বদান্যতার একটি গল্প
ইলমুল মাগাযীর ইমাম ওয়াকেদী রাহ. (মৃত্যু : ২০৭ হি.) বলেন, তখন আমি ইরাকের মন্ত্রী ইয়াহইয়া বিন খালেদ বারমাকীর সঙ্গী ছিলাম।
একবারের ঘটনা। ঈদের মাত্র কয়েকদিন বাকি। স্ত্রী আমার কাছে এসে বলল, ঈদ এসেই গেল। অথচ আমাদের হাতে কোনো টাকাকড়ি নেই।
আমি আমার এক ব্যবসায়ী বন্ধুর কাছে গেলাম। তাকে আমার প্রয়োজনের কথা খুলে বলে কিছু দিরহাম চাইলাম। সে মোহর কচুরা একটি থলে বের করে দিল। সেখানে ছিল এক হাজার দুইশ দিরহাম।
আমি থলেটি নিয়ে বাড়িতে এলাম। বাড়িতে এসে তখনও আমি স্থির হয়ে বসতে পারিনি, ইতিমধ্যে আমার এক ‘হাশেমী’ বন্ধু এল। আর কি আশ্চর্য! সে তার ফসল ঘরে তোলায় বিলম্বের কথা জানিয়ে আমার কাছে কিছু দিরহাম ধার চাইল।
ঘরের অন্দরে গিয়ে স্ত্রীকে পুরো অবস্থা জানালাম। স্ত্রী বলল, এখন তোমার কি ইচ্ছা? বললাম, ভাবছি, থলেটির অর্ধেক দিরহাম তাকে দিয়ে দেব।
স্ত্রী বলল, একি বলছ তুমি! একজন সাধারণ মানুষের কাছে তুমি গিয়েছিল সে তোমাকে এক হাজার দুইশ দিরহাম দিয়ে দিতে পারল! আর তোমার কাছে এসেছে এমন একজন মানুষ, যার রয়েছে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে নৈকট্য ও আত্মীয়তার বন্ধন। আর তুমি কি না এমন মানুষকে এর অর্ধেক দিবে! না, তা হয় না; বরং তাঁকে পুরো থলেটিই দিয়ে দাও।
ইমাম ওয়াকেদী রাহ. বলেন, আমি থলেটি বের করে তাকে দিয়ে দিলাম। আমার করজদাতা ব্যবসায়ী ও এই হাশেমীর মাঝে বন্ধুত্ব ছিল।
আমার ঐ ব্যবসায়ী বন্ধু গেল ঐ হাশেমী বন্ধুর কাছে। আর কি আশ্চর্য! সেও নিজের প্রয়োজন তুলে ধরে হাশেমী বন্ধুর কাছে কিছু দিরহাম ধার চাইল।
হাশেমী বন্ধু ঘরে গিয়ে ঐ থলেটি বের করে দিল! থলেটি দেখেই চিনে ফেলল ব্যবসায়ী বন্ধু! সে পুনরায় আমার কাছে এসে পুরো বৃত্তান্ত জানাল।
ততদিনে আমার কাছে এল মন্ত্রী ইয়াহইয়া ইবনে খালিদের দূত। তিনি দূত মারফত আমাকে ডেকে পাঠিয়ে জানালেন, ‘আমীরুল মুমিনের কিছু কাজে ব্যস্ত থাকায় দূত পাঠাতে দেরি হয়ে গেল।’
আমি দূতের সাথে বাহনে সওয়ার হলাম। মন্ত্রীর কাছে আমি কথায় কথায় থলেটির এই অভূতপূর্ব বৃত্তান্ত জানালাম। শুনে তিনি গোলামকে বললেন, যাও ঐ দিনারগুলো নিয়ে এস। সে দশ হাজার দিনার নিয়ে এল।
ইয়াহইয়া ইবনে খালিদ বারমাকী আমাকে বললেন, তুমি নাও দুই হাজার দিনার। দুই হাজার দিনার তোমার ব্যবসায়ী বন্ধুর, দুই হাজার হাশেমী বন্ধুর জন্য। আর বাকি চার হাজার দিনার হল তোমার স্ত্রীর জন্য। কারণ সে তোমাদের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে।
(সূত্র : তারীখে বাগদাদ ৩/১৯-২০)
-ইবনে দানিশ