প্রসঙ্গ : জাতীয় নারী-উন্নয়ননীতি ২০১১
‘জাতীয় শিক্ষানীতি’র মতো জাতীয় নারী-উন্নয়ননীতি ২০১১ (খসড়া)ও ব্যাপকভাবে সমালোচিত ও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নারী-উন্নয়ননীতি ২০০৮ প্রকাশিত হওয়ার পর যে ধারাগুলিকে সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল এবং যেগুলি পরিবর্তনের দাবিতে জরুরি অবস্থার মধ্যেও দেশের ঈমানদার নাগরিকগণ বিক্ষোভ করেছিলেন, বর্তমান নীতিমালায় সেসব ধারার কোনো পরিবর্তন হয়নি। আরো দুঃখজনক বিষয় এই যে, এই অভিযোগ নিষ্পত্তি না করে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, ‘বিরোধিতাকারীরা নীতিমালাটি ভালোভাবে পড়ে দেখেননি।’ তবে কি তারা এই নীতিমালা আইন হিসেবে অনুমোদন করার বিষয়ে বদ্ধপরিকর? আর যেহেতু সরকারের নির্বাচনী ওয়াদা ছিল কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন করা হবে না। তাই তারা এই কৌশল গ্রহণ করেছেন? এ জাতীয় কথা সাম্প্রতিক শিক্ষানীতির ক্ষেত্রেও বলা হয়েছে, এখন নারী-উন্নয়ন নীতিমালার ক্ষেত্রেও বলা হচ্ছে। কিন্তু এভাবে কি গণ-অসন্তোষ প্রশমিত করা যাবে?
আমরা কল্যাণকামিতার সাথে সরকার ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের পরামর্শ দিতে চাই, কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ধারাগুলি বার বার চিহ্নিত করা হয়েছে, যতদ্রুত সম্ভব সেগুলো সংশোধন করুন এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও শিষ্টাচার রক্ষার পাশাপাশি ঈমানদারির পরিচয় দান করুন।
বর্তমান সংখ্যায় এ বিষয়ের উপর একটি সাক্ষাতকার ও তিনটি নিবন্ধ প্রকাশিত হল। পাঠক ইতিমধ্যে সাক্ষাতকারটি পাঠ করেছেন। এবার নিবন্ধগুলি পাঠ করুন। আশা করি এ বিষয়ে কোনো সংশয় বা বিভ্রান্তি অবশিষ্ট থাকবে না ইনশাআল্লাহ।-সম্পাদক
জাতীয় নারী-উন্নয়ননীতি ২০১১ : একটি সমীক্ষা
মুফতী আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যখন ‘‘নারী উন্নয়ন নীতি-২০০৮’’ প্রকাশিত হল তখন আমি বলেছিলাম যে, ‘আমরা আলোচিত নীতিমালাটির কপি সংগ্রহ করে এর প্রত্যেকটি ধারা-উপধারা পড়েছি। এটি ব্যাপকভাবে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, বিষয়ের বিবেচনায় ‘নারী উন্নয়ন নীতি ২০০৮’ কে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা যায়। যেমন :
১. ইসলাম সমর্থিত যৌক্তিক ধারা-উপধারাসমূহ।
২. ইসলাম বিরোধী ধারা-উপধারাসমূহ।
৩. এমন বিষয়াবলি যেগুলো নারী পুরুষ সকলের প্রাপ্য অধিকার।
৪. অযৌক্তিক ধারাসমূহ।’ (আলকাউসার, এপ্রিল-২০০৮ ঈ.)
একই কথা বর্তমান নীতিমালার ক্ষেত্রেও বলছি। কারণ এখানে ধারাগুলির ক্রমিক নাম্বার ও কোনো কোনো জায়গায় সামান্য কিছু সংযোজন ও বিয়োজন ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি।
সুতরাং ঐ সময় যে ধারাগুলির উপর যে মন্তব্য করা হয়েছিল তা আবার পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। তবে ধারাগুলি উল্লেখ করা হয়েছে বর্তমান নীতিমালা থেকে।
যৌক্তিক অংশ
বর্তমান নীতিমালার ১৬.২ ধারায় বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’
এটি যৌক্তিক নীতি। আজ থেকে সাড়ে চৌদ্দশত বছর আগে ইসলাম নারীর নিরাপত্তার বিধান নিশ্চিত করেছে। কুরআন ও হাদীস অধ্যয়নকারী সকলেই এ সম্পর্কে অবগত।
* ধারা ১৬.৪ : ‘নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা’।
সাধারণ অর্থে (তথাকথিত পশ্চিমা মানবাধিকার নয়) উপযুক্ত পরামর্শ। আর নারীদেরকে পরিপূর্ণ মানুষের মর্যাদা প্রদান করেছে একমাত্র ইসলাম। এর আগে তো অনেক ধর্মে তাদেরকে মানুষই বিবেচনা করা হত না।
* ধারা ১৬.৯ ‘সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিমন্ডলে নারীর অবদানের যথাযথ স্বীকৃতি প্রদান করা।’
অবশ্যই স্বীকৃতি দরকার। শুধু গৃহস্থালী কাজকর্ম ও শিশুপরিচর্যার যথাযথ হিসাব করা হলেও দেখা যাবে নারীগণ তাদের সংসারে অনেক বড় অবদান রাখছেন। অবশ্য নারীর এসব অবদানের যথাযথ স্বীকৃতি একমাত্র ইসলামই দিয়েছে।
* ধারা ১৬.১০ : ‘নারী ও মেয়ে শিশুর প্রতি সকল প্রকার নির্যাতন দূর করা।’
* ধারা ১৬.১১ : ‘নারী ও মেয়ে শিশুর প্রতি বৈষম্য দূর করা।’
অবশ্যই দূর করতে হবে যদি তা বাস্তবেই বৈষম্য হয়। যেমন মেয়ে শিশুকে অবহেলা করা, তাকে বোঝা বা অকল্যাণকর মনে করা, এমনকি কোনো কোনো অঞ্চলে তো ভ্রূণ হত্যারও রেওয়াজ আছে। এগুলো কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। কুরআন মজীদ ও হাদীস শরীফে কঠিন ভাষায় এগুলোর নিন্দা করা হয়েছে।
* ধারা ১৬.১৫ : ‘নারীর জন্য উপযুক্ত আশ্রয় এবং গৃহায়ন ব্যবস্থায় নারীর অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা।’
আসলে এখানে অগ্রাধিকারের প্রশ্ন আসে না। কারণ নারীর আশ্রয়স্থলের ব্যবস্থা মুসলিমসমাজে ইসলামী বিধান দ্বারা নিশ্চিত করা আছে। শরীয়ত নারীকে বলেনি স্বামীর থাকার ব্যবস্থা করতে; বরং স্বামীর উপর অর্পণ করেছে নারীর আশ্রয়স্থলের দায়িত্ব। তাহলে এখানে পূর্ণ অধিকারই তো তার।
* ধারা ১৯.১ : ‘পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি শারীরিক, মানসিক ও যৌন নিপীড়ন, নারী ধর্ষণ, যৌতুক, পারিবারিক নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপসহ নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা দূরা করা।’
কোনো কোনো পরিবারে মেয়েদের উপর নির্যাতন হয় এটি বাস্তব এবং তা বন্ধ করার ব্যবস্থা নেয়া অপরিহার্য।
কিন্তু প্রশ্ন হল, পর্দাহীনতা ও তথাকথিত সমঅধিকারের পথে কি এই সহিংসতা রোধ করা যাবে? নারীর প্রতি সহিংসতা রোধের বাস্তব উপায় ইসলামেই রয়েছে।
পাঠক যদি এই ধারাটি ২০০৮-এর নীতিমালার সাথে মিলিয়ে পাঠ করেন তাহলে একটি আশ্চর্য বিষয় দেখতে পাবেন। ঐ নীতিমালায় ছিল, ‘পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি শারীরিক, মানসিক ও যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ, পতিতাবৃত্তিতে নিয়োগ, যৌতুক ও নারীর প্রতি সহিংসতা দূর করা।’ (ধারা : ৫.১)। কিন্তু বর্তমান নীতিমালায় ‘পতিতাবৃত্তিতে নিয়োগ’ কথাটা বাদ দেওয়া হয়েছে। আমি ২০০৮-এর নীতিমালার উপর আলোচনা করতে গিয়ে মন্তব্য করেছিলাম-‘ইসলামে বিবাহ বহির্ভূত সকল যৌনতাই হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জোরপূর্বক কাউকে ব্যভিচারে বাধ্য করা বা স্বেচ্ছায় পরস্পরে এ অপকর্মে লিপ্ত হওয়া উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে নির্ধারিত শাস্তি, যা ক্ষেত্রবিশেষে মৃত্যুদন্ডও হতে পারে। কিন্তু পতিতাবৃত্তিকে শিল্প হিসাবে আখ্যা দানকারী এবং পতিতাদেরকে সেক্স ওয়ার্কার বা যৌনকর্মী খেতাব দানকারী নারীবাদীগণ, যারা অনেকেই বিবাহ বহির্ভূত যৌনতা তথা পশ্চিমাদের অনুকরণে ফ্রি সেক্সের দাবিদার তারা এ ধারাটি পড়ে খুশি হতে পারবেন তো?’
দেখা যাচ্ছে, তারা খুশি হতে পারেননি এবং সম্পূর্ণ কথাটা ঐ ধারা থেকে বাদ দিতে নীতিমালা প্রণয়নকারীদের বাধ্য করেছেন। যেখানে কুরআন-সুন্নাহবিরোধী ধারাগুলো হুবহু রেখে দেওয়া হয়েছে সেখানে এই ধারাটির পরিবর্তন কীসের ইঙ্গিত বহন করে?
* ধারা ১৯.৩ ও ১৯. ৪ : ‘নির্যাতনের শিকার নারীকে আইনগত সহায়তা প্রদান করা, নারী পাচার বন্ধ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা।’
অবশ্যপালনীয় ও শরীয়তসম্মত সুপারিশ, কিন্তু প্রয়োগ হবে তো?
* ধারা ২০.১ ‘সশস্ত্র সংঘর্ষ ও জাতিগত যুদ্ধে নারীর অধিকতর নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা।’
শুধু সচেতনতা সৃষ্টি! এটা কি এ জন্য যে, ফিলিস্তিন, ইরাক, আফগানিস্তান, কাশ্মীর, পাকিস্তানের উপজাতীয় এলাকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় যে সকল নারী হামলা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তারা প্রায় সকলেই মুসলিম? ইসলামে তো শত্রুপক্ষের নারীকেও আক্রমণ করতে নিষেধ করা হয়েছে জিহাদের ক্ষেত্রে।
* ধারা ৩৪.১১ : মায়ের দুধ শিশুর অধিকার...’।
ভালো প্রস্তাব। কুরআন মজীদে সন্তানের জন্য মাতৃদুগ্ধের বিষয়টিকে সবিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বহু আগেই, যা চিকিৎসা বিজ্ঞান বুঝতে পেরেছে বহু পরে।
৩৭, ৩৮ ও ৩৯ নং ধারায়ও প্রতিবন্ধী নারীসহ বিশেষভাবে দুর্দশাগ্রস্ত নারীর বিশেষ সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব আছে, যা ভালো প্রস্তাব এবং অবিলম্বে কার্যকর করা উচিত।
উপরোক্ত ধারাগুলো ছাড়াও নীতিমালায় আরো কিছু ধারা রয়েছে যেগুলোর কোনো কোনোটি মৌলিকভাবে এবং অনেকগুলো আংশিকভাবে ইতিবাচক। এ সংক্ষিপ্ত পরিসরে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা গেল না।
অযৌক্তিক ধারাসমূহ :
জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১ তে বহু ধারা এমন রয়েছে যেগুলো অনেকটাই অযৌক্তিক ও বাস্তবতা বিবর্জিত। এবার এমন কয়েকটি ধারা পেশ করা হচ্ছে।
* ধারা ১৬.৩: ‘নারীর রাজনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক ও আইনগত ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা।’
* ধারা ৩২.৭ : ‘জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ৩৩ শতাংশে উন্নীত করা ও বর্ধিত সংরক্ষিত আসনে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করা’ এবং ৩২ নং অধ্যায়ের অন্যান্য উপধারাসমূহ।
* ধারা ৩৩.১ : প্রশাসনিক কাঠামোর উচ্চ পর্যায়ে নারীর জন্য সরকারি চাকরিতে প্রবেশ সহজ করার লক্ষ্যে চুক্তিভিত্তিক এবং পার্শ্ব প্রবেশের (Lateral Entry) ব্যবস্থা করা।’
* ধারা ৩৩.৪ : ‘নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে প্রবেশপর্যায়সহ সকল পর্যায়ে, গেজেটেড ও নন গেজেটেড পদে কোটা বৃদ্ধি করা।’
* ধারা ৩৩.৫ : ‘সকল ক্ষেত্রে নারীর জন্য নির্ধারিত কোটা পূরণ সাপেক্ষে কোটা পদ্ধতি চালু করা।’
* ধারা ৩৩.৬ : ‘কোটার একই পদ্ধতি স্বায়ত্বশাসিত ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে প্রযোজ্য হবে এবং বেসরকারী ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানসমূহকেও এই নীতি অনুসরণের জন্য উৎসাহিত করা।’
উপরোক্ত ধারাগুলো ছাড়াও সরকার ও স্থানীয় সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে এবং প্রশাসন, দূতাবাস, ইউজিসিসহ বিভিন্ন স্তরে কোটাভিত্তিক চাকুরীর নিশ্চয়তা প্রদানের কথা আলোচিত নীতিমালার আরো অনেক ধারা-উপধারায় রয়েছে।
মহিলাদেরকে জোরপূর্বক সংসদে ও স্থানীয় সরকারে নিয়ে আসার এ প্রয়াস পুরনো। সরকারী চাকরিতে তাদের জন্য আগে থেকেই কোটা-পদ্ধতি চালু আছে। অর্থাৎ অধিক যোগ্য পুরুষ প্রার্থী থাকলেও নির্ধারিত কোটায় কম যোগ্যতাসম্পন্ন মহিলাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়। অথচ সাধারণ নারীসমাজের উন্নয়নে যে এসব নীতি কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেনি তা তো বাস্তব সত্য। সংসদে কোটাভিত্তিক মহিলা সদস্য নেওয়া হচ্ছে দুই দশকেরও বেশি সময় আগে থেকে। প্রথমে ছিল ৩০ জন করে পরে করা হয়েছে ৪৫ জন। কিন্তু এখন স্বীকার করা হচ্ছে যে, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের করুণার বদৌলতে নিয়োগ পাওয়া এসব মেম্বারগণ কোন ভূমিকাই রাখতে পারছেন না। তাহলে এত বছর পর্যন্ত রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা তাদের পিছনে ব্যয় করা হল কেন? এখন বলা হচ্ছে (সুপারিশকৃত নীতিমালায়) ৩৩% আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে এবং তারা প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন। সংসদের ৩০০ আসনে মহিলা ও পুরুষ সকলেই নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে কিন্তু ১০০টি আসন শুধু মহিলাদের জন্য থাকবে এবং আগের মত সংসদ-সদস্যদের ভোটে নয়; বরং তারা নিজেরা (শুধু মহিলারা) সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদসদস্য হবেন। কিন্তু এতে কি কোন সুফল আসবে? কারণ তাদের কথা মত বর্তমান মনোনয়নব্যবস্থার মাধ্যমে সংসদসদস্য হওয়া মহিলাগণ সংসদে তেমন কিছু করার সুযোগ পান না। কারণ তাঁরা পুরুষের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হয়ে আসেননি। তাহলে সুপারিশকৃত প্রত্যক্ষ নির্বাচনেও একই কথা থাকছে। এখানেও তো সাধারণ আসনে পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা সংরক্ষিত আসনে নিজেদের (নারীদের) মাঝে প্রতিযোগিতা করে সংসদে গেলে তাদের মান ও দাম কি সাধারণ আসনে পাশ করে আসা সংসদ-সদস্যদের সমান হয়ে যাবে?
তখনও তো পুরুষ সংসদ-সদস্যরা বলতে পারবে যে, তোমরা তো আমাদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামনি। বরং নিজেরা নিজেদের মধ্যে লড়ে জিতে এসেছ।
আমি ২০০৮-এর নীতিমালার উপর আলোচনা করতে গিয়ে বলেছিলাম, ‘আসলে নারীবাদীরা ইতিহাস ও বাস্তবতাকে চেপে যেতে চায়। জাতিসংঘের নারী-দশক ঘোষিত হয়েছে ১৯৭৫ সালে। এর পর তিন দশকেরও বেশি সময় পার হয়েছে। আর এরও অনেক আগে থেকে একশ্রেণীর এনজিও এবং নারীবাদী খেতাবধারী লোক তোড়জোড় করে আসছে নারীর তথাকথিত ক্ষমতায়নের জন্য। অথচ দেখা যাচ্ছে, ১৯৯১ সনে প্রত্যক্ষভাবে ভোটে ৫জন মাত্র নারী জয়ী হয়েছিলেন। আর ২০০১-এ এর সংখ্যা হয়েছে ৭। বংশ ও পারিবারিক ঐতিহ্য বাদ দেওয়া হলে এ সংখ্যাও কি শূন্যে গিয়ে দাঁড়াতো কিনা তা প্রত্যক্ষ ভোটে জয়ী হওয়া ব্যক্তিদের নামের উপর একটু নজর বুলিয়ে নিলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
‘দেশে ১৬ বছর পর্যন্ত সরকারপ্রধান ছিলেন ২ জন নারী। তারা সর্ববৃহৎ দু’টি দলেরও প্রধান। তাদের মন্ত্রী সভাগুলোতে কতজন নারী ছিলেন? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ‘নারী উন্নয়ন নীতি ’০৮-এর অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল সেখানে কি মহিলা বিষয়ক উপদেষ্টা ছাড়া আর কোনো নারী উপদেষ্টা ছিলেন (এ উপদেষ্টা পরিষদের অন্তর্ভুক্তির জন্য তো সংসদসদস্য হওয়ারও বাধ্যবাধকতা নেই।) বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে দলীয় প্রধান ছাড়া কি আর কোনো নারী আছে? জাতীয় নির্বাহীকমিটির ৭৯ জনের মধ্যে নারী সদস্যের সংখ্যা ৬, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামে দলীয় প্রধানসহ নারীর সংখ্যা ৪। আর সচিব কমিটির ৩১ জনের মধ্যে নারী আছেন ৩ জন। জাতীয় পার্টির ৪১ সদস্যের প্রেসিডিয়ামে নারী হলেন ২ জন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দী্রয় কমিটিতে ৩৫ জনের মধ্যে নারীর সংখ্যা ৪। জাসদ (ইনু) র ১০১ জনের কমিটিতে নারী আছেন ৩ জন। ওয়ার্কার্স পার্টির ৪১ সদস্যের কমিটিতে নারী রয়েছেন ২ জন। আর তাদের পলিটব্যুরোতে কোনো নারী সদস্য নেই।
‘এই যখন জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা তখন বর্তমান নির্বাচন কমিশন শর্ত দিয়েছেন ৩৩% নারী তাদের কমিটিতে নিতে হবে। কিন্তু বড় কোনো দলই এ শর্ত পূরণ করতে তাৎক্ষণিকভাবে সম্মত হয়নি। তারা ইসিকে বাস্তবতা উপলব্ধির পরামর্শ দিয়েছে। যার প্রেক্ষিতে এখন ইসি বলছে দলগুলোকে এ শর্ত পূরণ করতে হবে পর্যায়ক্রমে ২০২০ সনের মধ্যে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, এ সময় আরো বৃদ্ধি করা হোক। তো এই হচ্ছে আমাদের দেশের বাস্তবতা। এবার নজর দেওয়া যাক আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে। জাতিসংঘপ্রধানের আসনে এ পর্যন্ত কি কোনো নারী আসীন হয়েছেন? গণতন্ত্রের প্রবক্তা আমেরিকায় এ পর্যন্ত কি কোনো নারী প্রেসিডেন্ট হয়েছেন? সেখানে প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে নারীর সংখ্যা কত ভাগ? কয়জন গভর্নর আছেন নারী? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নারীবাদীদের প্রতিকূলে। আসলে তারা কঠিন বাস্তবতাকে এড়িয়ে চলতে চায়। আর নারী ক্ষমতায়নের ধুয়া তুলে নিজেরাই লুফে নিতে চায় সাধারণ জনগণের অর্থে পরিচালিত রাষ্ট্রের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা। তারা জনগণকে বুঝতে দিতে চায় না যে, এভাবে জবরদস্তি ক্ষমতায়নের ব্যবস্থা দ্বারা শুধু এলিট শ্রেণীর নারীদেরই স্বার্থ হাসিল হয়। তেল লাগে শুধু তেলার মাথায়। সাধারণ নারীসমাজের কোনোই লাভ হয় না। কারণ সংরক্ষণ ও কোটার বদৌলতে কিছু লোক চেয়ার পেয়ে গেলেও এতে সাধারণ নারীসমাজের ক্ষমতায়ন তো দূরের কথা, তাদের সামান্য উপকারও হবে না বা হচ্ছে না, বরং তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে সুবিধা ভোগ করবে গুটিকয়েক এলিট।’ (আলকাউসার, এপ্রিল ২০০৮ ঈ.)
এই বাস্তবতার কি তেমন কোনো পরিবর্তন হয়েছে?
* ধারা ২১.১ : ‘নারী শিক্ষা বৃদ্ধি, নারী-পুরুষের মধ্যে শিক্ষার হার ও সুযোগের বৈষম্য দূরা করা’। ...
বৈষম্য তো উল্টো দিকে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত তো এখনো নারীদের বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ রয়েছে, যা পুরুষদের নেই।
* ধারা ২৬.২ : ‘চাকরি ক্ষেত্রে নারীর বর্ধিত নিয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রবেশপর্যায়সহ সকল ক্ষেত্রে কোটা বৃদ্ধি এবং কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
* ধারা ২৬.৩ : সকল নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে সরকার অনুসৃত কোটা ও কর্মসংস্থান নীতির আওতায় চাকরি ক্ষেত্রে নারীকে সকল প্রকার সম-সুযোগ প্রদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করা।
প্রকৃত মেধাবীদেরকে (ছেলে হওয়ার কারণে) বাদ দিয়ে কোটাভিত্তিক নিয়োগ দিতে দিতে পরে রাষ্ট্রযন্ত্রই না আবার কোটার বেড়াজালে আটক হয়ে যায়।
‘নারী উন্নয়ন নীতি’তে অযৌক্তিক ও বাস্তবতা বহির্ভূত ধারার কমতি নেই। সচেতন কোনো ব্যক্তি নিরপেক্ষভাবে পড়লেই সেগুলো দেখতে পাবেন।
নারী উন্নয়ন নীতি ও ইসলাম
যদিও সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাঁর সৃষ্ট মানবজাতিকে নারী-পুরুষ দু’ভাগে বিভক্ত করে তাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব ও অধিকার ঠিক করে দিয়েছেন এবং একমাত্র ইসলামী বিধানেই নারী-পুরুষ উভয়ের মুক্তি ও সফলতার নিশ্চয়তা রয়েছে তথাপি নারীবাদীরা সব সময়েই ধর্মকে তাদের প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করিয়ে আসছে। নারীকে ধর্মীয় গন্ডির বাইরে আনতে পারলেই তারা খুশি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রচিত হয়েছে জাতিসংঘের ‘সিডও’ সনদ। তথাকথিত মুক্তি ও উন্নয়নের নামে মাতৃজাতিকে আল্লাহ-রাসূলের বিধান থেকে সরিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিই যে এর উদ্দেশ্য, তা তো আর খোলাসা করে বলার প্রয়োজন নেই।
জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিতেও ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই ধর্মদ্রোহিতার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। যেমন : ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতির লক্ষ্য’ শিরোনামে বলা হয়েছে-‘ধারা : ১৬.১ : বাংলাদেশ সংবিধানের আলোকে রাষ্ট্রীয় ও গণজীবনের সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
১৬.১২ : রাজনীতি, প্রশাসন ও অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে আর্থসামাজিক কর্মকান্ড, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ক্রীড়া এবং পারিবারিক জীবনের সর্বত্র নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা।’
অথচ আল্লাহ তাআলা অনেক ক্ষেত্রে নারীদেরকে পুরুষের চেয়ে বেশি অধিকার দিয়েছেন। যেমন, কন্যাসন্তানের খোরপোষ পিতা বা অভিভাবককে বহন করতে হয় তার বিয়ে হওয়া পর্যন্ত অথচ ছেলের বেলায় তা হল বালেগ হওয়া পর্যন্ত। বিবাহের সময় স্ত্রীকে মোহর দেওয়া স্বামীর দায়িত্বে, এক্ষেত্রে স্ত্রীর কোনো দায়িত্ব নেই। বিবাহের পর স্ত্রী ও সন্তানদের খোরপোষ বহন করতে হয় স্বামীকে, স্ত্রীকে এমন কোনো দায়িত্ব নিতে হয় না। আবার অনেক বিষয় রয়েছে যেখানে দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে পুরুষকে। নারীবাদীদের কৃত্রিম ক্ষমতায়নের চেষ্টা সত্ত্বেও বাস্তব জীবনে এখনো বিশ্বব্যাপী এর প্রতিফলন দেখা যায়। এ বিষয়ে কিছু আলোকপাত এই নিবন্ধেও করা হয়েছে। সুতরাং সমতা, সমান অধিকার ও সাম্যের শব্দগুলো একেবারেই অবান্তর। তার স্থলে হওয়া দরকার ন্যায্য, ইনসাফভিত্তিক ইত্যাদি শব্দ।
* ধারা ২৩.৫ : ‘সম্পদ, কর্মসংস্থান, বাজার ও ব্যবসায় নারীকে সমান সুযোগ ও অংশিদারিত্ব দেয়া’।
এ ধারায় ‘সম্পদ’ দ্বারা যদি উদ্দেশ্য হয় উত্তরাধিকার সম্পদ তবে তা কুরআনের বিধানের সম্পূর্ণ বিরোধী। নারীর খরচাদির সকল দায়িত্ব অন্যের উপর দিয়েও ইসলাম যেখানে ক্ষেত্রবিশেষে উত্তরাধিকার সম্পদের ক্ষেত্রে নারীকে পুরো অর্ধেক সম্পত্তির হকদার করেছে সেখানে তারা নতুন করে কী বলতে চান? আর যদি বলা হয় সম্পদের দ্বারা উত্তরাধিকার উদ্দেশ্য নয়, তবে এটা কার সম্পদ? নারীর নিজের? তাহলে অংশিদারিত্বের প্রশ্ন কেন আসবে? আর যদি বলা হয়, না এটা তার স্বামীর সম্পদ, তাহলে কি জীবিত থাকতেই নারী স্বীয় স্বামীর সম্পদের অর্ধেকের অংশিদার হয়ে যাবে? যদি এমনটিই তাদের উদ্দেশ্য হয় তবে নীতিমালার একটি স্থানে নারীর জন্য আশ্রম তৈরির সুপারিশের কথা যুক্তিসঙ্গত। কারণ পশ্চিমা কোনো কোনো রাষ্ট্রের মত অনেক অবোধ নারী স্বামীর কামাই করা সম্পদের অর্ধেক হাতিয়ে নিয়ে যখন সমাজচ্যুত হবে তখন তাকে তো বৃদ্ধাশ্রমেই আশ্রয় নিতে হবে।
লক্ষণীয় বিষয় হল, এই ধারাটিও বর্তমান নীতিমালায় হুবহু সেভাবেই রেখে দেওয়া হয়েছে যেমনটা ২০০৮-এর নীতিমালায় ছিল। অথচ ঐ সময় নারীনীতি ঘোষিত হওয়ার আগে ও পরে জাতীয় পত্রিকাগুলোতে যখন নিয়মিত লেখা হচ্ছিল যে, উত্তরাধিকার সম্পদে সমানভাগের বিষয়টি এবারের নীতিমালায় রয়েছে তখন কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহল ছিল সম্পূর্ণ নিরব। তারা একবারও এর প্রতিবাদ করেনি। কিন্তু যখন দেশব্যাপী ঈমানদার লোকগণ বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠলেন তখন তারা অস্বীকারের রাস্তা বেছে নিয়ে ছিলেন। অথচ এ ধারার জবাবে কোন যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা না পূর্বসূরীরা দিয়েছেন না উত্তরসূরীরা। আসলে শাক দিয়ে তো আর সব সময় মাছ ঢাকা যায় না। ‘নারী নীতিমালা’র বিভিন্ন অংশে এমন অনেক ধারা-উপধারা রয়েছে যেগুলোতে শব্দ ও বাক্যের ব্যাপকতা এমনভাবে রাখা হয়েছে যে, কুরআন বিরোধী আইন বানানোর ছুতো হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
দেশের ইসলামপন্থীরা যখন তাদের ঈমানী দায়িত্ব পালনার্থে এ নীতির সংশোধনীর দাবী তুললেন, তখন গাত্রদাহ শুরু হয়ে গেল সেই চিহ্নিত স্বঘোষিত প্রগতিশীল মহলটির এবং সরকারের ভিতর ঘাপটি মেরে থাকা একশ্রেণীর ইসলাম বিরোধী এনজিওদোসর লোকের। এ অবস্থাটা ২০০৮-এর নীতিমালা প্রকাশের পরও দেখা গেছে। ঐ সময় সরকারের মহিলা বিষয়ক উপদেষ্টা তো ক্ষেপেই গিয়েছিলেন! তিনি বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোকে (যাদের বড় বড় প্রায় সব নেতাকে তারাই জেলে আটক করেছিলেন) আহবান জানিয়েছিলেন আলেমসমাজের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার! এবং বলেছিলেন, ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া মৌলবাদীদের দমানো যাবে না! অথচ জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় চাকুরী করা একজন ব্যক্তি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মপ্রাণ লোকদেরকে দমন করার প্রস্তাব দেন কোন সাহসে তা কি চিন্তা করার বিষয় নয়? আসলে মনোনয়নের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা অনির্বাচিত সরকারের কিছু কিছু অসুবিধার মধ্যে এটিও একটি যে, এর সুযোগ নিয়ে কখনো কখনো এ জাতীয় লোকেরাও ক্ষমতার মসনদে বসে নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার সুযোগ পেয়ে যায়।
একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক তখন একটি চিহ্নিত দৈনিকে কলাম লিখেছিলেন, যার শিরোনাম ছিল ‘নারী উন্নয়ন নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কেন’। তাঁর কথা ছিল, ‘জরুরি আইনের মধ্যে ইসলামপন্থীদের বিক্ষোভ করতে দেওয়া হল কেন?’ এর আগে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবমাননাকর কার্টুন প্রকাশের বিরুদ্ধে জরুরি অবস্থার মধ্যে বিক্ষোভের সুযোগ দেওয়ারও তিনি কঠোর সমালোচনা করেছিলেন ঐ লেখায়। এ সকল বুদ্ধিজীবীর স্ব-বিরোধী অবস্থা দেখলে আশ্চর্য হতে হয়। যারা নিজেদের মতলবের সবক্ষেত্রে গণতন্ত্রের দোহাই দেয়, মুক্ত চিন্তার কথা বলে, প্রগতির ধুয়া তুলে জরুরি আইনসহ অনেক নিয়মনীতিকে মানবাধিকার-পরিপন্থী আখ্যা দেয় তারাই আবার আল্লাহর বিধান লংঘনের বিরুদ্ধে, আল্লাহর রাসূলের অবমাননার বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদেরকে জরুরি আইন লংঘনের দায়ে শাস্তি দিতে বলে।
২০০৮-এর মতো এখনও কেউ কেউ বলতে চাইছেন যে, ‘ইসলামপন্থীরা নীতিমালাটি না পড়েই এর বিরুদ্ধে বলছে’। অথচ ঐ সময় যারা এ নীতির প্রতিবাদ করেছিলেন তারা ধারা উপ-ধারার ক্রমিক নং এবং বাক্য উদ্ধৃত করে তাদের মতামত পেশ করেছিলেন। বিভিন্ন ইসলামী ফোরাম থেকে পৃথক পৃথকভাবে দেয়া প্রতিবাদ লিপি, বিবৃতি ও সংবাদ সম্মেলনে তারা সু-নির্দিষ্টভাবেই বিষয়গুলো তুলে ধরেছিলেন। মাসিক আলকাউসারের তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক সাহেবও একটি প্রতিনিধি দলসহ আইন ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে তাদের মতামত উপস্থাপন করেছিলেন এবং কুরআন-হাদীসের রেফারেন্সসহ ইসলামের সাথে ধারা-উপধারাগুলোর সংঘর্ষের দিকটি তুলে ধরেছিলেন।
আসলে ইসলামপন্থীদেরকে নীতিমালা না পড়ার দায়ে অভিযুক্ত করে ঐ সকল বুদ্ধিজীবী তাদের নিজেদের চরিত্রেরই প্রকাশ ঘটাচ্ছেন। তাঁরা যেমনিভাবে ধর্মীয় লেখাপড়া না করেও এবং কুরআন-হাদীসের প্রাথমিক জ্ঞান না রেখেও ধর্মের যেকোনো মনগড়া ব্যাখ্যা দিতে দ্বিধাবোধ করেন না, আবার আরেক শ্রেণী ইংরেজী বা বাংলা অনুবাদ পড়েই কুরআনের গবেষক সেজে যান তাঁরা হয়ত ভেবেছেন আলোচিত নীতির বিরোধীতাকারীরাও তেমনই করছে।
এ কারণেই নীতিমালার ১৭.৫ ধারার বক্তব্য নিয়ে কথা উঠেছে। যাতে বলা হয়েছে ‘স্থানীয় বা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কোন ধর্মের, কোন অনুশাসনের ভুল ব্যাখ্যার ভিত্তিতে নারীস্বার্থের পরিপন্থী এবং প্রচলিত আইন বিরোধী কোন বক্তব্য বা অনুরূপ কাজ করা বা কোন উদ্যোগ নেয়া যাবে না।’
এ ধারাটিও হুবহু ঐভাবেই আছে যেভাবে ২০০৮-এর নীতিমালায় ছিল।
ধারাটিতে ধর্মের বা অনুশাসনের ভুল ব্যাখ্যা দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। আর কার ব্যাখ্যা শুদ্ধ এবং কার ব্যাখ্যা ভুল তাও বলা হয়নি। এমন তো নয় যে, উপরোক্ত বুদ্ধিজীবী ও অধ্যাপকদের মত লোকেরা ধর্মের যে ব্যাখ্যা দিবেন তা হবে সঠিক ব্যাখ্যা। আর যারা সারা জীবন কুরআন-হাদীস পড়েছেন এবং এর বিধিবিধান নিয়ে গবেষণা করেছেন তাঁদের ব্যাখ্যা হবে ভুল ব্যাখ্যা?
নারী নীতি ও কথার ফুলঝুড়ি
‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ’১১-এ দরিদ্র নারীদের কথাও আছে। নারীকে দারিদ্রে্যর অভিশাপ থেকে মুক্ত করা, নারীর সু-স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা, দুর্দশাগ্রস্ত নারীর চাহিদা পূরণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের পুনর্বাসন, নারীর খাদ্য-নিরাপত্তা, নারীর জন্য উপযুক্ত গৃহায়ন ইত্যাদি অনেক ধারা রয়েছে যেগুলো পড়লে ও শুনলে ভালই লাগে।
যে দেশে নারী-পুরুষ নির্বেশেষে অর্ধেকেরও বেশি লোক চরম দারিদ্রে্যর মধ্যে বাস করে, দু মুঠো আহার জোগানো যাদের প্রায়ই সাধ্যে কুলায় না, সে দেশে অন্তত নারীশ্রেণীর জন্যও যে এমন শ্রুতিমধুর সুপারিশ ও অঙ্গিকার করা হচ্ছে তা দেখে ভাল লাগারই কথা। যদিও পুরুষ দরিদ্রে্যর জন্য এমন কোন সরকারী অঙ্গিকার বা নীতি প্রণীত হয়েছে বলে শোনা যায়নি, তবুও যদি দরিদ্র মহিলাদের বেলায়ও তা আংশিক হলেও কার্যকর হয় সেটিও হবে সুখের কথা। দরিদ্র নারী সরকারী খাদ্য, বাড়ী ও স্বাস্থ্যসেবা পেলে সে তো আর একা ভোগ করবে না। নিশ্চয় তার পিতা, স্বামী, ভাই ও পুত্র সন্তানদেরকেও তাতে শামিল করবে। এতে পুরুষগণও উপকৃত হবে বৈকি!
নারীর জন্য যা করা দরকার
পশ্চিমাদের দেখানো মরিচিকাময় তথাকথিত নারী উন্নয়নের পথ দেখিয়ে এ দেশের ধর্মপ্রাণ নারীসমাজকে যেভাবে ধ্বংসের মুখে পতিত করা হচ্ছে, যেভাবে মাতৃজাতি নারীদেরকে পণ্য বানিয়ে, তাদের বিনোদনের খোরাক বানিয়ে তাদেরকে অসম্মান করা হচ্ছে এবং যেভাবে পুরুষের সাথে অসম প্রতিযোগিতায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, আবার অর্ধেক ক্ষেত্রে দাঁড় করানো হচ্ছে পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে তা যে মহিলাদেরই সর্বনাশ করছে তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আসলে একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী পুরুষ এবং তাদের দোসর স্বল্প সংখ্যক নারীই তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বিশ্বব্যাপী নারীদেরকে বিপথে ধাবিত করছে। মডেলের নামে নারীকে যত্রতত্র ব্যবহার করছে, বিনোদনের নামে নারী দ্বারা তাদের ভোগ বিলাসের ব্যবস্থা করছে, কাজের নামে তাদের থেকে নিচ্ছে সস্তা শ্রম, সাহায্যের নামে তাদের থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে ৪০%-৫০% বা তার থেকেও অধিক হারের সুদ। মুসলমান নারীদের দারিদ্র্য ও ধর্মজ্ঞানহীনতার সুযোগে তাদের সাথে করছে হারাম সুদী ব্যবসা। দরিদ্র নারীদের তৈরি পোশাক অভিজাত শপে এনে বিক্রি করছে আকাশচুম্বি দামে এবং তাদেরকে মজুরী দিচ্ছে খুবই সামান্য। আর এ সবের নাম দেওয়া হয়েছে নারী স্বাধীনতা ও নারী উন্নয়ন।
এই ভুল পথে না চলে যা করা দরকার ছিল তা হল, নারীর জন্য প্রয়োজনীয় বাস্তবমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য পর্যাপ্ত ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা, যেন তারা একে অন্যের হক চিনতে পারে এবং আল্লাহর বিধান মত চলে। সুখী হতে পারে। আরো প্রয়োজন ছিল নারীকে শরীয়ত যেসব অধিকার দিয়েছে সেগুলো পাওয়ার ব্যবস্থা করা। উদাহরণ স্বরূপ ‘মহর’ নারীর প্রাপ্য হক। এ দেশে কতজন লোক মহর আদায় করে? অথচ এ সম্পর্কে আলোচিত নীতিমালায় কোনো নির্দেশনা নেই।
মীরাস
নারীর জন্য কুরআনে যে উত্তরাধিকার সম্পদ বরাদ্দ হয়েছে তা পাচ্ছে কতভাগ নারী? দরকার ছিল তা যেন নারীগণ বিনা হয়রানিতে পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করা।
যৌতুকের অভিশাপ
যৌতুক কি বন্ধ হয়েছে? প্রয়োজন ছিল মানুষের মধ্যে খোদাভীতি সৃষ্টি করা, যেন তারা এ হারাম দাবী না করে এবং কন্যাদায়গ্রস্ত অভিভাবকদেরকে মেয়ে বিয়ের ব্যাপারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
হিজাব
নারীগণ যেন শরীয়তের বিধান মত পর্দা করে চলে সে জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এর দ্বারা আল্লাহর হুকুম পালন করা হবে এবং মাতৃজাতির মর্যাদা সংরক্ষিত থাকবে।
দুষ্টদের কঠোর শাস্তি
যারা নারীদের উত্তক্ত করে এবং গুনাহের পথে ঠেলে দেয় প্রয়োজন তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা আর এসব বিষয়ে ইসলামের হুদুদ ও তাজীর-এর চেয়ে উত্তম কোন ব্যবস্থা পৃথিবীতে নেই।
বিনা কারণে তালাক দাতার শাস্তি
যারা একত্রে স্ত্রীকে তিন তালাক দেয় কিংবা বিনা কারণে বউ ছেড়ে দেয় প্রয়োজন তাদেরকে কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা এবং তা অবশ্যই ইসলামের বিধি অনুযায়ী।
নারীদের জন্য ইসলামের নেওয়া ব্যবস্থাদি এবং তাদের অধিকার বিষয়ে আরো কিছু কথা লেখার ইচ্ছা ছিল। ইনশাআল্লাহ আলকাউসার-এর পাতায় এ বিষয়ে আরও প্রবন্ধ প্রকাশিত হবে।
নারী উন্নয়ন নীতির উপর লেখার মোটেই ইচ্ছা ছিল না আমার। কারণ কথা অনেক হয়েছে এখন দরকার কাজের।
আসুন আমরা নারী-পুরুষ বিভক্ত সমাজ নয়, বরং একে অপরের সম্পূরক হিসাবে যার যার দায়িত্ব পালন করি। আমাদের সকল নারী ও পুরুষদেরকে যিনি সৃষ্টি করেছেন তাঁর বিধানাবলী মেনে চলি। পুরুষগণ নারীদের আল্লাহপ্রদত্ত অধিকারগুলো দিতে এগিয়ে আসি, তাদের প্রতি সদয় হই। আর মহিলাগণও পুরুষদের মর্যাদা বোঝা এবং তাদের হক্ব আদায় করার চেষ্টা করুন। এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হবে সুন্দর পরিবার, সুন্দর সমাজ ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন। আমীন।
নারীর ন্যায্য অধিকারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করুন
ইসহাক ওবায়দী
শেরে বাংলা একেএম ফজলুল হক নাকি বলেছিলেন, ‘আই এ্যাম ফার্স্ট মুসলিম দ্যান বাঙ্গালী।’ আমি আগে মুসলমান এরপর বাঙ্গালী। অন্যদের মতো মুসলমানও জীবনের সব কাজ করে, তবে পার্থক্য এই যে, তার সকল কাজ হতে হবে মুসলমানিত্বকে ঠিক রেখে। ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে তাকে ইসলামেরই অনুগত থাকতে হবে। এটা তার মুসলমানিত্বের দাবি।
দেশের দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ মুসলমানদের দল। এর ৯৫ ভাগ নেতা-নেত্রী আল্লাহ-রাসূল ও কুরআন-হাদীসে বিশ্বাস রাখেন। বাকি পাঁচ ভাগ নেতৃত্বে রয়েছেন ভিন্ন জাতিসত্তার অধিকারীরা।
দেশের ৮৫ ভাগ মানুষ মুসলমান হওয়ার কারণেই হয়তো ভোটের আগে রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা ইসলামের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করেন। দু’ দলের নেত্রীকেই ভোটের আগে ওমরা করতে ও রওযা পাক যিয়ারত করতে দেখা যায়। আরো দেখা যায়, নির্বাচনী প্রচারাভিযানের আগে সিলেটের শাহজালাল রাহ. ও শাহ পরাণ রাহ.-এর কবর যিয়ারত করতে। কেউ কেউ নির্বাচনী পোস্টার ও প্রচারপত্রে ধার্মিকতা প্রকাশ করেন। তাবলীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমায় মহিলাদের যাওয়া নিষেধ থাকা সত্ত্বেও দুই নেত্রীকেই দেখতে পাই মোনাজাতে শরীক হতে। একজন আশরাফ টেক্সটাইলে প্যান্ডেল করেন, অন্যজন বাটা সু ফ্যাক্টরিতে প্যান্ডেল করে আখেরী মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন।
আমল-আকীদায় শত দুর্বলতার পরও একজন মুসলমানের অন্তরে ইসলামের প্রতি কিছুটা আবেগ থাকাই স্বাভাবিক। তার পরও নিন্দুকেরা যদি বলে, এসব তাঁদের ভাঁওতাবাজি, মুসলিম-দেশে মুসলমানদের ভোট কালেকশনের একটা কৌশলমাত্র, তাহলে বলব, এটাও বা মন্দ কি? মুসলমানদের মন জয় করা ছাড়া ক্ষমতায় আসা যাবে না-অন্তত এই সত্যকে তারা বিশ্বাস করেন বলেই তো এ রকম করেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, ক্ষমতায় আসার পর এই সত্য তারা বেমালুম ভুলে যান এবং অনেক স্পর্শকাতর ধর্মীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে বসেন।
বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দ নির্বাচনের আগে কুরআনবিরোধী কোনো আইন করা হবে না বলে ওয়াদা-একরার করে ক্ষমতায় এসে তা বেমালুম ভুলে গেলেন এবং মীরাছের কুরআনী বিধান নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করলেন। দেখা যাচ্ছে, উত্তরাধিকার সম্পদের কুরআন বিরোধী হিস্যা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রীসভায় খসড়া বিল হিসেবে পাশ করা হয়েছে। অথচ ক্ষমতায় যাওয়ার চেয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার গুরুত্ব তো কোনো অংশেই কম নয়।
উত্তরাধিকার সম্পদে নারী-পুরুষের সমান হিস্যার দাবি যে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তা খুব সহজেই বোঝা যায়। কারণ কাগুজে আইন কানুনের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নারীর ন্যায্য ও প্রতিষ্ঠিত অধিকার প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। কুরআন মজীদে তো নারী জাতিকে ক্ষেত্রবিশেষে পুরুষের চেয়ে বেশি অধিকার দেওয়া হয়েছে।
দেনমোহরের সমুদয় টাকার একক মালিকানা নারীর। অথচ মোহরানা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই, কোনো আইনি ব্যবস্থা নেই। ফলে অধিকাংশ নারীই দেনমোহর থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। প্রয়োজন ছিল এর একটি আইনি ব্যবস্থা প্রণয়ন করার।
ইসলামের মীরাছ-ব্যবস্থায় স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীর হিস্যা আছে, বাবার সম্পদে এবং মায়ের সম্পদেও হিস্যা আছে। এগুলো তার একক মালিকানা। কারো ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নারীর উপর আরোপ করা হয়নি। পক্ষান্তরে নারীর খোরপোষ থেকে নিয়ে যাবতীয় খরচ পুরুষের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। কিন্তু শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত এসব পাওনা আদায়ের ব্যবস্থা না করে কুরআনবিরোধী সমান অধিকারের আইন প্রণয়ন কতটুকু যুক্তিযুক্ত?
আমাদের সমাজে শতকরা ক’জন পুরুষ দেনমোহরের টাকা আদায় করে? ক’জন মানুষ নারীকে তার স্বামীর মীরাস অথবা বাবার মীরাস ঠিকঠাক মতো প্রদান করে? এই বিষয়গুলির হিসাব নেয়া সরকারের কর্তব্য ছিল। আমার ধারণা শতকরা দশ জন পুরষও নারীদের কুরআন নির্দেশিত পাওনা ঠিকমতো আদায় করে না। যেখানে কুরআনপ্রদত্ত পাওনাই নারীরা পাচ্ছে না সেখানে ঐসব পাওনা আদায়ের আইনি বিধান না করে উল্টো কুরআনবিরোধী আইন কার স্বার্থে রচনা করা হচ্ছে?
আমার এই লেখার মাঝেই একজন পরিচিত আওয়ামী লীগার এসে বললেন, ‘আমাদের সরকার তো একটা ভুল করে ফেলেছে।’ আমি বললাম, ‘একটা নয় অনেক করেছে এবং আরো করবে।’ তিনি বললেন, ‘মনে হচ্ছে সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বাইরের শক্তির চাপে পড়েই সরকার এই কাজ করতে যাচ্ছে।’ আমি বললাম, ‘এটা যদি আপনার মতো মাঠকর্মীর বুঝে আসে তবে আপনার নেত্রীর বুঝে আসে না কেন?’
আসলে আওয়ামী লীগের জন্য আমার করুণা হয়। এরা একটি বৃহৎ ও প্রাচীন দল হলেও সবসময় এদের নিয়ন্ত্রণ করে গুটিকয়েক বুদ্ধিবণিক। এর চেয়ে লজ্জার বিষয় আর কী হতে পারে! এরা নিজেরাই নিজেদের পায়ে কুঠারাঘাত করে।
আলেমসমাজ সব সময় বলে আসছেন, আপনারা ক্ষমতায় এসেছেন, ন্যায়ভিত্তিক শাসন কায়েম করুন। কুরআন-হাদীস তথা ইসলামের ওপর হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকুন। কওমি মাদরাসা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। ফতোয়া রাসূলের যুগ থেকে যেভাবে আছে সেভাবেই থাকতে দিন। কিন্তু না। স্পর্শকাতর এসব বিষয়ে তাদের হস্তক্ষেপ করতেই হল। তাই ক্ষমতা হারানোর ঘণ্টি এখন আপনা আপনিই বেজে উঠছে, যা আওয়ামী লীগের একজন সাধারণ কর্মীও বুঝতে পারছে।
সেদিন ঢাকায় শেখ রেহানার এক ঘনিষ্ঠজন আমাকে আক্ষেপ করে বললেন, ‘খালেদা জিয়া তো ক্ষমতার দুয়ারে এসেই পড়েছে। এখন শুধু মসনদে বসে পড়ার অপেক্ষা।’ তো এই সহজ কথাটা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বোঝেন না কেন? এক মাঘে শীত যায় না। কারো গমন আর কারো আগমনে আমরা যদিও দুঃখ বা পুলক অনুভব করি না, কিন্তু ইসলামের মৌলিক বিষয়ে কেউ হস্তক্ষেপ করলে তার প্রস্থান-দৃশ্য দেখার আগ্রহ আমাদের মাঝে জাগতেই পারে।
নীতি! তোমার গন্তব্য কি উন্নতি?
মুহাম্মাদ যাকারিয়া আবদুল্লাহ
পশ্চিমা কালচার মুসলিম দেশগুলোর সমাজজীবন এবং একটি বৃহৎ নাগরিকসমাজের পারিবারিক জীবনকেও গ্রাস করে ফেলেছে। এরপরও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তা পাকাপোক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জাতিসংঘ ও দাতা দেশগুলোর এজেন্ডা ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক আগ্রাসন, এমনকি সামরিক আগ্রাসনেরও দ্বার উন্মুক্ত করা হয়। আমাদের সকল নীতি ও ব্যবস্থায় এই আগ্রাসনের দিকটিই এখন প্রকটভাবে দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি নারী উন্নয়ন নীতিমালা ’১১ নামে যে বিষয়গুলো প্রকাশিত হয়েছে তার উদ্দেশ্যই হল এই ভূখন্ডে পশ্চিমা সমাজ-ব্যবস্থা ও পরিবার-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। নির্মোহ দৃষ্টিতে নীতিমালাটি পাঠ করলে এ বিষয়ে কোনো সংশয় থাকে না। প্রশ্ন হল, এই নীতিমালা কি আমরা গ্রহণ করতে পারি? খুব শান্তভাবে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা দরকার।
নীতিমালায় যে বিষয়গুলোর সুপারিশ করা হয়েছে ইউরোপ-আমেরিকায় অনেক আগেই এসব বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। সুতরাং দূরদর্শিতার দাবি হচ্ছে, এই পরীক্ষার ফলাফল স্বচ্ছ দৃষ্টিতে দেখার ও উপলব্ধি করার চেষ্টা করা। এরপর যাঁদের ‘কল্যাণে’র জন্য এই নীতিমালা তাঁরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, এর গন্তব্য কি উন্নতি ও সমৃদ্ধি, না ক্ষয় ও অবক্ষয়?
এই নীতিমালা ও তার অন্তর্নিহিত দর্শন সম্পর্কে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় যে কথা বলা যায় তা হচ্ছে, এটা বাস্তবায়িত হলে নারী প্রথমেই হারাবেন তাঁর নারীত্ব, এরপর মাতৃত্ব, এরপর ...। আর নারীর এই রিক্ততা যে একটি সমাজের জন্য কত বড় দুর্ভাগ্য তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এর জ্বলন্ত প্রমাণ পশ্চিমা দেশগুলি।
একটি মানবশিশুর মনোদৈহিক বিকাশের জন্য এবং সমাজের একজন সৎ, নীতিবান ও কর্মক্ষম সদস্য হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য মায়ের তত্ত্বাবধানের বিকল্প নেই। এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের কিছু মতামত উল্লেখ করছি।
ড. আহমদ যকী ছালেহ বলেন, ‘আমাদের পরামর্শ এই যে, মায়েরা যেন নিজ সন্তানের লালনপালন নিজেরাই করেন। এ বিষয়ে অন্যদের উপর নির্ভর করা ঠিক হবে না। কারণ শিশুর স্বাভাবিক গঠনে মায়ের উপস্থিতি অপরিহার্য। শিশু তার মানসিক শক্তি ও বিকাশে মায়ের মমতাপূর্ণ সান্নিধ্যের প্রচন্ড মুখাপেক্ষী। মা তাকে ভয়-ভীতি থেকে এবং মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টিকারী বিষয়গুলো থেকে আগলে রাখেন।’
অ্যানা ফ্রয়েড বলেন, ‘অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, মায়ের দুধ পান করে বড় হওয়া শিশুরা কৃত্রিম ব্যবস্থায় লালিত পালিত শিশুদের চেয়ে অনেক দিক থেকে বিশিষ্টতার অধিকারী হয়ে থাকে। মায়ের মমতাপূর্ণ সান্নিধ্য ও বেবি হোমের স্বাস্থ্যগত পরিচর্যা দু বিষয়েরই সুফল এই শিশুদের মাঝে লক্ষ্য করা যায়।’
উল্লেখ্য যে, মনস্তত্ব সম্পর্কে অ্যানা ফ্রয়েডের কিছু প্রসিদ্ধ চিন্তা রয়েছে।
কর্মজীবী মায়েদের পক্ষে শিশু সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া সম্ভব নয়। শিশুর বয়স দু’ চার মাস হলেই তারা কৌটার দুধের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এটা যে শিশুর স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর তা তো নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। তাছাড়া শিশুর তত্ত্বাবধান ও লালনপালনের ভার অর্পণ করতে হয় দাদী, নানী কিংবা অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের উপর। একান্নবর্তী পরিবারের ধারা বর্তমান নাগরিক জীবনে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় এখন একমাত্র ভরসা কাজের বুয়া। তাই স্বাভাবিকভাবেই বেবি হোমের প্রাসঙ্গিকতা এসে পড়ে। আলোচিত নীতিমালায় বেবি হোম স্থাপনেরও প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু এই বিকল্প ব্যবস্থা শিশুর মনোদৈহিক বিকাশের পক্ষে কতটুকু উপযোগী তা এখন অস্পষ্ট নয়।
অ্যানা ফ্রয়েড বলেন, ‘বেবি হোমের শিশুরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, খাবার টেবিলের নিয়মকানুন এবং কিছু সামাজিক রীতি-নীতিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। কিন্তু স্বভাব ও চরিত্রগত দিক থেকে অনেক সময় দেখা যায় অতি দরিদ্র পরিবারের শিশুদের চেয়েও তাদের অবস্থা শোচনীয়। এ বিষয়ে অনেক শ্রম ব্যয় করা হয়েছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। বিষয়টি খুবই হতাশাজনক।
‘এটা প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হয় যখন এই শিশুরা হোম ছেড়ে যায় । তাই ইদানীং বিশেষজ্ঞরা বেবি হোমের চিন্তারই বিরোধিতা করছেন।’
আজকাল কেউ কেউ কর্মজীবী নারীর জন্য দীর্ঘ ছুটির প্রস্তাব করছেন। যাতে শিশুদের সবচেয়ে প্রয়োজনের মুহূর্তে মায়েরা তাদের কাছে থাকতে পারেন। কোনো কোনো আমেরিকান প্রতিষ্ঠান তো সপ্তাহে তিন দিনের ছুটি দিতে আরম্ভ করেছে!
সেই পুরানো কথা-পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পশ্চিমারা যা পরিত্যাগ করে আমরা কাঙালের মতো তা গ্রহণ করার জন্য এগিয়ে যাই। (নাউযুবিল্লাহ)
ছোট একটি ঘটনা উল্লেখ করে অন্য প্রসঙ্গে যাব। মিসরের ‘জুমহুরিয়া’ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটির সারসংক্ষেপ হল : এক কর্মজীবী মা তার তিন সন্তানকে বুয়ার কাছে রেখে কাজে বেরিয়ে যেতেন। তিন বছর ধরে বুয়াটি এই দায়িত্ব পালন করছিল। একদিন মা অফিসে অসুস্থ বোধ করায় সময়ের আগেই বাড়ি ফিরছিলেন। রাস্তায় যে দৃশ্য তার নজরে পড়ল তাতে তার প্রাণপাখি খাঁচাছাড়া হওয়ার যোগার। তিনি দেখলেন, তার তিন সন্তান মলিন কাপড়ে ভিক্ষা করছে! তিনি দ্রুত একটি ট্যাক্সিতে করে তাদেরকে বাসায় নিয়ে এলেন এবং ঐ বুয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলেন।
ঘটনাটি বোধ হয় ব্যাখ্যা করে বোঝানোর প্রয়োজন নেই।
অনেকে হয়ত বলবেন, শিশুর জন্যেই তো মা চাকরি বাকরি করেন, কিন্তু প্রশ্ন হল, এর জন্য শিশুকে কতখানি মূল্য দিতে হচ্ছে তা কি ভেবে দেখা উচিত নয়।
পাশ্চাত্যের এই দর্শন নারীর উন্নতি ও সমৃদ্ধির দর্শন নয়, ক্ষয় ও অবক্ষয়ের দর্শন। এর প্রধান উদ্দেশ্য, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থে নারীর জীবনী শক্তি নিংড়ে বের করে নেওয়া। কারণ পুঁজিবাদী জীবনব্যবস্থায় মানুষ হল অর্থ বানানোর মেশিন। আর সেই মেশিন থেকে উৎপাদিত অর্থের সামান্য একটি ভগ্নাংশ দিয়েই কিনে নেয়া হচ্ছে নারীর জীবন ও যৌবন।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘নারীর গড় আয়ু ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এর কারণ দুটি :
১. হন্তদন্ত হয়ে কর্মস্থলের উদ্দেশে বের হওয়া, এরপর ক্লান্ত দেহে ঘরে ফিরে ঘরের কাজে ব্যস্ত হওয়া। ২. অধিক পরিমাণে ধুমপান।
যুক্তরাষ্ট্রের সাপ্তাহিক ওমেনস হেলথ-এর বিবরণ অনুযায়ী সে দেশে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন টিনএজ কিশোরী ক্লামাইডিয়া সংক্রমণে আক্রান্ত, যা যৌন সংক্রমণ বলে বিবেচিত এবং স্থায়ী বন্ধ্যাত্বের জন্য দায়ী।
দি ইনডিপেনডেন্ট-এর প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, লন্ডনে প্রতি ১০ জন নারীর একজন চিকিৎসাযোগ্য যৌনরোগ ভাইরাসে আক্রান্ত।
মিসরের আলআহরাম পত্রিকার আরেকটি রিপোর্ট দেখুন, অল্প বয়সী তরুণী মাতাদের মানসিক দুরবস্থার একটি চিত্র তাতে পাওয়া যাবে : ‘জাপানে যে বিষয়টি ভয়াবহ সমস্যার রূপ ধারণ করেছে এবং বিশেষজ্ঞ ও সমাজবিজ্ঞানীদেরকে চিন্তিত করে তুলেছে তা হল, এখন মায়েরাই তাদের শিশু সন্তানদেরকে হত্যা করছেন। গত চার বছরে ২০০ শিশু তাদের জীবনের প্রথম বসন্ত অতিক্রম করার আগেই তাদের সবচেয়ে আপনজনের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছে।
আর হবেই না কেন, স্বামী সারাদিন কাটাচ্ছেন নিজের কর্মস্থলে, এরপর গভীর রাত পর্যন্ত নাইট ক্লাবে ও মদের আসরে, ওদিকে অল্প বয়স্ক তরুণী মা বুঝতে পারছেন না কীভাবে তার ক্রন্দনরত সন্তানটিকে শান্ত করবেন। ঘরের কাজ করবেন, না বাইরেরটা সামলাবেন। একসময় তার মানসিক অস্থিরতা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে যে, আপদ বিদায় করে হয়তোবা নিজেও চির বিদায়ের প্রস্ত্ততি।
অবক্ষয়ের ভয়াবহতা অনুমান করার জন্য দু একটি পরিসংখ্যান উল্লেখ করা যেতে পারে।
কিংস ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা রিপোর্ট অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের দম্পতিদের শতকরা ৩৭ জন স্বামী এবং শতকরা ২৯ জন স্ত্রী যৌন বিষয়ে অবিশ্বস্ত।
‘দম্পতি’ শব্দটি লক্ষ করুন। পশ্চিমা জীবন-ব্যবস্থায় ‘দম্পতি’র পর্যায় আসে অনেক ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা’র পর। আমাদের দেশেও এ ধরনের পূর্ব-পরীক্ষার সুপারিশ এক শ্রেণীর পত্র-পত্রিকায় বেশ খোলামেলাভাবে আরম্ভ হয়েছে!
আরো বলা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের শতকরা ৬০ জন কিশোর-কিশোরী হাইস্কুল (দ্বাদশ শ্রেণী) উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই প্রত্যক্ষ যৌন অভিজ্ঞতাপ্রাপ্ত হয়। আরেক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় প্রতি ১ মিনিটে একজন ‘কুমারী মাতা’ (পড়ুন, ‘অবিবাহিতা নারী’। এটা পশ্চিমাদের ‘ভদ্রতা’ ও ‘শালীনতাবোধে’র একটি জঘণ্য দৃষ্টান্ত যে, হযরত মারইয়াম রা., তাদের ভাষায় জননী মেরীর জন্য যে উপাধিটি তারা ব্যবহার করে থাকে তা-ই ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করে অনৈতিক সম্পর্কের কারণে সন্তান জন্মদানকারিনী নারীর ক্ষেত্রে!) সন্তান প্রসব করে। এ অবস্থা চলতে থাকলে একবিংশ শতাব্দীতেই যুক্তরাষ্ট্রের এক তৃতীয়াংশ শিশু হবে ‘কুমারীমাতা’র (পড়ুন, ‘অবিবাহিতা নারী’র) সন্তান। আর এই অবস্থাটা নারীর জন্যই সর্বাধিক গ্লানিকর। কারণ এই টিনএজ মায়েদের শতকরা ৮০ জন সন্তান জন্মদানের পর আর্থিক কষ্টে পড়ে যায়। ফলে তাদের নির্ভর করতে হয় সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারের উপর। এতে সরকারের অতিরিক্ত বার্ষিক ব্যয় হয় ৭ বিলিয়ন ডলার।
প্রসঙ্গত, আরেকটি বিষয়ও চিন্তা করা যায়। তা হচ্ছে, পশ্চিমা দেশগুলোতে অবাধ যৌনাচারের কারণেই সন্তানের পিতৃপরিচয় একটি জটিল সমস্যা। এই বাস্তবতার কারণে সেখানে সন্তান পরিচিত হয় মাতৃপরিচয়ে। অথচ একে নারীর জন্য মর্যাদার বিষয় মনে করে অনেক নারীবাদী শুধু মাতৃপরিচয়ে সন্তানের পরিচয়ের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করে থাকেন। এটা যে এদেশের মা-বোনদের জন্য কত বড় অবমাননাকর প্রস্তাব তা উপলব্ধি করার যোগ্যতাটুকু আল্লাহ যেন আমাদের দায়িত্বশীলদের দান করেন।
চিত্রের আরেকটি দিক দেখুন : গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, উন্নত বিশ্বে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে যেসব ভয়ঙ্কর অপরাধীর মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকের বয়স ২০ বছরের মধ্যে। এরা অধিকাংশই অবিবাহিত নারীল, কি ভগ্ন পরিবারের সন্তান। এরা শুধু ভয়ঙ্কর স্বভাবেরই নয়, এদের সংঘটিত অপরাধগুলো আগের চেয়ে অধিক হিংস্র ও ভয়াবহ।
যাই হোক, এভাবে পরিসংখ্যান দেখাতে থাকলে অনেক পরিসংখ্যানই দেখানো যাবে, এখন আমাদের ঈমানদার মা-বোনদের এবং তাঁদের অভিভাবক ও দায়িত্বশীলদের কর্তব্য, পশ্চিমা জীবন-ব্যবস্থার অন্ধ অনুকরণের বিষয়ে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় মত প্রকাশ করা এবং ইসলামে নারী-পুরুষ উভয়কেই যে ন্যায্য অধিকার প্রদান করেছে, তা বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো। পশ্চিমাদের অন্ধ-অনুকরণ নয়, কুরআন-সুন্নাহয় সমর্পিত হলেই আমরা আলোর সন্ধান পাব। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দান করুন।