রজব ১৪৩২   ||   জুন ২০১১

সময়ের হেফাযত

আবিদা

[আমাদের ঘরোয়া আলাপচারিতার আসরগুলো অনেক সময় ক্ষতিকর হয়ে ওঠে অর্থহীন গল্প-গুজব এবং গীবত ও পরনিন্দার কারণে। এতে শুধু সময়ই নষ্ট হয় না; বরং গুনাহর কারণে আমলনামাও কালো হয়ে যায়। এ ক্ষতি থেকে নিজেকে ও নিজের সন্তানদেরকে রক্ষা করা জরুরি। প্রয়োজনীয় আলোচনা ও জ্ঞানের কথার দ্বারা নিজেদের জন্য এবং আমাদের সন্তানদের জন্যও এ আসরগুলোকেও উপকারী করে তুলতে পারি।]

গল্প-গুজবে সময় নষ্ট করা ছিল নানাজীর কাছে খুবই পীড়াদায়ক। এজন্য ঘরোয়া বৈঠকগুলো এ জাতীয় কথাবার্তা শুরু হলে নিপুন কৌশলে তিনি প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে দিতেন। আলোচনার কোনো একটি শব্দকে কাজে লাগিয়ে তিনি প্রসঙ্গান্তরে চলে যেতেন।

আমার মনে আছে, কেউ একজন বলেছিলেন, হাল তাগলিকুল বাবা মিন ফাদলিকা অর্থাৎ আপনি কি দয়া করে দরজাটি বন্ধ করবেন? নানাজি তাগলিক শব্দ থেকে চলে গেলেন তোঘলক-এর দিকে। এবং ইতিহাসের এক দীর্ঘ ও প্রাণবন্ত আলোচনার সূত্রপাত ঘটালেন। ভারতবর্ষে তোঘলক বংশের শাসন কখন ও কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হল? ইসলামের সাথে তাদের সম্পর্ক, ইসলামী বিধিবিধান প্রতিষ্ঠায় তাদের অবদান ইত্যাদি আলোচনায় আসতে লাগল। এরপর ইতিহাস থেকে সাহিত্য, সাহিত্য থেকে ফিকহ, হাদীস এভাবে ইলমের বিভিন্ন উদ্যানে তিনিও বিচরণ করতে লাগলেন আমাদেরকেও বিচরণ করাতে লাগলেন। আর তাঁর গল্প বলার ভঙ্গি ছিল এতই আকর্ষণীয় যে, আমরা খেলাধুলা ভুলে গল্প শোনায় বিভোর হয়ে যেতাম। গল্পের মধ্যেই তিনি আমাদের ছোট ছোট প্রশ্নের উত্তর দিতেন, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতেন, মনীষীদের মতামত তুলে ধরতেন, তাদের যুক্তি-প্রমাণের পর্যালোচনা করতেন, বিভিন্ন গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিতেন এবং এসবের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেন। নানাজী সাধারণ  বিষয়ে কথা বললেও তাতে থাকত কবিতার কোনো পংক্তি, আরবের কোনো বিরল ঘটনা, কোনো মনীষীর প্রজ্ঞাপূর্ণ বাণী কিংবা অন্তত কোনো রসের কথা। তাই তাঁর কাছে এলে আমাদেরকে কঠিন কঠিন বিষয়ে মাথা ঘামাতে হত না। এবং খুব আনন্দের সাথে আমরা তাঁর সান্নিধ্য উপভোগ করতাম। নানাজীর একটি নিয়ম ছিল, তিনি আলোচনার শেষে আমাদেরকে এমন কিছু বইয়ের কথা বলতেন যেগুলোতে আরো তথ্য ও আলোচনা পাওয়া যাবে। কখনো কখনো বই ও লেখক সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য দিতেন যা আমাদেরকে বইটি পড়ে দেখতে উৎসাহিত করত।

নানাজীর এই সকল আলোচনাই হত তৎক্ষণাত। আমার মনে পড়ে না, তিনি আমাদেরকে কোনো বিশেষ জায়গায় এই জন্য একত্র করেছেন যে, আমাদের সাথে কথা বলবেন এবং আমাদেরকে ওয়াজ-নসীহত করবেন। তাঁর ঐ তাৎক্ষণিক আলোচনাগুলোই আমাদেরকে অনেক উপকৃত করেছে এবং অনেক বছর পর্যন্ত আমরা ফায়েদা লাভ করেছি। 

 

advertisement