নারী-সমাজের তলবে ইলমের প্রয়োজন
عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه : قالت النساء للنبي صلى الله عليه وسلم : غلبنا عليك الرجال فاجعل لنا يوما من نفسك فوعدهن يوما لقيهن فيه فوعظهن وأمرهن فكان فيما قال لهن ما منكن من امرأة تقدم ثلاثة من ولدها إلا كان لها حجابا من النار، فقالت امرأة واثنين؟ قال : واثنين.
আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন, নারীগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলিল, পুরুষেরা আপনার বিষয়ে আমাদিগকে পিছনে ফেলিয়াছে। সুতরাং আপনি আমাদের জন্য আপনার পক্ষ হইতে একটি দিন নির্ধারণ করুন। তখন তিনি তাহাদের জন্য একটি দিন নির্ধারণ করিলেন এবং ওই দিন তাহাদের সহিত সাক্ষাত করিলেন। অনন্তর তাহাদিগকে উপদেশ দিলেন এবং আদেশ দিলেন। তিনি তাহাদিগকে যাহা কিছু বলিলেন, তন্মধ্যে একটি কথা এই, তোমাদের যে কোন মহিলা, তিনটি সন্তান অগ্রবর্তী করিবে, তাহা তাহার জন্য জাহান্নাম হইতে আড়াল হইবে। জনৈকা স্ত্রীলোক প্রশ্ন করিল, দুইটি? তিনি বলিলেন? দুইটিও। (বুখারী, কিতাবুল ইলম, হাদীস : ১০১)
ফায়দা : এইরূপ অন্য ঘটনায় আবূ হুরায়রা রা. হইতে বর্ণিত আছে-
فقال موعدكن بيت فلانة فأتاهن فحدثهن.
তিনি বলিলেন ‘তোমাদের সঙ্গে সাক্ষাতের স্থান হইল অমুক স্ত্রীলোকের বাড়ী।
অতঃপর তিনি তাহাদের নিকট গেলেন এবং আলোচনা করিলেন।’
এই হাদীস হইতে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, সাহাবায়ে কেরামের যামানায় নারী-সমাজের মধ্যে ইলমের কী পরিমাণ তলব ছিল। উম্মাহাতুল মুমিনীনের মাধ্যমে তো তাহারা ইলম হাছিল করিতেনই, এমনকি মসজিদের দরজায় আসিয়া হযরত বিলাল রা.-এর মাধ্যমে প্রশ্নও পাঠাইতেন, এমনকি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের উদ্যোগেও নারীগণকে একত্র করিয়া উপদেশ ও শিক্ষাদান করিয়াছেন। কিন্তু তাহাদের ইলমের তলব ও পিপাসা তাহাতেও নিবারিত হয় নাই। তাহারা অধিক ইলম হাছিল করিবার জন্য নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আবদার করিয়াছেন, যেন তিনি তাহাদের জন্য আলাদা দিন নির্ধারণ করিয়া দেন, যখন শুধু তাহারা প্রয়োজনীয় ইলম শিক্ষা করিবেন। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সানন্দে তাহাদের অনুযোগ ও আবদার গ্রহণ করিয়াছেন। বস্ত্তত ইহাতে বর্তমান যুগের নারী-পুরুষ সকলেরই জন্য শিক্ষা ও চিন্তার বিষয় রহিয়াছে।
সন্তানের মৃত্যু মাতৃহৃদয়ের জন্য কত যে কঠিন শোক ও যন্ত্রণার কারণ তাহা রহমতের নবী ছাড়া আর কে বুঝিবে? তাই তো তিনি এই ভাবে সান্ত্বনা দিতে পারিয়াছেন। হযরত আনাস রা.-এর আম্মা উম্মে সুলায়ম এবং আরও কতিপয় আনসারী নারী প্রশ্ন করিয়াছিলেন, দুইটি সন্তানের মৃত্যুতে ছবর করিলে কী হইবে? অন্য বর্ণনায় আছে, হযরত উম্মে আয়মান রা. একটি সন্তান সম্পর্কেও প্রশ্ন করিয়াছিলেন, আর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন, একটি সন্তানের মৃত্যুতেও একই আজর পাওয়া যাইবে। আমাদের কত মা সন্তানশোকে অসঙ্গত বিলাপ করে, কিন্তু এই হাদীছটি তাহাদিগকে বলিয়া দেওয়ারও যেন কেহ নাই।
[হাদীসের আলো জীবনের পাথেয়
তরজমা : উম্মে আবদুল্লাহ
ভূমিকা ও সম্পাদনা : মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ
পৃষ্ঠা : ৫৬-৫৭]