল থাকা এবং এত বেশি মশগুল থাকা যে, ঐ আমলের রঙ আমার মাঝে চলে আসে। ২.নিয়ত সহীহ রাখার বিষয়ে সাবধান থাকা। যার অর্থ হচ্ছে, সকল আমলের উদ্দেশ্য আল্লাহ তাআলার রেযামন্দি। সকল কামিয়াবী ও সফলতা শুধু আল্লাহর রেযামন্দির মাঝেই নিহিত। আর সকল নাকামী ও ব্যর্থতা আল্লাহর নারাজির মধ্যেই নিহিত।
আসল কাজ হল চারটি
আমি আগেই বলেছি যে, এ কাজে বের হওয়ার পর নিজেদেরকে শুধু চারটি কাজে নিয়োজিত রাখুন। ১. ঈমান-ইয়াকীন ও ঈমানওয়ালা আমলের দাওয়াত। এই কাজের জন্য উমুমী গাশত হবে, খুসুসী গাশত হবে। যার উসূল ও আদাব গাশতে বের হওয়ার সময় বলা হবে। এগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনা চাই। এরপর যখন দাওয়াতের জন্য রাস্তায়, বাজারে, মহল্লার অলিতে গলিতে বের হবেন তখন শয়তান আপনাকে সেখানকার অবস্থার দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করবে। এজন্য সর্বপ্রথম দুআ করা চাই, আল্লাহ তাআলা যেন নফস ও শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করেন এবং তাঁর মর্জি মোতাবেক কাজ করার তাওফীক দান করেন। গাশতের পুরো সময় শুধু আল্লাহ তাআলার জালাল ও জামাল-প্রতাপ ও সৌন্দর্য এবং তাঁর ছিফাত ও গুণাবলির প্রতি ধ্যান রাখুন। দৃষ্টিকে অবনত রাখুন এবং নিজের মাকসাদ চোখের সামনে রাখুন। কোনো রোগীকে যখন হাসপাতালে নেওয়া হয় তখন রোগী ও তার আত্মীয়-স্বজন হাসপাতালের ভবন ও কারুকাজের দিকে মনোযোগ দেয় না। তাদের চিন্তা শুধু থাকে রোগীর চিকিৎসা।
খুসুসী গাশতের সময় যদি দেখা যায়, যাকে দাওয়াত দিতে গিয়েছেন তিনি মনোযোগ দিয়ে কথা শুনতে প্রস্ত্তত নন তাহলে মোনাসিব উপায়ে কথা শেষ করে চলে আসা উচিত এবং তার জন্য দুআ করা উচিত। আর যদি দেখা যায়, তিনি মনোযোগ দিচ্ছেন তাহলে পুরা কথা তার সামনে রাখা চাই এবং কিছু সময় ফারেগ করার জন্যও দাওয়াত দেওয়া চাই।
খুসুসী গাশতে কোনো দ্বীনী আকাবিরের খেদমতে যাওয়া হলে তার কাছে শুধু দুআর আবেদন করা উচিত। তাকে যদি আগ্রহী ও মনোযোগী মনে হয় তাহলে কাজের কিছু কথাও (কারগুজারী) বলা যেতে পারে।
উমুমী গাশতের মাধ্যমে লোকদেরকে মসজিদে নিয়ে আসুন। তাদের সামনে ঈমান-ইয়াকীন, নামায, আল্লাহর যিকির, দ্বীনী ইলম, আখলাক ও দ্বীনী মেহনতের কথা আলোচনা করুন এবং তাশকীল করুন। তবে শুধু তাশকীল করেই সন্তুষ্ট থাকা যাবে না। যারা ওয়াদা করেছে ও নাম লিখিয়েছে তাদেরকে আল্লাহর রাস্তায় বের করার এবং ওয়াদাকে আমলে পরিণত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করুন এবং নিজেদের সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করুন, যেন তাদের সময়টুকু ভালোভাবে অতিবাহিত হয়। যারা এখন বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি তাদেরকে মাকামী গাশত, মাকামী ইজতেমায়ী তালীম, যিকির ও নামাযের পাবন্দির প্রতি উৎসাহিত করুন এবং এসব কাজের একটি নিযাম বানিয়ে দিন। যখন দাওয়াতের এ সকল মেহনত আপনি করলেন, এখন ঐ কৃষকের মতো, যে জমিতে বীজ বুনে আল্লাহর দরবারে হাত তোলে, আপনিও আকুতিমিনতির সাথে দুআ ও
রোনাযারিতে মশগুল হোন। আল্লাহ তাআলাই অন্তরের পরিবর্তনকারী। যাকে চান ঈমান ও ঈমানওয়ালা আমল দান করেন, যাকে চান মাহরূম রাখেন।
২. দাওয়াতের দ্বিতীয় কাজ তালীম।
যখন তালীমের জন্য বসবেন তো আদবের সাথে বসুন। আল্লাহর রাসূলের আনীত ইলমের প্রতি অন্তর যেন বিনীত থাকে। ফাযায়েলের মুযাকারা করুন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শিখানো দুআসমূহ মুখস্থ করুন।
৩ ও ৪. যে সময় দাওয়াত ও তালীম থাকবে না এবং অন্য কোনো প্রয়োজনীয় কাজও থাকবে না সে সময়ে নফল নামায পড়ুন কিংবা কুরআন মজীদ তেলাওয়াত করুন কিংবা যিকির-আযকারে মশগুল থাকুন। অথবা আল্লাহর কোনো বান্দার খেদমত করুন। মানুষ যেমন নামাযে হয়তো কিয়ামের হালতে থাকে কিংবা রুকু-সিজদার হালতে কিংবা কা’দাহ ও বৈঠকের হালতে তেমনি দাওয়াতী সফরে বের হওয়ার পর হয়ত দাওয়াতের কাজে অথবা তালীম-তাআল্লুমে অথবা যিকির ও ইবাদতে কিংবা কোনো মাখলুকের খেদমতে মশগুল থাকতে হবে।
সফরের পুরো সময় এই কাজ আসল মাকসাদ বানিয়ে করা চাই এবং এত বেশি করা চাই যে, তা স্বভাবে পরিণত হয়।
এই আমলগুলো ইজতেমায়ীভাবেও করুন, আবার ইনফিরাদীভাবেও করুন। ইজতেমায়ীভাবে করার অর্থ হল, জামাতের নিয়ম অনুযায়ী করা। যেমন খুসুসী গাশত, উমুমী গাশত, জামাতের তালীমের সময় তালীম। জামাতের সাথে ফরয নামায ও তার আগে পরের সুন্নত। ইজতেমায়ী দায়িত্ব বণ্টন অনুসারে খাবার ইত্যাদির ব্যবস্থাপনা। এই সবগুলো হল ইজতেমায়ী আমল।
ইনফিরাদী দাওয়াত, ইনফিরাদী তালীম, ইনফিরাদী ইবাদত ও ইনফিরাদী খিদমতের অর্থ হচ্ছে ঐসব আমল, যা ইজতেমায়ী প্রোগ্রাম ছাড়া কেউ তার অবসর সময়ে করে, যে সময় তার উপর কোনো ইজতেমায়ী দায়িত্ব থাকে না। যেমন-দুপুরে খাওয়ার পর যোহরের নামায পর্যন্ত কোনো ইজতেমায়ী আমল, দাওয়াত, তালীম ইত্যাদি থাকে না। এ সময় প্রত্যেকের জন্য আরাম করার অনুমতি থাকে। কোনো আল্লাহর বান্দা যদি নিজের আরামের এই সময়টুকুতে কারো সাথে ঈমানী দাওয়াতের কথা বলে বা কোনো আল্লাহর বান্দাকে কোনো দুআ শেখায়, নামায সহীহ করে, কিংবা মসজিদের কোণায় নফল নামায পড়ে অথবা কোনো সাথীর খেদমত করে তাহলে এগুলো হবে ইনফিরাদী আমল।
মোটকথা, পুরো সফরে এই চারটি কাজ নিজের মাকসাদ ও মূল লক্ষ্য মনে করে করতে হবে এবং মানবীয় প্রয়োজন পূরণ ছাড়া বাকি পুরা সময় এইসব কাজেই মশগুল থাকতে হবে। তাহলেই ইনশাআল্লাহ জীবনে নূর আসবে। এরপর ইনশাআল্লাহ নূর ছড়িয়ে পড়বে।
উপরোক্ত চার কাজ ছাড়া শুধু চারটি কাজ অপরিহার্য প্রয়োজন হিসেবে করা হবে এবং শুধু প্রয়োজন পরিমাণ সময়ই তাতে ব্যয় করা যাবে।
কাজ চারটি হল-
১. পানাহার ২. প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ ৩. ঘুম ও ৪. পরস্পরে কথাবার্তা।
এগুলো হচ্ছে অপরিহার্য মানবীয় প্রয়োজন। এগুলোতে শুধু এটুকু সময়ই ব্যয় করা উচিত, যা ব্যয় না করে উপায় নেই। ঘুমের জন্য দিনরাতে শুধু ৬ ঘণ্টাই যথেষ্ট।
চার কাজ থেকে বিরত থাকা
চারটি কাজ এমন আছে, যা থেকে সতর্কতার সাথে বেঁচে থাকতে হবে।
১. কারো কাছে কিছু চাওয়া। এমনকি কারো সামনে নিজের কোনো প্রয়োজন প্রকাশ করাও উচিত নয়। কারণ এটিও এক ধরনের চাওয়া।
২. ইশরাফ থেকেও বেঁচে থাকতে হবে। ইশরাফ হল, মুখে কিছু না চাইলেও মনে মনে কারো কাছ থেকে কিছু পাওয়ার লোভ করা। এটা যেন মুখে না চাইলেও মনে মনে চাওয়া।
৩. ইছরাফ ও অপচয় থেকে বেঁচে থাকতে হবে। অপচয় সর্বাবস্থায় দোষণীয় ও ক্ষতিকর। আর দ্বীনের কাজে বের হওয়ার পর এটা নিজের জন্যও ক্ষতিকর, অন্য সাথীদের জন্যও ক্ষতিকর।
৪. বিনা অনুমতিতে কারো কিছু ব্যবহার করা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। কখনো কখনো তো এর কারণে অন্যে কষ্ট পায়। আর শরীয়তের দৃষ্টিতে এটি সম্পূর্ণ হারাম।
অবশ্য প্রয়োজনে অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা দোষের নয়।
তো এই হচ্ছে কিছু জরুরি কথা যেগুলোর পাবন্দি করা এ রাস্তার
মুসাফিরদের জন্য অপরিহার্য। ২৪ ঘণ্টা সময় এই পাবন্দির মধ্যেই চলা উচিত। এই পাবন্দির সাথে আপনারা আল্লাহর যমিনে, আল্লাহর মাখলুকের মাঝে চলতে থাকুন এবং নিজের জন্য, পুরো মুসলিম উম্মতের জন্য এবং সাধারণ মুসলমানের জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট হেদায়েতের দুআ করতে থাকুন। এটাই আপনার কাজ, এটাই দায়িত্ব। আপনারা যদি তা করতে পারেন তাহলে আল্লাহ আরহামুর রাহিমীন কখনো আপনাকে মাহরূম রাখবেন না।
অনুবাদ : আবদুল্লাহ ফাহাদ