যিলকদ-১৪৩২   ||   অক্টোবর-২০১১

ভূ মি ক ম্প :জীবনব্যাপী আত্মসমর্পণের ডাক

বখতিয়ার

গত ১৮ সেপ্টেম্বর রোববার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠেছিল দেশ। রিখটার স্কেলে ৬.৮ মাত্রার এই ভূমিকম্পটির স্থায়ীত্ব ছিল দুই মিনিটের মতো। কোনো কোনো পত্রিকার বিবরণ অনুযায়ী গত ৬১ বছরের ইতিহাসে এদেশে এটি ছিল সর্বোচ্চ মাত্রার এবং দীর্ঘস্থায়ী ভূ-কম্পন। এতে দেশব্যাপি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরগুলোতে আতঙ্কের ছাপ ছিল বেশি। অনেক জায়গায় বাড়িঘর ও ভবন-বিল্ডিং ছেড়ে দৌড়ে নিচে আসে বহু মানুষ। কিন্তু আল্লাহর রহমতে বড় কোনো দুর্ঘটনা এদেশে ঘটেনি।

সংবাদপত্রগুলো আবহাওয়া অফিসের সূত্রে জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক থেকে ৬৪ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে। স্থানটি সিকিম ও নেপাল সীমানায় অবস্থিত। এতে ওই অঞ্চলে কয়েকজন হতাহত হয়েছে। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ, এ মাত্রার ও সময়-পরিমাণের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশের ভেতরে হলে এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হয়তো অনেক বেশি হয়ে যেত।

এ দেশে গত কবছরে স্বল্প মাত্রার ও কম সময়ের কয়েকটি ভূমিকম্প ঘটে গেছে। হালকা কম্পন ও ঝাঁকুনিতে সে সময়গুলোতেও ভীতি ছড়িয়ে পড়েছিল। তখন থেকেই বড় একটি ভূমিকম্পের আশঙ্কার কথা বলছিলেন

ভূতত্ত্ববিদরা। সে কারণে

১৮ সেপ্টেম্বরের ভূমিকম্পের সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেটসহ প্রধান প্রধান শহরের বহুতল ভবনের বাসিন্দাদের মাঝে তাৎক্ষণিক আতঙ্ক

বেশি দেখা গেছে। ঢাকা শহরের বহু মহল্লায় নারী, পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধরা দৌড়ে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। কিন্তু এ আতঙ্ক ও অস্থিরতার ছাপ ছিল বিশ মিনিট থেকে ত্রিশ মিনিট পর্যন্ত। এরপর সবকিছুই আগের মতো শুরু হয়েছে।

দুই মিনিটের ভূমিকম্প শুরু ও শেষ হয়ে যাওয়ার পর অল্প কিছু মানুষ ছাড়া অধিকাংশের অবস্থাই আত্মিক বিবেচনায় ছিল আক্ষেপ ও হতাজনক। এবং এখনও এ অবস্থাটিই চালু আছে। বড় একটি অংশের মানুষের কাজ ছিল ভূমিকম্পের সময় কার কী অবস্থা হয়েছিল এবং ভূমিকম্পের আশঙ্কা কোথায়-কতটুকু আছে এসব নিয়ে আলোচনা ও জিজ্ঞাসাবাদ। অপর বড় অংশটিকে

দেখা গেছে, ভূমিকম্পের দশ-পনের মিনিট পর থেকেই কিছু ফূর্তি ও আনন্দের আমেজ নিয়ে উল্লাস করতে। যেন এটা তেমন কিছুই

নয় এবং এতে সন্ত্রস্ত ও সতর্ক হওয়ার কিছুই নেই। হুড়োহুড়ি, হৈচৈ এবং পরে মারাত্মক ক্ষতিকর কিছু না ঘটায় একটা মজালাগা অনুভূতি ও আচরণে ভেসে যাওয়ার ব্যাপার যেন ঘটেছে। এ সময়ের নাগরিক তারুণ্যের বড় অংশটিই ছিল এ শ্রেণীভুক্ত। আর অল্প কিছু মানুষ এ সময়ে অন্যান্য সতর্কতার পাশাপাশি তাওবা-ইস্তিগফার করেছেন। রাতে আল্লাহর

দরবারে দুআ করেছেন। ভূমির কম্পনের সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়ে প্রত্যাবর্তন ও অনুতাপের কম্পন

অনুভব করেছেন।

মূলত ভূমিকম্পের মতো বিধ্বংসী ও বিপর্যয়কর একটি জমীনী বালা বা কুদরতী দুর্যোগ যখন চলে আসে তখন কোনো মানুষেরই কিছু্ই করার থাকে না। বিজ্ঞানের এত উন্নতি

সত্ত্বেও কোনো পূর্বাভাসও দেওয়া সম্ভব হয় না এ দুর্যোগের। এর কার্যকারণগুলো নিয়ে যত ব্যাখ্যাই দেওয়া হোক, সেটা বন্ধ রাখা বা নিয়ন্ত্রণ করার কোনো উপায় মানুষের সামনে খোলা থাকে না। ক্ষতি কমানোর কিছু বাহ্যিক ও অনিশ্চিত চেষ্টা ছাড়া অসহায় আত্মসর্মপণই এর মূল চরিত্র। এটি অবশ্যই ইলাহী তাম্বীহ বা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সতর্কীকরণ। তারপরও দেখা যায়, আমাদের সমাজের বড় অংশটিই এখন এমন একটা গা ছাড়া অবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে যে, এতে কোনোভাবেই সতর্ক ও অনুতপ্ত হওয়ার মতো কোনো বোধ জাগ্রত হতে চায় না। স্বভাবজাত যে ভীতি ও আতঙ্ক থাকার কথা সেটাও প্রকাশ পায় ক্ষণিকের জন্য, শংকাকালীন কিছু মুহূর্তগুলোতে থাকে সীমাবদ্ধ। অথচ মুমিনের

অবস্থা এমন হওয়ার কথা নয়। পবিত্র কুরআনের ভাষায় এ বৈশিষ্ট্যটি হচ্ছে কাফের ও মুনাফিকদের।

সূরা তাওবার ১২৬ নম্বর আয়াতের তরজমা : তারা কি লক্ষ্য করে না, প্রতি বছর তারা দু-একবার বিপর্যস্ত হচ্ছে। অথচ তারা এরপরও তাওবা করে না কিংবা উপদেশ গ্রহণ করে না।

বান্দা তো সর্বাবস্থায় অসহায়। একটু সমস্যায় পড়লেই সেটা টের পাওয়া যায়। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প-এ পর্যায়ের বিপদে সেটা

আরও বড়ভাবে অনুভব করা যায়। মুমিন বান্দার কাজ এসব অসহায় অবস্থায় আল্লাহর কাছে

আত্মসমর্পণ করা এবং জীবনব্যাপী করতে শেখা। খোদায়ী সতর্কীকরনের সময়গুলোতে বান্দার সতর্ক হওয়াই কাম্য।

সতর্ক না হয়ে নির্বিকার থাকলে ভয়ঙ্কর ক্ষতি আখেরাতে এবং দুনিয়াতেও।

 

 

 

advertisement