শাওয়াল ১৪৪৬   ||   এপ্রিল ২০২৫

মসজিদের আদব রক্ষা তাকওয়ার বহিঃপ্রকাশ

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলহাসান

মসজিদ আল্লাহর ঘর আল্লাহ তাআলার কাছে দুনিয়ার সবচেয়ে প্রিয় স্থান নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

أَحَبُّ الْبِلَادِ إِلَى اللهِ مَسَاجِدُهَا، وَأَبْغَضُ الْبِلَادِ إِلَى اللهِ أَسْوَاقُهَا.

আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে প্রিয় স্থান হল মসজিদ এবং সবচেয়ে অপছন্দের স্থান হল বাজার সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৭১

মসজিদ আল্লাহর ঘর’ একথার পর সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা না থাকলেও আমাদের ওপর অপরিহার্য ছিল, মসজিদের পবিত্রতা ও আদব রক্ষা করা কারণ এর আদব রক্ষা করা মহান আল্লাহর প্রতি ভালবাসা ও আনুগত্যেরই বহিঃপ্রকাশ তথাপিও মসজিদের আদব সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে

যেসব বিষয়ে যত্নবান হলে মসজিদের আদব রক্ষা হয়, তন্মধ্যে কয়েকটি বিষয় নিয়ে নিম্নে আলোকপাত করা হল

এক. ইখলাস ও তাকওয়ার ভিত্তিতে মসজিদ নির্মাণ করা

মুমিন বান্দা যেকোনো নেক আমল একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য করবে; এটাই ঈমানের দাবি, ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা এছাড়া কোনো আমলই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না কুরআন কারীম ও হাদীস শরীফে বিভিন্ন আঙ্গিকে এর প্রতি মুমিন বান্দার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন সকল আমল নিয়ত অনুসারেই মূল্যায়িত হয় আর প্রত্যেকে তা-ই পাবে, যা সে নিয়ত করেছে ফলে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে (অর্থাৎ তাঁদের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য) হিজরত করে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে হয়েছে বলেই বিবেচিত হবে আর যে হিজরত করে, পার্থিব কোনো বিষয় হাসিল করার জন্য কিংবা কোনো নারীকে বিয়ে করার লক্ষ্যে, তার হিজরতের মধ্য দিয়ে সে কেবল তার উদ্দিষ্ট বিষয়ই হাসিল করতে পারবে সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯০৭

সুতরাং অন্যান্য আমলের মতো মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রেও ইখলাস ও তাকওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম এ বিষয়ে সবিশেষ গুরুত্বারোপ করে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে ঘর বানাবেন সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৫০; জামে তিরমিযী, হাদীস ৩১৮

অতএব মসজিদ নির্মাণ হতে হবে ইখলাস ও তাকওয়ার ভিত্তিতে; হিংসা-বিদ্বেষের ভিত্তিতে নয়

হিংসা-বিদ্বেষের ক্ষতি ও ভয়াবহতা বোঝার জন্য নবীজীর একটি হাদীসই যথেষ্ট নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বিদ্বেষ হল মুণ্ডনকারী আমি বলি না, তা চুল মুণ্ডন করে; বরং তা দ্বীনকে সমূলে ধ্বংস করে মুসনাদে বায্যার, কাশফুল আসতার, হাদীস ২০০২

একটু ভেবে দেখি, আমাদের সমাজে কিছু মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে হিংসা-বিদ্বেষের ভিত্তিতে! এক মসজিদের পাশেই আরেক মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে কেবলমাত্র ঝগড়া ও পরস্পর বিদ্বেষ ও বিভক্তির ভিত্তিতে! আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন

দুই. মসজিদের পরিচালনা দ্বীনদার ব্যক্তির হাতে সোপর্দ করা

মসজিদ হল দ্বীনের মারকায এর পরিচালনা অত্যন্ত নাযুক প্রতিটি পদক্ষেপেই প্রয়োজন ইলম ও তাকওয়ার আর তাই মসজিদের সম্মান ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থে মসজিদ কমিটি নির্বাচন সম্পদ ও ক্ষমতার ভিত্তিতে না করে তাকওয়া ও ইলমের ভিত্তিতে করতে হবে

পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে আলেম মুত্তাকী মুসল্লির হাতে অথবা ইমাম ও খতীবের হাতে অগত্যা অন্য কারো হাতে যদি দিতেই হয়, তাহলে এমন ব্যক্তিকে নির্বাচন করতে হবে, যে নামাযী ও পরহেযগার নিজের ঈমান-আমলের ব্যাপারে যত্নশীল হালাল-হারামের বিষয়ে সচেতন মসজিদ পরিচালনার ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করবে এবং আলেম-উলামার পরামর্শক্রমে তা পরিচালনা করবে মসজিদের খেদমতকে কর্তৃত্ব বা বাহাদুরি নয়; নিজের সৌভাগ্যের বিষয় মনে করবে

লক্ষ করুন, মসজিদের খেদমত কারা করবে এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন­

اِنَّمَا یَعْمُرُ مَسٰجِدَ اللهِ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ وَ اَقَامَ الصَّلٰوةَ وَ اٰتَی الزَّكٰوةَ وَ لَمْ یَخْشَ اِلَّا اللهَ فَعَسٰۤی اُولٰٓىِٕكَ اَنْ یَّكُوْنُوْا مِنَ الْمُهْتَدِیْنَ.

আল্লাহর মসজিদ তো তারাই আবাদ করে, যারা আল্লাহ ও পরকালে ঈমান এনেছে এবং নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না এমন লোকদের সম্পর্কেই আশা আছে যে, তারা সঠিক পথ অবলম্বনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে সূরা তাওবা (০৯) : ১৮

পরিতাপের বিষয় হল, গুনাহ সয়লাবের দুটি কুপ্রভাব আমাদের অন্তরে পড়েছে :

ক. গুনাহের প্রতি ঘৃণা কমে গেছে

খ. ইসলামের নিদর্শনাবলির প্রতি মর্যাদাবোধ কমে গেছে

ফলে দ্বীনের ব্যাপারে উদাসীন, এমনকি প্রকাশ্য সুদ-ঘুষ ও অন্যান্য গর্হিত কাজে জড়িত লোকদের হাতেও মসজিদ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে দিচ্ছি শুধু অর্থ ও ক্ষমতার কারণে একটুও বিবেকে বাঁধছে না আমাদের!

ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!

তিন. মসজিদ নিয়ে অন্যের ওপর গর্ব না করা

কোনো কোনো সমাজে দেখা যায়, এক মহল্লায় মসজিদ নির্মাণ সুন্দর হলে পার্শ্ববতী মহল্লাবাসী আরও সুন্দর করে মসজিদ বানায়; যেন তাদের ওপর গর্ব করতে পারে অথচ এতে তাদেরকে ছোট না করে বরং মসজিদেরই অবমাননা হল কেননা গর্ব করা ইসলামী শরীয়তে নিন্দিত কাজ আর যদি গর্ব হয় মসজিদ নিয়ে, তবে তা আরও নিন্দনীয়, যাকে নবীজী কিয়ামতের আলামত আখ্যা দিয়েছেন

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন

إن من أشراط الساعة أن يتباهي الناس في المساجد.

নিশ্চয় কিয়ামতের আলামতসমূহের একটি এই যে, মানুষ মসজিদ নিয়ে একে অন্যের ওপর গর্ব করবে সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ১৩২২

চার. ধীরেসুস্থে মসজিদে গমন ও নামাযে অংশগ্রহণ করা

নামাযে যেমন ধীরস্থিরতা অপরিহার্য, নামাযের দিকে আসার সময়ও তা কাম্য এজন্য নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন নামাযের ইকামত হয়, তোমরা নামাযের দিকে দৌড়ে যেয়ো না, বরং ধীরেসুস্থে হেঁটে যাও অতঃপর যা পাও তা পড়, যা ছুটে যায় তা পূর্ণ কর কারণ তোমাদের কেউ যখন নামাযের জন্য রওয়ানা হয়, সে নামাযে বলেই গণ্য হয় সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬০২

আরেক হাদীসে এসেছে, আবু কাতাদা রা. বলেন, একবার আমরা নবীজীর সাথে নামায পড়ছিলাম নবীজী সামান্য আওয়াজ শুনলেন নামাযের পর জিজ্ঞেস করলে কেউ কেউ বলল, আমরা নামাযের দিকে দ্রুত এসেছিলাম

নবীজী বললেন, আর কখনো এমন করো না নামাযের দিকে ধীরেসুস্থে আসবে অতঃপর যা পাবে তা পড়বে আর যা ছুটবে তা পূরণ করে নেবে সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬০৩

একবার আবু বাকরা রা. নবীজীকে রুকুতে দেখে কাতারের পেছনেই নামায আরম্ভ করে রুকুতে চলে গেলেন তারপর কাতারের দিকে হেঁটে এলেন

নামাযের পর নবীজী তাকে বললেন, আল্লাহ তোমার আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দিন তবে আর কখনো এমন করো না সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৬৮৪

পাঁচ . কোনো প্রকার দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু নিয়ে মসজিদে প্রবেশ না করা

হাদীস শরীফে আছে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি এই দুর্গন্ধযুক্ত খাবার (অর্থাৎ পেঁয়াজ-রসুন) খাবে, সে যেন (তা থেকে মুক্ত না হয়ে) আমাদের মসজিদে না আসে কেননা দুর্গন্ধের কারণে মানুষের মতো ফেরেশতাদেরও কষ্ট হয় সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৬৪

উল্লেখ্য, মুখের দুর্গন্ধের ন্যায়  ঘামের কিংবা অন্য কোনো জিনিসের, যেকোনো ধরনের দুর্গন্ধ নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করা আদবের খেলাফ এ কারণেই জুমার দিন গোসল, মিসওয়াক ও সুগন্ধির নির্দেশ এসেছে (দ্র. সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৪৬-৮৪৭)

ছয়. মসজিদে যাওয়ার আগে মিসওয়াক করা

বিষয়টির গুরুত্ব বোঝার জন্য এই হাদীসই যথেষ্ট

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি আমার উম্মতের কষ্ট হবে মনে না করতাম, তবে আমি তাদের আদেশ দিতাম, যেন প্রত্যেক নামাযের সময় মিসওয়াক করে সহীহ বুখারী, হাদীস ৮৮৭

এখানে একদিকে যেমন উম্মতের প্রতি নবীজীর মায়া প্রকাশ পাচ্ছে যে, উম্মতের কষ্টের আশঙ্কায় মিসওয়াকের  আদেশ করেননি কারণ আদেশ করলে তো উম্মতের জন্য কাজটি বাধ্যতামূলক হয়ে যেত অপরদিকে মিসওয়াকের গুরুত্বও প্রকাশ পাচ্ছে

সাত. ভালো জামা পরে মসজিদে গমন করা

কোনো সম্মানিত মানুষ বা বন্ধুবান্ধবের সাথে আমরা যখন সাক্ষাৎ করি, ভালো জামা পরে পরিপাটি হয়ে সাক্ষাৎ করি এটি যেমন তার মর্যাদা রক্ষার দাবিইসলামেরও নির্দেশনা অনুরূপ আমরা যখন মসজিদে যাই, তখনো আমাদের এই বিষয়ে যত্নবান হওয়া কাম্য কারণ আদব-তাযীমের জন্য আল্লাহ তাআলা বেশি হকদার

আল্লাহ তাআলা বলেন

یٰبَنِیْۤ اٰدَمَ خُذُوْا زِیْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَّ كُلُوْا وَ اشْرَبُوْا وَ لَا تُسْرِفُوْا اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الْمُسْرِفِیْنَ۠.

হে আদম সন্তানেরা তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় নিজেদের শোভা অবলম্বন কর (অর্থাৎ পোশাক পরে নাও) সূরা আ‘রাফ (০৭) : ৩১

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসীর রাহ. বলেন

ولهٰذه الاٰية وما ورد في معناها من السنة يستحب التجمل عند الصلاة ولا سيما يوم الجمعة ويوم العيد، والطيب، لأنه من الزينة، والسواك، لأنه من تمام ذٰلك الخ

অর্থাৎ এই আয়াত ও এ বিষয়ক সুন্নাহ দ্বারা একথা প্রমাণিত হয় যে, নামাযের সময় বিশেষত জুমা ও ঈদে পরিপাটি হওয়া, সুগন্ধি লাগানো এবং মিসওয়াক করা মুস্তাহাব তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৪৪৯

বিষয়টি নবীজীর এই হাদীস থেকেও উপলব্ধি করা যায়

مَا عَلَى أَحَدِكُمْ إِنْ وَجَدَ، أَوْ مَا عَلَى أَحَدِكُمْ إِنْ وَجَدْتُمْ، أَنْ يَتَّخِذ ثَوْبَيْنِ لِيَوْمِ الْجُمُعَةِ سِوَى ثَوْبَيْ مِهْنَتِهِ.

তোমরা পারলে কাজের পোশাক ছাড়া জুমার জন্য অতিরিক্ত একজোড়া জামা রাখবে সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১০৭৮

এই বিষয়ে সাহাবী হযরত তামীম দারী রা.-এর আমল দেখি তিনি নামাযের জন্য এক হাজার দিরহাম দিয়ে চাদর খরিদ করেছিলেন (দ্র. আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, বর্ণনা ১২৪৮)

আট. আগে আগে মসজিদে যাওয়া

এই বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন 

لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الْأَوَّلِ ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلَّا أَنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لَاسْتَهَمُوا، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي التَّهْجِيرِ لَاسْتَبَقُوا إِلَيْهِ.

অর্থাৎ আযান ও প্রথম কাতারের ফযীলত যদি মানুষ জানত, লটারি করে হলেও তা অর্জনের চেষ্টা করত আর আগে আগে মসজিদে যাওয়ার লাভ যদি তারা জানত, তবে (কে কত আগে মসজিদে যেতে পারে) তার প্রতিযোগিতা করত সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৩৭ 

এছাড়াও ধীরেসুস্থে মসজিদে যাওয়া, তাকবীরে উলার ফযীলত হাসিল করা এবং খুশু-খুযুর সাথে নামায আদায়ের জন্যও এই আমলটি খুবই উপকারী

নয়. মসজিদে যাওয়ার সময় দুআ পড়া

প্রথমে ঘর থেকে বের হওয়ার দুআ পড়া

بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ.

আল্লাহর নামে বের হলাম আল্লাহর ওপর ভরসা করলাম আল্লাহ তাআলার তাওফীক ছাড়া পাপ পরিহার করার এবং নেক কাজ করার শক্তি নেই জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৪২৬

তারপর সম্ভব হলে এই দুআ পড়া

اَللّٰهُمَّ اجْعَلْ فِيْ قَلْبِيْ نُوْرًا، وَفِيْ لِسَانِيْ نُوْرًا، وَاجْعَلْ فِيْ سَمْعِيْ نُوْرًا، وَاجْعَلْ فِيْ بَصَرِيْ نُوْرًا، وَاجْعَلْ مِنْ خَلْفِيْ نُوْرًا، وَمِنْ أَمَامِيْ نُوْرًا، وَاجْعَلْ مِنْ فَوْقِيْ نُورًا، وَمِنْ تَحْتِيْ نُورًا، اَللّٰهُمَّ أَعْطِنِيْ نُورًا.

অর্থাৎ হে আল্লাহ আমার অন্তরে নূর দান করুন, আমার যবানে নূর দান করুন, আমার কানে নূর দান করুন, আমার চোখে নূর দান করুন, আমার সামনে পেছনে উপরে ও নিচে নূর দান করুন হে আল্লাহ আমাকে নূর দান করুন সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৬৩

দশ. মসজিদে প্রবেশের সুন্নত-আদব আদায় করা

প্রথমে বিসমিল্লাহ, দরূদ শরীফ এবং দুআ পড়ি তারপর ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করি এ বিষয়ে কয়েকটি বর্ণনা

১. আনাস ইবনে মালেক রা. বলতেন, মসজিদে প্রবেশে ডান পা এবং বের হতে বাম পা ব্যবহার করা সুন্নত মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৯১

২. আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতেন এবং বাম পা দিয়ে বের হতেন সহীহ বুখারী, কিতাবুস সালাত (বাব নং ৪৭)

৩. নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা যখন মসজিদে প্রবেশ কর আমার ওপর দরূদ পড় এবং বল

اَللّٰهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ.

(আল্লাহ! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাগুলো খুলে দিন)

আর বের হওয়ার সময় বল

اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ.

 (আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি)

সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭১৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৬৫

৪. ফাতেমা রা. বলেন, মসজিদে প্রবেশের সময় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন

بِسْمِ اللهِ، وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُولِ اللهِ، اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ.

[আল্লাহর নামে (প্রবেশ করছি); আল্লাহর রাসূলের ওপর সালাম

হে আল্লাহ! আমার গুনাহগুলো ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাগুলো খুলে দিন]

আর বের হওয়ার সময় বলতেন

بِسْمِ اللهِ، وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُولِ اللهِ، اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ فَضْلِكَ.

[আল্লাহর নামে (বের হচ্ছি); আল্লাহর রাসূলের ওপর সালাম আল্লাহ আমার গুনাহগুলো ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাগুলো খুলে দিন) সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৭৭১

৫. মসজিদে প্রবেশের আরেকটি ফযীলতপূর্ণ দুআও রয়েছে; চাইলে এটিও পড়তে পারি

আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. বলেন, মসজিদে প্রবেশের সময় নবীজী বলতেন

أَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْمِ، وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ، وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ، مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ.

(আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে মহান আল্লাহ তাআলার নিকট আশ্রয় কামনা করছি; যাঁর সত্তা অতি মহৎ, যাঁর ক্ষমতা অনাদি)

সাহাবী বলেন, কেউ যখন এই দুআ পড়ে, শয়তান বলে, আজকের জন্য সে আমার থেকে নিরাপদ হয়ে গেল সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৬৬

এগারো. মসজিদে ওযু অবস্থায় থাকতে চেষ্টা করা

মসজিদে যতক্ষণ থাকি, ওযু অবস্থায় থাকতে চেষ্টা করি; তাহলে মসজিদের সম্মান ও আদব রক্ষা হবে, তেমনি ফেরেশতাদের দুআও লাভ হবে

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নামাযের স্থানে বসা ব্যক্তির জন্য ফেরেশতাগণ মাগফিরাত ও রহমতের দুআ করতে থাকে, যতক্ষণ না তার ওযু চলে যায় বা উঠে যায় সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৪৯

বারো. মসজিদে আওয়াজ উঁচু না করা এবং শোরগোল না করা

অনেক মানুষ মসজিদে উঁচু আওয়াজে কথা বলেন সাধারণ প্রয়োজনীয় কোনো কথা বলার সময় আওয়াজ উঁচু করেন অথবা খামোখা উঁচু আওয়াজে এটা-সেটা বলেন বা কাউকে ডাকেন তেমনি সামান্য সামান্য বিষয় নিয়ে মসজিদে হট্টগোল বাঁধিয়ে দেন

কখনো মসজিদে নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়া বা প্রভাব বিস্তারের জন্যও উঁচু আওয়াজে কথা বলেন নিজেকে ফলাতে চেষ্টা করেন আমি মসজিদের এই, আমি এলাকার সেই! এটা অন্যায় ও অনেক গর্হিত কাজ

আহা, কার ঘরে এসে উঁচু আওয়াজে কথা বলছি! এটা তো মহান রবের ঘর এখানে কেবল তাঁর আওয়াজই উঁচু হবে তাঁর জিকিরের আওয়াজই উচ্চকিত হবে আর সকল আওয়াজ থাকবে নিচু

কোথায় এসে নিজেকে উঁচু ঠাওরাচ্ছি, বাহাদুরি ফলাচ্ছি! এটা উঁচু হওয়ার বা প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখানোর জায়গা নয়; এটা তো বিনয়ী ও নিচু হওয়ার স্থান নিজেকে ছোট হিসেবে প্রকাশের স্থান

সুতরাং কখনোই মসজিদে আওয়াজ উঁচু করব না প্রয়োজনীয় কোনো কথাও বিনয়ের সাথে নিচু আওয়াজে বলার চেষ্টা করব মসজিদে আওয়াজ উঁচু করার বিষয়ে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীস শরীফে সতর্ক করেছেন তিনি বলেছেন, সাবধান! (মসজিদে) বাজারের মতো শোরগোল করো না সহীহ মুসলিম ৪৩২; জামে তিরমিযী, হাদীস ২২৫

সাহাবায়ে কেরাম রা.-ও এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতেন একবার তায়েফের দুই লোক মসজিদে নববীতে উঁচু আওয়াজে কথা বললে উমর রা. তাদের ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, তোমরা মদীনার হলে আমি তোমাদের বেত্রাঘাত করতাম, মসজিদে নববীতে আওয়াজ উঁচু করো! সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৭০

কিছু মানুষ নিজে তো গল্পগুজব করে না বা উঁচু আওয়াজে কথা বলে না; কিন্তু কেউ গল্পগুজব করলে বা কথা বললে তাকে নিষেধ করতে গিয়ে নিজের আওয়াজ এতটা উঁচু করে যে, তাদের গল্পগুজবের কারণে মুসল্লিদের যতটুকু আমলে ব্যাঘাত হচ্ছিল-না হচ্ছিল, তার ‘চুপ করো’-এর উঁচু আওয়াজে আরও বেশি ব্যাঘাত ঘটে তাই তো জুমার দিন কেউ কথা বললে, তাকে ‘চুপ  করো’ বলাকেও হাদীস শরীফে অনর্থক ও অর্থহীন কাজ বলা হয়েছে

শুধু তাই নয়, অন্যের আমলে ব্যাঘাত হবে দেখে নবীজী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে তিলাওয়াতের মতো গুরুত্বপূর্ণ আমলও উঁচু আওয়াজে করতে নিষেধ করেছেন হাদীস শরীফে এসেছে

একবার নবীজী ইতিকাফে ছিলেন তখন কিছু মানুষকে উচ্চৈঃস্বরে তিলাওয়াত করতে শুনে পর্দার আড়াল থেকে মাথা বের করে বললেন

أَلَا إِنَّ كُلَّكُمْ مُنَاجٍ رَبَّه، فَلَا يُؤْذِيَنَّ بَعْضُكُمْ بَعْضًا، وَلَا يَرْفَعْ بَعْضُكُمْ عَلى بَعْضٍ فِي الْقِرَاءَةِ، أَوْ قَالَ: فِي الصَّلَاةِ.

তোমাদের প্রত্যেকেই নিজ রবের সাথে মুনাজাতে (চুপিসারে কথোপকথনে) লিপ্ত সুতরাং কেউ যেন কাউকে কষ্ট না দেয় কেউ যেন অন্যের চেয়ে উঁচু আওয়াজে তিলাওয়াত না করে অথবা বলেছেন, নামাযে একে আপরের চেয়ে উঁচু আওয়াজে তিলাওয়াত না করে সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৩৩২; শুআবুল ঈমান, বাইহাকী, হাদীস ২৪১২

তেরো. মসজিদে নিজের জন্য স্থান নির্দিষ্ট না করা

শরীয়তের বিধান হল প্রাপ্তবয়স্করা সামনের কাতারে দাঁড়াবেন আর ছোটরা পেছনে এবং শরয়ী বিষয়ে যারা জ্ঞানীতারা ইমামের কাছাকাছি দাঁড়াবেন (দ্রষ্টব্য : সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৩২; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৯২)

এছাড়া যে আগে আসবে সে আগে স্থান পাবে, যে পরে আসবে সে পেছনে বসবে শরীয়তপ্রদত্ত এই অগ্রাধিকারের অতিরিক্ত চাওয়া বা নিজের জন্য মসজিদে কোনো স্থান নির্দিষ্ট করা যে, কেউ আগে আসলেও এখানে দাঁড়াতে পারবে না এমনটি করা মসজিদের আদবের খেলাফ এক বর্ণনায় আছে

إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ ثَلَاثٍ: عَنْ نَقْرَةِ الْغُرَابِ، وَافْتِرَاشِ السَّبعِ، وَأَنْ يُوطِّنَ الرَّجُلُ الْمَقَامَ لِلصَّلَاةِ كَمَا يُوطِّنُ الْبَعِيرُ.

অর্থাৎ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন কাজ করতে নিষেধ করেছেন

১. কাকের মতো ঠোকর দিতে (নামাযে সিজদা অতি দ্রুত করতে),

২. হিংস্র প্রাণীর মতো (সিজদার সময় যমীনে) হাত বিছিয়ে দিতে,

৩. উটের মতো স্থান নির্ধারণ করতে (উট যেমন সবসময় এক স্থানেই বসে; তেমনি মসজিদে নিজের জন্য স্থান নির্ধারণ করা সবসময় ঐ স্থানেই নামায পড়া) সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ১৩১৯; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ১১১২

চৌদ্দ. মসজিদে কাউকে কোনোভাবে কষ্ট না দেওয়া

মুসলমানের পরিচয় হল, সে যেমন সরাসরি কাউকে কষ্ট দেয় না; কারো কষ্টের কারণও হয় না

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সেই ব্যক্তি হল মুসলমান, যার অনিষ্ট থেকে অপর মুসলমান নিরাপদে থাকে সহীহ বুখারী, হাদীস ১০

এখানে ‘অপর মুসলমানকে কষ্ট দেয় না’ একথা না বলে ‘অপর মুসলমান নিরাপদে থাকে’ বলা হয়েছে সুতরাং মসজিদের সম্মান রক্ষার্থে আমাদের সবিশেষ সতর্কতা কাম্য; যেন এই মহিমান্বিত ঘরে কোনোভাবেই আমি কারো কষ্টের কারণ না হই

মসজিদে আমরা যেভাবে অন্যের কষ্টের কারণ হই (কয়েকটি উদাহরণ)

১. মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় আমরা জুতা পায়ে অন্যের জুতার ওপর দিয়ে হেঁটে যাই এতে অন্যের জুতা ময়লা হয়, ফলে তার কষ্ট হয়

তেমনি মসজিদে প্রবেশ বা বের হওয়ার সময় আওয়াজ করে জুতা-স্যান্ডেল রাখি, যার ফলে ইবাদতকারীর আমলে ব্যাঘাত ঘটে

২. অনেক সময় আমরা চলাচলের স্থানে বা সামনে খালি থাকা সত্ত্বেও একেবারে পেছনের কাতারে দাঁড়িয়ে নামায আরম্ভ করি; ফলে অন্যের চলাচলে কষ্ট হয়

৩. জনবহুল এলাকার মসজিদগুলোতে জুমার দিন শেষদিকে আসা মুসল্লিদের দীর্ঘক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় একটু বসার জায়গা পর্যন্ত পায় না অথচ ভেতরে অনেক ফাঁকা জায়গা পড়ে থাকে ভেতরের লোকগুলো ফাঁকা জায়গা পূরণ করে বসলে বা অন্যদেরকে সামনে যাওয়ার সুযোগ দিলে তাদের এত কষ্ট হয় না!

এমন আরও অনেক কাজ আছে, যেগুলোর দ্বারা আমরা মসজিদে অন্যের কষ্টের কারণ হই একটু খেয়াল করলে আমাদের নযরেও ধরা পড়বে ইনশাআল্লাহ

পনেরো. মানুষকে না ডিঙানো

আবদুল্লাহ ইবনে বুসর রা. বলেন, একবার নবীজী খুতবা দিচ্ছিলেন; এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি মানুষজনকে ডিঙিয়ে সামনে আসছিল তখন নবীজী বললেন, (তুমি যেখানে আছ, ওখানেই)  বসো, তুমি তো মানুষকে কষ্ট দিয়ে দিলে! সুনানে নাসায়ী, হাদীস ১৩৯৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১১১৮

সুতরাং আমাদের উচিত, মসজিদে এসে যেখানে জায়গা পাওয়া যায়, সেখানেই বসে যাওয়া

তবে সামনের খালি স্থান পূরণের জন্য কেউ যদি আদব রক্ষা করে, কাউকে কষ্ট না দিয়ে সামনে যায়, তা এ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়বে না; কেননা এর জন্য তো তারাই দায়ী, যারা সামনে ফাঁকা রেখে পেছনে বসে গেছে (দ্রষ্টব্য : ফাতহুল বারী ২/৪৮২)

ষোলো. মসজিদ পবিত্র ও পরিষ্কার রাখা

এটি মসজিদ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন

وَ عَهِدْنَاۤ اِلٰۤی اِبْرٰهٖمَ وَ اِسْمٰعِیْلَ اَنْ طَهِّرَا بَیْتِیَ لِلطَّآىِٕفِیْنَ وَ الْعٰكِفِیْنَ وَ الرُّكَّعِ السُّجُوْدِ .

আর আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে হুকুম করি, তোমরা আমার ঘরকে সেই সকল লোকের জন্য পবিত্র কর, যারা (এখানে) তাওয়াফ করবে, ইতিকাফ করবে এবং রুকূ ও সিজদা আদায় করবে সূরা বাকারা (০২) : ১২৫

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যামানায় একবার এক গ্রাম্য লোক মসজিদে পেশাব করে দিল সাথে সাথে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে আদেশ দিলেন, যেন বড় বালতি ভরে পানি ঢেলে পবিত্র করে (দ্র. সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১২৮)

আম্মাজান আয়েশা রা. বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক মহল্লায় মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দিয়েছেন এবং তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে আদেশ করেছেন সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৫৫

আমাদের অসচেতনতায় অনেক সময় মসজিদ অপরিষ্কার হয়ে যায় কাদাযুক্ত জুতা-স্যান্ডেল নিয়ে অসতর্কভাবে মসজিদে প্রবেশ করার কারণে দেখা যায়, কাদাপানি মসজিদের ফ্লোরে পড়ে এরকম আরও অনেক বিষয় থাকে, যেক্ষেত্রে আমাদের অসচেতনতায় মসজিদ অপরিচ্ছন্ন হয়; আমাদেরকে সেসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে

সবসময় খেয়াল রাখব, আমি মসজিদ পরিচ্ছন্ন রাখতে অবদান রাখব, অপরিচ্ছন্নতায় নয়

সতেরো. তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় করা

অর্থাৎ মসজিদে প্রবেশের পর প্রথমেই  দুই রাকাত নামায পড়া এটি মসজিদের হক এবিষয়ে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশের ভাষায় উৎসাহ দিয়ে বলেন

إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ المَسْجِدَ فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ أَنْ يَجْلِسَ.

তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, সে যেন বসার আগেই দুই রাকাত নামায পড়ে সহীহ বুখারী, হাদীস  ৪৪৪

আমাদের অনেকের মাঝেই এ বিষয়ে উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়, সময় ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় করি না; অথচ এটি মসজিদের হক এবং নবীজীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত

আঠারো. যিকির-আযকার, তিলাওয়াত ইত্যাদি বেশি বেশি করা

মসজিদ নির্মাণ করা হয় নামায, যিকির, তিলাওয়াত ইত্যাদি আমলের জন্য মসজিদ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন

فِیْ بُیُوْتٍ اَذِنَ اللهُ اَنْ تُرْفَعَ وَ یُذْكَرَ فِیْهَا اسْمُهٗ  یُسَبِّحُ لَهٗ فِیْهَا بِالْغُدُوِّ وَ الْاٰصَالِ، رِجَالٌ لَّا تُلْهِیْهِمْ تِجَارَةٌ وَّ لَا بَیْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَ اِقَامِ الصَّلٰوةِ وَ اِیْتَآءِ الزَّكٰوةِ یَخَافُوْنَ یَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِیْهِ الْقُلُوْبُ وَ الْاَبْصَارُ.

আল্লাহ ঘরগুলোকে উচ্চমর্যাদা দিতে এবং তাতে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে আদেশ করেছেন, তাতে সকাল ও সন্ধ্যায় তাসবীহ পাঠ করে এমন লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বেচাকেনা আল্লাহর স্মরণ, নামায কায়েম ও যাকাত আদায় থেকে গাফেল করতে পারে না তারা ভয় করে সেই দিনকে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টি ওলটপালট হয়ে যাবে সূরা নূর (২৪) : ৩৬-৩৭

এখানে আল্লাহ তাআলা মসজিদকে সমুন্নত করতে এবং তাতে আল্লাহর যিকির করতে আদেশ করেছেন পাশাপাশি যারা মসজিদে আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে তাদের প্রশংসা করেছেন

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন মসজিদ আল্লাহর যিকির, নামায ও কুরআন কারীম তিলাওয়াতের জন্য সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮৫

অতএব মসজিদে অবস্থানকালে এই আমলগুলো বেশি বেশি করার চেষ্টা করা কাম্য

ঊনিশ. দুনিয়াবী কাজে মসজিদের ব্যবহার  না করা

মসজিদে এসে দ্বীনী কাজেই ব্যস্ত থাকা কাম্য অন্য কাজ করলে মসজিদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়, মাহাত্ম্য নষ্ট হয় এ প্রসঙ্গে দুটি হাদীস লক্ষ করি

১. নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মসজিদে কাউকে হারানো জিনিসের এলান করতে দেখলে বলবে, আল্লাহ তোমাকে এই জিনিস ফিরিয়ে না দেন মসজিদ তো এজন্য বানানো হয়নি! সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৬৮

২. আরেক হাদীসে এসেছে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা কাউকে মসজিদে বেচাকেনা করতে দেখলে বলবে, আল্লাহ তোমাকে লাভবান না করুন জামে তিরমিযী, হাদীস ১৩২১

মসজিদের আদব রক্ষা অন্তরের তাকওয়ার বহিঃপ্রকাশ

মসজিদ আল্লাহর ঘর, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় স্থান, ইসলামের অন্যতম নিদর্শন

তাই আসুন, মসজিদের আদব রক্ষায় সচেতন হই, মুত্তাকী ও পরহেযগারদের কাতারে শামিল হই

আল্লাহ তাআলা বলেন

ذٰلِكَ  وَمَنْ یُّعَظِّمْ شَعَآىِٕرَ اللهِ فَاِنَّهَا مِنْ تَقْوَی الْقُلُوْبِ.

আর কেউ আল্লাহর ‘শাআইর’ নিদর্শনাবলিকে সম্মান করলে, এটা তো তার হৃদয়ের তাকওয়া সঞ্জাত সূরা হজ্ব (২২) : ৩২ 

 

 

advertisement