বিশ্বকাপ ক্রিকেট : প্রথাবিরোধী কিছু কথা
বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে সারা দেশে যে অবর্ণনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা দুঃখজনক হলেও আকস্মিক নয়। এদেশে এ জাতীয় আসরের আছর এমন হওয়াই স্বাভাবিক। উপরন্তু এর পিছনে যখন মিডিয়ার মতো অসুরিক শক্তি তৎপর। নিঃসন্দেহে সকলকে তাদের নিজ নিজ ভূমিকার জন্য আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে।
এই আসরকে কেন্দ্র করে সারা দেশে এমন এক উন্মাদনার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে, অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত এই দরিদ্র দেশের কত শত কোটি টাকা বিনষ্ট হল, কত কোটি মানুষের কত শত কোটি শ্রমঘণ্টা পানির মতো ভেসে গেল, তরুণ-যুবকদের স্বাস্থ্য, পড়াশোনা ও নৈতিকতা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হল কোনো কিছুই ভেবে দেখার ফুরসৎ নেই, এমনকি হৈ চৈ করতে গিয়ে আহত-নিহত হওয়ার ঘটনাগুলিও এই মুহূর্তে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। এককথায় সাধারণ মানুষের জন্য এইসব খেলা এখন ‘খেলা’ নয়, জীবন-মরণের বিষয়। এই অবস্থাটাও ‘বিনোদন’ বলে গণ্য হতে পারে কি না তা সবার ভেবে দেখা উচিত। আরো যে বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার তা হচ্ছে পর্দার পিছনের নিরবতা। ঐখানে কোনো উন্মাদনা নেই, ঐখানে আছে পয়সা-কড়ির চুলচেরা হিসাব। কারণ এইসব আসর হচ্ছে পুঁজিবাদী চক্রের পয়সা উপার্জনের মোক্ষম উপায়।
এই দুটি বিষয়কে সামনে নিয়ে বর্তমান সংখ্যায় দুটি লেখা প্রকাশিত হল। প্রথম লেখাটি লিখেছিলেন হযরত মাওলানা মুফতী তাকী উসমানী ছাহেব আজ থেকে দুই যুগ আগে। ১৯৮৭ সালে ভারতের সাথে চতুর্থ ওয়ার্ল্ড কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিল পাকিস্তান। ঐ সময় পাকিস্তানে ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে যে মগ্নতা ও মত্ততার সৃষ্টি হয়েছিল এবং সময় ও সম্পদের যে বিপুল অপচয় ঘটেছিল তার উপর আক্ষেপ ও মর্মবেদনা প্রকাশ করে উপরোক্ত নিবন্ধটি লেখা হয়েছিল। প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় তার অনুবাদ পেশ করা হল। অনুমান করা কঠিন নয়, দুই যুগ আগের অবস্থাই যদি উন্মত্ততার পর্যায়ে পৌঁছে থাকে তাহলে এখন তা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে?
আশা করি, পাঠক এখানে চিন্তার কিছু খোরাক পাবেন। আমাদের দুর্বল প্রচেষ্টায় এই ‘মহাপ্লাবন’ হয়ত রোধ করা যাবে না, কিন্তু এই সামান্য আয়োজন হচ্ছে একটি ব্যাপক পাপাচারের বিষয়ে বারাআত ও দায়মুক্তির ঘোষণা, যার অসীলায় মেহেরবান আল্লাহ হয়তো আমাদেরকে তাঁর আযাব থেকে রক্ষা করবেন।-সম্পাদক
খেল ইয়া মাকসাদে যিন্দেগী
শাইখুল ইসলাম মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তকী উসমানী
গত মাসে পাকিস্তান ও ভারতে যৌথভাবে বিশ্বকাপ ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় দেড় মাস যাবৎ এটাই ছিল সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু। সর্বত্র আলোচনার বিষয়বস্ত্ত ছিল খেলা এবং যেখানেই কিছু লোক একত্র হয়েছে সেখানেই খেলার কথা অবধারিতভাবে উঠে এসেছে। দেশের মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে শ্রমিক-কর্মচারী পর্যন্ত অধিকাংশ মানুষ খেলার সর্বশেষ সংবাদ জানার জন্য, টেলিভিশনের পর্দায় খেলা দেখার জন্য এবং রেডিওতে ধারাবিবরণী ও আলোচনা-পর্যালোচনা শোনার জন্য শুধু ব্যস্তই ছিল না; বরং মগ্ন ও সমাহিত ছিল। যেন এটাই এখন গোটা জাতির একমাত্র কাজ। যেন এই দেশের কোথাও কোনো সমস্যা নেই এবং দেশের চূড়ান্ত উন্নতি নিশ্চিত হয়ে গেছে। সুতরাং জাতির সামনে বিনোদন ও খেলাধুলায় মত্ত হওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই।
এখনও মানুষের মস্তিষ্ক হতে বিগত দেড় মাসের খেলার নেশা দূর হয়নি। এরই মধ্যে আজকের খবরের কাগজে বলা হয়েছে-ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল আসন্ন পাকিস্তান সফরে তিনটি টেস্ট সিরিজ ছাড়াও তিনটি এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে। (রোযনামায়ে জঙ্গ, ১৪/১১/৮৭)
মোটকথা, আরো দেড় মাস গোটা দেশ, বিশেষত তরুণশ্রেণী পুনরায় ক্রিকেট জ্বরে আক্রান্ত হবে। আরো শোনা যাচ্ছে যে, এই দ্বিপাক্ষিক ম্যাচ শেষ হওয়ার পর পাকিস্তান ক্রিকেট দল বিদেশ সফরে রওনা হবে।
এখানে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, যেসব খেলাধুলা সুস্থতা ও দৈহিক সক্ষমতার পক্ষে সহায়ক তা মৌলিকভাবে নাজায়েয বা দোষণীয় নয়। কিন্তু প্রত্যেক বিষয়েরই একটা সীমারেখা আছে, যা লঙ্ঘন করা হলে সাধারণ মুবাহ ও বৈধ কাজ তো দুরের কথা, নেক আমলও শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয থাকে না। বরং আপত্তি ও প্রতিবাদের উপযুক্ত হয়ে যায়। বর্তমানে খেলাধুলার অবস্থা এই যে, তা আর খেলাধুলা নয়; বরং জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে পরিণত হয়েছে। এবং জীবনের বহু প্রয়োজন ও বাস্তব সমস্যার চেয়েও তা বহু গুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে খেলার পিছনে গোটা জাতির মূল্যবান সময় যেভাবে বিনষ্ট হচ্ছে তার নিন্দা ও আফসোসের ভাষা আমার জানা নেই।
সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কে তো কারো দ্বিমত নেই। শুধু ইসলামই নয়, পৃথিবীর সকল ধর্ম, এমনকি নাস্তিক ও বস্ত্তবাদি দার্শনিকরাও সময়ের গুরুত্ব ও সময়কে কাজে লাগানোর শিক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু এইসব খেলাধুলার সময়ে আমাদের অবস্থা দেখে মনে হয় যে, আমাদের কাছে সবচেয়ে মূল্যহীন ও অপ্রয়োজনীয় জিনিসের নাম সময়। সুতরাং তা ব্যয় করার জন্য খেলা দেখা ও খেলা নিয়ে অহেতুক গালগল্পে লিপ্ত হওয়ার চেয়ে উত্তম ক্ষেত্র আর কিছুই নেই।
আশ্চর্যের বিষয় এই যে, ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালীন কোনো কোনো জায়গায় পুরোদস্ত্তর সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হয়। যেখানে ছুটি ঘোষণা করা হয়নি সেখানেও কাজ-কর্মে ছুটির আবহ বিরাজ করে, অফিস-আদালত থেকে শুরু করে কলেক-ভার্সিটি পর্যন্ত সর্বত্র সবার দৃষ্টি থাকে টিভির মনিটরে এবং মন পড়ে থাকে খেলার মাঠে। এ অবস্থায় অফিসের দায়িত্বপূর্ণ কাজকর্মে এবং শ্রেণীকক্ষের অধ্যয়ন ও অধ্যাপনার মতো কাজে মনই বা কীভাবে বসবে আর কীভাবে একাগ্রতাই সৃষ্টি হবে? অথচ মনোযোগ ও একাগ্রতা ছাড়া এসব কাজ সুসম্পন্ন করা কি কখনো সম্ভব? আমাদের কিশোর ও তরুণশ্রেণী যারা এখনো খেলাধুলা ও জীবনের বাস্তব প্রয়োজনের মাঝে পার্থক্য করার যোগ্যতা অর্জন করেনি তাদের মন-মস্তিক্ষে যদি দিনরাত ব্যাট-বলের শাসন চলতে থাকে তাহলে তারা লেখাপড়ার মতো রসকষহীন বিষয়ে কিভাবে মনোযোগ দেবে? উপরন্তু তারা যখন বয়স্কদেরকেও সব কাজকর্ম ছেড়ে খেলা দেখায় মগ্ন দেখে এবং এটাই তাদের গল্পগুজবের একমাত্র বিষয় হয় তখন তো তাদের কচিমনে আর কোনো দ্বিধা-সংশয় অবশিষ্ট থাকে না এবং এর ক্ষতিকর দিকগুলো তাদের উপলব্ধি থেকে সম্পূর্ণ বিদায় নিয়ে যায়।
এখানেই শেষ নয়, সরকার ও জনসাধারণ উভয় পক্ষের কাছে খেলোয়াড়দের যে মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা এবং মিডিয়া ও গণমাধ্যমে তাদের যে প্রচার ও প্রশংসা ফুটে উঠে তা জাতির শিশু-কিশোরদের চরমভাবে বিভ্রান্ত করে। কারণ এ ধরনের মূল্যায়ন তো দেশের শীর্ষস্থানীয় গবেষক-বিজ্ঞানী এবং মেধাবী কোনো সমাজ-সংস্কারকের ভাগ্যেও কখনো জোটে না। কৃতী খেলোয়াড়ের একেকটি এ্যাকশনের জন্য লাখ লাখ টাকার পুরস্কার দেয়া হয়, ম্যাচ সিরিজে বিশেষ কৃতিত্বের জন্য থাকে গাড়ি-বাড়ি ও নগদ টাকার পুরস্কার। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ ও পদস্থ কর্মকর্তারা সারা দিন বসে বসে এইসব কর্মকান্ড দেখতে থাকেন এবং নিজেদের হাতে তাদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। তো শিশুরা যখন দেখে যে, লেখাপড়ার পরিবর্তে যারা খেলাধুলাকে জীবনের লক্ষ্য বানিয়েছে তারাই বর্তমান সময়ের তারকা তখন লেখাপড়া ও ভালো হয়ে চলার উপদেশ তাদের কাছে কপটতা বলে মনে হয়। এক্ষেত্রে তাদেরকে কতটা দোষ দেওয়া যায়?
এ তো হল সময়ের অপচয় এবং মেধা ও প্রতিভা ধ্বংসের দিক। এরপর যদি এইসব টুর্ণামেন্টের আর্থিক ক্ষতি সম্পর্কে চিন্তা করা হয় তবে সেটাও কম দুঃখজনক নয়। একেকটি স্টেডিয়ামের নির্মাণ ও সংস্কারের পিছনে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয় এবং খেলার আয়োজন ও সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য যে বাজেট রাখা হয় তা কি এই দরিদ্র দেশের জন্য চরম দুর্ভাগ্যজনক নয়?
এখন পৃথিবীর অনেক দেশেই খেলাধুলার প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে। কিন্তু যে উন্মাদনা ও উন্মত্ততা আমাদের দেশে দেখা যায় তা পৃথিবীতে আর কোনো দেশে দেখা যায় কি না সন্দেহ। এই বিংশ শতাব্দীর শেষেও পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ আছে, যেগুলোর নাম খেলাধুলার সাথে কখনো শোনা যায়নি; বরং পৃথিবীর অধিকাংশ দেশই সম্ভবত এ বৈশিষ্ট্য নিয়েই চলে। অথচ তারাও তাদের শিশু-কিশোরদের শারীরিক সুস্থতার বিষয়ে সজাগ। খেলাধুলাকে জীবন-মরণের বিষয় না বানিয়েও তারা শুধু বিংশ শতাব্দীতে জীবিতই থাকেনি, উন্নতি ও সমৃদ্ধির দিক থেকে তারা আমাদের চেয়েও অগ্রগামী। পৃথিবীর এক বৃহৎ রাষ্ট্র চীনের কথাই ধরুন, শরীর চর্চা ও দেহ সুরক্ষার কলা-কৌশলের প্রতি যতটা গুরুত্ব এদের মধ্যে পাওয়া যায় অন্তত আমি তা অন্য কোনো দেশের নাগরিকদের মধ্যে দেখতে পাইনি। কিন্তু এটাকেও তারা শুধু ব্যায়াম ও শরীর চর্চার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছে, একে এমন ব্যাপক উন্মাদনার অনুসঙ্গ হতে দেয়নি। যা আবাল-বৃদ্ধের মন-মস্তিষ্ককে আচ্ছন্ন করে রাখবে এবং তাদেরকে মৌলিক দায়িত্ব-কর্তব্য হতে উদাসীন বানিয়ে দেবে।
একথাগুলির উদ্দেশ্য-আল্লাহ না করুন-শুধু সমালোচনা ও তিরস্কার করা নয়; বরং পূর্ণ দরদের সাথে দেশের সরকার ও জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন করতে চাই যে, ম্যাচপ্রীতি এখন সীমা অতিক্রম করেছে এবং এর সুদূর প্রসারী ক্ষতি এমন যেকোনো ব্যক্তিই উপলব্ধি করতে পারবে, যার মধ্যে সামান্যতম বিবেক-বুদ্ধি অবশিষ্ট আছে। আল্লাহর ওয়াস্তে চিন্তা করুন! এভাবে আমরা আমাদের জাতিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি? আমরা এমন একটি জাতি, যারা অসংখ্য সমস্যার ঘূর্ণিপাকে আটক পড়ে আছি এবং নিজেদের প্রয়োজন পূরণে বাইরের দেশের সাহায্যের মুখাপেক্ষী, যেসব সাহায্য দেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় মর্যাদার মূল্যে কেনা হয়। আমাদের প্রতিটি দিন একেকটি নতুন সমস্যা নিয়ে উপস্থিত হয়। শিশু-কিশোরদের সহীহ তালীম-তরবিয়তের ব্যবস্থা নেই, আদালতে অমীমাংসিত মামলার স্ত্তপ জমে আছে, চারদিকে শত্রুরা হা করে আছে।
আজ এই জাতির প্রয়োজন খেলোয়াড়ের নয়, মেধাবী মানুষ ও দেশ গড়ার সৈনিকের। অথচ আমরা এমন এক রঙ তামাশার পরিবেশ সৃষ্টি করেছি যে, গায়ক-নায়ক ও খেলোয়াড়রাই আজ হয়ে গেছে নতুন প্রজন্মের আদর্শ।
অনুবাদ : মুহাম্মাদ আনসারুল্লাহ হাসান
উন্নতি কি উন্মাদনায়?
আবদুল্লাহ মাসুম
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দশম আসরের উদ্বোধন হলেও একে ঘিরে উন্মাদনা শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকে। আর তা চলবে ২ এপ্রিল খেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত। কি ক্রিকেট, কি ফুটবল-বিশ্বকাপের প্রতিটি আসরেই দেখা যায় বাংলাদেশীদের আবেগ-উচ্ছাস একটু বেশি। আর এবার তো এটা সবকিছুকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আমাদের গণমাধ্যম কোথায় এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করবে, উল্টো তা আরো উসকে দেয়। দৈনিক পত্রিকাগুলোর মধ্যে যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়, কে কত আকর্ষণীয়ভাবে একে কভার করতে পারে।
এই সর্বগ্রাসী উন্মাদনায় কারো চিন্তা করার ফুরসৎ থাকে না যে, এই সব টুর্ণামেন্ট আমাদের জন্য উপকারী না ক্ষতিকর। দেশের চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরাও এ সময় একেবারে নীরব হয়ে থাকেন। কখনো কখনো তো উৎসাহদাতার ভূমিকাও তারা পালন করেন। তাঁদের বিদ্যা-বুদ্ধি-দেশপ্রেম কোনো কিছুতেই এর চরম ক্ষতিকর দিকগুলো ধরা পড়ে না। আমরা মনে করি, দেশের সচেতন মানুষের ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করা উচিত, খেলা নিয়ে এই উন্মাদনায় ক্ষতিকর কী কী ঘটে চলেছে। বর্তমান নিবন্ধে কিছু বিষয়ে সামান্য আলোকপাত করার চেষ্টা করা হবে।
সময়ের অপচয়
সময়ের গুরুত্ব কারো অজানা নয়। সবাই বুঝে যে মুহূর্ত চলে যায় তা আর কখনো ফিরে আসে না। তাই সময়ের অপচয় মানে জীবনেরই অপচয়। কোনো বুদ্ধিমান মানুষ কি নিজের জীবনের অপচয় করতে পারে? অন্তত একজন মুমিন তো পারে না। কারণ সে বিশ্বাস করে যে, হাশরের ময়দানে তাকে আল্লাহর সকল নিয়ামতের হিসাব দিতে হবে। তাহলে যে দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলিম সে দেশে কি শুধু খেলার পিছনে জীবনের মূল্যবান সময়ের এত অপচয় হতে পারে? কিন্তু তিক্ত বাস্তবতা এই যে, আমরা নির্দয়ভাবে আমাদের মূল্যবান সময় ধ্বংস করে চলেছি।
বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার অনেক আগ থেকেই তা শুরু হয়েছে। বিশ্বকাপ শেষ হওয়া পর্যন্ত সম্ভবত তা চলতেই থাকবে।
মাঠে গিয়ে খেলা দেখার টিকিট সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঙালী যে হুজুগ ও উন্মাদনার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এর কোনো নজির পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ।
তীব্র শীতের মাঝে ৭২ ঘণ্টা খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়েও টিকিট সংগ্রহ করেছে অনেক মানুষ। কোনো কোনো পত্রিকার সম্পাদকীয় ভাষ্যে এসব উন্মাদনায় আরও বাতাস দিয়ে বলা হয়েছে-টিকিট সংগ্রহ নিয়ে এরকম পাগলামী আর উন্মাদনা অন্য কোনো দেশে দেখা যায় না। বাঙালীর আবেগ বলে কথা! (পাক্ষিক ক্রীড়াজগত, ৩৪ বর্ষ, সংখ্যা ১৪, মাসিক কিশোরকণ্ঠ, জানুয়ারি ০৭ ঈ.)
ভারতের আজকাল পত্রিকার ক্রীড়া সাংবাদিক মন্তব্য করেন, বিশ্বকাপকে ঘিরে এম উন্মাদনা বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোথাও দেখতে পাবেন না। (দৈনিক কালের কণ্ঠ, ২০ ফেব্রুয়ারি)
এরপর টুর্ণামেন্ট চলাকালীন কীভাবে যে গোটা দেশের মানুষের সময় নষ্ট হচ্ছে ও হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ১৪টি দল ৪৯ টি ম্যাচ খেলবে দীর্ঘ দেড় মাস ধরে। প্রতিদিন একটি করে, কোনো কোনোদিন দুটি করে সকাল-বিকাল খেলা হবে। এরপর আছে খেলার আগে পরে আলোচনা ও পর্যালোচনা। আজে কুইজ, পত্রিকা, ইন্টারনেট। সব মিলিয়ে অসংখ্য মানুষের বিপুল সময় ধ্বংসের এক মহা আয়োজন চলছে।
অর্থের অপচয়
পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী পুরাতন টিভি বদল করে নতুন মডেলের টিভি ঘরে আনা শখে পরিণত হয়েছে। এলসিডি টিভির চাহিদা খুব বেশি। (দৈনিক যুগান্তর ১৮ ফেব্রুয়ারি)
এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় বড় পর্দায় খেলা দেখার আয়োজনের পিছনেও অর্থের অপচয় কম নয়। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (ডিসিসি) রাজধানীর ১৪টি স্থানে প্রজেক্টরের মাধ্যমে বড় পর্দায় সরাসরি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সব খেলা দেখানোর আয়োজন করেছে। (সূত্র : দৈনিক যুগান্তর ১৯ ফেব্রুয়ারি)
আয়োজক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কী পরিমাণ অর্থের অপচয় করেছে তা কিছুটা অনুমান করা যাবে নিচের রিপোর্ট থেকে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, মিরপুর জাতীয় স্টেডিয়াম ও রাস্তাঘাট সংস্কারের জন্য বিসিবি (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দিয়েছে আড়াই কোটি টাকা। রাস্তাঘাট সংস্কারের জন্য সরকারী তহবিল থেকেও ৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জানান, ৫টি স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য ব্যয় হয়েছে ৫৪ কোটি টাকা। তিনি আরো বলেণ, আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে দেওয়া হয়েছে ৮৫ কোটি টাকা।
বিসিবির প্রেসিডেন্ট বলেছেন, আইসিসি (আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পরিষদ) দিয়েছে মাত্র ১০ কোটি টাকা, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। (সাপ্তাহিক কাগজ, বর্ষ ৩, সংখ্যা : ৬)
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এ আয়োজনে ৩৫০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। তিনি এ অর্থের কতটা কোথায় খরচ হয়েছে স্বচ্ছতার স্বার্থে তা প্রকাশ করার দাবিও জানিয়েছেন। (দৈনিক কালের কণ্ঠ ২০ ফেব্রুয়ারি)
বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, ব্র্যান্ডিং (বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরা) এর জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ করেছে সাড়ে আট কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০ লাখ ডলার দেওয়া হয়েছে আইসিসিকে। এর বিনিময়ে তারা গণমাধ্যমে বাংলাদেশের পরিচিতির ব্যবস্থা করবে। (দৈনিক কালের কণ্ঠ, ২০ ফেব্রুয়ারি)
বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র দেশের পক্ষে এ ধরনের অপচয় কত বড় অন্যায় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এরপর আছে ব্যক্তিগত পর্যায়ের অপচয়। আশ্চর্যের বিষয় হল, হজ্ব ও কুরবানীর মওসুমে যেসব বুদ্ধিজীবী হজ্ব-কুরবানী না করে গরীব-মিসকীনকে দান-খয়রাত করার সুফল ও যথার্থতা নিয়ে উপদেশ দিয়ে থাকেন বিশ্বকাপের সর্বব্যাপী অপচয়ের বেলায় তারাই আবার সম্পূর্ণ নীরব হয়ে যান।
শিক্ষাঙ্গনের দূরবস্থা
শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড কথাটি কম-বেশি সকলেই জানেন। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাতে প্রতিনিয়ত আমরা আহত করছি এই মেরুদন্ডকে। এমনিতেই দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোর অবস্থা অতি শোচনীয়। এর উপর এখন যুক্ত হয়েছে বিশ্বকাপর উন্মাদনা!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আড্ডার মূল বিষয় বিশ্বকাপ। শিক্ষার্থীরা লাল-সবুজ টি শার্ট পরে ক্যাম্পাসে ঘুরছে সব সময়। প্রতিটি হলে টিভি। কেনা হচ্ছে নতুন নতুন টেলিভিশন। প্রতিটি হলের মাঠে বড় বড় স্ক্রীন বসানো হয়েছে। তিনটি বড় প্রজেক্টর টিএসসিতে স্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষক ক্লাবে বিরাজ করছে অন্যরকম পরিবেশ।
বিশ্বকাপের জোয়ারে শিক্ষকরা যেন তাদের ছাত্রজীবন ফিরে পেয়েছেন।
ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষ্টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বকাপকে ঘিরে ছাত্ররা নিয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। যেমন, জার্সি বানানো, একসাথে খেলা দেখার ব্যবস্থা, বাংলাদেশের খেলার দিন একসাথে খানাপিনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি। উদ্বোধনীসহ বিশ্বকাপের সব অনুষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়ামে বড় পর্দায় দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। হলগুলোর টিভি রুমকে সাজানো হয়েছে বিভিন্ন তারকার বর্ণিল পোস্টারে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও চলছে বিশ্বকাপের ঢেউ। আবাসিক হল থেকে শুরু করে পুরো ক্যাম্পাস এখন ক্রিকেট জ্বরে কাঁপছে।
পটুয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও একই অবস্থা। রেজিস্টার নওয়াব আলী খানের উদ্যোগে খেলার মাঠে বিশাল প্রজেক্টর বসানো হয়েছে। এতে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী একসঙ্গে খেলা উপভোগ করবে। (দৈনিক আমার দেশ ১৯ ফেব্রুয়ারি)
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বাণিজ্য
বিশ্বকাপ ক্রিকেট এখন শুধু ক্রীড়া ইভেন্ট বা বিনোদন নয়। এটি বিশ্ববাণিজ্যেরও অন্যতম প্রধান উপলক্ষ হয়ে গেছে। একে কেন্দ্র করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আদান-প্রদান হয়। নিম্নে একে ঘিরে বাণিজ্যের কিছু দিক উল্লেখ করা হল।
আইসিসির বাণিজ্য
আইসিসি বিশ্বকাপের প্রচার স্বত্ত্ব ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যে বিক্রি করেছে ইএসপিএন, স্টার স্পোর্টস এবং স্টার ক্রিকেটের কাছে। তাদের কল্যাণে বিশ্বের প্রায় ২২০ টি দেশে সরাসরি দেখা যাবে এই খেলা (পাক্ষিক ক্রীড়া জগত, ৩৪ বর্ষ, ১৪ সংখ্যা)
এদিকে ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য বাংলাদেশ থেকে নিয়েছে ১০ লাখ ডলার। (প্রাগুক্ত)
বিসিবির বাণিজ্য
বিশ্বকাপ টিকিট বিক্রি করে ২০ কোটি টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখেছে বিসিবি (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড)। বহু টাকার বিনিময়ে টিকিট বিক্রির স্বত্ব বিক্রি করেছে সিটি ব্যাংকের কাছে। পরে অগ্রণী ব্যাংকও জড়িত হয়েছে। টিকিটের সর্বনিম্ন মূল্য ২০০/-টাকা। আর সর্বোচ্চ মূল্য ২৪,৫০০/-টাকা। (পাক্ষিক ক্রীড়া জগত ৩৪ বর্ষ, সংখ্যা : ১৩)
গণমাধ্যমের বাণিজ্য
বর্তমান আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট সরাসরি সম্প্রচারের দায়িত্ব পেয়েছে খেলাধুলার চ্যানেল ইএসপিএন ও স্টার স্পোর্টস।
খেলার ফাঁকে বিজ্ঞাপন প্রচার করে তারা উপার্জন করছে কোটি কোটি টাকা। প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার (পিটিআই) খবর অনুযায়ী প্রতি ১০ সেকেন্ডের একটি বিজ্ঞাপন স্লটের জন্য গ্রাহকের কাছ থেকে সাড়ে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ রুপি নিয়েছে।
ইএসপিএন সফটওয়্যার ইন্ডিয়া লিমিটেড আশা করছে, ভারত ভালো খেলে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠলে বিজ্ঞাপন স্লটের চাহিদা বাড়বে কয়েক গুণ। স্বাভাবিকভাবে ৫/৬ গুণ হবে বলে আশার করা হচ্ছে। এই কোম্পানিই ভারতের দূরদর্শন (ডিডি) চ্যানেলের এ্যাড সেলিংয়ের দায়িত্ব নিয়েছে। জানা গেছে, ডিডির বিজ্ঞাপন স্লট বিক্রি করে প্রায় ৭৫ কোটি রুপি আয় করবে ইএসপিএন।
সার্বিকভাবে বিশ্বকাপ ক্রিকেট সম্প্রচারের সময় বিজ্ঞাপন বাবদ চ্যানেলটি প্রায় ৭৫০ কোটি রুপি আয়ের লক্ষমাত্রা স্থিার করেছে। (সাপ্তাহিক কাগজ, বর্ষ ৩, সংখ্যা : ৬)
জার্সি-ক্যাপ ব্যবসায়ীদের বাণিজ্য
এছাড়াও ওয়েবসাইটের খবর অনুযায়ী অংশগ্রহণকারী দলগুলোর ভক্তদের জন্য জার্সি-ক্যাপসহ অন্যান্য সরঞ্জাম বিক্রি করে অফিসিয়াল চুক্তিবদ্ধ কোম্পানি আয় করবে প্রায় ১২ কোটি রুপি। (প্রাগুক্ত)
ক্রিকেট তারকাদের বাণিজ্যের বিষয়টিও এ পর্যায়ে চলে আসে
ক্রিকেট তারকাদের অন্যতম বাণিজ্য হল, আইপিএলে (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ) নিলাম ডাকা হয়। খেলোয়াড়দেরকে লাখ লাখ ডলার দিয়ে কেনা হয়। আরেকটি হল প্রাইজমানি।
এবারের প্রাইজমানি পূর্বের চেয়ে দ্বিগুণ। যে দল চ্যাম্পিয়ন হবে তারা পাবে ৩ মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে রানার্স আপ তার অর্ধেক। মোট ১০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে আইসিসি। (দৈনিক কালের কণ্ঠ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১)
বিশ্বজুড়ে ক্রিকেট বাণিজ্যের গল্প আরো দীর্ঘ। বস্ত্তত যে কোনো বিশ্বকাপই পুঁজিবাদীদের অর্থ উপার্জনের একটা উপলক্ষমাত্র। নিজেদের স্বার্থেই তারা গোটা পৃথিবীতে উন্মাদনা সৃষ্টি করে। আর সাধারণ মানুষ তাদের পরিকল্পিত ফাঁদে পা দিয়ে নিজের সময় ও স্বাস্থ্য ও গাঁটের পয়সা অবলীলায় বিসর্জন দিয়ে থাকে। আইসিসি, বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি ও মিডিয়া সব পক্ষই বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ দ্বারা নিজেদের থলি ভারি করে। তাই ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করা উচিত, এতে কার লাভ, কার ক্ষতি।
বিশ্বকাপ কেন্দ্রিক পাপাচার
প্রতিটি বিশ্বকাপের সময়ই পাপাচার বেড়ে যায়। বিশেষ করে যে দেশে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় সেদেশে পাপাচার হয় অনেক বেশি। পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গানের পাশাপাশি অর্ধনগ্ন নৃত্যও স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশের মেয়েদের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কান কুশলীরাও নৃত্য পরিবেশন করেছে। এসব যখন প্রকাশ্যেই হচ্ছে তখন আর ইভটিজিং, ধর্ষণ, নারী-নির্যাতন নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো উপায় থাকে কি?
এছাড়া ক্রিকেট বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে বেড়ে যায় জুয়া ও পতিতাবৃত্তি।
২০০৭ এর ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময় কলকাতা থেকে তিন জুয়াড়িকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। (দৈনিক ইত্তেফাক, ১ এপ্রিল ২০০৭)
গত বিশ্বকাপ আসরে অধিনায়ক ব্রায়ান লারা দলের খেলোয়াড়দের সম্পর্কে গুজব ছড়িয়েছিল যে, তারা খেলার আগের রাতে নাইটক্লাবে সময় কাটিয়েছেন। (দৈনিক ইত্তেফাক, ১২ মার্চ ২০০৭)
দুর্ঘটনা
দৈনিক পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বকাপ উন্মাদনায় অংশ নিতে গিয়ে স্কুল ছাত্রের মৃত্যু-এ শিরোনামের অধীনে লেখা হয়েছে, স্কুল ছাত্র পলাশ (১৪) শুক্রবার রাতে মিরপুর ক্রিকেট স্টেডিয়ামের কাছে সিএনজি অটো রিকশার ধাক্কায় প্রথমে আহত এরপর নিহত হয়। (দৈনিক কালের কণ্ঠ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১১)
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল জয়ের পর উল্লাস করতে গিয়ে ট্রাক থেকে পড়ে আজাদ হোসেন ওরফে বাবু (১৭) নামে এক স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ২০ জন। গত শুক্রবার গভীর রাতে রাজধানীর বনানী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত আজাদ উত্তরার একটি স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। গুলশান থানা সূত্র জানায়, শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে টঙ্গীসংলগ্ন আবদুল্লাহপুর এলাকা থেকে স্থানীয় কিশোর-তরুণেরা একটি ট্রাকে করে উল্লাস করতে করতে বনানী চেয়ারম্যানবাড়ির সামনের সড়কে আসে। বনানীর ১১ নম্বর রোডের পশ্চিম মাথায় বিমানবন্দর সড়কে ইউটার্ন নেওয়ার সময় ট্রাকটি সড়ক বিভাজকের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে কাত হয়ে যায়। এতে ট্রাকের আরোহীরা ছিটকে নিচে পড়ে যায়। এতে আজাদসহ ২১ জন আহত হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আজাদকে মৃত ঘোষণা করেন। ( দৈনিক প্রথম আলো, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১)
২০০৭ এর বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারত বাংলাদেশের বিপক্ষে হেরে গেলে এক ভারতীয় আত্মহত্যা করে। তার স্ত্রীও আত্মহত্যার চেষ্টা করে কিন্তু ঘটনাক্রমে বেঁচে যায়। (দৈনিক ইত্তেফাক ২৬ মার্চ, ২০০৭)
২০০৭-এর ক্রিকেট বিশ্বকাপের আরেকটি ভয়াবহ সংবাদ হল, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রশিক্ষক বব উলমারের মৃত্যু। আয়ারল্যান্ডের কাছে পাকিস্তানের বিতর্কিত পরাজয়ের পরের দিন পাকিস্তানের কোচ বব উলমারকে তার কক্ষে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে খবর ছড়ানো হয়েছিল যে, পাকিস্তান হারার কারণে ষড়যন্ত্র করেই তাকে হত্যা করা হয়।
উন্মাদনার এই ভয়াবহ পরিণতি দেখে তখন দক্ষিণ আফ্রিকার পেস বোলার অ্যালান ডোনাল্ড বিশ্বকাপ ক্রিকেট বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। (দৈনিক ইত্তেফাক, ২৪ মার্চ ২০০৭)
সম্ভবত এই তথ্যগুলো আমাদেরকে চিন্তা করতে এবং এসব টুর্ণামেন্টের ভিতরের চিত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে বাধ্য করবে। আমাদের দেশে চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবীর কোনো অভাব নেই। বিশেষ বিশেষ সময়ে তাদের বাকশক্তি ও বাক্যশক্তিরও পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্তু এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, পুজিবাদীদের অর্থানুকূল্যে পরিচালিত গবেষক-বুদ্ধিজীবীদের মাধ্যমে এই জাতির সত্যিকার কোনো উপকারের আশা দুরাশাই মাত্র। এজন্য ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে মুসলিম নাগরিকদের ঈমান ও ইসলামের দিকেই ফিরে আসতে হবে। কুরআন-সুন্নাহয় যেসব বিষয়কে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে এবং যেসবের প্রতি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে মুসলমান যদি ঐসব বিষয় থেকে বেঁচে থাকে তাহলে ইনশাআল্লাহ কেউ তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে না। আর আল্লাহ না করুন, এর বিপরীত হলে এবং হতেই থাকলে পতনও কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।