নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে নারীর জিজ্ঞাসা ও নারীর বিষয়ে জিজ্ঞাসা
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
আদব ও আখলাক প্রসঙ্গ
জালিমের জবাব কীভাবে দিবে?
হযরত আয়েশা রা. বলেন, একবার কিছু ইহুদী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এল এবং সালাম দেওয়ার ছলে বলল, ‘আসসামু আলাইকা’ (অর্থাৎ আপনার উপর মৃত্যু নেমে আসুক)। হযরত আয়েশা রা. তা বুঝতে পেরে জবাবে বললেন, ‘আলাইকুমুস সামু ওয়াল লা’নাতু’ (রবং মরণ ও অভিশাপ তোমাদের উপর পড়ুক।) তাঁর এ কথা শুনে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
مَهْلاً ياَ عاَئِشَةُ، إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الرِّفْقَ فِيْ الْأَمْرِ كُلِّهِ
‘হে আয়েশা! সংযত হও। আল্লাহ তাআলা সকল বিষয়ে কোমলতা পছন্দ করেন।’ উম্মুল মুমিনীন আরজ করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি শোনেননি তারা কী বলল?’ রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমিও তো এর জবাব দিয়েছি। বলেছি, ‘ওয়া আলাইকুম’ (তোমাদের উপরও তা পড়ুক)।’-সহীহ বুখারী ২/৮৯০
ফায়েদা : রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জবাব ও উম্মুল মুমিনীনের জবাব প্রায় এক। তবে উম্মুল মুমিনীন উত্তেজনার ভাষায় জবাব দিয়েছেন এবং মরণ ও অভিশাপ কথা দু’টি উচ্চারণ করেছেন। পক্ষান্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শান্তভাবে জবাব দিয়েছেন এবং ‘মরণ’ কথাটা উহ্য রেখেছেন।
এই হাদীসে দায়ী ইলাল্লাহগণের জন্য রয়েছে অনেক বড় শিক্ষা।
মন্দলোকের সাথে কি সৌজন্য রক্ষা করা যায়
হযরত আয়েশা রা. বলেন, এক লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসার অনুমতি চাইল। লোকটিকে (দূর থেকে) দেখে তিনি বললেন, ‘গোত্রের সবচেয়ে মন্দ লোক!’ কিন্তু সে যখন ঘরে এল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে হাসিমুখে কথা বললেন। তার বিদায় নেওয়ার পর উম্মুল মুমিনীন প্রশ্ন করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি তো প্রথমে তাঁর সম্পর্কে একটি মন্তব্য করেছিলেন, অথচ সাক্ষাতে হাসিমুখে কথা বললেন!’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
متى عاهدتني فحاشا، إن شر الناس عند الله منزلة يوم القيامة من تركه الناس اتقاء شره.
আয়েশা! তুমি কি কখনো (কারো সাথে) আমাকে মন্দ ও অশালীন আচরণ করতে দেখেছ? কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তি হবে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যাকে মানুষ ত্যাগ করেছে তার অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য।-সহীহ বুখারী ২/৮৯১
ফায়েদা : এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কর্ম ও আচরণ সম্পর্কে জানা এবং তার তাৎপর্য বেঝার চেষ্টা করা কাম্য। আরো জানা গেল যে, সবার সাথে ভদ্র ও শালীন আচরণ ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র স্বভাবের অংশ। এজন্য আদর্শের বিষয়ে অটল থাকার পাশাপাশি একজন মুসলিমকে সর্বাবস্থায় ভদ্র ও শালীন আচরণে অভ্যস্ত হতে হবে। এটি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।
যা নিজের জন্য পছন্দ করি না তা কি অন্যকে দান করতে পারি
হযরত আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে ‘দব’ (মরুভূমির গিরগিটি জাতীয় একটি প্রাণী) রান্না করে পেশ করা হল। তিনি তা খেলেন না, কাউকে খেতে নিষেধও করলেন না। তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি তা মিসকীনদেরকে খাওয়াতে পারি? উত্তরে তিনি বললেন-
لا تطعموهم مما لا تأكلون
তোমরা নিজেরা যা খাও না তা গরীবদেরকে খাওয়াবে না।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৪৬১৭
ফায়েদা : উদারতা ও দানশীলতার বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা এই হাদীসে রয়েছে। অনেক স্বচ্ছল মানুষও গরীব-মিসকীনকে দান করার সময় সবচেয়ে তুচ্ছ জিনিসটা দান করে থাকে। যে খাবার নিজেরা খেতে পারে না, যে পোষাক নিজেরা পরতে পারে না গরীবদেরকে শুধু তাই দান করে থাকে। অথচ গরীবকে দান করার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর রেযামন্দি। তবে কি আল্লাহর রেযামন্দি হাসিলের জন্য সবচেয়ে তুচ্ছ বস্ত্তটিই রয়ে গেল? কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা এই প্রবণতা পরিহারের আদেশ করেছেন এবং নিজের পছন্দের জিনিস আল্লাহর জন্য দান করতে উৎসাহিত করেছেন। দেখুন : সূরা বাকারা : ২৬৭; সূরা আলে ইমরান : ৯২
এই হাদীস সেই কুরআনি শিক্ষারই একটি অংশ।
পিতামাতাকে গালি দেওয়া
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘সবচেয়ে জঘণ্য কবীরা গুনাহসমূহের একটি হচ্ছে, পিতামাতাকে অভিশাপ করা।’ কেউ প্রশ্ন করল, ‘সন্তান কীভাবে পিতামাতাকে অভিশাপ করে?’ উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘সে অন্যের পিতাকে গালি দেয় ফলে সে লোকও প্রতিউত্তরে তার পিতাকে গালি দেয়। সে অন্যের মাকে গালি দেয় প্রতিউত্তরে ঐ লোকও তার মাকে গালি দেয়।’-সহীহ বুখারী ২/৮৮৩
ফায়েদা : এই প্রশ্নটি হাদীসের বাণী বোঝার জন্য প্রশ্ন। এ থেকে বোঝা যায়, হাদীস শরীফ শুধু পাঠ করাই যথেষ্ট নয়। বিজ্ঞজনের নিকট থেকে তার মর্ম বোঝাও অপরিহার্য।
এই হাদীস থেকে পিতামাতার মর্যাদা রক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি জানা যায়। তা হচ্ছে, পিতামাতাকে সরাসরি অভিশাপ করা তো কবীরা গুনাহ। জেনেশুনে ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কাজ করা থেকেও বিরত থাকতে হবে, যার অবশ্যম্ভাবী ফলাফলরূপে পিতামাতাকে অন্যের গালি ও অভিশাপ শুনতে হয়। কারণ সন্তানের এ ধরনের কাজ করার ফলে পিতামাতা যদি অন্যের গালির শিকার হন তাহলে এর দায় ও গুনাহ ঐ সন্তানকেও বহন করতে হবে।
নবীর রহমত থেকে কি উম্মত বঞ্চিত হয়
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, দুইজন লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে কোনো বিষয়ে কথা বলল। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের প্রতি রাগান্বিত হলেন এবং তাদেরকে তিরস্কার ও অভিশাপ করলেন। তারা বিদায় নেওয়ার পর আমি আরজ করলাম, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! সকলে আপনার কাছে কল্যাণ লাভ করে, কিন্তু এরা তো কিছুই পেল না।’ তিনি বললেন, ‘কেন?’ আমি বললাম, ‘আপনি তাদেরকে তিরস্কার ও অভিশাপ করলেন।’ উত্তরে তিনি বললেন, তুমি কি জান না, আমি আমার রবের নিকট থেকে এই মর্মে প্রতিশ্রুতি নিয়েছি যে,
اللهم إنما أنا بشر فأي المسلمين لعنته أو سببته فاجعله له زكاة وأجرا.
ইয়া আল্লাহ! আমি একজন মানুষ। সুতরাং কোনো মুসলমানকে আমি যদি অভিশাপ করি কিংবা তিরস্কার করি তাহলে ঐ ব্যক্তির জন্য তা পুরস্কার ও পবিত্রতায় পরিণত করে দিও।-সহীহ মুসলিম ২/৩২৩
ফায়েদা : এই প্রশ্নটি আল্লাহর নবীর আচরণের তাৎপর্য বোঝার জন্য প্রশ্ন। সীরাত বিষয়ক হাদীস শরীফ বোঝার জন্য জ্ঞানী ব্যক্তির শরণাপন্ন হওয়ার শিক্ষা এখান থেকে পাওয়া যায়।
এই হাদীসের আরেকটি শিক্ষা এই যে, শাসনের প্রয়োজনে অধীনস্তদের কখনো তিরস্কার করতে হয়। তবে হাদীসের শিক্ষা এই যে, যাদেরকে তিরস্কার করা হয়েছে তাদের জন্য দুআও করা উচিত। তেমনি গোস্যার কারণে কারো প্রতি অভিশাপমূলক কোনো কথা মুখ দিয়ে এসে গেলে আল্লাহর কাছে তার কল্যাণের জন্য দুআও করা উচিত। যেন বড়র কারণে ছোট ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
সর্বোত্তম আচরণের হকদার কে
হযরত আবু হুরাইরা রা. বলেন, এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! কে আমার সুন্দর আচরণের সবচেয়ে বেশি হকদার?’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমার মা।’ প্রশ্নকারী পুনরায় প্রশ্ন করলেন, ‘তারপর কে?’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমার মা।’ প্রশ্নকারী পুনরায় একই প্রশ্ন করলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবারও বললেন, ‘তোমার মা।’ চতুর্থবার প্রশ্ন করার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারপর তোমার বাবা। এরপর পর্যায়ক্রমে তোমার নিকটতর অন্যান্য আত্মীয়স্বজন।-সহীহ বুখারী ২/৮৮৩; সহীহ মুসলিম ২/৩১২
ফায়েদা : প্রশ্নটি হক্বদারের পর্যায় সম্পর্কে। কার হক কী তা যেমন জানা প্রয়োজন তেমনি কার হক বেশি, কার হক কম-এ সম্পর্কেও পরিষ্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন। যাতে প্রত্যেকের সাথে তার প্রাপ্য আচরণ করা যায়।
মা যদি কাফির হয়
হযরত আসমা রা. বলেন, আমার আম্মা মদীনা শরীফে আমার নিকট এলেন। তিনি তখন মুশরিক ছিলেন। ঐ সময় মক্কার মুশরিকদের সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সন্ধি ছিল। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আমার আম্মা আমার নিকট এসেছেন এবং তিনি ইসলাম থেকে বিমুখ। (এখন আমি তার সাথে কেমন আচরণ করব)?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি মায়ের সাথে সুসম্পর্কের পরিচয় দাও।-সহীহ বুখারী ২/৮৮৪
ফায়েদা : জিজ্ঞাসা থেকেই বোঝা যায়, তাওহীদ ও শিরকের বিষয়ে মায়ের সাথেও যে আপোস করা যায় না এটা তাঁর সামনে পরিষ্কার ছিল। তবে সাধারণ আচরণের ক্ষেত্রে সন্তানের করণীয় কী তা জিজ্ঞাসা করেছেন। তাঁর জিজ্ঞাসার জবাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদাচারের আদেশ করেছেন। এ দুটো শিক্ষা কুরআন মজীদে সুস্পষ্টভাবে দেওয়া হয়েছে।’ (দেখুন : সূরা লুকমান : ১৪)
মিথ্যা বলা
হযরত আসমা রা. বলেন, একজন নারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার একজন সতীন আছে। আমি যদি তার কাছে স্বামীর কাছ থেকে এমন কিছু পাওয়ার ভান করি, যা আসলে স্বামী আমাকে দেয়নি, তাহলে কি আমার গুনাহ হবে?’ উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘না পেয়েও যে পাওয়ার ভান করে সে যেন মিথ্যার এক প্রস্থ কাপড় পরিধান করেছে।’-সহীহ বুখারী ২/৭৮৫
ফায়েদা : অর্থাৎ সে যেন আপাদমস্তক মিথ্যার দ্বারা আবৃত, যা একজন মুমিনের শান নয়। মুমিন তো আপাদমস্তক সত্যের দ্বারা আবৃত থাকবে। কথায় ও কর্মে, বিশ্বাস ও আচরণে সে হবে সিদক ও সত্যের মূর্তপ্রতীক। এটি ইসলামের এমন এক শিক্ষা, যা জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুসরণীয়। সাহাবিয়া বিশেষ একটি আচরণ সম্পর্কে প্রশ্ন করলেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি শিক্ষা দান করেছেন।
সিদক ও সত্যনিষ্ঠা যেহেতু সাহাবায়ে কেরামের সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল এজন্য একজন সাধারণ সাহাবিয়ার কাছেও উপরোক্ত বিষয়টি প্রশ্নযোগ্য মনে হয়েছে। ফলে তিনি প্রশ্ন করেছেন এবং সিদকের পথে আরো অগ্রসর হওয়ার পাথেয় লাভ করেছেন।
কবরের আযাব সম্পর্কে
হযরত আয়েশা রা. বলেন, এক ইহুদী নারী তাঁর কাছে কবরের আযাবের কথা আলোচনা করে বলল, ‘আল্লাহ আপনাকে কবরের আযাব থেকে হেফাযত করুন।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে এলে উম্মুল মুমিনীন তাঁকে কবরের আযাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন (যে, এটা কি সত্য?) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হ্যাঁ, কবরের আযাব সত্য।’ -সহীহ বুখারী ১/১৮৩
ফায়েদা : এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, কোনো দ্বীনী বিষয়ে সংশয় হলে জিজ্ঞাসা করা চাই। নিজে নিজে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া কিংবা অনির্ভরযোগ্য কারো কাছ থেকে সমাধান গ্রহণ করা ঠিক নয়। কুরআন-সুন্নাহর সিদ্ধান্ত জানার জন্য মাহির আলিমকে জিজ্ঞাসা করা উচিত। এই হাদীসের আরো শিক্ষা এই যে, দ্বীনী ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে নারীদেরও পিছিয়ে থাকা উচিত নয়।
উত্তম স্ত্রী
হযরত আবু হুরাইরা রা. বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করল ‘উত্তম স্ত্রীর পরিচয় কী?’ আল্লাহর রাসূল বললেন, ‘যার দিকে তাকালে স্বামী আনন্দবোধ করে, যে স্বামীর আদেশ পালন করে এবং নিজের সতীত্ব ও স্বামীর সম্পদে তার অপছন্দনীয় কাজ থেকে বিরত থাকে।’-মুসনাদে আহমদ ২/২৫১
ফায়েদা : স্বামী-স্ত্রী প্রত্যেকেরই রয়েছে কিছু কর্তব্য ও কিছু অধিকার। হাদীস শরীফে এগুলো পরিষ্কার ভাষায় বলে দেওয়া হয়েছে। এই হাদীসটি স্ত্রীর কর্তব্য সংক্রান্ত। এ হাদীসে চারটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে। একজন স্ত্রী যদি এই নবী-শিক্ষাকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেন এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে তা অনুসরণে সমর্থ হন তবে নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তাকে দান করবেন দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তি।
হাদীস শরীফের প্রথম কথাটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এটি একজন নারীকে কথায় ও আচরণে এমন প্রজ্ঞা ও ভালবাসার প্রকাশ ঘটাতে উৎসাহিত করে, যা স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য সম্পর্ককে আনন্দপূর্ণ করে তোলে। হাদীসে আরো তিনটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যা সহজেই বোধগম্য।
প্রতিবেশীর হক
হযরত আয়েশা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার দুইজন প্রতিবেশী আছে। আমি (কোনো কিছু হাদিয়া দিতে চাইলে) তাদের কোন জনকে দিব?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘দু’জনের মধ্যে যার ঘর তোমার বেশি নিকটে।’-সহীহ বুখারী ১/৩০০
ফায়েদা : প্রতিবেশীর হক্ব সম্পর্কে হাদীস শরীফে খুব তাকীদ করা হয়েছে। এই হাদীস থেকে বোঝা গেল, নিকট প্রতিবেশীর হক্ব দূরের প্রতিবেশী থেকে বেশি। উম্মুল মুমিনীনের এই প্রশ্ন এবং পরবর্তী হাদীসের প্রশ্নটি শুধু হকদারের হক সম্পর্কে নয়; বরং হকদারের পর্যায়, অর্থাৎ কার হক বেশি, কার হক কম এ সম্পর্কে। সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ। প্রত্যেকের সাথে ন্যায্য আচরণ করার জন্য হকদারের পর্যায়ক্রম সম্পর্কে সচেতনতা জরুরি।
কার হক সবচেয়ে বেশি
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘নারীর উপর সবচেয়ে বেশি হক কার?’ তিনি বললেন, ১‘স্বামীর।’ আমি আবার প্রশ্ন করলাম, ‘পুরুষের উপর সবচেয়ে বেশি হক কার?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘মায়ের।’-মুসতাদরাকে হাকেম
ফায়েদা : পারস্পরিক কর্তব্য ও অধিকারের ক্ষেত্রে ইসলামের আদর্শ যে সম্পূর্ণ যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত উপরোক্ত হাদীসটি তার একটি প্রমাণ। ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর উপর পুরুষের অধিকার শুধু পুরুষ হওয়ার কারণে সব্যস্ত হয় না। তেমনি নারী শুধু নারী হওয়ার কারণে তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় না। এ কারণেই সন্তানের উপর পিতার চেয়ে মায়ের হক বেশি।
মহিলাদের জবাইকৃত পশুর গোশত খাওয়া
হযরত কা’ব ইবনে মালেক রা. বলেন, আমাদের পালের একটি বকরি মারা যাচ্ছিল। তা দেখে আমাদের একজন দাসী তা জবাই করে দিল। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ঐ বকরিটি খাওয়ার আদেশ করেন।-সহীহ বুখারী ১/৩০৮
ফায়েদা : এ প্রশ্নটি ‘যবীহা’ বা জবাইকৃত পশু সম্পর্কে। শরীয়তে যাবীহা সম্পর্কে বেশ কিছু বিধান দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনের সময় ঐ সকল বিধান জেনে নেওয়া উচিত। এই হাদীস থেকে খাদ্যদ্রব্যের হালাল-হারাম সম্পর্কে
সাহাবায়ে কেরামের সতর্কতার প্রমাণ পাওয়া যায়।
আত্মীয়-স্বজনকে দান করা
উম্মুল মুমিনীন জুয়াইরিয়া রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি এই গোলামটি আযাদ করতে চাই (কীভাবে করলে আমার জন্য উত্তম হবে)। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি গোলামটি তোমার যে মামা গ্রামে থাকেন তাকে দান কর। এতে তোমার (গোলাম আযাদ করার চেয়ে) বেশি সওয়াব হবে।-মুসনাদুল বাযযার-মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/২৮১
ফায়েদা : নেক কাজের বিষয়ে, বিশেষত দান-সদকার বিষয়ে আলিমদের সাথে পরামর্শ করা উচিত। কীভাবে কাজটি করলে দুনিয়া-আখিরাতে অধিক মঙ্গলজনক হবে তা আলিমরাই বলতে পারবেন। এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, আত্মীয়-স্বজনকে দান করার ফযীলত সাধারণ দানের চেয়ে বেশি। আত্মীয়তার হক আদায় করা ইসলামী আদব-আখলাকের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ।
কিয়ামতের দিন মানুষের অবস্থা
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মানুষকে ওঠানো হবে নগ্নপদ, বস্ত্রহীন ও খতনাবিহীন অবস্থায়।’ একথা শুনে হযরত আয়েশা রা. প্রশ্ন করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! নারী-পুরুষ বিবস্ত্র অবস্থায় সমবেত হলে একজন কি অপরজনের সতর দেখবে না?’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
الأمر أشد من أن يهمهم ذاك
‘সে দিনের অবস্থা এত কঠিন হবে যে, এই চিন্তারই সুযোগ থাকবে না।’-সহীহ বুখারী ২/৯৬৬
বিপদে ধৈর্য্য ধারণ করা
হযরত আনাস রা. বলেন, বালক হারেসা রা. শহীদ হলেন। তার মা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, ‘আল্লাহর রাসূল! হারেসা আমার কত প্রিয় ছিল তা আপনি জানেন। সুতরাং সে যদি জান্নাতবাসী হয় তাহলে আমি সবর করব এবং আল্লাহর কাছে ছওয়াবপ্রার্থী হব। কিন্তু এর বিপরীত হলে আমার আচরণ আপনি দেখতে পাবেন। (তখন আর ধৈর্য্যধারণ করা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।)’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘জান্নাত কি একটি!? জান্নাত তো অনেক। আর তোমার ছেলে তো রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউসে।’-সহীহ বুখারী ২/৯৭০
ফায়েদা : এই হাদীসের প্রশ্নটি এমন, যা শুধু আল্লাহর রাসূল ছাড়া অন্য কাউকে করা যায় না। খাতামুন নাবিয়ীনের পর যেহেতু ওহী-রেসালতের সূত্র বন্ধ তাই নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে সে জান্নাতী কি না তা নিশ্চিতভাবে কেউ বলতে পারে না। তবে তাঁর ঈমান ও আমলের ভিত্তিতে আল্লাহর রহমতের কাছে আশাবাদী হওয়া যায় এবং প্রয়োজনের ক্ষেত্রে আশাবাদ ব্যক্তও করা যায়।
শাহাদাতের আকাঙ্খা
হযরত আনাস রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাদা ইবনুছ ছামেত রা.-এর স্ত্রী উম্মে হারাম বিনতে মিলহান রা.-এর বাড়িতে গেলেন। তিনি তাঁর মেহমানদারি করলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঘরে ঘুমালেন। কিছুক্ষণ পর তিনি হাসতে হাসতে ঘুম থেকে জাগ্রত হলেন। উম্মে হারাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি হাসলেন কেন?’ আল্লাহর রাসূল বললেন, ‘স্বপ্নে আমাকে আমার উম্মতের কিছু মানুষকে দেখানো হয়েছে, যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের উদ্দেশ্যে এই সমুদ্রের উপর দিয়ে সফর করবে। ...। আমি বললাম, ‘আপনি দুআ করুন, আল্লাহ যেন আমাকে তাদের মধ্যে শামিল করেন।’ তিনি দুআ করলেন এবং পুনরায় ঘুমিয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর আবার হাসতে হাসতে জাগ্রত হলেন এবং আরেকটি দলের কথা বললেন আমি বললাম, ‘আপনি দুআ করুন, আল্লাহ যেন আমাকে তাদের মধ্যে শামিল করেন।’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত।’ বর্ণনাকারী বলেন, মুআবিয়া রা.-এর যামানায় উম্মে হারাম রা. সমুদ্রে সফর করেন। এ সফর থেকে ফিরে তীরে নামতে গিয়ে তিনি সওয়ারী থেকে পড়ে যান এবং মৃত্যুবরণ করেন। (ফলে পরের সমুদ্রযাত্রায় তিনি শামিল হতে পারেননি।)-সহীহ বুখারী ২/৯২৯
নেককারের মৃত্যু
হযরত উবাদা ইবনুছ ছামিত রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাতকে পছন্দ করে আল্লাহ তাআলাও তার সাক্ষাত পছন্দ করেন। আর যে আল্লাহর সাক্ষাত পছন্দ করে না আল্লাহও তার সাক্ষাত পছন্দ করেন না।’ একথা শুনে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্য কোনো স্ত্রী আরজ করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তো মৃত্যুকে অপছন্দ করি।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘বিষয়টি এরকম নয়। যখন ঈমানদারের মৃত্যুর সময় নিকটবর্তী হয় তখন তাকে আল্লাহর রেযামন্দি ও তাঁর সাথে মোলাকাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়। ফলে তার কাছে আল্লাহর সাথে মোলাকাতের চেয়ে প্রিয় বস্ত্ত আর কিছুই থাকে না। সে তখন আল্লাহর সাক্ষাতপ্রার্থী হয়ে যায় ফলে আল্লাহও তার সাক্ষাতপ্রার্থী হয়ে যান। পক্ষান্তরে যখন কাফেরের মৃত্যুর সময় নিকটবর্তী হয় তখন তাকে আল্লাহর আযাব ও শাস্তির সংবাদ শোনানো হয়। ফলে তার কাছে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের চেয়ে অকাম্য বস্ত্ত আর কিছুই থাকে না। সে আল্লাহর সাক্ষাতকে অপছন্দ করে আল্লাহও তার সাক্ষাত অপছন্দ করেন।-সহীহ বুখারী ২/৯৬৩
ফায়েদা : প্রশ্নটি হাদীস শরীফের মর্ম ও তাৎপর্য সম্পর্কে। বোঝা গেল, হাদীস শরীফ পাঠ করার সময় তার সঠিক মর্ম বোঝার চেষ্টা করা উচিত। এক্ষেত্রে জ্ঞানীর সহায়তা নেওয়াই হাদীসের শিক্ষা।
মিসকীনের মর্যাদা
হযরত আনাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআ করেছেন-
اللهُمَّ أَحْيِيْنِيْ مِسْكِيْنًا وّأَمِتْنِيْ مِسْكِيْنًا وَّاحْشُرْنِيْ فِيْ زُمْرَةِ الْمَسَاكِيْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
ইয়া আল্লাহ! দুনিয়াতে মিসকীন করে রাখুন, মিসকীন অবস্থায় মৃত্যু দান করুন এবং কিয়ামতের দিন মিসকীনদের জামাতে আমাকে শামিল করুন। এই দুআ শুনে আয়েশা রা. আরজ করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! কেন এই প্রার্থনা?’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তারা (মিসকীনরা) ধনীদের চল্লিশ বছর আগে জান্নাতে যাবে।’-জামে তিরমিযী ২/৫৮
ফায়েদা : মাসনূন দুআসমূহে রয়েছে নূর ও বরকত। আর উপলব্ধির সাথে পাঠ করলে এর সুফল অনেক গুণ বেড়ে যায়। হাদীস ও সুন্নাহর আলোকে মাসনূন দুআর শিক্ষা ও তাৎপর্য সম্পর্কে ইলম হাসিল করা শরীয়তের কাম্য।
স্ত্রীর অভিমান সহ্য করা
হযরত আয়েশা রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘আমি তোমার রাগ ও অনুরাগ বুঝতে পারি।’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আল্লাহর রাসূল! কিভাবে বুঝতে পারেন?’ তিনি বললেন, ‘তুমি যখন আমার উপর সন্তুষ্ট থাক তখন বলে থাক-‘বালা ওয়া রাবিব মুহাম্মাদ’ (মুহাম্মদের রবের কসম! ...) আর অসন্তুষ্ট হলে বল-‘লা ওয়া রাবিব ইবরাহীম’ (ইবরাহীমের রবের কসম!..।)’ আমি বললাম, ‘আল্লাহর রাসূল! আপনি ঠিক বলেছেন। তবে আমি শুধু আপনার নামটিই ত্যাগ করি। (অন্তর আপনার ভালবাসায় পূর্ণ থাকে।’)-সহীহ বুখারী ২/৮৯৭
ফায়েদা : এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, স্ত্রীর স্বাভাবিক মান-অভিমানকে সহজভাবে গ্রহণ করা উচিত। শরীয়তের দৃষ্টিতে তা ‘বেআদবী’ বলে গণ্য নয়।
আল্লাহর আযাবের ভয়
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, আকাশে মেঘ দেখা দিলে বা ঝড়ো বাতাস বইতে থাকলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখমন্ডলে ভয়ের চিহ্ন ফুটে উঠত। আমি আরজ করলাম, ‘আল্লাহর রাসূল! আকাশে মেঘ দেখলে মানুষ খুশি হয় এবং বৃষ্টির আশা করে, কিন্তু আপনার চেহারায় আমি চিন্তা ও ভয়ের ছাপ লক্ষ করি।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আয়েশা! আমি কীভাবে জানব, এই মেঘ বা বাতাস কোনো আযাব বহন করে আনেনি? এক জাতির উপর তো প্রচন্ড বাতাস দ্বারা আযাব দেওয়া হয়েছে। তেমনি আরেক জাতি আযাব দেখে বলেছিল-
هذا عارض ممطرنا
এই তো মেঘ আমাদের জন্য বৃষ্টি বর্ষণ করবে!’-সুনানে আবু দাউদ ২/৬৯৫
ফায়েদা : প্রশ্নটি ‘হাল’ বা অবস্থা সম্পর্কে। আল্লাহ তাআলার সাথে যাঁর পরিচয় যত গভীর আল্লাহর আযাবের ভয় ও রহমতের আশাও তাঁর তত বেশি। আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি আল্লাহকে চিনি তোমাদের সবার চেয়ে বেশি এবং আল্লাহকে ভয় করি তোমাদের সবার চেয়ে বেশি।’ প্রকৃতি আল্লাহরই সৃষ্টি এবং প্রকৃতির উপাদানগুলো তাঁর রহমত ও কুদরত দুটোরই পরিচয় বহন করে, বিশেষত প্রকৃতির যেসব শক্তি দ্বারা আল্লাহ তাআলা কোনো জাতিকে ধ্বংস করেছেন সেগুলো তো তাঁর কহর ও জালালের জীবন্ত দৃষ্টান্ত। সাধারণ মানুষ হয়তো তা থেকে গাফেল থাকতে পারে, কিন্তু সবার চেয়ে বেশি খোদাভীরু যিনি তিনি তো এই দুর্বলতার বহু উর্ধ্বে। তাই তার অবস্থাও অন্যদের চেয়ে ভিন্ন। এই ব্যতিক্রমটিই উম্মুল মুমিনীনের চোখে পড়েছে এবং তিনি প্রশ্ন করেছেন। তাঁর প্রশ্নের কারণে মারিফাতে খোদাবন্দির এক গভীর অধ্যায় উন্মুক্ত হয়েছে। এই হাদীসে রয়েছে আল্লাহর কুদরত সম্পর্কে চিন্তার শিক্ষা এবং আল্লাহর আযাব থেকে গাফেল হওয়ার চিকিৎসা।
ঈসালে সওয়াব
হযরত আবু উসাইদ সায়েদী রা. বলেন, একবার বনী সালামা গোত্রের এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! পিতামাতার মৃত্যুর পর তাদের সাথে সদাচারের কোনো পথ কি অবশিষ্ট আছে?’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হ্যাঁ। তাদের জন্য দুআ করা, তাদের পক্ষ হতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া, তাদের অঙ্গিকার পূরণ করা এবং তাদের বন্ধুবান্ধবের সম্মান ও তাঁদের সূত্রে যে আত্মীয়তার সম্পর্ক তা অটুট রাখা।’
-সুনানে আবু দাউদ ২/৭০০
(চলবে ইনশাআল্লাহ)