গ্রন্থের ভুবনে
শৈশব থেকেই বই যেন হয় আপনার সন্তানের নিত্যসঙ্গী। বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে তাদের মধ্যে কৌতূহল তৈরি করুন এবং কীভাবে গ্রন্থ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য উদ্ধার করতে হয় তা শিক্ষা দান করুন। বইপত্র ঘেঁটে প্রশ্নের উত্তর বের করতে অভ্যস্থ করে তুলুন।
অনেক সময় আমাদের জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন হত। আমরা নানাজীকে জিজ্ঞাসা করতাম। তিনিও গুরুত্বের সাথে আমাদের প্রশ্নের জবাব দিতেন। শুধু জবাবই দিতেন না, জবাবের বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করতেন, তথ্যসূত্রের উদ্ধৃতি দিতেন, গ্রন্থ ও গ্রন্থকারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেন এবং পরবর্তী প্রয়োজনে ঐ গ্রন্থের সহযোগিতা নেয়ার কথাও গুরুত্বের সাথে বলতেন। এভাবে বেশ কিছু গ্রন্থ ও গ্রন্থকারের নাম আমাদের মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল এবং সেগুলোর বিষয়বস্ত্তর সাথেও আমরা পরিচিত হয়েছিলাম যেমন তার বিষয ফিকহ, না হাদীস, না তাফসীর ইত্যাদি। তেমনি ঐসব গ্রন্থের অধ্যায় ও পরিচ্ছেদ এবং রীতি ও বিন্যাস সম্পর্কেও আমাদের ধারণা হয়েছিল।
একপর্যায়ে নানাজী তার নিয়ম পরিবর্তন করলেন। এখন তিনি আমাদের প্রশ্নের উত্তর আমাদেরকেই খুঁজে বের করতে বলছেন। যদিও আমাদের বয়স অল্প, কিন্তু নানাজী আমাদের পথ দেখাচ্ছেন। এভাবে আমরা গ্রন্থ-ব্যবহারে অভ্যস্থ হয়ে উঠছি এবং সঠিক তথ্য সঠিক জায়গায় খুঁজতে শিখছি। আমরা কোনো প্রশ্ন নিয়ে গেলে এখন তাঁর জিজ্ঞাসা-
১. তোমার প্রশ্নের বিষয়বস্ত্ত কী-ফিকহ, তাফসীর না তারীখ?
২. কোন বইয়ে তুমি এর জবাব পাবে বলে মনে কর?
এরপর তিনি আমাদের নিয়ে তার বিশাল গ্রন্থাগারে প্রবেশ করলেন। আমরা একের পর এক কিতাব নিয়ে আসছি এবং আমাদের প্রশ্নের জবার খুঁজছি। নানাজীর তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনায় আমদের গবেষণা ও অন্বেষণের কাজ এগিয়ে চলেছে। এই তো এখানে আমাদের প্রশ্নের জবাব দেওয়া আছে। নানাজী জায়গাটি পাঠ করতে এবং ব্যাখ্যা করে বোঝাতে বললেন। আমরা পাঠ করলাম। যেখানে আমাদের বুঝতে অসুবিধা হল তিনি বুঝিয়ে দিলেন। সবশেষে এ বিষয়ে অগ্রগণ্য মতটিও ব্যাখ্যা করলেন যুক্তি-প্রমাণসহ।
***
কখনো কখনো আমরা একটি কঠিক সমস্যায় পড়ে যেতাম। আমাদের কোনো শব্দ পাঠে ভুল হলে শব্দটির সঠিক উচ্চারণ আমাদের বের করতে হত।
এক্ষেত্রে একটি বড় বিপদ ছিল অভিধান দেখা। উচ্চারণ ভুল হলেই নানাজী অভিধান খুলতে বলতেন। ফলে বাধ্য হয়েই এই চরম ক্লান্তিকর কাজটি আমাদের করতে হত।
এই গবেষণা যে আমদের জন্য কত বড় বিপদ ছিল তা বলতে এখন আর কোনো সঙ্কোচ নেই। কখনো কখনো তো আমরা প্রশ্নই করতাম না এই বিপদের ভয়ে।
কিন্তু নানাজীর হাত থেকে আমাদের মুক্তি ছিল না। কোনো মেহমান হয়ত নানাজীকে কোনো প্রশ্ন করেন কিংবা বড়দের কেউ কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করেছেন সঙ্গে সঙ্গে তিনি তার খুদে গবেষকদের তলব করতেন এবং নির্দয়ভাবে গবেষণার কণ্টকাকীর্ণ প্রান্তরে নামিয়ে দিতেন।
***
আজ নানাজীর প্রতি কৃতজ্ঞতায় মন ভরে উঠছে এবং তাঁর জন্য অন্তরের অন্তস্তল থেকে দুআ আসছে, তাঁর নির্দয়তাই আমাদেরকে শৈশব থেকে অল্পে অল্পে সমৃদ্ধ করেছে এবং বড় হওয়ার পর প্রয়োজনীয় গবেষণা ও অনুসন্ধান আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছে। সর্বোপরি গ্রন্থের সান্নিধ্য এবং সমস্যার সমাধান হয়ে উঠেছে আমাদের সবচেয়ে বড় বিনোদন। এখন তো প্রাচীন গ্রন্থাদির পাতাই আমাদের ক্লান্তিহারক ও প্রশান্তিদায়ক, যা খুলে দেখাও অনেকের জন্য ভীতিকর বিষয় বৈকি!